সিনজিয়াং চীনের উত্তরপশ্চিমে ইউরেশীয় মহাদেশের পশ্চাদ্ভূমিতে ১৬ লাখ ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত। এখানে নানাবিধ নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। আছে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মের সহাবস্থান। এটি পূর্ব ও পশ্চিমের সভ্যতাগুলোর মধ্যে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেলও এবং বিখ্যাত সিল্ক রোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রাচীন চীনের সাথে বাকি বিশ্বকে সংযুক্ত করেছিল। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ১৩টি নৃগোষ্ঠী- উইঘুর, হান, কাজাক, মঙ্গোলিয়, হুই, কিরগিজ, মান, শিবো, তাজিক, দাউর, উজবেক, তাতার ও রাশিয়ানরা সিনজিয়াংয়ে বসতি স্থাপন করে, যাদের মধ্যে উইঘুররাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এ বহুজাতিক অঞ্চল চীনা জাতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
সিনজিয়াং অঞ্চলটি প্রকৃতিগত দিক থেকে বহুজাতিক হওয়ায়, জটিল জাতিগত মিশ্রণে এর সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার প্রভাবে প্রভাবান্বিত হওয়ার প্রবণতা বেশি। গত শতাব্দীর ৯০ এর দশকের শুরু থেকে ২০১৬ পর্যন্ত, সিনজিয়াংয়ে বহু সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছে, যা অনেক জীবন ও সম্পদের ক্ষতি সাধন করে। সন্ত্রাসী অপরাধ দমন সিনজিয়াংয়ের সব জাতিগোষ্ঠীর একটি সর্বজনীন আহ্বান। যার ফলশ্রুতিতে, চীনা সরকার বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার অভিজ্ঞতার আলোকে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার দ্বারা প্রভাবিত লোকদের জন্য সিনজিয়াংয়ে কতগুলো বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করেছে। যেখানে চারটি বিষয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের ফ্রি কোর্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়- চীনা ভাষায় মানসম্পন্ন কথোপকথন ও লিখন, আইন, বৃত্তিমূলক দক্ষতা এবং সন্ত্রাস নির্মূল সংক্রান্ত। সব প্রশিক্ষণার্থীকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কাজ করার সময় অর্থ প্রদান করা হয়, এছাড়াও তারা নিয়মিত বাড়ি যাওয়া এবং রমজান মাসে গৃহে রোজা রাখার অনুমতি পান। অধ্যায়ন শেষে প্রশিক্ষণার্থীদের সনদ প্রদান করা হবে যা তাদের চাকরি পাওয়ার জন্য সহায়ক হবে।
চীনের সন্ত্রাস ও চরমপন্থা নির্মূলের পদক্ষেপের ফলস্বরূপ সিনজিয়াং স্থিতিশীলতা ও তার স্থানীয় লোকদের জীবনমানের উত্থান প্রত্যক্ষ করেছে। ক্রমাগতভাবে ২৬ মাসে কোনো সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়নি। ২০১৮ সালে সিনজিয়াং দেশ ও দেশের বাইরে থেকে পর্যটকদের দ্বারা ১৫ কোটি ভ্রমণ সম্পন্ন করার রেকর্ড করেছিল, যা এ অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধির পূর্ণ দৃষ্টান্ত দেয়।
চীন ও বাংলাদেশ পরস্পরের নিকট প্রতিবেশী এবং ভালো অংশীদার। আমরা উভয়ই সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং আমাদের জনগণ ও জাতির নিরাপত্তা নিয়ে একই উদ্বেগ ভাগাভাগি করি। সুতরাং, আমরা বিশ্বাস করি যে সিনজিয়াংয়ের বাস্তবতা জানার পর বাংলাদেশের জনগণ চীনের সন্ত্রাসবিরোধী ও অমৌলবাদকরণের পদক্ষেপগুলো বুঝবে এবং সমর্থন করবে। চীনা দূতাবাস আমাদের বাংলাদেশি বন্ধুদেরও সিনজিয়াং ও চীনের অন্যান্য অংশ ভ্রমণে এবং চীন কেমন তা নিজে প্রত্যক্ষ করার জন্য স্বাগত জানায়।
চেন ওয়েই ঢাকার চীনা দূতাবাসের ডিসিএম এবং মুখপাত্র