নড়াইল, ২১ মার্চ (ইউএনবি)- ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ।’ এই স্লোগান নিয়ে সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ করছে সরকার।
তবে ব্যতিক্রম কেবল নড়াইল শহর ও শহরতলির দু’টি এলাকা। এখানে দুই কিলোমিটার রাস্তায় ৫ বছর আগে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। তবে এখানকার দু’শতাধিক পরিবারের কপালে এখনও বিদ্যুতের আলো জোটেনি।
সংযোগ দেয়ার জন্য ওই এলাকায় নেয়া অধিকাংশ তার চুরি ও নষ্ট হয়ে গেছে। এই কাজের জন্য দুই সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, নড়াইল পৌরসভার দক্ষিণ নড়াইল এবং সংলগ্ন মুলিয়া ইউনিয়নের নুনীক্ষীর গ্রামের দুই কিলোমিটার রাস্তায় ৫ বছর আগে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ১৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি পোতা হলেও দু’শতাধিক পরিবার রয়েছে এখনও অন্ধকারে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ দুটি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ওজোপাডিকোর দুই সিবিএ নেতা বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার, আনুসঙ্গিক খরচ ও সংযোগ বাবদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিলেও এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছেনি।
নুনীক্ষীর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সভাপতি সাহেব আলী মীর ও সমিতির সদস্য সুজিত বিশ্বাস জানান, ২০১৪ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ নড়াইলের একাংশ ও নুনীক্ষীর গ্রামের দুই কিলোমিটার এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর দরখাস্ত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তখন সরকার দলীয় সিবিএ নেতৃবৃন্দের যোগাযোগ মাধ্যমে ওজোপাডিকোর নড়াইল অফিসের ৩য় শ্রেণির কর্মচারী (ইউডিএ) সরকার সমর্থিত তৎকালীন বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ নড়াইল শাখার সভাপতি মো. তৈহিদুজ্জামানের যোগসাজসে বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নড়াইল অফিসের এমএলএসএস লাইবুর রহমানকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়। এ দু’টি এলাকার ৭০টি পরিবারের কেউ গরু কেউ বা ছাগল, মুরগি আবার কেউ ফসল বিক্রি করে এ অর্থ সংগ্রহ করে। এর কয়েক মাস পর ২০১৫ সালের মার্চ ও এপ্রিলে দু’দফায় ওই এলাকায় ১৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি গাড়া হয় এবং তার সংযোগস্থলে নেয়া হলেও বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, নড়াইল ওজোপাডিকোর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী রজব আলী বিশ্বাস বিষয়টি যশোর ওজোপাডিকো-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ইখতিয়ার উদ্দিনকে (পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল) অবহিত করলে এ ঘটনায় ওজোপাডিকো, যশোরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সায়েদ আলীকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট তদন্ত কাজ শুরু হয়। তদন্তে লায়েবুর রহমান দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তি স্বরূপ বরগুনায় বদলী হলেও এলাকাবাসী আর বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি।
সুজিত বিশ্বাসের দাবি, ‘সর্বশেষ ১০ দিন আগে তৌহিদুজ্জামানকে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপারে কথা বললে তিনি লেবারের খরচের জন্য আরও ১০ হাজার টাকা দাবি করেন।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত লাইবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে সিবিএ নেতা মো. তৈহিদুজ্জামান বলেন, ‘দক্ষিণ নড়াইল ও নুনীক্ষীর এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগের ঘটনার সাথে তার বিন্দুমাত্র কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এছাড়া যেসব ঠিকাদার এসব সংযোগের কাজ করে থাকেন তাদের সাথে সুজিত বিশ্বাসের কথা বলিয়ে দিয়েছিলাম। এখানে টাকার কোনো কথা হয়নি।’
এ ব্যাপারে নড়াইল ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আবু রায়হান বলেন, ‘এ ব্যাপারে কিছু কিছু বিষয় জানা আছে। এটা অনেক দিন পার হয়েছে।’
এই প্রতিবেদকের প্রতি বিরক্ত হয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা এতো দিন কোথায় ছিলেন? আমাদের কাছে কোনো ডকুমেন্ট নেই। আপনাদের কাছে কি ডকুমেন্ট আছে নিয়ে অফিসে আসেন। নুনীক্ষীর ও দক্ষিণ নড়াইলের বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেই। যেসব জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই তার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।’