গত ১০ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ১৮ দিনে বিভিন্ন রোগে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১১৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সারাদেশে ২৮ জেলার ৭৬টি উপজেলার ৩৩৯টি ইউনিয়ন এবার বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এসব জায়গায় গত ২৪ ঘন্টায় ১হাজার ২শত ৯জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২জনের মৃত্য হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় ৪৭৮ জন, আরটিআইতে (Respiratory tract infection) ১৪৯ জন, চর্মরোগে ১৭১ জন, চোখের প্রদাহে ৫৫ জন, বিভিন্ন কারণে আঘাতপ্রাপ্ত ২১ জন এবং অন্যান্য রোগে ৩৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় নানা রোগে ১ হাজার ২০৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাছাড়া পানিতে ডুবে ১ জন বেঁচে গেলেও অন্য ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া গত ১০ জুলাই থেকে অদ্যাবধি ১৬৯৫৯ জন নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদের মধ্যে ডায়রিয়ায় ৬ হাজার ৪৬৩ জন, আরটিআইতে ১ হাজার ৮৪০ জন, বজ্রপাতে ৮ জন, সাপের কামড়ে ৫৮ জন, পানিতে ডুবেও বেঁচে গেছেন ২৪ জন, চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ২২০ জন, চোখের প্রদাহে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫৮ জন, বিভিন্ন কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন ৪৬৬ জন এবং অন্যান্য কারণে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৩২২জন।
তাছাড়া আরটিআইয়ে একজন, বজ্রপাতে সাতজন, সাপের কামড়ে ১০ জন, পানিতে ডুবে ৯৮ জন এবং অন্যান্য কারণে ৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যুবরণ করেছে জামালপুর জেলায় ৩৬ জন। এছাড়া গাইবান্ধায় ২০ জন, নেত্রকোনায় ১৯ জন, টাঙ্গাইলে ১১ জন, বগুড়ায় ৮ জন, সুনামগঞ্জে ৫ জন, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে ৪ জন করে, নীলফামারী, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং সিরাজগঞ্জে ২ জন করে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফরিদপুর এবং মানিকগঞ্জে ১ জন করে মৃত্যুবরণ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বন্যাক্রান্ত এসব এলাকায় ২ হাজার ৪৯০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। দূর্গত মানুষের জন্য ১ হাজার ৩২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে কক্সবাজার জেলায় ৫৩৮টি। এছাড়া চট্ট্রগামে ৪৭৯টি, রাঙামাটিতে ৯৮টি, ফেনীতে ৮৮টি, গাইবান্ধায় ৭০টি, জামালপুরে ১৩টি, বগুড়া, কুড়িগ্রাম ও টাঙ্গাইলে ৭টি করে, মাদারীপুরে ৮টি, ফরিদপুরে ৫টি, মানিকগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২টি করে এবং সিলেটে ১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে ইউএনবিকে বলেন, বন্যায় আক্রান্ত নানা প্রকার রোগীর দুর্দশা লাঘবে স্বাস্থ্য বিভাগ দিন-রাত কাজ করছে।
অন্যান্য কারণ বলতে কী বুঝানো হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডায়রিয়া, আরটিআই, বজ্রপাত, সাপের কামড়, পানিতে ডুবে মৃত্যু, চোখের প্রদাহ এবং আঘাত প্রাপ্ত রোগী ছাড়া অন্যান্য রোগীদের বুঝানো হয়েছে।
বন্যায় আক্রান্ত রোগী প্রসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. হারুন অর রশীদ টেলিফোনে ইউএনবিকে বলেন, ’বন্যার পানি বাড়লে তখন সাপের কামড়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। আর পানি নেমে যাওয়ার সময় চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ অনেক বেশি হয়। এসময় সাবধানতা অবলম্বন করলে অনেক রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।’
এসময় শিশু, বৃদ্ধ এবং অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন তিনি।