চুয়াডাঙ্গা, ১০ জানুয়ারি (ইউএনবি)- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদাহ বাজার। এখানে প্রতিদিনই মানুষ বিক্রি হয় (শ্রম বিক্রি করে যারা জীবীকা নির্বাহে শ্রমের হাটে জড়ো হয়ে থাকে)। সকাল ৭-৮টার মধ্যে দিনমজুরদের দেখা মিলে এই শ্রমের হাটে। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে জড়ো হয় খেটে খাওয়া শ্রম বিক্রির ওইসব দরিদ্র মানুষ। ক্রেতা-মহাজনদের দর কষাকষিতে বিক্রি হয় তারা।
কিন্তু গত কয়েকদিনের তীব্র শীতে মানুষ বিক্রির এই হাটের দৃশ্য একেবারেই পাল্টে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ডিঙ্গেদাহ বাজারটি মানুষ বিক্রির হাট হিসেবেই চেনে চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের জেলাগুলোর মানুষ। প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে এ হাটে শত শত মানুষ জড়ো হয়। হাতে কোদাল, কাঁধে ঝুঁড়ি আর নানা সরঞ্জাম নিয়ে নিজেদের শ্রম বিক্রির জন্য অপেক্ষা করে নিজেকে বিক্রির জন্য। দিনে ৩৫০ থেকে ৪৫০ বা ৫০০ টাকায় বিক্রি হয় তারা। এই দামে মহাজন, মালিক ও সামর্থবানদের প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হাট থেকে এসব মানুষদের কিনে নেয়।
কিন্তু গত ১০দিন ধরে প্রচণ্ড শীত ঝেঁকে বসায় মানুষ বিক্রির হাটে চরম মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। বেচাকেনা একেবারেই কমেও গেছে। আর এতে করে চরম অনিশ্চাতায় পড়েছে প্রতিদিন হাটে বিক্রি হওয়া প্রায় তিন শতাধিক মানুষ।
তারা বলছেন, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র শৈতপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কারণে হাটে এমন মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।
সোমবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, শত শত শ্রম বিক্রি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। সেখানে পঞ্চাশার্ধ বয়েসের দিনমজুর শমসের আলী জানান, জমিজমা বলতে তার কিছুই নেই। শ্রম বিক্রি করেই সংসার চলে। বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে মেয়েসহ চারজনের সংসার। কাজ করলে সংসার চলে, আর কাজ না পেলে অনাহারে অর্ধহারে থাকতে হয়।
হাটে নিজেকে বিক্রির জন্য অপেক্ষমান সদর উপজেলার জালশুকা গ্রামের শাহাজান আলী জানান, গত ২২ বছর ধরে তিনি এ হাটে নিজেকে বিক্রি করেন। মাটি কাটা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ করে থাকেন তিনি। আর এজন্য প্রতিদিন ২০০-২৫০ টাকা হারে শ্রমের দাম পান। কিন্তু গত চারদিনে তিনি নিজেকে বিক্রি করতে পারেননি। প্রচণ্ড শীতের কারণে এ হাটে ক্রেতারা আসছেন না বলে জানান শ্রম বিক্রি করে খাওয়া এই মানুষটি।
আরেক দিনমজুর আশফাক আলী বলেন, ‘গরমের সময় আমাদের তেমন কোনো সমস্য হয় না। কিন্তু শীত আসলেই আমরা কাজ ক্যাম পাই না। শীতের কারণে মানুষ আসে না। আর এ কারণেই শীত আসলেই আমাদের ঘরে অভাব অনটন শুরু হয়।’
বাজারের ব্যবসায়ী মোমিন মন্ডল জানান, চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদাহর এ হাটে প্রতিদিন শত শত মানুষ শ্রম বিক্রি হতে আসে। এজন্য হাটটি মানুষ বিক্রির হাট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু প্রতি শীত মৌসুম আসলেই এসব শ্রমজীবী মানুষগুলোর সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস বলেন,‘মানুষ বিক্রির হাটের কথা আমি শুনেছি। তবে আর্থিক অভাব অনটনের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’