চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ১৭ জানুয়ারি (ইউএনবি)- চাঁপাইনবাবগঞ্জে অসময়ে আম ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন চাষি সেরাজুল ইসলাম। ভরা এই শীতের মধ্যেও তার বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে বড় বড় আম। শুধু কি তাই, ডিসেম্বর থেকে বাগানের গাছ থেকে আম সংগ্রহ করে বিক্রিও করছেন তিনি।
তার এমন সাফল্য এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন লোকজন আম দেখতে ভিড় করছে তার বাগানে। আর এই আমের বাণিজ্যিক সম্ভবনা নিয়েও দারুন আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
ভরা শীত মৌসুমে আমের ফলন ঘরে তুলতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়লিয়া গ্রামের সেরাজুল ইসলাম দীর্ঘ দিন থেকে ভাবছিলেন। যেমন ভাবনা ঠিক তেমনই কাজ করে চলছেন। প্রথম দিকে ফলন নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকলেও এবার তা কেটে গেছে। ডিসেম্বর মাস থেকে তার বাগান থেকে তিনি গাছ থেকে আম সংগ্রহ করছেন।
সেরাজুল ইসলাম জানান, তার বড় ভাইয়ের পরামর্শে চার বছর আগে বারোমাসি আমের কুশি বা সায়ন সংগ্রহ করে তা এক বিঘা জমিতে ১২০টি আম্রপালি আম গাছে চারা রোপন করেন। এরপর মৌসুমে মুকুল এলেও তেমন ফলন হয়নি। পরীক্ষমূলকভাবে মৌসুমের মুকুলে অর্থাৎ গত ফেব্রুয়ারি মাসের মুকুলে ফলন না নিয়ে কেটে ফেলেন। এরপর আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসে আসা মুকুল রেখে দেন। এ মুকুল থেকে তার বাগানে প্রচুর আম এসেছে।
তিনি বলেন, ‘এ আম খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। দামও ভালো পেয়েছেন। প্রতি কেজি আম ২৭৫ টাকা থেকে শুরু করে বর্তমানে ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এ পর্যন্ত ৪০ মণ আম বিক্রি করে প্রায় ৪ লাখ টাকা আয় করেছেন।’
এদিকে অসময়ে আম চাষে সেরাজুল ইসলামের এমন সাফল্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা তার আম বাগানে দেখতে আসছেন। আবার অনেকেই ভাবছেন অসময়ে উন্নত জাতের এই আমের বাণিজ্যিক সম্ভবনার কথা। বলছেন এ জাতের আমের চাষ সম্প্রসারণে আমখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে যোগ হবে নতুন মাত্রা।
ওই এলাকার আম ব্যবসায়ী মার্শাল আলী বলেন, ‘এই বিষয়টি খুবই আশ্চর্যজনক লাগছে। কারণ আমাদের দেশে জৈষ্ঠ মাস থেকে আষাঢ় মাসে আম পাওয়া যায়। কিন্তু সেরাজুল ভাই এমন একটি জাত তৈরি করেছেন সবাই আশ্চর্য হয়ে গেছে।’
‘অসময়ে এ আমের দাম ভালো পাওয়া যায় তাই আমিও এমন একটি বাগান তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছি’ বলেন,’ মার্শাল।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের জায়গা। তবে এসময়ে গাছে আম পাওয়া অকল্পনীয়। অসময়ে এমন আম চাষ অত্যন্ত লাভজনক।’
স্থানীয় আম চাষি ফাইজুদ্দিন বলেন, ‘এই বাগানে অসময়ে যে আমটা আমরা পাচ্ছি এটি আমাদের যেমন চাহিদা মিটাচ্ছে সাথে সাথে সেরাজুল ভাইয়ের অর্থনৈতিক দিকটাও চাঙ্গা হচ্ছে। আমরা যদি এই আম চাষের প্রসার ঘটাতে পারি তাহলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যে আমের রাজধানী সেটা আবার প্রমাণ হবে। শুধু গ্রীষ্মকালে না শীতকালেও আম পাওয়া যায় এখন এই জেলায়।’
তিনি বলেন, ‘জেলায় এর প্রসার ঘটলে সেরাজুল ভাইয়ের মতো অন্য আম চাষিরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হুদা জানান, এটি বারি আম-১১ জাতের। এই গাছে বছরের বিভিন্ন সময়ে মুকুল আসে। চাষি সেরাজুল ইসলামের যে আবিষ্কার সেটি হলে- অন্য সময়ের মুকুল তিনি কেটে ফেলেছেন। আগস্ট, সেপ্টেম্বর এই সময়ের মুকুল তিনি রেখে দিয়েছেন এবং এতেই ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে আম পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি জানান, এ আমের দারুন বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। এ আম চাষ কৃষি সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়া হবে।