%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7%20%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6
৩ মাস পর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হলো সুন্দরবন
একটানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বনজীবী ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে সুন্দরবন।
ইতোমধ্যে জেলে, ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ ও বোট চালকেরা সুন্দরবনের প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং সুন্দরবনের আশেপাশের এলাকার ইকো কটেজগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে পর্যটক বরণের।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে মাছ ধরা ও পর্যটনে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা ১ জুন থেকে
সুন্দরী ইকো রিসোর্টের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটকদের বরণে সব আয়োজন শেষ করেছি আমরা। রিসোর্টে বসে সুন্দরবনের পাখিদের ডাক, পায়ে হেঁটে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য উপভোগ, নিরাপত্তার সঙ্গে নিশিযাপন এবং মানসম্মত খাবারগ্রহণ প্রভৃতি আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার ডালি সাজিয়ে আমরা অপেক্ষায় আছি পর্যটকদের।’
মোংলা ঘাটের ট্রলার চালক রুবেল হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মোংলা থেকে করমজল পর্যন্ত ট্রলারে দর্শনার্থী বহন করেই আমরা জীবিকা নির্বাহ করতাম। সুন্দরবন বন্ধের তিন মাস মোটামুটি বেকার অবস্থায় ছিলাম। আশাকরি আবারও সেই কর্মজীবনে ফিরতে পারব। এজন্য ট্রলার পরিস্কার ও সাজ-গোজেরও কাজ করেছি।’
এদিকে, টানা তিন মাস বন্ধ থাকায় প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরে উঠেছে সুন্দরবন। দর্শনার্থী, মৎস্যজীবী ও বনজীবীদের প্রবেশ না করায় প্রাণিকূল তাদের নিজের ইচ্ছেমত বিচরণ করেছে। গাছগাছালিও শাখা মিলেছে নিজেদের মত করে।
এরআগে, বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম থাকায় ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে সকল প্রকার বনজীবী ও দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে গত ৫ বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে
যশোরে ৪৩২৩ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ
সবজিতে ভরে গেছে যশোরের ফসলের মাঠগুলো। মাঠের পর মাঠ সবুজের সমারোহ নজর কাড়ছে সবার। উচ্চ ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় আগাম সবজি চাষ করে এবার লাভবান হয়েছে কৃষকরা।
জেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানান, সময়োপযোগী আবহাওয়া আগাম শীতকালীন সবজি চাষিদের জন্য আর্শিবাদ হয়েছে। যে কারণে ফলন হয়েছে বাম্পার।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, যশোরে ৪ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আগাম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে চাষ করেছেন চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নের চাষিরা।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, হৈবতপুর ইউনিয়নে ২ হাজার ৪৩২ হেক্টর, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নে ১ হাজার ২৬ হেক্টর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ৮৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। বর্তমানে শীতকালীন আগাম সবজি আবাদ চলছে পুরোদমে। নানা ধরনের সবজি এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যশোরের সবজি ছড়িয়ে পড়ছে দেশ- বিদেশে।
শনিবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বর্তমান সরকারের অধীনে একটি মেগা অবকাঠামো শনিবার আংশিকভাবে যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা থেকে ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এটি উদ্বোধন হলে ৬০ কিলোমিটার গতির একটি গাড়ি মাত্র ১০ মিনিটে কাওলা থেকে ফার্মগেট পৌঁছাতে পারবে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যেতে পারবে। এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকার যানজট এবং যাতায়াতের খরচ অনেকাংশে কমিয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক যোগাযোগে সূচনা করবে নতুন যুগের
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সম্পূর্ণভাবে নির্মাণ হলে রাজধানীর কাওলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকা কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে চলাচল করবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
আগামী ২ সেপ্টেম্বর থেকে যাত্রীরা কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশ ব্যবহার করতে পারবেন।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহনকে টোল দিতে হবে। চারটি ক্যাটাগরিতে এই টোল আদায় করা হবে।
আরও পড়ুন: ঈদ যাত্রা: ভোগান্তি কমিয়েছে ফরিদপুরের এক্সপ্রেসওয়ে
নির্বাচনের আগে ৯টি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন, প্রথমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এদিকে নির্বাচনের আগেই বর্তমান সরকারের মেয়াদে সড়ক, সেতু, রেলপথ ও বিমান চলাচলসহ মোট ৯টি মেগা প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম ও সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রকল্পটি হলো ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বাকি প্রকল্পগুলো হলো- মেট্রোরেল প্রকল্প (বাকি অংশ), পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল (কর্ণফুলী টানেল), খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্প, আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃদেশীয় রেল সংযোগ প্রকল্প ও পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
২ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটির প্রথম ধাপের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার ইউএনবিকে বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ ৩ ধাপে সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রথম অংশের বনানী পর্যন্ত ৯৮ শতাংশ এবং বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত অংশের ৫৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ২ সেপ্টেম্বর কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন উপলক্ষে আগারগাঁওয়ের বাণিজ্য মেলার পুরাতন মাঠে সুধী সমাবেশ করা হবে।
মেট্রোরেল
২০ অক্টোবর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ।
কাদের বলেন, ২০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন এবং ওইদিন বিকাল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া ১৬ সেপ্টেম্বর এমআরটি লাইন ৫ নর্দান রোডের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষে সাভারে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ হতে নগরবাসীরা উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে পারবেন মাত্র ৩৮ মিনিটে।
খুমেক হাসপাতালে অপর্যাপ্ত শয্যা ও জনবল, চিকিৎসায় ভোগান্তি
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে রোগীদের অতিরিক্ত ভিড় ও জনবল সংকটের কারণে যথাযথ চিকিৎসা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
৫০০ শয্যার হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় রোগীর সংখ্যা ৩ গুণ বেশি হওয়ায় শয্যা স্বল্পতার কারণে খুমেক কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
এছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসকদেরও প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৫০০ রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষ: ক্লাস বর্জন খুমেক শিক্ষার্থীদের
খুমেকের উপ-পরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী বলেন, নতুন বিভাগ খোলার পর কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা সম্প্রসারিত করায় রেকর্ড সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভিড় করছেন।
তিনি আরও বলেন, যদিও আমরা রেকর্ড সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে অনেক সংগ্রাম করছি, তবুও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
সম্প্রতি হাসপাতালে পরিদর্শনের সময় ইউএনবির এই সংবাদদাতা দেখতে পান, হাসপাতাল ভবনের প্রবেশদ্বারের কাছে মেঝে, বারান্দা এবং সিঁড়িগুলোতে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। বিছানার স্বল্পতার কারণে অনেকেই মেঝেতে মাদুর, বাথরুমের কাছে এবং সিঁড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
রূপসা উপজেলা থেকে বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাবাকে নিয়ে এসেছি। গত ৭ দিন ধরে তিনি বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বারান্দায় ফ্যান না থাকায় গরমে বাবার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শুক্রবার থেকে খুমেক হাসপাতালের ৩ চিকিৎসক নিখোঁজ
নারিতার পর বিশ্বের আরও কয়েকটি রুটে ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ বিমানের
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলেছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বাংলাদেশি যাত্রীদের জন্য বিমান যোগাযোগ বাড়াতে আন্তর্জাতিক রুট সম্প্রসারণে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিউইয়র্ক, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, লস অ্যাঞ্জেলেস, রোম, মালে ও গুয়াংজুসহ বিশ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছি।’
ইউএনবির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিমানের সিইও এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি পর্যায়ক্রমে এসব রুটে আমরা ফ্লাইট চালু করতে পারব। আমরা মূল্যায়ন করছি এবং কীভাবে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে প্রতিটি রুটে ফ্লাইট শুরু করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি।
তারা আরও বলেন, এসব রুটে ফ্লাইট চালু হলে বাংলাদেশি যাত্রীদের জন্য বিমান যোগাযোগ সহজ হবে।
শফিউল আজিম বলেন, বিশ্বের ১৯টি গন্তব্যে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ড্রিমলাইনারসহ অত্যাধুনিক উড়োজাহাজসহ মোট ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে আমাদের। ইউরোপের অন্যতম কোম্পানির এয়ারবাস থেকে নতুন করে আরও ১০টি উড়োজাহাজ কেনার বিষয়ে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, এয়ারবাসে নতুন ১০টি উড়োজাহাজ যুক্ত হলে নতুন নতুন রুট সম্প্রসারণ সহজ হবে এবং এতে করে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ফ্লাইট পরিচালনার নতুন দিক উম্মোচন হবে।
জনপ্রিয় রুটগুলোতে বিমানের ফ্লাইট বৃদ্ধি করলে টিকিটের দাম কমাতে অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলো বাধ্য হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু এশিয়া নয় পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে ইউরোপেও আমাদের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা সম্প্রসারণের কাজ হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়টি রয়েছে। আমরা দ্রুত চালু করতে চাই সেজন্য বিমান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তার সব কিছু এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে আমরা নিউইয়র্কেও সরাসরি যেতে পারব। এক্ষেত্রে দেশগুলোর এয়ারলাইন্সের সঙ্গে আমাদের কোড শেয়ারিংসহ বিভিন্নভাবে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যাবে।
শফিউল আজিম এ বিষয়ে আরও বলেন, আমাদের সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি এবং তাদের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টের কিছু আনুষ্ঠানিক কাজ চলমান। সবকিছু ঠিক থাকলে এই বছরের শেষের দিকে নিউইয়র্কসহ নতুন রুটে ফ্লাইটের কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-নারিতা রুটে ১ সেপ্টেম্বর ফ্লাইট চালু করবে বিমান
তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ সম্প্রতি গালফ এয়ারের সঙ্গে পার্টনারশিপে কাজ শুরু করেছে। গালফ এয়ার বাংলাদেশ থেকে বাহরাইন পর্যন্ত আমাদের ফ্লাইট নেয়। কিন্তু গালফ এয়ার আমাদের যাত্রীদের নিয়ে যাবে বিমানের টিকিটে। আবার বাংলাদেশ থেকে যদি কেউ ইউরোপে যেতে চায় সেক্ষেত্রে গালফ এয়ার বাহরাইন হয়ে ইউরোপে চলে যাবে। আমার বিমান যেহেতু ইউরোপে যাচ্ছে না তাই আমার থেকে টিকিট কেটে এই সুবিধা নিয়ে ইউরোপে চলে যেতে পারবে। একইভাবে ইউরোপ থেকে যদি কেউ বাংলাদেশে আসতে চায় গালফ এয়ার তাদের নিয়ে আসতে পারবে। যেহেতু বাংলাদেশ বিমানের ইউরোপে যাওয়ার সুযোগ নেই তাই মুনাফাটা ভাগাভাগি হবে।
তিনি আরও বলেন, বিমানের যাত্রীসেবার মান কীভাবে বাড়ানো যেতে পারে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। কেউ যদি অপরাধ করে, সে বিষয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।
বিমান সার্ভিসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিমান আগে থেকে ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। বিমানে ভ্রমণে এখন বাংলাদেশিসহ সব যাত্রীর পছন্দনীয় এয়ারলাইন্স হয়েছে। তাই বিমান সার্ভিসকে আরও উন্নত করতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর জাপানের নারিতায় ফ্লাইট চালু হচ্ছে জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, চেন্নাই আমাদের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে। এ ছাড়া চায়নার গুয়াংজুর বন্ধ ফ্লাইটটি আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আমরা নতুন করে চালু করতে যাচ্ছি। পাশাপশি জাপানের নারিতা হয়ে অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং কোড শেয়ারিংয়ের চেষ্টা করছি।
জাপানে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, এটাকে বাংলাদেশ বিমানের বড় একটি অর্জন বলতে চাই। এক সময় এই রুটে ফ্লাইট চলাচল থাকলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা থেকে পূর্ব দিকে ফ্লাইট নেটওয়ার্ক কম ছিল। এটার মধ্যদিয়ে আমাদের নতুন দিগন্ত চালু হলো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-জাপান পর্যটন বাড়াতে হবে। এজন্য বিমানের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। একইসঙ্গে প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে যাত্রীরা যেন ঢাকা হয়ে জাপান যাওয়া-আসা করতে পারেন সে বিষয়ে আমরা বিপণন কৌশলে এগোচ্ছি।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: বিমান সিইও
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত
রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১২০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট আগামী বছর থেকে উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিপিডিবি বিদ্যুতের সম্ভাব্য শুল্ক নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিপি) কর্মকর্তারা প্ল্যান্টের সম্ভাব্য বিদ্যুৎ শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বিএইসি) সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠকে বসেন। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য পাননি।
বিএইসি ২৪০০ এমডব্লিউ আরএনপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং বিপিডিবি একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় রাশিয়ার সহায়তায় নির্মাণ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনবে।
আরও পড়ুন: চলতি মাসে আরও ২০০ মেগাওয়াট ডিজেলচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করবে সরকার
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বিএইসির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা বিপিডিবির কিছু কর্মকর্তার বরাতে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্য জানানোর ব্যাপারে আরএনপিপি কর্মকর্তাদের মধ্যে খুবই অনীহা দেখা যায়।
তিনি বলেন, ‘খরচের সঠিক তথ্য জানা না থাকলে কেন্দ্রের বিদ্যুতের শুল্ক গণনা করা সত্যিই কঠিন।’
তিনি আরও বলেন, বিএইসি কর্মকর্তারা প্ল্যান্টের প্রয়োজনীয় তথ্য ও খরচ সম্পর্কে জানাতে ইচ্ছুক নন।
‘ইস্যুটি খুবই সংবেদনশীল’ হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিপিডিবি কর্মকর্তারা বিএইসিকে তাদের খরচের কিছু তথ্য যথাযথ নথিসহ জানাতে বলেছিলেন। বিশেষ করে বিদেশি ঋণ, সুদ, পরিশোধের সময়সূচি, জ্বালানি সরবরাহের খরচ, নির্দিষ্ট খরচ, পরিচালনা ব্যয় এবং আরএনপিপির প্রতিষ্ঠা খরচ।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিএইসি কর্মকর্তারা এই তথ্যগুলো বিপিডিবিকে জানায়নি।’
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেছেন, বিপিডিবি ও বিএইসি উভয়ই শুল্ক সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা করছে।
তিনি বলেন, আরএনপিপির প্রথম ইউনিটটি ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিক থেকে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেছেন, ‘সুতরাং, শুল্ক বিষয়ক সমাধানের জন্য এখনও যথেষ্ট সময় আছে এবং আমরা সেই সময়ের আগেই একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ব্যাপারে আশাবাদী।’
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, তারা বিএইসির সঙ্গে আলোচনা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রাথমিক হিসাব করেছেন। সে হিসেবে আরএনপিপির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের শুল্ক ১০ টাকার কম হবে না।’
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, প্রথম থেকেই লেভেলাইজড ট্যারিফ বা বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের সম্ভাব্য উৎপাদন খরচ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।
আরএনপিপি প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে এর কর্মকর্তারা বলেছিলেন, শুল্ক হবে প্রায় শূন্য দশমিক ০৪ ডলার বা ৪ সেন্ট। অর্থাৎ প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টা ৩ টাকা ৫০ পয়সা, যখন মার্কিন ডলারের দাম ৮০ টাকার কম ছিল।
আরএনপিপি কর্মকর্তাদের পাঠানো কাগজপত্রে রাশিয়ান বিশেষজ্ঞরা আরও কম শুল্কের কথা বলেছিলেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে এক মাস ধরে বিদ্যুৎবিহীন ৮ হাজার গ্রাহক
তারা জানিয়েছিলেন, শুল্ক প্রায় শূন্য দশমিক ০৩১৯ বা ৩ দশমিক ২ সেন্ট হতে পারে।
আরএনপিপির প্রকল্প পরিচালক এবং নবগঠিত নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ শওকত আকবর এর আগে ইউএনবির সঙ্গে কথা বলার সময় ধারণা দিয়েছিলেন যে শুল্ক শূন্য দশমিক ০৪ ডলারের মধ্যে হবে।
তিনি বলেন, ৫০ বছরের স্থিতিশীল জ্বালানির দাম, ৫০ বছর পরিচালনার মেয়াদ এবং মূলধন বিনিয়োগ ব্যয়ের উপর ভিত্তি করে আরএনপিপির হিসাব করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের ডিসকাউন্ট রেট কম থাকলে শুল্ক কম হয়। এছাড়া, প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর বা প্ল্যান্টের গড় বিদ্যুৎ পরিবহনের সঙ্গে তার নির্ধারিত সক্ষমতার অনুপাত ৯৩ শতাংশ গণনা শুল্ক কম হওয়ার আরেকটি কারণ।
কিন্তু স্থানীয় বিদ্যুতের শুল্ক বিশেষজ্ঞরা এই হিসাবের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন এবং বলেছেন, এই অনুমানের চেয়ে শুল্ক অনেক বেশি হবে।
কিছু স্থানীয় বিশেষজ্ঞের হিসাব অনুযায়ী আরএনপিপি প্রকল্পের বিদ্যুতের শুল্ক শূন্য দশমিক ০৮ ডলার থেকে শূন্য দশমিক ১০ ডলারের (৮-১০ মার্কিন সেন্ট) বেশি হবে।
দেশের বিশিষ্ট বিদ্যুৎ শুল্ক বিশেষজ্ঞদের একজন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান বলেছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের শুল্ক হবে শূন্য দশমিক ০৮৫ ডলারের (৮ দশমিক ৫ সেন্ট) বেশি।
বিপিডিবির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মিজানুর রহমান মনে করেন, শুল্ক আরএনপিপির হিসাবের দ্বিগুণেরও বেশি হবে।
নির্মাণ ব্যয় ১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার (১২ দশমিক ৬৫ ডলার এবং ৫০০ মিলিয়ন সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন ব্যয়), ৫০ বছরের জ্বালানির মূল্যসহ ৫০ বছরের অপারেশন ও ডিকমিশনিং এবং ব্যয়িত জ্বালানি রাশিয়ায় পাঠানোর ব্যয়ের ভিত্তিতে তার নিজের করা হিসাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি মার্কিন ডলারের দাম ১০৯ টাকা হারে ধরা হয়, তবে শুল্ক হবে প্রায় শূন্য দশমিক ০৮৫ ডলার বা প্রতি ইউনিট ৯-১০ টাকার মধ্যে।
আরও পড়ুন: ১৬ দিন পর ফের উৎপাদন শুরু রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে
তিনি আরও বলেন, ‘আর ডলারের দর আরও বাড়লে, শুল্ক প্রতি ইউনিট ১০ টাকার বেশি হবে।’
তিনি বলেন, ঋণ পরিশোধের সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ হবে ১২-১৩ সেন্ট এবং তারপর তা কমে ৫-৬ সেন্টে নেমে আসবে।
তিনি বলেন, যতদিন না বাংলাদেশ পারমাণবিক বর্জ্য মোকাবিলায় কিছু দক্ষতা অর্জন করে ততদিন রূপপুরের মতো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহৃত জ্বালানির বর্জ্য রাশিয়ান ফেডারেশনে পাঠানো হবে। পারমাণবিক শক্তি নিষ্ক্রিয় করা একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বিদ্যুতের দাম নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘সঠিকভাবে না জেনে শুল্ক সম্পর্কে মন্তব্য করা বুদ্ধিমানের কাজ না।’
শুল্ক হিসাবের সময় বিপিডিবি কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ ২০২৭ সালের মার্চ থেকে ঋণ পরিশোধ শুরু করবে। বার্ষিক ১ দশমিক ৩৬০ বিলিয়ন ডলার হারে পরবর্তী ২০ বছরে ৪০টি কিস্তিতে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আসল ও সুদসহ গড়ে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে।’
সরকার ২০০৯ সালে আরএনপিপি প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা করে এবং ২০০৯ সালের ১৩ মে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে 'পারমাণবিক জ্বালানির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার'- বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে।
২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তুতি পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রাষ্ট্রীয় রপ্তানি ঋণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়।
রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকার ২০১৫ সালে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাধারণ চুক্তি (জিসি) সই করে।
চুক্তি অনুসারে প্রতিটি ইউনিট ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
বাংলাদেশ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আরএনপিপি’র জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার জন্য একটি ঋণচুক্তি সই করে। প্রকল্পের ব্যয়ের ৯০ শতাংশই এই অর্থের মাধ্যমে নির্বাহ করা হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটটি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০১৫ সালের জুলাই মাসে চালু হতে পারে।
আরও পড়ুন: রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা নিয়ে আসা জাহাজের বিরুদ্ধে মামলা
চলতি বছর দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩০ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করবে
কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ সোলার পাম্প, কৃষকের মনে স্বস্তি
কুড়িগ্রামের নদীবিধৌত চরাঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ সোলার পাম্পের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা চালু করে কৃষকের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)।
সরকারি অর্থায়ণে ভ্রাম্যমাণ সোলার পাম্পের সেচে কম খরচে ফসল ঘরে তুলতে পেরে কৃষকের মনে স্বস্তি ফিরেছে।
আরও পড়ুন: যশোরে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে সরকারি সোলার!
এতদিন এ অঞ্চলের বন্যা, খরা ও প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে বাঁচা কৃষকেরা শ্যালো মেশিনের সেচ পাম্পের উপর নির্ভরশীল ছিল।
এখন আর শ্যালো মেশিনের জ্বালানি ডিজেলের দামবৃদ্ধি এবং যান্ত্রিক ভোগান্তি না থাকায় কম খরচে ফসল ঘরে তুলতে পেরে খুশি চরাঞ্চলের কৃষকরা।
জানা গেছে, জেলার চিলমারীর সদর ইউনিয়নের বজরাদিয়ার খাতা গ্রামে কৃষকের খেতে পানি দিতে ছুটে বেড়াচ্ছে ভ্রাম্যমাণ সোলার সেচ পাম্প।
ওই এলাকার প্রায় ১ হাজার ৫০০ কৃষকের ধান ও ফসলের খেতে সেচের জন্য নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ সোলার পাম্পটি।
লোহার এঙ্গেলের উপর বিশেষ কায়দায় স্থাপন করা হয়েছে আটটি সোলার প্যানেল। ব্যাটারিবিহীন একটি কনভার্টার সাহায্যে বৈদ্যুতিক মটর সেট করে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে নদী-নালা, খাল-বিল থেকে সহজে পানি পাচ্ছেন কৃষকেরা।
পরিবহনের ঝামেলা এড়াতে চাকা লাগিয়ে বানানো এই ভ্রাম্যমাণ সোলার প্যানেলের সেচ পাম্প যাচ্ছে কৃষকের খেতের কাছে। খুব সহজে হাতের কাছে এমন সেচ ব্যবস্থা পেয়ে আশার আলো বুনছেন কৃষকেরা।
কথা হয় বজরাদিয়ার খাতা গ্রামের মো. হারুন রশীদ নামের এক কৃষকের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: সোলার প্যানেল ব্যবহার করে ২০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ বিল বাঁচানো সম্ভব: নসরুল হামিদ
তিনি বলেন, সোলার সেচ পাম্পের সাহায্যে কম খরচে ফসল ঘরে তুলতে পেরে আমরা অনেক খুশি। কেননা শ্যালো ইঞ্জিন সেচ পাম্পে এক বিঘা ধানের জমিতে প্রায় ৮-৯ হাজার টাকা খরচ হতো। সেখানে ৫ হাজার ৫০০ টাকায় আমরা ফসলে পানির কাজ শেষ করতে পারছি। আবাদে পানি নিয়ে আমাদের আর কোনো চিন্তা নাই।
আরেক কৃষক মো. আবু বক্কর বলেন, খেতে পানি নিয়ে আমাদের এলাকার মানুষের আর দৌড়াদৌড়ি নাই। ঘুম থেকে উঠে কে আগে জমিতে পানি নেবে সেই দিন শেষ। আমরা সোলার পাম্পের সঙ্গে চুক্তি করি, ওরা এসে আমাদের ধান বা অন্যান্য ফসলের খেতে পানির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এমন নিরাপদ নির্ভেজাল সেচ ব্যবস্থা পেয়ে আমরা খুবই খুশি।
যারা মিয়ানমারের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের ‘উপযোগী নয়’ বলে দাবি করছে, তারা কখনোই রাখাইন যায়নি: চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন করার জন্য যৌথ বৈশ্বিক প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, যারা মিয়ানমারের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের ‘উপযোগী নয়’ বলে দাবি করে আসছেন, তারা কখনোই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যায়নি।
তিনি বলেন, ‘এটি বেশ অদ্ভুত। বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য জীবনযাপনের জন্য কক্সবাজারের পরিস্থিতি উপযুক্ত কি না তারা এ প্রশ্নের উত্তর দেননি। এ বিষয়ে তাদের নিজেদেরই নিজেদের প্রশ্ন করা দরকার।’
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ইউএনবিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।
রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে এসেছে। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) এর ষষ্ঠ বার্ষিকী ছিল।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে জর্জরিত করছে। বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ এসব বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দিয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। কক্সবাজার ক্যাম্পে হত্যা, বন্দুকযুদ্ধ, অপহরণ, মাদক ও মানব পাচার চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বহিরাগত সহায়তাও কমছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য খাদ্য রেশন প্রতি মাসে ১২ থেকে কমিয়ে ৮ মার্কিন ডলার করা হয়েছে, যা টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়।’
চীনের রাষ্ট্রদূত জোর দিয়ে বলেছেন, সব পক্ষই ক্রমবর্ধমানভাবে উপলব্ধি করেছে যে প্রত্যাবাসনই একমাত্র উপায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বারবার প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে তার দৃঢ় সংকল্প ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘যদিও রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয়, তবে উভয় দেশের অভিন্ন প্রতিবেশী এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীন দুই পক্ষকে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে মতবিরোধ নিষ্পত্তি করার বিষয়ে মত পোষণ করে। যাতে করে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়।’
আরও পড়ুন: অগ্রাধিকারমূলক ঋণ, জিডিআই ও সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন তহবিলের উপযুক্ত ব্যবহার করবে বাংলাদেশ: প্রত্যাশা চীনা রাষ্ট্রদূতের
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে চীন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির উন্নতির জন্য তিন ধাপের প্রস্তাব পেশ করেছে। এগুলো হলো-সহিংসতা বন্ধ করা, প্রত্যাবাসন শুরু করা এবং উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে চীন তার সামর্থ্যের মধ্যে অনেক রকম সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন সুবিধার শর্ত উন্নীত করতে সাহায্য করেছি, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যক্ষ আলোচনার ব্যবস্থা করেছি এবং দুই পক্ষকে উৎসাহিত ও সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।’
২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু-সহনশীলতা অর্জনই জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার লক্ষ্য
২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) গ্রহণ করেছে সরকার। যা কার্যকর অভিযোজন কৌশলগুলোর মাধ্যমে একটি জলবায়ু-সহনশীল জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখে। এটি একটি শক্তিশালী সমাজ ও বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করে এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রেরণা দেয়।
দাপ্তরিক একটি নথি থেকে জানা যায়, পরিকল্পনাটি প্রাথমিকভাবে আটটি স্বতন্ত্র ভাগকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর মধ্যে জলসম্পদ; বিপর্যয়; সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা; কৃষি; মৎস্য; জলজ উদ্ভিদ ও পশুসম্পদ; শহুর এলাকা; বাস্তুতন্ত্র, জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য; নীতি ও প্রতিষ্ঠান এবং সক্ষমতা উন্নয়ন, গবেষণা ও উদ্ভাবন রয়েছে।
এনএপি বাস্তবায়নের জন্য মোট ২৩০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রয়োজন, যার সাড়ে ৭২ শতাংশ ২০৪০ সালের মধ্যে গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নথি অনুসারে, এনএপি বাস্তবায়ন ২৩টি বিস্তৃত কৌশল এবং ২৮টি ফলাফলের মাধ্যমে ছয়টি লক্ষ্য অর্জন করতে চাইবে যা জলবায়ু-জনিত বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে সুরক্ষার বিভিন্ন দিককে অন্তর্ভুক্ত করে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিন, এসডিজি অর্জন করুন: বক্তারা
এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাস্তুতন্ত্রভিত্তিক অভিযোজন, উন্নত শাসন ব্যবস্থা, উন্নত জলবায়ু অর্থায়ন ও রূপান্তরমূলক ক্ষমতা-নির্মাণ এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে জলবায়ু-সহনশীল কৃষি, অবকাঠামো এবং অন্যান্য আর্থ-সামাজিক খাতগুলোর বিকাশ করবে।
এনএপি উন্নত অভিযোজন পথ এবং খাতভিত্তিক অভিযোজন প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে ১১৩টি মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া প্রণয়নের জন্য জলবায়ুর চাপে রয়েছে এমন ১১টি ক্ষেত্র বিবেচনা করেছে।
এই মধ্যস্থতা প্রক্রিয়াগুলো বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ (বিডিপি২১০০) এর ৫২টি জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তারা এনএপি প্রক্রিয়া জুড়ে নারী ও বিভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যুব, জাতিগত সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে।
নথি অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের বিশ্ব জলবায়ু ঝুঁকি সূচকে সপ্তম স্থানে রয়েছে এ দেশ।
এই বিষয় মাথায় রেখে, কয়েক দশক ধরে, জলবায়ু-সহনশীল টেকসই উন্নয়ন সক্ষম করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ অভিযোজিত ক্ষমতা ও সহনশীলতা তৈরিতে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোজন প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন
সরকার ২০২২ সালের অক্টোবরে এনএপি গ্রহণ করেছে। যা ২০৫০ সাল পর্যন্ত ২৭ বছরে কার্যকর করা হবে। বাংলাদেশও ২০২১ সালের আগস্টে একটি হালনাগাদ এনডিসি জমা দিয়েছে।
এখন সরকার বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান (বিসিসিএসএপি, ২০০৯) হালনাগাদ করছে। যাতে এটি এনএপি ও হালনাগাদ করা এনডিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
উপরন্তু, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা (এমসিপিপি) বাংলাদেশের দ্বিতীয় মেয়াদে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি হিসেবে চালু করা হয়েছিল।
এই পরিকল্পনার লক্ষ্য বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিপথ দুর্বলতা থেকে সহনশীলতা এবং সর্বোপরি সমৃদ্ধি (ভিআরপি) নিশ্চিত করা।
এমসিপিপির অধীনে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৩০ শতাংশ জ্বালানি অর্জন করতে চায়।
হালনাগাদ করা এনডিসির অধীনে বাংলাদেশ জিএইচজি নির্গমনের লক্ষ্যবস্তু হ্রাস বেশ কিছু প্রশমন কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। যার মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিদ্যমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিবহন উপখাতে জ্বালানি ব্যবহারে সক্ষমতার উন্নতি, শিল্প উপখাতে জ্বালানির ব্যবহারে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কৃষিতে সৌর শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি।
ইটের ভাটায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এবং গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক ভবনে বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানো হবে। এছাড়া ধানের ক্ষেতে নির্গমন, সারের ব্যবহার, আন্ত্রিক গাঁজন হ্রাসের উপর নজর দেওয়া হবে।
এ ছাড়াও নথিতে বলা হয়েছে, বন উজাড় প্রতিরোধ, বৃক্ষপোরণ বা বনায়ন, পৌরসভায় উন্নত কঠোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ‘থ্রি আর’ নীতির ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট, ইন্দো-প্যাসিফিক, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ ও সুইডেনের মতবিনিময়