সোমবার বেলা ১১টা থেকে দিনব্যাপী থেমে থেমে কয়েক দফা সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জবি শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের অনুসারীরা একত্র হয়ে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়।
পরে বেলা ১১টার দিকে পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের ধাওয়া দিয়ে বের করে দেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হন।
এরপর বিদ্রোহী নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাস ফটক থেকে সরে গেলে স্থগিত কমিটি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে মোবাইলে ছবি ধারণকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা হয়। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
বিকেল ৩টার দিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা প্রধান ফটকের সামনে বিদ্রোহী নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে আবারও দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এ সময় সংবাদ সংগ্রহকালে সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক লতিফুল ইসলাম, দৈনিক সংবাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাকিব, খবর পত্রের সোহাগ রাসিফ, বিডি ২৪ রিপোর্টের সানাউল্লাহ ফাহাদ আহত হন।
আহত সাংবাদিকদের মধ্যে রাকিবকে সুমনা হাসপাতাল এবং লতিফুল ইসলামকে ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা আবারও ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের হাতে ককটেল, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, রামদা, বটি, হকি স্টিকসহ দেশীয় নানা অস্ত্র দেখা যায়।
এদিকে সংঘর্ষে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস এবং ক্যাম্পাসের আশপাশের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। রায়সাহেব বাজার থেকে সদরঘাটের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়।
দিনব্যাপী সংঘর্ষে সাংবাদিকদের পাশাপাশি জবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসান আহমেদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামানসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, সুমনা হাসপাতাল, ন্যাশন্যাল মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কী হচ্ছে তা আমরা জানি না। এটা জানার কথা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। কারা কী করছেন সেটার দায় এখন আমাদের ওপর বর্তায় না।’
স্থগিত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে বার বার কল দেয়া হলেও তিনি তা কেটে দেন।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজুয়ানুল হক শোভন বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর আঘাত অত্যন্ত দুঃখজনক। তাদের (জবি ছাত্রলীগ) একবার স্থগিত করে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জবির সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুপক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, ‘বাইরে শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। ক্যাম্পাসের ভেতর কোনো কিছু হয়নি।’
‘আমরা সকাল থেকে এ পর্যন্ত পুলিশকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’, যোগ করেন তিনি।
কোতোয়ালি জোন পুলিশের সহকারী কমিশনার বদরুল রিয়াদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়াতে চাইলে আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিই। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’