স্থানীয় বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে ব্যবসায়ীরা রাতের আঁধারে গরু-মহিষ এনে সুরমা ও লোভা নদী পার করে স্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রয় করছে। তাই প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সীমান্ত এলাকার বাজার ও সড়কে গরু-মহিষের জমজমাট হাটবাজার বসতে দেখা যায়।
এলাকাবাসী জানান, চোরাকারবারীরা সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাটের মূখে তাদের মনোনীত পাহারাদার বসিয়ে রাখে। এসব পাহারাদারদের ছত্রছায়ায় গরু-মহিষের লাইনম্যানরা কিলোমিটার প্রতি ৫০০ অথবা গরুপ্রতি ১ হাজার টাকা, মহিষ ২ হাজার টাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে এক লাইনম্যানের কাছ থেকে অপর লাইনম্যানের কাছে পৌঁছে দেয়।
এদিকে স্থানীয়রা বলছে, কানাইঘাটের দনা ও লোভাছড়া সীমান্ত এলাকায় করিডোর অথবা বিট/খাটাল না থাকায় প্রতি বৎসর সরকার এখান থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
কানাইঘাটের লোভাছড়া বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার শামছুল হক বলেন, সীমান্তের অপার থেকে চোরাকারবারীদের মাধ্যমে নিয়ে আসা গরু-মহিষ আটক করতে আমরা ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করে থাকি। কিন্তু কোনো ভাবেই এদেরকে পুরোপুরি দমন কিংবা গরু চোরাচালান রোধ করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, অপারের চোরাকারবারীরা প্রতিদিন স্বল্প দামে গরু-মহিষ এপারের চোরাকারবারীদের কাছে বিক্রয় করে থাকে। সেই কারণে পাহাড় টিলা ও বন জঙ্গল ভেঙে এপারের চোরাকারবারীরা গরু-মহিষ দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসে।
‘আমরা কানাইঘাটের প্রত্যেকটি বিজিবি ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই ১০/১৫টি করে গরু-মহিষ আটক করে থাকি। এসব গরু-মহিষের চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে বিজিবি’র পক্ষ থেকে মামলাও হয়েছে। তারপরও বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু-মহিষ দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসতে রাস্তাঘাটে তারা পর্যাপ্ত সোর্স ব্যবহার করে’, বলেন বিজিবি কর্মকর্তা।
জানা গেছে, অবৈধ ভাবে নিয়ে আসা গরু-মহিষগুলোর চোরাকারবারী ও ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বিভিন্ন বাজারের ইজারাদারের কাছ থেকে বৈধ বিক্রয় চালান রশিদ নিয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ, কালিগঞ্জ, ছাগলী, চারখাই, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জসহ সিলেট শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রয় করেন।
এছাড়া সীমান্ত এলাকার মুলাগুল বাজার, কান্দলা নয়াবাজার, মন্তাজগঞ্জ বাজার, দনা বাজার, আন্দুর মূখ বাজার, সুরইঘাট বাজার, বড়বন্দ বাজার, বাদশা বাজারে সীমান্তের অপার থেকে নিয়ে আসা অধিকাংশ গরু-মহিষ বিক্রয় হয়ে থাকে।
ওইসব এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, যেহেতু সীমান্তের অপার থেকে গরু-মহিষ দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসা কোনোভাবে বন্ধ হচ্ছে না। সেজন্য কানাইঘাটের দনা ও লোভাছড়া সীমান্ত এলাকার সোনারখেয়ড় নামক স্থানে সরকারি ভাবে করিডোর অথবা বিট/খাটাল স্থাপন করা হলে একদিকে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুস্থ ও স্বাস্থ্য সম্মত গরু-মহিষ দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে।