বিয়ানীবাজার, ১১ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)- ভারতীয় চোরাই মোটরসাইকেলে সয়লাব দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপজেলা বিয়ানীবাজার। কাগজপত্রবিহীন এসব মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এখানকার তরুণরা। তাদের কাছে ফ্যাশনেবল মোটরসাইকেল ছাড়া যেন জীবনের কোনো মূল্যই নেই!
সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় বিয়ানীবাজারে ভারতে প্রবেশের একাধিক সড়ক পথ রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব মোটরসাইকেল এখানে চললেও ক্রমেই এগুলো ছড়িয়ে পড়ছে পুরো জেলায়।
সূত্র জানায়, বেশিরভাগ মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ আলাদাভাবে কার্টুনে প্যাকেট করে বিয়ানীবাজারে প্রবেশ করে। পরে এসব যন্ত্রাংশ ফিটিং করে অবিকল শো-রুমের মতো ডিসকভার, পালসার, সিবিজেড, ইয়ামাহা, টিভিএস, জিক্সার, এফজেড, হিরো হোন্ডা, বাজাজসহ, বিভিন্ন নামকরা ব্র্যান্ডের মোটর সাইকেল ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হয়।
আর বিয়ানীবাজার উপজেলার ভেতরে এমন মোটরসাইকেলের ব্যবহার মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনটি বৈধ কিংবা কোনটি চোরাই তা বোঝাই যেন মুশকিল হয়ে উঠেছে।
বিয়ানীবাজারকে অবৈধ মোটরসাইকেল বেচা-কেনার নিরাপদ হাট হিসেবে বেছে নিয়েছে চোরাই সিন্ডিকেটের কয়েকটি গ্রুপ। বাজার মূল্যের চেয়ে অর্ধেকেরও কম মূল্যে হাত বাড়ালেই ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল এখানে পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নিবন্ধন ব্যয় ছাড়া ১০০ থেকে ১৫০/১৭৫ সিসির মোটরসাইকেলের দেশে বাজার দর ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অথচ বিয়ানীবাজারে এ ধরনের অবৈধ মোটর সাইকেল ৫০ হাজার থেকে ৭০/৯০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
আমদানি-রপ্তানি এবং কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কাগজপত্র না থাকায় এসব মোটরসাইকেলের বৈধ নিবন্ধন নেই। কারো ক্ষেত্রে কেবল বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ক্রয়-বিক্রয় রশিদ পাওয়া যায়।
বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে ডিজিটাল সিস্টেম চালু থাকায় অবৈধ মোটরসাইকেলগুলো নিবন্ধনেরর কোনো সুযোগ থাকে না। তবৈ ঘুষ দিয়ে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন নম্বরপত্র ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র বের করা যায় বলে অনেকে জানিয়েছে।
এছাড়া, অবৈধভাবে আসা নতুন মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ও চেচিস নম্বর ঠিক রেখে হালনাগাদ সিরিয়ালের বিআরটিএ’র ভ্যাট ও নিবন্ধনের কাগজও পাওয়া অসম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বিআরটিএ’র রেকর্ডে ভ্যাট ও নিবন্ধনের এসব কাগজপত্রের কোনো অস্তিত্ব থাকে না।
বিআরটিএ নিবন্ধন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ‘দেশের সকল যানবাহনের রেকর্ডপত্র এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। যেকোনো যানবাহনের নিবন্ধন অথবা চেসিস ও ইঞ্জিন নাম্বার দিয়ে রেকর্ড যাচাইয়ের সুযোগ রয়েছে।’
বিয়ানীবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহসিন কবির জানান, গত সপ্তাহে একটি ডিসকভার মোটরসাইকেলসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা গাড়িটির মালিক পাওয়া যাচ্ছে না।
গত প্রায় সপ্তাহখানেক থেকে অবশ্য পৌরশহরে এসব মোটরসাইকেলের দাপট কিছুটা কমেছে। থানা পুলিশের ব্যাপক অভিযানে চোরাই মোটরসাইকেলের ক্রেতারা প্রকাশ্যে এসব গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছেন না।
এর আগেও উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে চোরাই মোটরসাইকেলসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অন্যান্য মোটরসাইকেল চোর ও ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িতদের নাম পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবণী শংকর কর বলেন, কোথাও চোরাই গাড়ি ব্যবহারের সংবাদ পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। এক্ষেত্রে কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।