বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ইকোসকের উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন (এফএফডি) ফোরামের শেষ দিনে ‘বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও সক্ষমতা বিনির্মাণ’ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের থিমেটিক প্যানেল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এসব সুপারিশ তুলে ধরেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আলোচনায় মুখ্য সচিবের সাথে প্যানেলিস্ট হিসেবে আরও ছিলেন আইটিইউ’র রেগুলেটরি অ্যান্ড মার্কেটিং এনভায়রনমেন্ট বিভাগের প্রধান সোফিয়ে ম্যাডেনস এবং আঙ্কটাডের গ্লোবাল অ্যান্ড রিজিওনাল ট্রেড অ্যানালাইসিস শাখার প্রধান মিহো শিরোতরি।
নজিবুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই একটি সার্বজনীন, নীতি-ভিত্তিক, উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, প্রত্যাশিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও ন্যায়সঙ্গত বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডব্লিউটিও-এর মন্ত্রী পর্যায়ের সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তার দ্বিতীয় সুপারিশ হলো- আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থার চলতি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা এবং বাণিজ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা ডব্লিউটিও-এর জন্য অপরিহার্য একটি বিষয়। এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের একটি বড় নিয়ামকে পরিণত হয়।
তৃতীয় সুপারিশে নজিবুর রহমান বাণিজ্য বাধা, বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করার ক্ষেত্রে ভর্তুকি এবং অন্যান্য বাণিজ্য ক্ষতির পদক্ষেপগুলোকে অবশ্যই আমলে নেয়ার কথা বলেন।
চতুর্থ সুপারিশে তিনি বলেন, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার পদ্ধতিগত ভারসাম্যহীনতা দূর করার জন্য গৃহীত ‘দোহা ডেভোলপমেন্ট এজেন্ডা’র আলোচনা সমাপ্ত করতে হবে।
ডিজিটাল প্লাটফর্ম এবং আর্থিক-প্রযুক্তি এমএসএমই-এর বাণিজ্য অর্থায়নের ক্ষেত্রে কার্যকর একটি ব্যবস্থা হতে পারে বলে পঞ্চম সুপারিশে উল্লেখ করেন তিনি।
তার শেষ সুপারিশ হলো- সক্ষমতা বিনির্মাণ, বৈচিত্র্য সৃষ্টি, মূল্য সংযোজন ও বৈশ্বিক মূল্য চেইনে সমন্বয় আনতে বাণিজ্য অগ্রসরতায় সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে।
ই-কর্মাস, ডিজিটাল অর্থনীতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ে মুখ্য সচিব বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ডিজিটাল অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। ই-কর্মাসের সম্ভাবনাগুলোর পূর্ণ ব্যবহারে শেখ হাসিনা সরকার একটি ডিজিটাল সমাজ বিনির্মাণ করেছে।
‘সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলেই আমরা প্রযুক্তি-নির্ভর ও দক্ষতা ভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনীতির একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে পেরেছি,’ মর্মে মন্তব্য করেন তিনি।
‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো, বাণিজ্য সরবরাহ, পেমেন্ট ব্যবস্থা, আইন ও প্রবিধান, দক্ষতা এবং অর্থায়নের উন্নয়নের মাধ্যমে ই-কমার্সকে ত্বরান্বিত করে এর সুবিধা অর্থনীতিতে ছড়িয়ে দিয়েছে’ বলে আঙ্কটাডের ই-ট্রেডিং রেডিনেস অ্যাসেসমেন্টের দেয়া স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করেন মুখ্য সচিব।
উন্নয়নশীল দেশে ই-কর্মাসের অগ্রযাত্রা মাত্রই শুরু হয়েছে উল্লেখ করে মুখ্য সচিব বলেন, ই-কমার্সের সুবিধাগুলো ঘরে তুলতে, এর ঝুঁকি মোকাবিলা করতে এবং এর প্রতি জনগণের আস্থা সৃষ্টি করতে ‘ইকোসিস্টেম দৃষ্টিকোণ’ থেকে বাণিজ্য বাধাগুলো ভেঙে ফেলতে হবে।
তিনি বলেন, নতুন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যেমন অটোমেশন, থ্রি-ডি প্রিন্টিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো বিষয়গুলো ই-কর্মাস প্রসারের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। কারণ বিশ্বের অনেক দেশ এখনো দ্বিতীয় বা তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের স্তরে রয়েছে। তিনি উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশ উভয়ের জন্যই এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উন্নয়নশীল দেশের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর অভীষ্ট ১৭.১২ এর কথা উল্লেখ করে মুখ্য সচিব বলেন, ‘এর পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে’।
অনুষ্ঠানে নজিবুর রহমানসহ অন্য আলোচকরা টেকসই উন্নয়ন অর্জনে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে কীভাবে আরও কার্যকর করা যায়, বাণিজ্যের সুবিধার সমবণ্টন কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, ই-কমার্সসহ প্রযুক্তির উদীয়মান ধারা বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
গত ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া চতুর্থ এফএফডি ফোরামের এ অধিবেশন আন্তরাষ্ট্রীয় আলোচনার মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত আউটকাম ডকুমেন্ট সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।