সোমবার ঢাকার মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবন থেকে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণার পর বিএনপি সরকারকে ধন্যবাদ জানাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ধন্যবাদ জানানোর সংস্কৃতিটাই লালন করে না। সে কারণে তারা এবারও চিরাচরিত গতানুগতিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।’
হাছান মাহমুদ দাবি করেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে মনে হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যে অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন সেটা না পড়ে, না বুঝে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
এ প্যাকেজ ঘোষণার আগে থেকেই সরকার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অথচ এখানে দরিদ্র মানুষের কোনো কথা নেই, এখানে দিনে আনে দিনে খায় এমন মানুষের কোনো কথা নেই- এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল। সংবাদ সম্মেলন করার আগে তার উচিৎ ছিল বিএনপির মতো একটি বড় দলের মহাসচিবের মতো দায়িত্বে থেকে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে বক্তব্য রাখা।'
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, চলমান ভিজিডি ও ভিজিএফ কার্ডের বাইরেও দরিদ্র মানুষ যাতে বিনামূল্যে খাদ্য পায় সে জন্য সরকার ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে ৪৮ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৬ কেটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ৩০ থেকে ৪০ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা দেয়ার জন্য ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২৪ টাকা দামের ওএমএসের চাল ১০ টাকা কেজি দরে ঢাকাসহ সারা দেশে দেয়া হচ্ছে, যাতে দরিদ্র মানুষ এটা কিনতে পারে। এছাড়াও সরকার ৫০ লাখ পরিবারকে গত সাত মাস ধরে প্রতি পরিবারকে ৩০ কেজি করে দশ টাকা দরের চাল বিতরণ করছে, যার ফলে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ সহায়তা পাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক প্যাকেজে কৃষক, মৎস্যখামারি, হাঁসমুরগি পালনকারীদের ক্ষতি পোষাতেও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অথচ মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন, এসব খাতে কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তিনি চোখ-কান থাকতেও অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করছেন।’
স্বাস্থ্য খাতের বিষয়ে মির্জা ফখরুলের অভিযোগ খণ্ডন করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে চলতি বাজেটে ২৫ হাজার ৫৮০ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবং প্রধানমন্ত্রী প্যাকেজ ঘোষণার আগেই পিপিই ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থাসহ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন, যেগুলো মির্জা ফখরুল সাহেব হয়ত জেনেও না জানার ভান করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সারা দেশে সাড়ে তিন লাখের বেশি পিপিই বিতরণ করেছে।’
সরকার জনগণকে ঘরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মির্জা ফখরুলের অভিযোগের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ কার্যত ঘরেই অবস্থান করছে। এবং প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনাও পালন করতে জনগণ সচেষ্ট। কিন্তু সমগ্র দেশের মানুষ যেখানে ঘরে অবস্থান করছে, আমরা দেখতে পেলাম খালেদা জিয়া যে দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পেলেন, তারা মেডিকেলের সামনে হাজার হাজার মানুষকে জড়ো করলেন, বাড়ির সামনে জমায়েত করলেন। যেখানে ২৬ মার্চের জাতীয় সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন বাতিল করা হয়েছে, অথচ তারা হাজার হাজার মানুষ জমায়েত করেন। তারাই আবার দোষারোপের রাজনীতি করেন। এ থেকে তারা বেরিয়ে আসবেন, সেটাই জাতির প্রত্যাশা।’
‘বিএনপি পড়ে, জেনে, শুনে পরামর্শ দিতে পারে, কিন্তু অন্ধের মতো নয়। আমি বিএনপিকে অনুরোধ জানাব, করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগ সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এখন একে অপরকে দোষারোপের, বাদানুবাদের সময় নয়। একে অপরের হাত ধরে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময়,’ যোগ করেন হাছান মাহমুদ।