মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহীর কমিটির (একনেক) সভায় ১৩ হাজার ২১৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।
প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয়ের মধ্যে আট হাজার ৪৭৯ কোটি ২২ লাখ টাকা সরকারি তহবিল, ৪৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল এবং বাকি চার হাজার ২৯০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে পাওয়া যাবে।
একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে চলতি অর্থবছরের অষ্টম একনেক সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়।
সভা শেষে সাংবাদিকদে এ তথ্য জানান অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান।
তিনি বলেন, নৌযানের স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদ চালাচল নিশ্চিত করার জন্য পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারে ব্যয় হবে চার হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে চার নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার কাজ বাস্তবায়ন করবে।
রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও দিনাজপুর, ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ২২৭ কিলোমিটারকে দ্বিতীয় শ্রেণির নৌপথে উন্নীত করার জন্য খনন করে ১০০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত এবং তিন মিটার গভীর করা হবে।
এছাড়া, ধরলা নদীকে তৃতীয় শ্রেণির নৌপথে উন্নীত করার জন্য ৬০ মিটার অংশ খনন করে ৩৮ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত এবং দুই মিটার গভীর করা হবে।
প্রয়োজনীয় খনন করে পুনর্ভবাকে তৃতীয় শ্রেণির নৌপথে এবং তুলাই নদীকে চতুর্থ শ্রেণির নৌপথে উন্নীত করা হবে।
আজ অনুমোদিত মোট ১৫ প্রকল্পের মধ্যে ১০টি নতুন এবং পাঁচটি সংশোধিত।
কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়) (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্পে ব্যয় হবে দুই হাজার ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় উল্লেখ করেছেন- আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্র হওয়ার সব সম্ভাবনা থাকা কক্সবাজার বিমানবন্দরকে এমনভাবে উন্নয়ন করা হবে যাতে বোয়িং-৭৭৭ বা এয়ারবাস-৩৮০ এর মতো প্রশস্ত আয়তনের উড়োজাহাজ সেখানে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারে।
একনেক সভায় এক হাজার ২৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের ‘রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (আরওএসসি) (তৃতীয় সংশোধিত) প্রকল্পও অনুমোদন করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শিশুদের নিজস্ব বা ইংরেজি ভাষায় অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা দেয়া হবে। এ জন্য প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সভায় অনুমোদন পাওয়া বাকি প্রকল্পগুলো হলো- ৩৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি-মাটিরাঙ্গা-খাগড়াছড়ি সড়ক (আর-১৬০) উন্নয়ন (চট্টগ্রাম অংশ) প্রকল্প, ২৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর, ভিতরবন্দ-নাগেশ্বরী মহাসড়কের দুধকুমার নদীর ওপর সোনাহাট সেতু নির্মাণ প্রকল্প, ১০৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় জার্মানির বার্লিনে বাংলাদেশ চ্যান্সরি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প ও ১০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িঘাটে গুঁড়ো দুগ্ধ কারখানা স্থাপন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প।
আরো অনুমোদন পেয়েছে- এক হাজার ৮৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প, ৩৪৩ কোটি ৯১ লাখ টাকায় মেঘনা নদীর ভাঙন হতে ভোলা সদরের রাজাপুর ও পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন রক্ষার্থে তীর সংরক্ষণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প, ১৫৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, ৩২২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, ১৬৫ কোটি ২৮ লাখ টাকায় জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রকল্প, ২৫০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প, ৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্প এবং এক হাজার ৫০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্প।