উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণ করে মেসার্স হামিদ ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয়রা জানান, ওই বছর বর্ষার আগে সেতুটি নির্মাণের পর চলাচলের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। অথচ সে বছরই ভরা বর্ষায় সেটি দেবে যায়। এছাড়া বর্ষার পানির তোড়ে সেতুর দুপাশের সংযোগস্থলের মাটিও সরে গেছে।
এলাকাবাসীর দাবি, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় সেতু নির্মাণের চার/পাঁচ মাসের মধ্যে এর মাঝখানে ভেঙে দেবে যায়। এছাড়া খালের দূরত্ব অনুসারে সেতু বড় আকারে নির্মাণ না করে ছোট আকারে নির্মাণ করা হয়। এরপর মূলখালের মধ্যে মাটি টেনে সেতুর সংযোগস্থল পূরণ করায় বর্ষার পানির তোড়ে সেই মাটিও ভেসে যায়।
উলিপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ত্রাণ শাখার এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে ২০১৫ সালে। আর আমি এখানে এসেছি এক বছর। আমি কিছুদিন আগে ভাঙা সেতুটির কথা শুনে ওই এলাকায় যাই। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলি। সেতুর কাজ ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে তা বলতে চাই না। তবে আমার মনে হয়েছে বিলের আয়তনের চেয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য কম হওয়ায় বন্যার পানির স্রোতে সেটি দেবে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সে সময়কার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমানের সাথে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন সে সময় ইউপি চেয়ারম্যানের পীড়াপীড়িতে সেতুটি সেখানে নির্মাণ করা হয়েছিল। কাজ খারাপ হয়নি, বন্যার প্রবল পানির তোড়ে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।’
এদিকে সেতুটি ভেঙে দেবে যাওয়া এবং দুপাশের মাটি সরে যাওয়ার পর এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে এর দু’পাশে পায়ে হেঁটে চলাচলের ব্যবস্থা করেন। এ অবস্থায় ৪ বছর ধরে যাতায়াতে ভোগান্তিতে রয়েছে ওই এলাকার ২০টি গ্রামের মানুষ।
সেতু এলাকার বাসিন্দা শামসুল ইসলাম বলেন, ‘যখন এখানে সেতু নির্মাণ হয়, তখন চান নামের একজন চেয়ারম্যান ছিলেন। এখানকার স্থানীয় বালু দিয়ে সেতুর কাজ করায় আমরা এলাকাবাসী বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কথায় কোনো কাজ হয়নি। বরং সে সময় চেয়ারম্যান এসেও ঠিকাদারের পক্ষ নিয়েছিল। অথচ অল্প কয়েকদিনের মাথায় সেতুটি ভেঙে যায়। আর বর্ষায় দুই পাড়ের মাটি সরে গেছে।’
তিনি জানান, সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সড়কের এই সেতুর ওপর দিয়ে এই অঞ্চলের ২০টি গ্রামের ছাত্র/ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে যায়। এছাড়া এখান দিয়ে এই অঞ্চলের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ তাদের ধান-চালসহ কোনো মালপত্র বহন করতে পারছে না। ফলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে হয়। সেতুটি পুনঃনির্মাণ করা খুবই জরুরি বলে জানান স্থানীয় এই বাসিন্দা।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার পর খোঁজখবর নিচ্ছি। কেন সেতুটি নির্মাণের বছরেই ভেঙে গেছে বা দেবে গেছে বিষয়টা তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দেয়া হবে।’