পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে বেশি করে পেঁয়াজ পাতা ব্যবহারের কথা ওঠে আসছে। যার স্বাদ ও গন্ধ প্রায় সাধারণ পেঁয়াজের মতো। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বারি পাতা পেঁয়াজ-১ সারা বছর চাষাবাদ ও ব্যবহার করা যাবে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাতা পেঁয়াজ একটি মসলা জাতীয় ফসল। এ মসলাটি রন্ধনশালায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি জনপ্রিয়। এশিয়ার সাইবেরিয়া এবং চীন পাতা পেঁয়াজের উৎপত্তিস্থল। প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলো হলো-জাপান, তাইওয়ান, শ্রীলংকা, ভারত, কোরিয়া, চীন, ইউরোপ, আমেরিকা ও সাইবেরিয়া। গুরুত্বের বিবেচনায় জাপানে এ ফসলটি বাল্ব পেঁয়াজের পরে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে।
এ প্রজাতির গাছের মূলত দুইটি অংশ- সবুজ পাতা ও সাদা মোটা সিউডোস্টেম। এ জাতীয় পেঁয়াজে সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের মতো বাল্ব উৎপাদন হয় না। তবে সাদা সিউডোস্টেমের গোড়ায় বাল্বের মতো বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়। এ প্রজাতির গাছ বহুবর্ষজীবী। বীজ সংগ্রহের পর পুনরায় কুঁশি উৎপাদনের মাধ্যমে রেটুন ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। বীজ বা কুঁশির মাধ্যমে পাতা পেঁয়াজের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। এ ফসলটির কুঁশি উৎপাদনের প্রবণতা খুবই বেশি। এ প্রজাতির পেঁয়াজে এলাইল সালফাইড নামক উদ্বায়ী পদার্থের কারণেই গন্ধের সৃষ্টি হয়। এর মূল বা হলুদ পাতা ছাড়া ফুলের দণ্ডসহ সমস্ত অংশই বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্যকে রুচিকর ও সুগন্ধপূর্ণ করে তোলে।
বারি বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি সালাদ হিসেবে কাঁচা অথবা বিভিন্ন তরকারি বা অন্যান্য খাবারের সাথে সিদ্ধ করে খাওয়া হয়ে থাকে। সাধরণত মোটা সাদা সিউডোস্টেম মাংস বা অন্যান্য তরকারিতে এবং সবুজ পাতা সালাদ হিসেবে অথবা সুপ, নুডুলস, স্যান্ডউইজ ইত্যাদি খাবারকে সুগন্ধ করার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। এর যথেষ্ট পুষ্টিগুণ রয়েছে। পাতা পেঁয়াজের প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে আর্দ্রতা (৭৮.৯ শতাংশ), আমিষ (১.৮ শতাংশ) চর্বি (০.১ শতাংশ), খনিজ পদার্থ (০.৭ শতাংশ), শর্করা (১৭.২ শতাংশ), ক্যালসিয়াম (০.০৫ শতাংশ), ফসফরাস (০.০৭ শতাংশ), লোহা (২.৩ মিলি গ্রাম), ভিটামিন-এ (৩০ আইইউ), ভিটামিন-বি১ (০.২৩ মিলি গ্রাম, ভিটামিন-সি (১১ মিলি গ্রাম) ও অ্যানার্জি (৩৪ কিলো ক্যালরি) আছে।
গুণাগুণ
সাদা সিউডোস্টেমের তুলনায় সবুজ পাতায় পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। এর অনেক ওষধি গুণ রয়েছে। এটি পরিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। মাথা ব্যাথা, বাতের ব্যাথা ও ঠান্ডাজতি রোগ থেকে উপশমে সহায়তা করে। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এ পেঁয়াজ খেলে রোগ থেকে উপশম পেয়ে থাকেন।
এ দেশে বাল্ব পেঁয়াজের যথেষ্ট ঘাটতি থাকার কারণে পেঁয়াজের সারাবছর চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বসতভিটাসহ মাঠ পর্যায়ে সারাবছর চাষ করা সম্ভব। এছাড়াও বাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে টবেও চাষ করা যায়। আশা করা হচ্ছে এ জাতের পাতা পেঁয়াজ চাষের মাধ্যমে একদিকে সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের পরিবর্তেও এটি ব্যবহার করা যাবে এবং অন্যদিকে সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের সাথে সংকরায়নের মাধ্যমেও রোগমুক্ত উন্নত জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।