খুলনা ২২ ডিসেম্বর (ইউএনবি)- খুলনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রের তথ্যমতে, বর্তমানে জেলার নয়টি উপজেলায় ৪৮টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের ভবন থাকলেও ১১টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কোনো ভবনই নেই।
এছাড়া জেলার ১৭টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েলেও সেগুলো সংস্কার করা হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা দিতে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। কিন্তু এ সংস্থার মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের রয়েছে নানা সংকট। বিশেষ করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো জরাজীর্ণ থাকার পাশাপাশি অনেক ইউনিয়নে কোনো ভবন না থাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের ভর করতে হয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের কোনো কক্ষের ওপর।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস জানায়, খুলনার রূপসার টিএস বাহিরদিয়া, দিঘলিয়ার যোগীপোল, বটিয়াঘাটার বটিয়াঘাটা সদর ও জলমা, ডুমুরিয়ার ডুমুরিয়া সদর, পাইকগাছার গদাইপুর, কয়রার কয়রা সদর, দাকোপের চালনা ও দাকোপ সদর, তেরখাদার তেরখাদা এবং ফুলতলার দামোদর ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কোনো ভবনই নেই।
এসব ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মীরা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের অফিসের একটি কক্ষ নিয়েই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
এছাড়া জেলার তিনটি উপজেলায় নেই উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ও। এগুলো হচ্ছে-কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ। অবশ্য সদর থানাধীন মা ও মিশু স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্র অভ্যন্তরে একটি এবং জেলার ফুলতলা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কাজ চলমান রয়েছে বলেও সূত্রটি জানায়।
রুরাল ডিসপেনসারী নেই এমন ইউনিয়নের সংখ্যাও ১০টি। এগুলো হচ্ছে-ফুলতলা উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়ন, দিঘলিয়ার সেনহাটি, তেরখাদার আজগড়া, বটিয়াঘাটার সুরখালী ও ভান্ডারকোট, পাইকগাছার রাড়–লি, চাঁদখালী, কপিলমুনি, গদাইপুর ও গড়ইখালি।
সূত্র জানায়, খুলনা জেলার ৯ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র অকেজো অবস্থায় রয়েছে দীর্ঘদিন। যেগুলো সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যেই প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সংস্কারবিহীন এসব কেন্দ্র হচ্ছে খুলনা এফডাব্লিউসি, ডুমুরিয়ার ভান্ডারপাড়া, রংপুর ও খর্ণিয়া, বটিয়াঘাটার আমিরপুর, বালিয়াডাঙ্গা ও গঙ্গারামপুর, দাকোপের লাউডোব ও কামারখোলা, পাইকগাছার দেলুটি ও লস্কর, ফুলতলার জামিরা ও আটরা, রূপসার ঘাটভোগ, কয়রার মহারাজপুর, বাগালী ও উত্তর বেদকাশি।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, জেলার ১৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যেই ৯৪ লাখ ৮০ টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। যেটি ঢাকা থেকে অনুমোদন হয়ে আসার পরই পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।
খুলনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপ-পরিচালক গুরু প্রসাদ ঘোষ বলেন, যেসব ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নেই সেসব স্থানে নতুন ভবন করার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। তবে কিছু কিছু ইউনিয়নে জমির মূল্য বেশি থাকায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে বটিয়াঘাটার জলমায় জমির মূল্য অনেক বেশি বলে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়কেই স্বাস্থ্যসেবার মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ধরে নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আওতাধীন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ছাড়াও সিভিল সার্জনের আওতায় জেলার ৯টি উপজেলায় ১৪টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। যেগুলোর মধ্যেও কিছু সংস্কারের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সবগুলো ভবন সংস্কারের মধ্যদিয়েই তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবা এগিয়ে নেয়া সম্ভব বলেও তিনি মনে করেন।
জেলা সিভিল সার্জন আরও বলেন, দেশের শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার কমে আসার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় সরকারের যে সাফল্য তার পেছনে তৃণমূল পর্যায়ের এসব প্রতিষ্ঠান ও এর সাথে কর্মরতদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।
জলমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আশিকুজ্জামান আশিক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবনেই পৃথক কক্ষ নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মীরা স্বাস্থ্যসেবা দেয়ায় অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি হয়। পৃথক ভবনে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হলে আরও ভাল হতো।
বিষয়টি তিনি একাধিকবার উপজেলা মাসিক মিটিংয়ে তুলে ধরেছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি জানিয়ে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের জন্য পৃথক ভবন করার ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ ও সংস্কারের দায়িত্বে নিয়োজিত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়েরই অপর একটি প্রতিষ্ঠান ‘স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের’ দুর্বল তদারকি আর দুর্নীতি-অনিয়মের কারণেই বিভিন্ন সময়ে করা সংস্কার কাজ সঠিকভাবে বুঝে নেয়া হয় না। যে কারণে একটি ভবন একবার সংস্কারের কিছুদিনের মধ্যে আবারো অকেজো হয়ে পড়ে। ব্যবহারকারীদের সাথেও অনেক সময় সমঝোতা করে কাজগুলো যেনতেনভাবে হস্তান্তর করা হয়।
এবিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।