বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক ও নেত্রকোনার বাসিন্দা সুমা আক্তারকে তার স্বামী ইলেক্টট্রিক মিস্ত্রী মামুন মিয়া পরিকল্পিতভাবে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গত ৯ আগস্ট হত্যা করে। পরে মরদেহ বাথরুমে নিয়ে সে ১৫টি টুকরো করে। মরদেহের মূল অংশ শীতলক্ষা নদীতে ফেলে দেয়।
এসপি বলেন, নিহত সুমা আক্তারের মরদেহের ৫টি টুকরো গত ১২ আগস্ট তার স্বজনদের সহায়তায় তাদের বাসার ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে পলিথিন ব্যাগে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এসময় একটি বড় আকারের ছুরি ও ট্রাভেল ব্যাগও উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঢাকার আশুলিয়া থেকে স্বামী মামুন মিয়াকে মঙ্গলবার গভীর রাতে তার এক আত্মীয়ের বাস থেকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের কাছে স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার লোমহর্ষক কথা স্বীকার করে মামুন জানায়, পারিবারিক কলহ ও সুমার জমানো ৪০ হাজার টাকা ভোগ করার জন্য গার্মেন্টস কারখানা ছুটির দিনে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতো ঘটনার সন্ধ্যায় হালিমের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সুমাকে অচেতন করা হয় এবং রাত ১টার দিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরদিন ভোরে ও সন্ধ্যায় শরীরের মূল অংশ ট্রাভেল ব্যাগে ভরে নদীতে ফেলে দেয়। বাকি ৫টি টুকরো নদীতে ফেলার জন্য পলিথিনে মুড়িয়ে ড্রয়ারে রেখে দেয়। তবে পরদিন সকালে নিহতের ছোটবোন ওই বাসায় এসে গেলে তা আর ফেলতে পারেনি, বরং তাদের উপস্থিতির কারণে সে বাসা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে শ্রীপুর থানায় নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার দেবকান্দা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের দায়ের করা মামলার বিবরণে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে কাপাসিয়ার মামুনের সঙ্গে তার মেয়ে সুমা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি ও কথা কাটাকাটি হতো। গত ৯ আগস্ট সকালে মামুন তার শাশুড়ির মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে জানায়, সুমাকে তাদের বাড়ি যেতে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সে বাড়িতে না গেলে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। এক পর্যায়ে ১২ আগস্ট সুমার বোন বৃষ্টি তার এক বান্ধবীকে নিয়ে বোনের ভাড়া বাসায় যায়। এক পর্যায়ে তারা বাসায় দুর্গন্ধ ও ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রক্তযুক্ত মাংস সদৃশ্য বস্তু দেখতে পেয়ে চিৎকার দিতে থাকে। এসময় প্রতিবেশীরা ছুটে এসে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫টি টুকরো উদ্ধার করে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুস সবুর ও শ্রীপুর থানার ওসি লিয়াকত আলী উপস্থিত ছিলেন।