ইউএনবির সাথে আলাপকালে গণফোরামের কয়েকজন নেতা বলেন, তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে এমনভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে চান যাতে কেউ জামায়াত ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য জোটটিকে অপবাদ দিতে না পারে।
তারা জানান, নতুন এ জোটে যোগ দেয়ার জন্য কিছু বাম ও ডানপন্থী দল তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। কিন্তু তাদের শর্ত হলো যে বিএনপিকে অবশ্যই জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে।
গণফোরাম নেতারা আরও বলেন, তারা মনে করেন যে তাদের দুই সংসদ সদস্য এবং বিএনপির ছয়জনকে সংসদে যাওয়া উচিত। কারণ তারা নিজেদের আসনে ‘অন্যদের মতো না হয়ে’ সুষ্ঠুভাবে বিজয়ী হয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে গণফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি শনিবার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছে। এতে ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন মূল্যায়ন এবং বিএনপির সাথে তাদের ঐক্যের ভবিষ্যত ঠিক করা হবে।
গণফোরামের মিডিয়া উইং সদস্য লতিফুল বারী হামিম শুক্রবার ইউএনবিকে বলেন, দলের আরামবাগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ১০টায় শুরু হওয়া বৈঠকে দলের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত বৈঠক নিয়ে বিকাল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন করা হবে।
যোগাযোগ করা হলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিন আফসারী বলেন, বিএনপি ও অন্য দলগুলোর সাথে তাদের দলের ঐক্যের ভবিষ্যত এবং তাদের ভবিষ্যত করণীয় সম্পর্কে বৈঠকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আরও কিছু বাম ও গণতান্ত্রিক দলকে যুক্ত করার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শক্তিশালী হবে কি না তা নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
আফসারী আরও বলেন, তাদের দুই নির্বাচিত সংসদ সদস্যের শপথ নেয়া উচিত কি না সে বিষয়ে বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের মতামত জানতে চাওয়া হবে।
দলের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, তাদের বৈঠকে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন মূল্যায়ন করা হবে। সেই সাথে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করতে দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ঐক্যফ্রন্ট বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামার জন্য বাম ও ডানসহ কিছু দল জোটে যুক্ত হতে আগ্রহী।
জোটকে কীভাবে সম্প্রসারণ ও আরও শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে শনিবারের বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন পথিক। ‘আমাদের বেশিরভাগ নেতা বিএনপির সাথে ঐক্য অটুট রাখতে চান, কিন্তু এ জন্য তাদের অবশ্যই জামায়াত ছাড়তে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণফোরামের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, বিএনপি যদি জামায়াত না ছাড়ে তাহলে হয়তো তাদের সঙ্গ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে গণফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি। ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, যদি বিএনপি গণফোরামের সাথে ঐক্য অটুট রাখতে চায় তাহলে তারেক রহমান ঐক্যফ্রন্টের কোনো ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না এবং তার দলকে অবশ্যই জামায়াত ত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, তাদের সিদ্ধান্ত যদি বিএনপি গ্রহণ না করে তাহলে তারা অন্য সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করতে পারেন।
গণফোরামের এ নেতা বলেন, তাদের বেশিরভাগ তৃণমূল নেতার চাওয়া দলের দুই সংসদ সদস্য যাতে সংসদে যোগ দেয়। ‘আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হবে। আমি মনে করি আমাদের সংসদ সদস্যরা শেষ পর্যন্ত শপথ নেবেন। কারণ সংসদে প্রথমবারের মতো আমাদের প্রতিনিধি থাকার এটি এক বিরাট সুযোগ।’
তিনি বলেন, তাদের নেতারা মনে করেন যে যদিও বেশিরভাগ আসনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি কিন্তু তাদের দুই সংসদ সদস্য ও বিএনপির ছয়জন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সফল হয়েছেন। ‘সুতরাং, আমাদের বৈধ সংসদ সদস্যরা কেন শপথ নেবেন না? আমরা বিশ্বাস করি যদি ঐক্যফ্রন্টের আট সংসদ সদস্য সংসদে যোগ দেন তাহলে তারা জনগণ ও আমাদের পুনর্নির্বাচনের দাবির পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবেন।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপির নিজেদের পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের স্বার্থে জামায়াতকে ত্যাগ করা উচিত।
তার মতে, বিএনপির এখন উচিত ছন্দে ফিরে আসার জন্য প্রথমে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিকে উন্নত করার পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্ট সঙ্গীদের সাথে নিজেদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করা।