মৃদু উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা এ জেলায় হলেও বাকিদের খুলনা বা ঢাকায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী এবং তাদের স্বজনদের। তবে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত নড়াইলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১৭৯ জনের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে জেলায় ৩০ চিকিৎসক এবং ৩৮ নার্স কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর ঠিক তার পেছনের কেবিন ভবনের চারটি বেডে করোনা পজেটিভ রোগীদের চিকিৎসা চলছে।
সদর হাসপাতালের ২০টি বেড ও শহরের ডুমুরতলা এলাকার সরকারি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারকে কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করে ১০০টিসহ জেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১৯০টি বেড প্রস্তুত করা হলেও এর একটিতেও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বা এনআইসিইউ সুবিধা নেই।
কামাল প্রতাপ গ্রামের নয়ন শেখ নামে করোনা আক্রান্ত এক রোগীর বড় ভাই হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘জুনের প্রথম সপ্তাহে নয়নের জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হলে তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভতি করি। হাসপাতালের সবাই আমাদের সাথে অমানবিক আচরণ করেন। এক দিন রাতে নয়নের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেখিয়ে দেয়। কিন্তু ওই সিলিন্ডারে কোনো অক্সিজেন ছিল না। পরে নয়নকে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন কর্মী ইউএনবিকে জানান, সাধারণত দূর থেকেই হাসপাতালে কোডিভ-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়া আছে, রোগীরা প্রয়োজন মতো তা ব্যবহার করেন। সেই সাথে প্রচলিত ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করা হয়। উন্নত সুবিধা না থাকায় ঝুকিপূর্ণ মনে হলেই রোগীকে বড় হাসপাতালগুলোতে স্থানান্তর করা হয়। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং নার্সরাই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তজা ১২ এপ্রিল এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নড়াইল সদর হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের অনুরোধ জানান। গত ২ জুন সারা দেশের জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এখন পর্যন্ত নড়াইলে এসবের কোনো কিছুই দৃশ্যমান হয়নি।
এদিকে, করোনাকালে মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে জেলার রোগীদের সেবা প্রদানসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করছে এমপি মাশরাফির নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন। সম্প্রতি ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম অনিকের মা জ্বর ও শ্বাসকষ্টে মারা যান।
ফেসবুকে এক বার্তায় অনিক বলেন, ‘আমার মায়ের দুই বার স্যাম্পল কালেক্ট করা হয়। যদিও প্রথমবার যে স্যাম্পল কালেক্ট করে যশোর ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল, চার দিন পর জানতে পারি তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে পরীক্ষা করা যায়নি। যশোর ল্যাবের চরম দায়িত্বহীনতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। গত ২৫ জুন দ্বিতীয় দফায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মায়ের মৃত্যুর পর ২৬ তারিখ রাতে জানানো হয় আমার মা করোনা পজেটিভ ছিলেন।’
নড়াইলের কুড়িগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ও শিক্ষক সুজিত কুমার সিকদার বলেন, দেশে শনাক্ত বিবেচনায় করোনায় মৃত্যুর হার দেড় শতাংশের নিচে হলেও নড়াইলে এ হার ৩.৯ শতাংশ। রোগীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য অন্য জেলায় পাঠানো হয়। এর ফলে অনেক সময় নমুনা নষ্ট হয়ে যায় এবং ফলাফল পেতে দেরি হয়।
সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মশিউর রহমান বাবু বলেন, ‘আমাদের সাধ্য অনুযায়ী রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। তবে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ বা এনআইসিইউ সুবিধা নেই।‘
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল মোমেন জানান, জেলায় মোট ২২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালুর জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, ‘সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তজা এবং কবিরুল হক মুক্তির নির্দেশনায় আমরা জেলায় করোনা পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা করছি। জেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার আরও উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’