আষাঢ় চলে গেল শ্রাবণও শেষের পথে, অথচ খুলনায় ভারি বৃষ্টিপাতের দেখা নেই। বর্ষা মৌসুমে আমন আবাদের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত বৃষ্টি। প্রতিদিন আকাশে মেঘের দেখা মিললেও বৃষ্টির দেখা মিলছে না। সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকদের মনে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির অভাবে আমন বীজতলা তৈরিতে হয়েছে দেরি। রোপণও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে প্রভাব পড়তে পারে শীতকালীন ফসল ও বোরো চাষেও। তবে কৃষকেরা আশা করছেন শিগগিরই বৃষ্টি হবে এবং বীজতলার জন্য উপযুক্ত হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, খুলনা জেলায় ১ ফসলি জমি রয়েছে ৪৪ হাজার ৩শ ৭০ হেক্টর, দুই ফসলি জমি রয়েছে ৫১ হাজার ৬শ’ ২০ হেক্টর এবং তিন ফসলি জমি রয়েছে ৪৮ হাজার ৭শ’ ৭২ হেক্টর এবং মোট ফসলি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৯৩ হাজার ৯শ’ ২৬ হেক্টর।
যদিও অনেক এলাকায় আমন চাষের জমিতে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ কম হয়। আষাঢ় থেকে আকাশের দিকে চেয়ে থেকে অনেক কৃষক সেচ দিয়ে আমনের বীজতলা তৈরি করেছেন। পরে কিছুটা বৃষ্টি হওয়ায় খরচও একটু কমেছে। তবে আবারও বৃষ্টি কমে যাওয়ায় অনেকটা শঙ্কিত রয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। তাই তারা তাকিয়ে আছে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির জন্য। অনেক এলাকায় বীজতলায় পড়ে আছে রোপণ উপযুক্ত বীজ।
খুলনা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জুন ও জুলাই মাসে খুলনায় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৫শ’ ৩০ মিলিমিটার। আর চলতি বছরের জুন ও জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪শ’ ৪৪ মিলিমিটার।
ডুমুরিয়ার শোভনা এলাকার কৃষক মো. কামাল হোসেন জানান, কিছু করার নেই। বৃষ্টি না হলে শীতকালীন সবজি, বোরো সবই দেরিতে উঠবে। তবে এখনও যদি ভারি বৃষ্টি হয় তাহলে কিছুটা পুষিয়ে যাবে।
কয়রা আমাদী বাজার এলাকার মো. রিপন শেখ জানান, কয়রা এলাকায় লবণাক্ততা বেশি। বৃষ্টি না হলে এখানকার কৃষকরা বিপাকে পড়ে। বৃষ্টির পানিতে বেশি লবণ কাটে, যা সেচের পানিতে কাটে না। রোপনে দেরি হলে কাটতেও দেরি হবে। ফলে অন্য পরবর্তী ফসল উঠতে দেরি হবে।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম মিজান মাহমুদ জানান, কয়রা উপজেলায় ১৫ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি আমন আবাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের আমন ধান রোপণ শুরুও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী দিন থেকে বৃষ্টিপাত হবে এবং কৃষকরা উপকৃত হবে।’
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, আগামী দু-তিনদিন বৃষ্টি না হলেও মঙ্গলবার থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হলেও খুলনায় বৃষ্টি হয়েছে অনেক পরে। আরও আগে বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল। কৃষকরা কিছুটা পিছিয়ে গেছে। তবে এ বৃষ্টি যদি আরও কয়েকদিন আগে হতো তাহলে আউশে আরও ভালো ফলন পাওয়া যেত।