এছাড়া চলতি বছরে চারা উৎপাদন মৌসুমের প্রথম দিক থেকে অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকদের সবজির চারা উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। একই কারণে জমি তৈরি করতে না পারায় উৎপাদিত এসব চারা সবজি চাষিদের কাছে সময় মতো বিক্রিও করতে পারেননি। চারার বয়স বেড়ে যাওয়ায় এগুলো ফেলে দিয়ে পুনরায় চারা বীজ বুনতে হয়েছে। এতে করে লোকসান গুনতে হয়েছে চারা উৎপাদনকারী চাষিদের।
সবজির চারা উৎপাদনকারী কৃষকরা জানান, তাদের অধিকাংশেরই নিজস্ব জমি না থাকায় তারা চারা উৎপাদন মৌসুমে টাকা দিয়ে জমি লিজ নেন। এরপর চারা উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণ বীজ, সার, কীটনাশক ঔষধ, বাঁশ দাঁড়া, খৈল, পলিথিন ক্রয় এবং জমি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়। এসব পুঁজি যোগান দেয়া অনেক কৃষকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠেনা। এজন্য তাদেরকে চড়া সুদে দাদন নিতে হয়। চারা উৎপাদন কিংবা বিক্রিতে বিঘ্ন ঘটলেই ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে তাদের।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ঢুলিপাড়া, নেউরা, চৌয়ার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, বুড়িচং উপজেলার ভারেল্লা, ময়নামতি ও মোকাম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সবজির চারা উৎপাদিত হয়।
ভারেল্লা ইউনিয়নের হোসেনপুর, ময়নামতি ইউনিয়নের ডাকলা পাড়া, সদর দক্ষিণ উপজেলার নেউরা ও ঢুলিপাড়া গ্রামের কৃষকরা জানান, সবজির বীজের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। একইভাবে কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণের দামও অনেক বেশি বেড়েছে। এরপরও তারা ঝুঁকি নিয়ে চারা উৎপাদন করে যাচ্ছেন।
কৃষকরা জানান, চলতি চারা উৎপাদন মৌসুমের প্রথম থেকেই অতিবৃষ্টির কারণে চারা উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে। এছাড়াও বৃষ্টির কারণে কৃষকরা নির্দিষ্ট সময়ে জমি তৈরি করতে না পারায় চারা ভিটিতে পড়ে থাকা চারার বয়স বেড়ে গেছে, ফলে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
কুমিল্লার বিভিন্নস্থানে উৎপাদিত সবজির চারার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জাতের টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, বেগুন, করলা, পেঁয়াজ, লাউ, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙ্গা ও ধুন্দুল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কোরপাই থেকে ময়নামতি এবং কুমিল্লা সিলেট সড়কের ময়নামতি থেকে কংশনগর পর্যন্ত সড়কের দুপাশে এ সবজির চারা উৎপাদনকারী নার্সারিগুলোর অবস্থান। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম, বৃহত্তর নোয়াখালী, বৃহত্তর কুমিল্লা, বৃহত্তর সিলেটসহ পাশের জেলাগুলোর সবজি চাষিরা এখান থেকে চারা কিনে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শহীদুল হক বলেন, সাধারণত এসব চারা ভাদ্র মাসের শেষ থেকে আশ্বিনের শুরুতে বিক্রি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আশ্বিনের শেষে অসময়ের বৃষ্টি হওয়ায় সবজি চাষিরা জমি তৈরি করতে না পারায় চারা উৎপাদনকারীরা লোকসানের মুখে পড়েছে। পুনরায় চারা উৎপাদান করতে তাদের আরও টাকা খরচ হয়েছে। চারা উৎপাদনকারী কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যাপারটি কৃষি বিভাগের চিন্তায় রয়েছে।
দেশের সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে সবজির চারা উৎপাদনকারী এ সকল ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের পুঁজির ব্যবস্থা করলে একদিকে যেমন তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবেন, অপরদিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও কিছুটা অবদান রাখতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।