নির্বিচারে পাখি হত্যার এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে পাখি নিধন বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন পাখি প্রেমিকরা।
স্থানীয়রা জানায়, লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাড়ছে বরই বাগানের সংখ্যা। আর এসব বাগানে পাকা বরই খেতে হানা দিচ্ছে পাখি। বরই বাগান পাখির হাত থেকে রক্ষায় চারদিকে উঁচু করে কারেন্ট পেতে দেয় বাগান মালিকরা। বাগানের উপর দিয়ে পাখি উড়ে যাবার সময় অত্যন্ত স্বচ্ছ এ জালে জড়িয়ে আটকা পড়ছে দোয়েল, শালিক, মাছারাঙ্গাসহ নানা ধরনের দেশীয় পাখি। সাথে আটকা পড়ে পামাপাশিসহ অন্যান্য পাখিও। ফাঁদ থেকে ছুটতে না পেরে এক পর্যায়ে অনাহারে মারা যায় এসব পাখি।
একাধিক বরই বাগান মালিকের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, পাখির উপদ্রব থেকে বরই বাঁচাতে কারেন্ট জাল দিয়ে বাগান ঘিরে রাখা হয়েছে। জালে আটকিয়ে পাখি মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করলেও তারা বলছেন, পাখি প্রচুর পরিমাণ বরই খেয়ে ফেলে, এতে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়।
ভোলাহাট উপজেলার ফলিমারি এলাকার বাগানের মালিক শরিফুল ইসলাম জানান, ‘বাগানে কারেন্ট জাল দিয়ে ঘের না দিলে ফসল রক্ষা করা যেত না, পাখিই বাগানের অর্ধেক ফল খেয়ে ফেলত।’
তিনি বলেন, ‘এতে পাখি কিছু মারা পড়ছে, তবে এ ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্থ হব আমি।
অল্প দূরের আর একটি বরই বাগানের মালিক কামিরুল বলেন, পাখি প্রচুর পরিমাণ ফল নষ্ট করছে। এ কারণেই জাল দিয়ে ঘেরা। জালে আটকিয়ে কিছু পাখি মারা যাচ্ছে, এতে খারাপ লাগছে; কিন্তু কি করব। লাভ করার জন্যই এভাবে জাল দিয়ে ঘের দিতে হচ্ছে।’
তবে বাগান মালিকদের এমন নিষ্ঠুর কাজে ক্ষুদ্ধ পাখি প্রেমিকরা। তারা বলছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এভাবে পাখি নিধন বন্ধে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আসাদুল হক নামে স্থানীয় এক পাখি প্রেমিক বললেন, এভাবে কারেন্ট জাল বাগানের চারিদিকে ঘিরে রেখেছে। এতে অনেক পাখি মারা যায়। এভাবে প্রতিদিন যদি পাখি মারা যায়, এর প্রতিকার কি হবে না বা কারো নজর কি পড়ে না।
স্থানীয় ভোলাহাট মোহবুল্লাহ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘অনেকেই কারেন্ট জাল দিয়ে এভাবে পাখি নিধন করছে, এটি আমাকে পীড়া দেয়; এটিকে আমি ঘৃনা করি। অবশ্যই এটি রোধ হওয়া দরকার এবং সরকারের যে আইন আছে সেই আইনের প্রয়োগ দরকার। প্রকাশ্যে এমন পাখি নিধন চললেও নীরব স্থানীয় বন বিভাগ।’
জনবল সংকটের পুরনো অজুহাতে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানালেন ভোলাহাট উপজেলা বন কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে আমাদের বন্য প্রাণী বিভাগের অফিস রয়েছে। এখানে কোনো অফিস নেই। বন্য প্রাণী সংরক্ষণের বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। আপনাদের মাধ্যমে এ বিষয়টি (পাখি নিধন) জানতে পারলাম। বন্য প্রাণী কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করবো, তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।’