দেশের অন্যান্য জেলার লিচু এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসলেও বিজয়নগর উপজেলার লিচু বাজারে আসে মে মাসের প্রথম দিকে। এখানকার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে এর সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে।
বিজয়নগরে ২০০২ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ শুরু হয়। কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় এখানকার ধানের জমিগুলোকেও লিচু বাগানে পরিণত করেছেন চাষিরা।
বর্তমানে উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, আদমপুর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমোড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রূপা, শান্তামোড়া, কামালপুর, কচুয়ামোড়া ও ভিটিদাউপুর এলাকায় প্রায় পাঁচ শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে।
এসব বাগানে দেশি, এলাচি, চায়না, পাটনাই ও বোম্বাই লিচু চাষ করা হয়। বাগানে নারীসহ সব বয়সী লোকজন কাজ করেন। এছাড়াও উপজেলার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই লিচু গাছ আছে। যাদের বাড়িতেই একটু জায়গা আছে, তারা অন্যান্য ফলের গাছের সাথে লিচু গাছ লাগান।
এলাকাবাসী ও চাষিরা জানান, লিচু গাছে মুকুল আসার পর থেকে কয়েক দফা বাগান বিক্রি হয়। গাছে মুকুল ও গুটি আসার পর প্রথমে বাগান কিনেন স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার মহাজনরা। গুটি একটু বড় হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় গাছ বিক্রি হয়। লিচু আকার ধারণ করলে তৃতীয় দফায় এবং লিচু বড় হলে চতুর্থ দফায় বাগান বিক্রি হয়।
উপজেলার সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার হচ্ছে আউলিয়া বাজার। সেই সাথে মেরাশানী, মুকুন্দপুর, কাংকইরা বাজার, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল ও আমতলী বাজারসহ আরও কয়েকটি বাজারে পাইকারিভাবে লিচু বেচাকেনা হয়। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা লিচু কিনে বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে যান।
বর্তমানে এসব বাজারে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা জানান, অন্যান্য বছর শুধু আউলিয়া বাজারেই প্রতিদিন প্রায় ৮০-৯০ লাখ টাকার লিচু বেচা-কেনা হত। কিন্তু করোনার কারণে এবার একটু কম বিক্রি হচ্ছে। তারপরও বেচাকেনা ভালো চলছে।
প্রতিদিন গভীর রাত থেকে চাষি ও বাগানের মহাজনরা লিচু নিয়ে বাজারে যান। ভোর রাত ৪টা থেকে শুরু হয়ে সকাল ৯টার মধ্যেই বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, আউলিয়া বাজারসহ অন্য বাজারগুলোতে প্রতি হাজার দেশি লিচু দেড় হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকা, এলাচি ও চায়না লিচু দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা এবং পাটনাই ও বোম্বাই লিচু দুই হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হবিগঞ্জ জেলার ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন জানান, তিন দিন ধরে তিনি আউলিয়া বাজারে আসছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় লাখ টাকার লিচু কিনেন। এখন করোনার কারণে গাড়ি নিয়ে আসতে সমস্যা হচ্ছে। গাড়ি নিয়ে আসতে হলে রাস্তায় পুলিশকে বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিতে হয়।
‘লাভ একটু কম হলেও এখানকার লিচু অনেক ভালো ও মিষ্টি হওয়ায় চাহিদা থাকে বেশি,’ যোগ করেন তিনি।
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খিজির হোসেন বলেন, ‘এ বছর উপজেলায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে যা গতবছরের তুলনায় ২০ হেক্টর বেশি। কৃষি অফিস থেকে আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতাসহ সার ও কীটনাশক দিচ্ছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহের নিগার বলেন, ‘কোনো ব্যবসায়ীকে যেন হয়রানি না করা হয় সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনাবলী দেয়া আছে। কোনো ব্যবসায়ীকে হয়রানি বা বাজারের ইজারদার যদি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেয় তাহলে কেউ অভিযোগ দিলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’