মানুষের শরীর খাদ্য ছাড়া বাঁচতে পারে কয়েক সপ্তাহ, কিন্তু পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না কয়েক দিনের বেশি। স্বাস্থ্যের জন্য পানির গুরুত্ব বলে বোঝাবার নয়। মানব সভ্যতার শুরুতে পানিতে ছিল অজস্র সতেজতা, বিশুদ্ধতা ও পুষ্টি। ধীরে ধীরে উন্নতি ঘটছে মানবসভ্যতার, কিন্তু তার সাথে যেন পানি হারিয়ে ফেলছে তার সতেজতা ও বিশুদ্ধতা।
কালের বিবর্তনে পানির এ বিপর্যয়ের ফলে মানুষের পক্ষে গ্রহণের অযোগ্য হয়ে পড়ছে পানি। দূষিত পানি মানবজাতিকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে কঠিন পানিবাহিত রোগে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে প্রত্যেক বছর পৃথিবীতে প্রায় দশ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পানিবাহিত রোগ। তার মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বছরে ৮০ জন বা তারও বেশি। পানি দূষণের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও।
পানিবাহিত রোগের মধ্যে রয়েছে- আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, প্যারা টাইফয়েড ইত্যাদি। দূষিত পানি পান করে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এসব কঠিন পানিবাহিত রোগে। বিশেষ করে পানি দূষণের অতিরিক্ত মাত্রা লক্ষ্য করা যায় শহরে। শহরের সকল ময়লা-আবর্জনা ড্রেনের মাধ্যমে পতিত হচ্ছে নদী-নালায়, কলকারখানার দূষিত বর্জ্য ইত্যাদি পানি দূষণের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া উন্নত দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নদীতে ফেলা হচ্ছে। পানি দূষণের কারণে প্রতিবছর বিষাক্ত এসিড বৃষ্টি হচ্ছে।
বর্তমান গ্রীষ্মের এ অসহনীয় তাপদাহে পুরো প্রাণীকূল তৃষ্ণার্ত। সবাই খুঁজছে পানির সন্ধান। তীব্র গরমে যেন প্রাণ বাঁচানোর একমাত্র উৎস হয়ে পড়ছে পানি। এ কারণে পানি দূষিত না বিশুদ্ধ তা বিবেচনা না করেই মানুষ পানি পান করছে।
বর্তমানে পানি দূষিত হয়ে এমন এক পর্যায় চলে গেছে যে, পানির অপর নাম জীবন নয় বরং জীবনের অপর নাম পানি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পানি দূষণ থেকে মুক্তি পেতে হলে শুধু পানি নয়, পরিবেশের সকল উপাদানের প্রতি সমান গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ একটি উপাদান দূষিত হলেই অপরটির দূষণ অত্যাবশ্যকীয়। যদি মানবজাতি একটু সচেতন হয় তবে পরিবেশের সকল উপাদানের দূষণ সম্পূর্ণ রোধ করা না গেলেও কিছুটা হলেও এড়ানো সম্ভব। তাই সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে আমাদের পরিবেশ ও পানির প্রতি আরও সচেতনতা গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: মরিয়ম আক্তার