ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান এই আদেশ দেন এবং একই সাথে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটির ওপর আগামী ২৩ জুন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন।
আলতাফ হোসেন জানান, চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেননি। রায়টি বহাল রেখে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।
এর আগে গত ১৯ মে হাইকোর্ট ১৫টি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি করে ওই রায় দেন। রায়ে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮ এর ২(১১) ধারা অনুযায়ী সরকার কর্তৃক বয়সসীমা নির্ধারণের বিধানকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
এছাড়া আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বকেয়াসহ বন্ধ থাকা সম্মানী ভাতা পরিশোধ বা চালু করতে বলেছে আদালত। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে তা কার্যকর করতে বলা হয়।
২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি আরেকটি গেজেটের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর জারি করা গেজেটে বয়স প্রতিস্থাপন করে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স ১২ বছর ৬ মাস করা হয়।
এর আগে ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর যে পরিপত্রটি জারি করা হয় পরবর্তীতে সেটিই ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা’র সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ’ করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
তাতে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত ন্যূনতম ১৩ বছর হতে হবে। এই দুটি গেজেট ও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮ এর ২(১১) ধারা অনুযায়ী সরকার কর্তৃক বয়সসীমা নির্ধারণের ধারার আংশিক চ্যোলেঞ্জ করে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধারা হাই কোর্টে পৃথক ১৫টি রিট অবেদন করেন।
রিটকারীদের একজন বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক মাহমুদ হাসান রিট আবেদনে বলেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই ১৯৮৮ সালের ২৬ জুন অধিদপ্তরে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিপত্রে বেঁধে দেয়া ন্যূনতম বয়সসীমা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর তার বয়স ছিল ১২ বছর ৪ মাস ১২ দিন। এতে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। ওইসব রিটে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট।
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলে, ‘পৃথিবীর কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের ফ্রেমে বেঁধে রাখা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ মানুষ আবেগ দিয়ে করে, দেশ প্রেম থেকে করে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বয়স, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে যোগ দিয়েছেন। ফলে মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে বয়স কোনো কারণ না।’
রায়টি স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন জানিয়েছেন।