ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউআইআই), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়াইল্ডটিম একত্রে ‘সি টু সোর্স: গঙ্গা’ শীর্ষক এ নদী অভিযানে কাজ করবে।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কীভাবে উৎস থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে চলে যায়, কোথায় জমে ও সংযুক্ত হয় সেটা আরও ভালোভাবে বোঝা ও নথিবদ্ধ করা এবং এ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানের অভাব পুরনের জন্যই ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এ অভিযানের যাত্রা শুরু।
অভিযানটির মাধ্যমে দুই নদীপ্রবাহের মধ্যস্থিত বিভাগ-রেখা বা ওয়াটারসেডে প্লাস্টিক বর্জ্য কীভাবে জমা হয় তা বৈজ্ঞানিক উপায়ে নথিবদ্ধ করা এবং সর্বব্যাপী সমাধান বের করার এক অনন্য ও অদ্বিতীয় সুযোগ সৃষ্টি হবে।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য সারাবিশ্বের জন্য এক ভয়াবহ সমস্যা।
প্রতি বছর আনুমানিক ৯০ লাখ টন প্লাস্টিক সমুদ্রে জমা হয়। এর পেছনে নদীগুলো একটি বড় ভূমিকা রাখে। কারণ প্লাস্টিক চূড়ান্তভাবে সমুদ্রে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নদীগুলো কনভেয়র বেল্টের মতো কাজ করে।
কয়েকটি আন্তর্জাতিক নদী নিয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ‘প্ল্যানেট অর প্লাস্টিক?’ উদ্যোগের প্রথম অংশ ‘সি টু সোর্স: গঙ্গা’ শীর্ষক অভিযানটি। এ উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য হলো একবার ব্যবহৃত হয় এমন প্লাস্টিক ব্যাপকভাবে কমিয়ে ফেলা, যা প্রতিনিয়ত সাগরে এসে জমা হচ্ছে।
গত বসন্তে গঙ্গায় প্রাথমিক অভিযানের পর অভিযাত্রী দলটি বর্ষা মৌসুমে এ অভিযান পরিচালনা করার পরিকল্পনা করেছে, যাতে করে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব বোঝা যায়।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অপারেটিং প্রোগ্রামের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেলেরি ক্রেইগ বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্য সংকট সমাধানে নতুন নতুন সমাধান সরবরাহ করতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বদ্ধপরিকর। সমস্যা সমাধানে বিশ্বের বড় বড় বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানোর বড় সুযোগ এ ধরনের অভিযান।’
‘আমি খুবই আনন্দিত যে এ ধরনের অভিযানের ফলে বিশ্বব্যাপী নারীরা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত বিষয়ে এগিয়ে যাবে। বিশেষ করে তারা আমাদের সহায়তা করছে- কীভাবে জলসীমানা দিয়ে প্লাস্টিক প্রবাহিত হচ্ছে এবং শেষমেশ সাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিরোধেরও একটি উপায়ও বলে দিচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞান ও তথ্যভিত্তিক স্থানীয় সমাধান তৈরির সক্ষমতা অর্জনে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ফেলো জেনা জ্যামবেক এবং হিদার কোন্ডেওয়ের নেতৃত্বে বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের ১৫ সদস্যের একটি দল আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে কাজ করবে।
জ্যামবেক ও কোল্ডেওয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক্সপ্লোরার এমিলি ডানকান, ইমোজেন নাপার ও লিলিগোল সেডাঘাট এবং ভারতের ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এক্সিটার, ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়া, ইউনিভার্সিটি অব প্লেমাউথ, ডব্লিউএলএল, ওয়াল্ডটিম, জুলোজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন ও অন্যান্য ইনস্টিটিউশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক দলের সাথে কাজ করবেন।
ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবীর বিন আনোয়ার এ প্রকল্পে প্রতি ইতিমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং অভিযাত্রী দলটি যখন বাংলাদেশে কাজ করবে তখন তাদের নারী সহকর্মীদের ইন্টার্ন হিসেবে দলে অংশ নেয়ার পরিকল্পনা করছেন।
সমুদ্রে বর্জ্যের উৎসমুখ থেকেই প্লাস্টিক দূষণ কমানোর প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে, পরিবেশবান্ধব উপায়ে সমুদ্রকে প্লাস্টিকমুক্ত করাই দলটির প্রধান লক্ষ্য।
‘সি টু সোর্স: গঙ্গা’ অভিযাত্রী দল ডাব্লিউআইআইয়ের বিশেষজ্ঞদের সাথে কাজ করবে। ড. বিনোদ মাথুর, ড. এসএ হুসাইন, ড. আঞ্জু বারোথ, ড. জেএ জনসন, ড. রুচি বাড়োলা ও ড. বিটপি সিনহা এ অভিযান পরিকল্পনায় বৈজ্ঞানিক নির্দেশনা দেবেন।
দেহরাদুনের ডাব্লিউআইআইয়ের পরিচালক ড. মাথুর বলেন, ‘‘আমরা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির সাথে এ অংশীদারিত্ব নিয়ে খুবই আশাবাদী ও আনন্দিত। এ চুক্তিটি সম্প্রতি ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানী ও গবেষকদের পক্ষ থেকে নেয়া বিশুদ্ধ গঙ্গার জন্য জাতীয় মিশনের আওতায় ‘জীব বৈচিত্র্য ও গঙ্গার পুনরুজ্জীবন’ প্রকল্পগুলোর ওপর ভিত্তি করে নেয়া।’’
প্রকল্পটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞানের উন্নত গবেষণাকেন্দ্র দ্বারা সমর্থিত, যা অধ্যাপক ড. জিএম ভূঁইয়া এবং অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের নির্দেশনায় পরিচালিত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সাথে এ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সহযোগিতা করতে পেরে অনেক আনন্দিত। আমাদের অঞ্চল ও এর বাইরেও প্লাস্টিক দূষণ কমাতে অভিযাত্রী দলের সাথে কাজ করার জন্য আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছি।’
‘সি টু সোর্স: গঙ্গা’ অভিযান প্লাস্টিক দূষণকে ভূমি, পানি ও মানুষ- এ তিনটি মাত্রায় বিভক্ত করেছে।
ভূমিতে কর্মরত দলটি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহারের পর প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিচালন পদ্ধতি এবং পরিবেশে প্লাস্টিকের ধরন ও গতিবিধি পরিমাপ করবে।
পানিতে কর্মরত দলটি বাতাস, পানি, পলল ও নদী নির্ভর জীবদের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা সম্পর্কে অধ্যয়ন করবে।
আর্থসামাজিক দলটি অভিযানের আওতাভুক্ত স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোতে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা ও ধারণার জরিপ সম্পন্ন করবে। পাশাপাশি গৃহস্থালি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং এ সমস্যার স্থানীয় সমাধান পদ্ধতি সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জন করবে।
অভিযানের সময় দলটি স্থানীয় অংশীদারদের সাথে তাদের বৈজ্ঞানিক ফল প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ করবে, যার মাধ্যমে তারা প্লাস্টিক দূষণ এবং আচরণ পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করবে।
এটি এখন পর্যন্ত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অভিযানে সবচেয়ে বড় নারী দল, যারা এ প্রথম পলল, পানি, বাতাস ও ভূমিতে প্লাস্টিক দূষণের ওপর চার-মাত্রিক সমন্বিত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্লাস্টিকের বর্জ্যকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য এবং সমাধানগুলো অবহিত করার জন্য এ আন্তবিষয়ক দলটি উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে।
এ দ্রুত মূল্যায়ন পদ্ধতি থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী অভিযানের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
এ প্রাথমিক অভিযানটি বঙ্গোপসাগর থেকে শুরু হয়ে পদ্মা নদীর মধ্য হয়ে হিমালয়ের পাদদেশে গঙ্গা নদীর উৎসে গিয়ে শেষ হবে।
দলটি তাদের অভিযানের সব অভিজ্ঞতা তাৎক্ষণিকভাবে আদান-প্রদান করার পরিকল্পনা করেছে, যা জানতে ওয়েবে NatGeo.org/plastic অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে #ExpeditionPlastic অনুসরণ করতে হবে।