মঙ্গলবার কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
জোলি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের তাদের কার্যক্রমের জন্য অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি রাখাইন উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন এবং ইউএনএইচসিআর ও অন্যদের সাথে কাজ করার প্রতি জোর দেন। তবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা এ মুহূর্তে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে না।
বিশেষ দূত আরও বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গারা অন্যতম। তাদের নাগরিকত্বসহ সব অধিকার দিয়ে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া উচিত। এ জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।’
‘আমি দুদিন ধরে রোহিঙ্গা শিবিরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছি। রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। এক রোহিঙ্গা নারীকে প্রশ্ন করেছিলাম যে তাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবে কি না? উত্তরে তিনি আমাকে জানিয়েছেন- তাকে গুলি করে মেরে ফেললেও মিয়ানমারে ফিরে যাবেন না। কাজেই বুঝা যায়, মিয়ানমারের রাখাইনে এখনও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়নি,’ যোগ করেন তিনি।
হাত দিয়ে পাশের রোহিঙ্গা শিবির দেখিয়ে জোলি বলেন, ‘দেখুন আমরা সবাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থান করছি। এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ জন্য আমি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুতুপালং সম্প্রসারিত শিবির-৪-এ পৌঁছান অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য গড়া শিক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন ও উপস্থিত রোহিঙ্গাদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
পরে তিনি কুতুপালংয়ে ৩ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে রিলিফ ইন্টান্যাশনাল পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। একই শিবিরে তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারীদের সাথে কথা বলেন এবং দুর্দশার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন। দুপুরে তিনি ৪ নম্বর শিবিরে হোপ ফাউন্ডেশন পরিচালিত হাসপাতাল পরিদর্শন করে চিকিৎসাধীন রোহিঙ্গা নারীদের সাথে কথা বলেন।
এ সময় ইউএনএইচসিআরসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জোলি সোমবারও বিভিন্ন শিবির পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের গল্প শুনেন।
ইউএনএইচসিআরের বিশেষ দূত হিসেবে রোহিঙ্গাদের মানবিক প্রয়োজনগুলো নিরূপণ করতে এ অভিনেত্রী সোমবার সকালে কক্সবাজার আসেন।
আশ্রয়দানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেসব গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে তাও তিনি মূল্যায়ন করেছেন বলে ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনসহ অন্য সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সফর শেষ করবেন এ বিশেষ দূত।
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এর আগে ২০০৬ সালে ভারত ও ২০১৫ সালের জুলাইয়ে মিয়ানমার সফরকালে বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের সাথে দেখা করেছিলেন।
ইউএনএইচসিআরের সাথে কাজ করা জোলি ২০১২ সালের এপ্রিলে সংস্থার বিশেষ দূত হিসেবে যোগ দেন।
নিজের ভূমিকার মাধ্যমে জোলি বিশ্বের বিভিন্ন সংকট এবং ব্যাপকভাবে মানুষের স্থানচ্যুত বা বাস্তুচ্যুত হওয়ার ব্যাপারে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়া এ হলিউড অভিনেত্রী বৈশ্বিক শরণার্থী বিষয়ক বিভিন্ন আলোচনায় নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে থাকেন।
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ইউএনএইচসিআরের বিশেষ দূত হওয়ার আগে সংস্থাটিতে ২০০১ সাল থেকে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ছিলেন।
বিরামহীনভাবে কাজ করে যাওয়া জোলি প্রায় ৬০টির মতো মাঠ পর্যায়ের মিশন পরিদর্শন করেছেন এবং বস্তুচ্যুত বা শরণার্থীদের জন্য নিজেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভাবকের স্তরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।