চুয়াডাঙ্গা ১০ ফেব্রুয়ারি (ইউএনবি)- বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রথম দুইতলা বিশিষ্ট চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা রেল স্টেশনটি আনুষ্ঠানিক বন্ধ ঘোষণা করা না হলেও এর কার্যক্রমকে সংকুচিত করা হয়েছে। কমিয়ে ফেলা হয়েছে জনবল।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওই স্টেশনে থেকে দুজন স্টেশন মাস্টারসহ পাঁচজনকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে নামমাত্র দুইজন বুকিং মাস্টার দিয়ে কোনো রকম স্টেশনটি চালু রাখা হয়েছে।
আলমডাঙ্গা স্টেশন মাস্টার শরীফুল ইসলাম মন্টু জানান, আলমডাঙ্গা স্টেশনে মোট জনবলের পদ রয়েছে ১৩টি। কিন্তু দীর্ঘদিন মাত্র ৭ জন দিয়ে আমরা স্টেশনের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলাম।
তিনি বলেন, এই অবস্থায় গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাসুম স্বাক্ষরিত এক আদেশে ওই সাতজনের মধ্যে পাচঁজনকেই প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এই স্টেশন মাস্টার আরও জানান, এমন নির্দেশনার পর স্টেশনটিতে থাকবে না চিরচেনা আগের সেই দৃশ্য। বাজবে না ঘণ্টা, জ্বলবে না সিগন্যাল বাতি। এমন কি জানা যাবে না কাঙ্খিত ট্রেনের সময়সূচিও।
‘এছাড়া আলমডাঙ্গা উপজেলার বেশ কয়েকটি রেলক্রসিংও হয়ে পড়বে অরক্ষিত। আর দুজন বুকিং মাস্টার দিয়ে নামমাত্র স্টেশনটি চালু থাকবে’, বলেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ গোটা আলমডাঙ্গা উপজেলাবাসী। তারা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর আন্দোলনেরও হুমকি দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রথম রেললাইনের গর্ব ও ঐতিহ্যবাহী একমাত্র দোতলা রেলস্টেশনের গৌরব চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের। এ স্টেশন থেকে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্বও পেয়ে থাকেন। জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর জেলার একাংশের শত শত মানুষ প্রতিদিন এ স্টেশন ব্যবহার করে রেল ভ্রমণ করে থাকেন। এরপরও কেন কর্তৃপক্ষ স্টেশনটি থেকে জনবল প্রত্যাহার করে এটির কার্যক্রম সংকুচিত করেছেন সেই প্রশ্ন এ অঞ্চলের মানুষের।
আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহ আলম মন্টু জানান, দেশের প্রথম দুইতলা বিশিষ্ট আলমডাঙ্গা স্টেশনটি মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি নিদর্শনও বটে। তাছাড়া ঐতিহ্যবাহী স্টেশনটি প্রতিদিন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে থাকেন। প্রতিবছর সরকার এ স্টেশন থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্বও পেয়ে থাকে। এরপরও রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ সিদ্ধান্তকে আমরা হটকারী বলে মনে করি। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান স্থানীয় এই প্রবীণ সাংবাদিক।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মোহাম্মদ জকু পশ্চিমা রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ১৮টি ট্রেন চলাচল করে। এ স্টেশনে যাত্রীর এতটাই চাপ বেশি থাকে যে, প্রতিদিন শতশত মানুষ টিকিট না পেয়েও দাঁড়িয়ে ট্রেন ভ্রমণ করেন। এরপরও কেন কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তা মাথায় আসে না।
তিনি আরও বলেন, স্টেশন থেকে জনবল কমানোর কারণে স্টেশনের অদূরের রেল ক্রসিংগুলো ঝুঁকিপূণ ও অরক্ষিত হয়ে পড়বে। আর এ কারণে থাকবে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশঙ্কাও।
আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার বলেন, রেল বিভাগের এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। ‘আলমডাঙ্গা স্টেশন বাঁচাও’ নামে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে মানববন্ধন, রেলপথ ও রাজপথ অবরোধের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রতি মাসে রেলওয়ের অংসখ্য কর্মকর্তা কর্মচারী অবসরে যাচ্ছেন, কিন্তু নতুন জনবল নিয়োগ হচ্ছে না। জনবল চেয়ে বারবার মন্ত্রণালয়ে তাগিদ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। এমন পরিস্থতিতে আলমডাঙ্গা স্টেশন থেকে জনবল প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।
তিনি আরও জানান, শুধু আলমডাঙ্গা স্টেশন থেকে নয়, এর আগেও আরও ৫১টি স্টেশন থেকে জনবল গুটিয়ে নেয়া হয়েছে।