সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে প্রায় ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে নতুন নতুন অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
বন্যাকবলিত এলাকার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেই সাথে ভাঙন পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। হুমকির মুখে এখন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’
শনিবার প্রায় দিনভর বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদীর তীরবর্তী বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার বিকাল থেকে বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব পাড়ে প্রচণ্ড ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই সিমলা-পাঁচঠাকুরী স্যাংক বাঁধের প্রায় ৯০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ওই বাঁধ অভ্যান্তরের পাঁচঠাকুরী তালুকদার পাড়াসহ দুই শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
পাঁচঠাকুরী তালুকদার পাড়ার হারুনর রশীদ, জহুরুল তালুকদারের ঘরবাড়ি ও নগদ ৪ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ অনেক পরিবারের গরু বাছুর, ছাগল, মুরগির খামার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনের জরুরি মাইকিংয়ে ওই বাঁধের পূর্বপাড় এলাকার ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে ও নিচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা আক্ষেপ করে বলেন, কতিপয় প্রভাবশালী বালুদস্যু যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য এ ভয়াবহ ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড দিনরাত জিওব্যাগ ও ব্লক নিক্ষেপ করছে।
ভাঙন এলাকায় দায়িত্ব নিয়োজিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ভাঙন এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা এখনও কাটেনি।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ‘পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ শনিবার ভোররাতে ভাঙন এলাকা পরিদর্শনসহ ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন।’
ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন শেষে সিনিয়র সচিব এ ভাঙন রোধে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে ফিরোজ মাহমুদ জানান।