খুলনা ২৮ অক্টোবর ২০১৮ (ইউএনবি) – খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার বর্গাচাষী সুরশ্বের মল্লিক। তিনি ৩০ টাকার পালং শাকের বীজ ক্রয় করে বর্গা জমিতে চাষ করেন। সেই ৩০ টাকার বীজে উৎপাদিত ফসল (শাক) বিক্রি করেছেন ৪৫ হাজার টাকা। তার এই সাফল্যে হতবাক স্থানীয়রা।
এভাবেই নিরলস প্রচেষ্টায় অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ফসল ফলিয়ে হতদরিদ্র এই কৃষক স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এক সময় নিজের বসতভিটাটুকুই ছিল তার। কয়েক বছর আগেও সে অন্যের জমিতে কামলা (দিনমজুর) দিয়ে সংসার চালাতো। এখন গড়েছেন নিজের পাকা বাড়ি। পেয়েছেন জাতীয় বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারও।
ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দকাঠি গ্রামের কৃষক সুরেশ্বর মল্লিক। বাড়ির পাশের একখন্ড (৫০ শতক) পতিত জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলিয়ে এলাকায় চমক সৃষ্টি করছেন এই কৃষক।
এক বছরের জন্য ওই জমি বর্গা নেয় কৃষক মল্লিক। জমির মালিককে বছরে দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। এ জমিতে মাত্র ৩০ টাকার পালং শাকের বীজ বপন করেন তিনি। বীজ বপনের ৪৫ দিনের মাথায় স্থানীয় পাইকারদের কাছে ৪৫ হাজার টাকায় ক্ষেতের সব শাক বিক্রি করেছেন।
একজন বর্গাচাষী হিসেবে কৃষি উদ্যোক্তায় ২০১৭ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারও পেয়েছেন। তার দেখাদেখি এ উপজেলার অনেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
কৃষক সুরেশ্বর মল্লিক জানান, আমি আগে অন্যের জমিতে কাজ করতাম। এখন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। আমি এলাকার গরিব বেকার মহিলাদের আমার ক্ষেতে কাজে লাগাই। যাতে তারা কিছু আয় করতে পারে।
তিনি আরও বলনে, ৪৫ দিনের মাথায় এই আয় হয়েছে। বছরের বাকী দিনে আরও ফসল ফলাতে পারবো এবং আয় করতে পারবো।
ডুমুরিয়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকতিয়ার হোসেন জানান, এটি একটি লাভজনক চাষ। পালং শাক চাষে তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। বীজ বপনের পর কয়েকদিন ঠিকমতো পানি দিতে হয় এবং আগাছা পরিষ্কার রাখতে হয়। তাকে এলাকার অনেকেই অনুসরণ করে।
একই এলাকার চাষী মো. ইমরান হোসেন মোড়ল জানান, তাকে দেখে এলাকার অনেকেই চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছে। সুরেশ্বরের নিজের কোনো জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে সে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছেন। সে আমাদের অনেকের কাছে অনুসরণীয় একজন কৃষক।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, কৃষকরা যাতে অল্প জমিতে বেশি লাভ করতে পারে এবং কীটনাশক ব্যবহার না করে আমরা সে ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। সুরেশ্বর একজন বর্গা চাষী। সে প্রথমদিকে জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতো। আমাদের পরামর্শে সে এখন জৈব সার (ভার্মি কম্পোস্ট) ব্যবহার করে। তার বাড়িতেই আমরা কৃষক স্কুল মাঠ (স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) তৈরি করেছি।
‘উপজেলা কৃষি অফিসের নিবীড় তত্ত্বাবধানে উপজেলার অনেক কৃষকই সাফল্য অর্জন করছে। যাদের মধ্যে সুরেশ্বর অন্যতম, বলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।