নিজের ভেরিফাইড পেজে ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এ অভিনেতা বলেন, ‘সাদেক বাচ্চু ভাই শুধু আমার সহশিল্পী ছিলেন না, তিনি ছিলেন চলচ্চিত্রে আমার অভিভাবকদের একজন। আমাকে তিনি সবসময় আগলে রেখে ভালোর পথে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিতেন। মানসিক সাপোর্ট দিয়ে সাহস যোগাতেন। নিয়মিত আমার খোঁজখবর রাখতেন। সহশিল্পী কিংবা অভিভাবকত্বের বাইরেও বাচ্চু ভাই আমার প্রতি এক অদৃশ্য মায়া দেখাতেন। তিনি আর নেই শোনামাত্রই আমার ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে।’
‘চলচ্চিত্রে এতগুলো বছর ধরে কাজ করে অনেকের সাথে পরিচয় ও সুসম্পর্ক হলেও সবাই আপন হতে পারেনি। হাতে গোনা কিছু মানুষ হৃদয়ে ঠাঁই পেয়েছে। তাদেরই একজন ছিলেন সাদেক বাচ্চু ভাই। তার সাথে মন খুলে কথা বলতাম। সবকিছু শেয়ার করতাম। তিনি আমার ভালো কাজে যেমন উৎসাহ দিতেন, তেমনি মন্দ শুনলে খুব কষ্ট পেতেন। এমন গুণী অভিভাবক আর কোথায় পাবো,’ বলেন তিনি।
শাকিব উল্লেখ করেন, ‘গত ২০ বছর ধরে আমরা একসাথে পথ চলেছি। সংস্কৃতির সব মাধ্যমে সফল হওয়া এ মানুষটিকে আজ হারালাম। একজন সহকর্মী হারানোর চেয়ে আমার ব্যক্তিগত বেদনা লাগছে। মনে হচ্ছে, আমি আমার কোনো এক স্বজনকে হারালাম। পরম শ্রদ্ধায় সাদেক বাচ্চু ভাইয়ের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। যেখানেই থাকবেন দোয়া করি শান্তিতে থাকবেন।’
প্রসঙ্গত, জাতীয় পুরস্কার পাওয়া চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেতা সাদেক বাচ্চু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
তিনি ১২টা ৫ মিনিটে রাজধানীর মহাখালির ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন বলে তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে। সেখানে তিনি শনিবার বিকাল থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
সাদেক বাচ্চু শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হলে শুক্রবার তাকে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৩ সালে তার হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।
পর্দায় সাদেক বাচ্চু হিসেবে পরিচিত মাহবুব আহমেদ ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
ডাক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সাদেক বাচ্চু রূপালী পর্দায় প্রবেশ করেন ১৯৮৫ সালে ‘রামের সুমতি’ সিনেমা দিয়ে। তিনি পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার নিয়মিতভাবে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়ের ভিত্তি গড়ে দেয় এহতেশামুল হকের ‘চাঁদনী’।
পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে সুজন সখী (১৯৯৪), পাপী শত্রু (১৯৯৫), আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭), লাল বাদশা (১৯৯৯), মরণ কামড় (১৯৯৯), সাহসী মানুষ চাই (২০০৩), মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯), আমার স্বপ্ন আমার সংসার (২০১০), জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার (২০১৩), মহুয়া সুন্দরী (২০১৫), পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২ (২০১৬) ও একটি সিনেমার গল্প (২০১৮)।
তিনি সর্বশেষ ঢালিউড মেগাস্টার শাকিব খানের ক্যাপ্টেন খান (২০১৮) সিনেমায় অভিনয় করেন।
সাদেক বাচ্চু একটি সিনেমার গল্প চলচ্চিত্রে খলচরিত্রে সেরা অভিনয়ের জন্য ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।