যশোর, ১২ ফেব্রুয়ারি (ইউএনবি)- ফাগুন আসতে আর মাত্র একদিন। কিন্তু ফাগুন হাওয়া বইতে শুরু করেছে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই। তাই ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, একদিন পরই আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত।
এই বসন্তের দ্বিতীয় দিনই আবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। যেদিন খোপায়, শরীর ও মনজুড়ে শুধুই রঙিন ফাগুনের সাজ। তার উপর আবার এই বসন্তেই আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস।
তাই এ দিবসগুলোর বাজার ধরতে এখন সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত যশোরের ফুলচাষীরা। তাদের কাছে ফেব্রয়ারি মাস ফুল ব্যবসায় উৎসব হিসেবেও বিবেচিত। এ সময়কে কেন্দ্র করে এখানকার ফুল ব্যবসায়ীদের থাকে বিশেষ প্রস্তুতিও।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, এবার যশোরে পাইকারি পর্যায়ে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুল চাষি ৩৫০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষে সম্পৃক্ত। এখানে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গ্লাডিওলাস ফুল। মোট ফুলের শতকরা ৪০ ভাগা চাষ হয় গ্লাডিওলাস। এরপরই ২০ ভাগ চাষ হয় রজনীগন্ধা ফুল। আর গোলাপ চাষ হয় শতকার ১৫ ভাগ।
এছাড়া এখানকার চাষিদের উৎপাদিত জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারাদেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছে।
সোমবার সরেজমিনে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারণ, নিরবাসখোলা এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে জমিতে সেচ প্রদান, গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরানো, সার কীটনাশক, আগাছা পরিস্কার করাসহ ফুলের আনুসাঙ্গিক পরিচর্যা করছেন ফুলচাষিরা। তাদের লক্ষ্য এ মাসের প্রতিটা ফুলের বাজার ধরা।
পানিসারা মাঠপাড়া এলাকার ফুলচাষি রহমত জানান, ফুল চাষে আসা বংশ পরম্পরায়। তার বাবা ফুল চাষ করতেন। এখন তিনিও ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত।
তিনি জানান, চার বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। তার মধ্য রজনীগন্ধা দুই বিঘায়। এক বিঘায় গোলাপ ও এক বিঘায় জারবেরা।
সামনে ফুলের বড় বাজার, তাইতো বাজার ধরতে সকাল-বিকাল ফুলের পরিচর্যা করছেন এই ফুলচাষি।
গদখালিতে কথা হয় তরুণ ফুলচাষি আশরাফের সাথে। তিনি বলেন, চার বিঘায় গোলাপ, দুই বিঘায় জারবেরা ও ১ বিঘায় গ্লাডিওলাস ও রডস্টিক চাষ করেছেন।
আশরাফ আরও বলেন, আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। বসন্ত দিবস, ভালবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাতে ফুল বাজারে দেয়া যায়।
‘প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় ৪ টাকার মতো পড়ে। ৭-৮ টাকা বিক্রি করা গেলে ভালো মুনাফা হয় বলে জানান এই ফুলচাষি।’
তিনি বলেন, ফুল চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি সফলভাবে ফুল চাষ করে যাচ্ছেন।
নাভারণের ফু চাষি ও ব্যবসায়ী নজরুল আলম বলেন, তিনি ফুল ব্যবসার সাথে সাথে ফুল চাষও করছেন। তার চাষের মধ্যে জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রজনীগন্ধাসহ বেশ কয়েকটি ফুল লাভজনক হয়েছে। কিন্তু তার জারবেরা ফুলে মাকল পোকা আক্রমণ করেছে। সেই সাথে সাদা মাছির উপদ্রব।
এই ফুলচাষি বলেন, কৃষি কর্মকতাদের পরামর্শ মতো কীটনাশক দিয়ে এই পোকামাকড় বিস্তার নষ্ট করার চেষ্টা করছি। গত দু-তিনমাস ব্যবসাটা কিছুটা খারাপ গেছে। সময়মতো সামনের দিবসগুলোতে যদি বাজার ধরতে পারি তাহলে ৭/৮ লাখ টাকার মতো ফুল বিক্রয় করতে পারবো।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলাসহ এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। এখন চাষ হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয় বলে জানান তিনি।
শুধু দেশে নয়, এখন এই ফুল দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও যাচ্ছে বলে জানান ফুল ব্যবসায়ীদের এই নেতা।
তিনি আরও বলেন, ফুল চাষ, ব্যবসার মাধ্যমে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবীকা নির্বাহ হয়।
আব্দুর রহিম বলেন, এই ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারা বছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি উৎসবকে সামনে রেখেই জোরেশোরে এখানকার চাষিরা ফুল চাষ করে থাকেন।
তিনি অভিযোগ করেন, কিছু অসাধু ব্যক্তি প্লাস্টিক ফুল আমদানি বা তৈরি করছে। এজন্য ফুল চাষ ও এর ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এই ফুল ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্লাস্টিক ফুল বাজারজাত ও সরবারহ বন্ধ করা গেলে ফুল চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশও ফুল রপ্তানি করা যাবে।
তিনি বলেন, ঢাকায় স্থায়ী ফুলের বাজার স্থাপন করতে পারলে ফুলের চাষ ও ব্যবসার প্রসার ঘটবে।