এব্যাপারে তারা বলেন, ‘গেল বছর ৯ জুন ময়ূর নদী ও ২২টি খাল রক্ষার দাবিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনউদ্যোগ খুলনার আয়োজনে নগরীর লায়ন্স স্কুল থেকে ময়ূর নদী পর্যন্ত পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া আগেও নদী রক্ষার দাবিতে অনেক আন্দোলন হয়েছে। তবে স্থায়ীভাবে এর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গল্লামারী ব্রিজের পশ্চিম পার্শ্বে ময়ূর নদীর অন্তত ৩০ ফুট ভেতরে বালু ও মাটি ভরাট করে দখল হয়ে গেছে। রকিবুল জাহিদ মুকুল নামে এক ব্যক্তি সেখানে মার্কেট করছেন। বর্তমানে দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজ চলছে।
দখলের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সারোয়ার আহমেদ সালেহীন বলেন, ‘বিষয়টি আমরাও শুনেছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরেজমিনে তদন্তের জন্য লোক পাঠানো হয়েছিল। আমরা কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। এরপর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রকিবুল জাহিদ মুকুল বলেন, ‘আমি আমার জমিতে মার্কেট তৈরি করছি। নদীর জায়গা দখল করিনি। এরপরও আমি এডিসি রেভিনিউ ও বটিয়াঘাটা ইউএনও-কে জানিয়েছে কাগজপত্র যাচাই করে দেখতে। যদি নদীর এক ইঞ্চি জায়গাও আমার মার্কেটের মধ্যে পড়ে তাহলে আমি সেই জায়গা ছেড়ে দিব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কাগজপত্র নিয়ে বসার কথা ছিল। কিন্তু দু’জনেরই ব্যস্ততার কারণে তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানায়, দুই যুগ আগেও ময়ূর নদীতে পালতোলা নৌকা চলতো। অনেক জেলে পরিবারের জীবিকার মূল উপজীব্য ছিল এ নদী। অথচ এখন দখল ও দূষণে কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে নদীটি। ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ময়ূর নদীর সাথে আগে রূপসা নদীর সরাসরি সংযোগ ছিল। দখলের কারণে নদীর নিজস্বতা হারিয়েছে। এই নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘মানুষের দখল-দূষণে ময়ূর নদী আজ প্রায় মৃত। এখনই নদী উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে তা খুলনাবাসীর জন্য খারাপ পরিণাম বয়ে আনবে।’
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ‘দায়সারাভাবে ড্রেজিং এবং কিছু অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়েছিল। পরে নতুন করে আবার অবৈধ দখল হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনকে বিষয়টি দেখতে হবে। নদীর অবস্থা এখন আগের চেয়েও খারাপ।’
এদিকে নগরীর ময়ূর নদীসহ ২২টি খালের সকল অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে খুলনা উন্নয়ন কমিটি নগর ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে। একই দাবিতে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় খুলনা জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি নিয়েছে সংগঠনটি।