সোনারগাঁ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পুলিশ সদরদপ্তর থেকে তথ্য আসে যে মেহেদী বা মাহাদী হাসান নামে বা এ ধরনের কেউ দুবাই যাবে এমন কোনো ব্যক্তি সোনারগাঁয়ে আছেন কিনা। পাশাপাশি মৃতদেহের একটি ছবি পাঠানো হয়েছিল। ওই ছবি নিয়ে রবিবার রাতে পলাশদের বাড়িতে গেলে তার পরিবার পরিচয় নিশ্চিত করে।’
স্থানীয়রা জানান, ২০১১ সালে স্থানীয় তাহিরপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন পলাশ। এরপর তিনি সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।
পলাশরা তিন বোন ও এক ভাই। মা রেনু আক্তার গৃহিণী। বাবা পিয়ার জাহান ১৯৯০ সাল থেকে বিদেশে থাকতেন। প্রবাসী বাবার দেয়া টাকা-পয়সা নিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করতেন পলাশ। এর মধ্যে চলচ্চিত্র শিল্পে জড়ান তিনি। কয়েকটি শর্টফিল্মও তৈরি করেন বলে জানায় পরিবার। একটা সময় বাসা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন পলাশ। বাড়িতে তেমন যেতেন না। মাঝে মধ্যে টাকার প্রয়োজন হলে বাড়ি যেতেন।
বাবা পিয়ার জাহান সাত বছর আগে বিদেশ থেকে স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসেন। এলাকায় একটি মুদি দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।
পিয়ার জাহান জানান, গত ২০-২৫ দিন আগে বাড়িতে আসেন পলাশ। সাধারণত তিনি বাড়িতে এত দিন টানা থাকতেন না। কিন্তু গত ২০-২৫ দিনে তার অনেক পরিবর্তন আসে। সর্বশেষ শুক্রবার বাসা থেকে বিদায় নেয়ার সময় মাকে জানান যে তিনি ভ্রমণ ভিসায় দুবাই যাচ্ছেন।
পলাশের স্ত্রী জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার পাওয়া চিত্রনায়িকা সিমলা। নিজের পরিচয় গোপন করে লন্ডন প্রবাসী মাহি বি জাহান পরিচয়ে সিমলাকে বিয়ে করেন তিনি। বিমান ছিনতাই করে স্ত্রী সিমলার সাথেই কথা বলতে চেয়েছিলেন পলাশ। তার পরিবারেরও দাবি, চিত্রনায়িকা সিমলা পলাশ ওরফে মাহি বি জাহানের স্ত্রী। প্রায় ১০ মাস আগে চিত্রনায়িকা সিমলাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন পলাশ। বাবা-মায়ের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেন।
পিয়ার জাহান বলেন, ‘এক-দেড় মাসের ব্যবধানে দুবার আসে পলাশ ও সিমলা। দ্বিতীয়বার এসে পলাশ বলে সে সিমলাকে বিয়ে করেছে। সিমলাও বিষয়টি স্বীকার করে। এর পরে পলাশের মায়ের সঙ্গে তিন মাসের মতো সিমলার কথাবার্তা ও যোগাযোগ হয়। পরে আর যোগাযোগ হয়নি। হয়তো সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল।’
সোমবার বিকালে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জানান, পলাশের বিরুদ্ধে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে র্যাব সূত্রে জানা গেছে, সাত বছর আগে এক কিশোরী অপহরণ মামলায় ২০ দিন কারাগারে ছিলেন পলাশ। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পলাশের বিরুদ্ধে এক কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগে মামলা করা হয়। পরে ওই বছরের ২৪ মার্চ নেমরা মারমা নামে এক সহযোগীসহ পলাশকে গ্রেপ্তার করে অপহৃত কিশোরীকে উদ্ধার করে র্যাব।
র্যাবের পরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া) মুফতি মাহমুদ খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা তার প্রিভিয়াস ক্রিমিনাল রেকর্ড খতিয়ে জানতে পেরেছি এ ঘটনা।’
এ বিষয়ে পিয়ার জাহান বলেন, ‘এক মেয়ের সাথে পলাশের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। আমরা ওই মেয়ের সাথে পলাশের বিয়ের কথা বললেও তার বাবা রাজি হননি। মেয়ের বাবার করা এক মামলায় পলাশ ২০ দিন কারাগারে ছিল। পরে তাকে জামিনে ছাড়িয়ে আনলে আপসের মাধ্যমে মামলা তুলে নেয় মেয়ের বাবা।’
প্রসঙ্গত, রবিবার ঢাকা থেকে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজ ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টার উত্তেজনার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছিনতাই চেষ্টার অবসান হয়। কমান্ডো অভিযানে উড়োজাহাজে থাকা অস্ত্রধারী তরুণ পলাশ নিহত হন।