সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটসহ কয়েকটি ঘাট দিয়ে অবৈধভবেই চলছে ট্রলার ও স্পিডবোট। প্রতিদিন এসব রুট দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার হলেও স্থানীয় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ নৌযান বন্ধে তেমন পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
ভোলার দৌলতখান, মির্জাকালু, হাকিমুদ্দিন থেকে লক্ষীপুরের আলেকজান্ডার, তজুমদ্দিন উপজেলা থেকে মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ঘাট থেকে চরফ্যাসনের বেতুয়া, তজুমদ্দিন টু চরজহিরউদ্দিন, হাজিরহাট ঘাট থেকে মঙ্গলসিকদার, হাজিরহাট ঘাট থেকে কলাতলীর চরসহ বিভিন্ন রুটে চলছে এসব অবৈধ নৌযান।
বিআইডব্লিটিএ’র একটি সূত্র জানায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৩০ মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৮ মাস ভোলার ইলিশা থেকে মেঘনা নদীর দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর মোহনা পর্যন্ত ১১০ কিলোমিটার এলাকাকে ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত করে সি সার্ভে ছাড়া সকল ধরনের অনিরাপদ নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোলা জেলার উপকূলের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে চলছে ফিটনেসবিহীন এবং অনুমোদনবিহীন ছোট ছোট কাঠের নৌযান, স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার।
ভুক্তভোগীরা জানান, ভোলা-লক্ষীপুর রুটে দু’টি লঞ্চ ও একটি সি-ট্রাক সরকারি অনুমোদন নিয়ে চলাচল করলেও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কারণ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার সাথে বন্দরনগরী চট্রগ্রামে যোগাযোগের সহজমাধ্যম হওয়ায় প্রতিদিন এ রুটে কয়েক হাজার মানুষ যাতায়ত করে। প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক নির্ভরযোগ্য যান থাকায় প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা বাধ্য হয়েই অবৈধ ট্রলার ও স্পিডবোটযোগে উত্তাল মেঘনা নদী পাড়ি দিচ্ছে।
ইলিশা ঘাটের ইজারাদার সরোয়ারদি মাস্টার জানান, এ রুটে শীত মৌসুমে ১১টি ছোট ছোট লঞ্চ চলাচল করে। কিন্তু এখন মাত্র অনমোদিত ২টি লঞ্চ ও ১টি সি-ট্রাক চলাচল করে। এতে করে বহু যাত্রী দূরদূরান্ত থেকে আসলেও তারা লঞ্চ ও সি-ট্রাক পায় না। যার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা ট্রলার ও স্পিডবোট দিয়ে চলাচল করছে।
তিনি বলেন, আরও একাধিক সি-ট্রাক ও বড় বড় বৈধ লঞ্চ দেওয়া হলে অবৈধ নৌযানের সংখ্যা কমে যাবে।
অভিযোগ রয়েছে, ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের কাছেই নৌথানা ও ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থাকলেও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ম্যানেজ করে ট্রলার ও স্পিডবোটযোগে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।
ভোলা ইলিশা ফেরিঘাটের অবৈধ ট্রলারচালক জামাল উদ্দিন বলেন, তার ট্রলার চালানোর বৈধতা নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করেই ট্রলারে যাত্রী পারাপার করছেন।
স্থানীয় নৌঘাট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি সি-সার্ভে বেক্রসিং সনদধারী নৌযান ব্যতিত সকল যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে নৌযান মালিকদের নিয়ে কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমন্বয় সভা করলেও পরবর্তীতে কোনো পদক্ষেপ নজরে পড়িনি।
বিআইডব্লিউটিএ ভোলা নদীবন্দরের পরিবহন বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান জানান, অবৈধ নৌযান বন্ধের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ভোলা পূর্ব ইলিশা সদর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ সুজন চন্দ্র পাল জানান, তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং বিআইডব্লিউটিএ অভিযান পরিচালনা করলে সার্বিক সহযোগিত করা হবে।