ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেন, তারা এখন প্রায় নিশ্চিত যে, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে আরও সংলাপ হলেও তাদের বেশিরভাগ দাবি মেনে নেয়া হবে না। দাবি আদায়ের জন্য তাই রাজপথে নেমে কঠোর ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
তবে তারা বলেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি ছোট পরিসরের প্রতিনিধি দল রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজতে তাদের শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে আবারও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপে বসতে পারে। সেখানে তারা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য তাদের প্রধান দাবিগুলো তুলে ধরবেন।
বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেন, তাদের আবারও সংলাপে অংশ নেয়া প্রয়োজন যাতে সংলাপ ব্যর্থ হওয়ার জন্য নাগরিক সমাজ ও কূটনীতিকরা তাদের দোষারোপ করতে না পারেন।
তারা বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে সংসদ ভেঙে একটি নতুন রূপরেখা তৈরি করেছেন ড. কামাল হোসেন। যা তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপকালে উপস্থাপন করবেন বা তাকে পাঠিয়ে দেবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে কিছু কর্মসূচির ঘোষণা দিবে।
তিনি বলেন, তারা মানববন্ধন এবং অবস্থান ধর্মঘটের মতো কিছু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির এবং বড় ধরনের বিক্ষোভের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে। পরে পরিস্থিতি এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে।
বিএনপি নেতা বলেন, তারা ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারের অধীনে কর্মসূচি ঘোষণা করবে এবং ২০ দল একযোগে তাদের সমর্থন জানাবে।
সম্প্রতি বিএনপি তাদের ২০ দলীয় জোটের অংশীদারদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছে। সেখানে ঐক্যফ্রন্টের সাথে কোনও বোঝাপড়া ছাড়াই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে তারা কীভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামের এক নেতা বলেন, তারা একটি শক্তিশালী আন্দোলনের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট এক্যফ্রন্টের আন্দোলন কর্মসূচির সমর্থনে রাজপথে থাকবেন।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য জানান, তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট এবং বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের কয়েকজন নেতার সাথে ফোনে আলাপ করেছেন। বেশিরভাগই তাকে ‘নিরবিচ্ছিন্ন’ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করার পরামর্শ দেন।
এছাড়া তারেক রহমান দুই ঢাকা সিটি ইউনিটের বিএনপি নেতাদের সাথেও যোগাযোগ করছেন। তিনি তাদের রাজধানীতে শক্তিশালী আন্দোলন শুরু করতে এবং এটি সফল করতে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সংলাপে অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে, তবে কোনো সন্তোষজনক ফলাফল আসেনি। এ কারণে আমরা সংলাপ নিয়ে হতাশ হয়েছি।
তারা আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দল ও ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর এবং সরকারের মনোভাব মূল্যায়ন করার পর তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে এবং আগামী দিনগুলোতে তারা আরও কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আবারও সংলাপে বসার আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে দলের কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, সেসময় তারা তাদের আন্দোলনকে আরও তীব্রতর করবে এবং সরকারকে তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সংলাপের ফলাফল প্রায় শূন্য। এখন আমাদের দাবি মেনে নিতে আন্দোলনকে আরও গতিশীল করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্টের মঙ্গলবারের সমাবেশে তারা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিবেন। দাবি মেনে নিতে ক্রমশ আমাদের আন্দোলনকে শক্তিশালী করব।
‘আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, আলোচনার মাধ্যমে দেশের কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি। এমনকি, আলোচনার মাধ্যমে কোটা সংস্কারের জন্য ছাত্রদের দাবিও পূরণ করেনি সরকার। ছাত্ররা রাস্তায় আন্দোলনে নামার পর তারা (সরকার) তাদের দাবি পূরণ করেছে। তাই, আমরা রাস্তায় আন্দোলন করে সাফল্য অর্জন করতে চাই,’ বলেন বিএনপি নেতা।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সংলাপে অংশ নেননি, তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই এবং দেশে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের অংশীদাররা ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারে, কারণ ৭ দফা দাবিতে তাদের সমর্থন রয়েছে।
যুক্তফ্রন্টের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সংলাপ সফল হয়নি, কারণ প্রধানমন্ত্রী পরোক্ষভাবে তাদের দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি আমাদের আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।
ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। রাজপথে আন্দোলনে নেমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প নেই।