%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7%20%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের আর্থিক সাক্ষরতা বাড়াতে কাজ করছে বিএসইসি: অধ্যাপক শিবলী
বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা জনগণের আর্থিক সাক্ষরতা বাড়াতে কাজ করছে। যাতে তারা সচেতনভাবে ও লাভজনকভাবে বিনিয়োগ করতে পারে।
এ লক্ষ্যে, বিএসইসি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সঙ্গে সহযোগিতা করছে।
ইউএনবির সঙ্গে কথা বলার সময় অধ্যাপক শিবলী স্বীকার করেছেন যে কখনও কখনও লোকেরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করতে বা ভুল তথ্যের পিছনে ছুটতে প্রভাবিত হয়।
তিনি বলেন, ‘তারা যদি আর্থিকভাবে শিক্ষিত হতে পারে, তাহলে কেউ তাদের ঠকাতে পারবে না।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, দেশব্যাপী গড়ে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশের সঙ্গে বাংলাদেশে আর্থিক সাক্ষরতার স্কোর এখনও বেশ কম।
২০২২ সালের সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে, এসএসসির নিচে শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষ, ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, ব্যক্তি উদ্যোক্তা, ঢাকাবাসী, গৃহিণী ও কৃষকদের স্কোর সবচেয়ে কম।
বিএসইসি ২০২৩ সালের মধ্যে পুঁজিবাজারে রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট বা আরইআইটি, পিঙ্ক ও অরেঞ্জ বন্ড চালু করার জন্য কাজ করছে। পিঙ্ক বন্ডের মাধ্যমে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। এবং এসএমই ও বড় উদ্যোক্তারা অরেঞ্জ বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।
অধ্যাপক শিবলী বলেন, নারী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি আর্থিক খাতে তাদের ক্ষমতায়নের জন্য উভয় রঙিন বন্ড চালু করা হবে।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজার নিয়ে বিএসইসি’র সঙ্গে আলোচনায় বসবে আইএমএফ
এছাড়া পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য বিএসইসির একটি বিশেষ বন্ড পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন।
একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা এই নিরাপদ খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে বলেও জানান তিনি।
অধ্যাপক শিবলী বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শুধুমাত্র রাজস্বের ওপর নির্ভর করে সম্পন্ন করা যায় না।
প্রকল্পভিত্তিক অবকাঠামো বন্ড ও স্টক মার্কেট থেকে তহবিল সংগ্রহের জন্য মিউনিসিপ্যাল বন্ড উন্নয়নের জন্য একটি বৈচিত্র্যময় তহবিলের সুযোগ হবে।
তিনি বলেন, যদি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্রায় ১২-১৩ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়, তবে লোকেরা তাদের অর্থ এফডিআর ও সঞ্চয়পত্রে জমা না করে প্রকল্প ভিত্তিক বন্ড মার্কেটে অর্থ বিনিয়োগ করবে।
তিনি আরও বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অবকাঠামো ও অন্যান্য সেবা খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের বিনিয়োগের চাহিদা মার্কিন ডলার ৮০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা দেশীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু একটি বড় অংশ পুঁজিবাজারের মাধ্যমে সম্ভব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার ধৈর্য রাখেন এবং বিনিয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করতে চান তাদের বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ করা উচিত এবং আইডিএফ ও সেভিং সার্টিফিকেট থেকে তাদের রিটার্নের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ পাওয়া উচিত।
মিউচুয়াল ফান্ড, ট্রেজারি বন্ড এবং অন্যরা পুঁজিবাজারে লেনদেন করছে, সেখানে যে কেউ বা সাধারণ মানুষ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে।
তিনি বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডগুলো গত ১০/১২ বছরে প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাদের আর্থিক জ্ঞান আছে তারা সেকেন্ডারি শেয়ার ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগ করতে পারে এবং মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করতে পারে। তাদের বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড পছন্দ করা উচিত।’
নিয়ন্ত্রক তার মেয়াদে কোম্পানির অডিট সিস্টেম চাপিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে ব্রোকারেজ হাউসের জবাবদিহিতার দিকে পুঁজিবাজারে কয়েক ডজন সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। ফলে আগামীতে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে থাকবে।
অধ্যাপক শিবলী বলেন, ‘আমরা শুধু বীজ রোপণ করেছি, যেখান থেকে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গাছ বা গাছগুলো দৃশ্যমান হবে।’
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজার টিকিয়ে রাখতে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল দাবি বিএমবিএ’র
পুঁজিবাজার শিগগিরই দেশে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের প্রধান উৎস হবে: ভূমিমন্ত্রী
খুলনায় অভিনব পন্থায় অতিথি পাখি শিকার
প্রতিবছরই শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে পাখিরা আসে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জলাশয়ে। মূলত নভেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত অবস্থান করে এসব পাখি। শীত শেষ হলে আবার ফিরে যায় তারা। এবছরও ব্যতিক্রম ঘটেনি।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইলসহ খুলনা, বাগেরহাট ও আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিল ও জলাশয়গুলোতে দল বেঁধে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। পানি কমে আসা জলাশয়গুলোতে খাবারের সন্ধানে অতিথি পাখির সঙ্গে আসছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখিও। আর এই সুযোগে ফাঁদ পেতে নির্বিচারে পাখি নিধন করছে অসাধু শিকারিরা।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও মাছে বিষ দেয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তির ফাঁদ পেতে অভিনব কৌশলে পাখি শিকার করছে তারা। প্রতি বছর প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার্থে সুদূর হিমালয়, সাইবেরিয়াসহ শীত প্রধান অঞ্চল থেকে অতিথি পাখি এ অঞ্চলে আসে। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে বালি হাঁস, জলপিপি, কোম্বডাক, সরালী, কাস্তে চাড়া, পাতাড়ি হাঁস, কাদা খোচা, ডংকুর, হুরহুর, খয়রা ও সোনা রিজিয়া অন্যতম। স্থানীয় পেশাদার শিকারিরা আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিবছরেই মেতে ওঠে পাখি নিধনে। এতে করে কমতে থাকে অতিথি পাখির সংখ্যা।
আরও পড়ুন: অতিথি পাখিতে মুখরিত রাণীসাগর দিঘি
গ্যাস সংকটের কারণে না’গঞ্জে এক বছরে ২৭ জন দগ্ধ ও ৫ জনের মৃত্যু
গ্যাস আছে কি না; চুলায় চাবি দিয়ে চেক করেছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের গৃহবধূ আফরোজা। গ্যাস না থাকায় সঠিকভাবে বন্ধ করতে পারেননি চুলাট। ভোর সাড়ে ৫ টায় স্বামী-সন্তানদের জন্য রান্না করতে দিয়াশলাই জ্বালিয়ে চুলার কাছে নেয়া মাত্র বিস্ফোরণ ঘটে। দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আফরোজার। এছাড়া দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তার স্বামীসহ দুই সন্তান।
একই ভাবে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে গত বছরের ডিসেম্বরে আড়াইহাজারে একটি বাড়িতে দুই শিশুসহ একই পরিবারের চার জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের কারো মৃত্যু না হলেও দগ্ধ হয়েছিল শরীরের বিশাল অংশ। শুধু সিদ্ধিরগঞ্জ আর আড়াইহাজার নয়, গত ১২ মাসে নারায়ণগঞ্জে পাঁচটি গ্যাস বিস্ফোরণে ২৭ জন দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিস্ফোরণে সবচেয়ে বেশি দগ্ধ হয়েছে ফতুল্লায় ১৮ জন দগ্ধ হয়েছে, সিদ্ধিরগঞ্জ ও আড়াইহাজারে চারজন করে আটজন দগ্ধ হয়েছে। এছাড়া রূপগঞ্জে দগ্ধ হয়েছের একজন।
এদের মধ্যে ফতুল্লায় মারা গেছেন চারজন এবং সিদ্ধিরগঞ্জে আরও একজন।
আরও পড়ুন: ফতুল্লায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: দগ্ধ ২ জনের মৃত্যু
ভুক্তভোগী এক পরিবারের সদস্য আমেনা বেগম বলেন, ‘দিনে বেশির ভাগ সময় গ্যাস থাকে না। তাই চেক করার জন্য চুলায় চাবি দেয়া হলেও পরে গ্যাস না থাকলে বন্ধ হয়েছে কি না বুঝার উপায় থাকে না। তাছাড়া গ্যাসের অবস্থান গন্ধের কারণে বুঝা যেতো, এখন সেটাও পাওয়া যায় না। তাই এই ধরণের বিস্ফোরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।’
এবিষয়ে সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, এই ধরণের দুর্ঘটনার প্রধান কারণ অসাবধানতা। তিতাস কর্তৃপক্ষ পাইপ লিকেজের ব্যাপারে সচেতন হলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। আরও কমবে সচেতনতামূলক প্রচারণা করলে।
তিনি বলেন, তল্লা মসজিদের ঘটনা তারই একটি বড় অবহেলার একটা বড় উদাহর। সেখানে তিতাসের বড় একটা দায় লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি আগে গ্যাসের গন্ধে উপস্থিতি নিশ্চিত হতো, এখন সেই গন্ধের প্রখরতা নেই।
নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস উপমহাপরিচালক মো. মামুনুর রশিদ জানান, বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ অসাবধানতা। তাই সচেতনতাতেই বেশি গুরুত্ব দিতে বলবো সাধারণ মানুষকে। আমরা চাই মানুষ সব সময় সতর্ক রাখতে। তাই গ্যাসের বিলের কাগজেও গ্যাস ব্যবহারের নিয়ম লিখে দেয়া হয়। মানুষকে সচেতন করতে আমরা এখন থেকে মাইকিংও করবো। পাশাপাশি ক্যামিকেল মিশ্রিত (গন্ধ যুক্ত) গ্যাস সরবরাহ করবো। যাতে গন্ধ শুকে মানুষ গ্যাসের উপস্থিতি টের পেয়ে সচেতন হতে পারে।
তবে, নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন আহাম্মদ জানান, প্রতিদিনই অগ্নিকাণ্ডসহ গ্যাস বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা থেকে মানুষকে বাঁচাতে সচেতন করি। মহড়ার পাশাপাশি মসজিদ, মন্দির আর বাসাবাড়িতে প্রচারণা চালাই। তবে, বেশির ভাগ মানুষ ব্যস্ততার কারণে শুনতে চায় না। তাছাড়া কেউ যদি কারো এলাকায় ক্যাম্পেইন করানোর জন্য ডাকে, আমরা প্রস্তুত আছি।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ আরেক নারীর মৃত্যু
তিনি বলেন, ৭টি উপায়ে রান্নাঘরে গ্যাস বিস্ফোরণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রথমত রান্না করার পর চুলা ও এলপিজি সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ বন্ধ করে রাখা। রান্না ঘরের ওপরে ও নিচে ভ্যান্টিলেটরের ব্যবস্থা করা, ঘরের মধ্যে গ্যাসের গন্ধ পেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘরের দরজা জানালা খুলে দেয়া এবং সিলিন্ডারের রেগুলেটর বন্ধ করে দেয়া। রান্না করার সময় অন্তত আধা ঘণ্টা আগে রান্না ঘরের দরজা জানালা খুলে রাখা। এতে করে আটকে থাকা গ্যাস থাকলে সেটা বের হয়ে যাবে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যাবে।
তিনি আরও বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার চুলা থেকে দূরে রাখা এবং সিলিন্ডারটি দরজা জানালার কাছে বা বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখা। রান্নাঘরে গ্যাসের গন্ধ পেলে কোনোভাবেই লাইটার জ্বালানোর চেষ্টা না করা ও মোবাইল ফোন বা ইলেক্ট্রিক্যাল সুইচ অফ বা অন না করা।
আরও পড়ুন: ফতুল্লায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১০জন দগ্ধ
ঝিনাইদহে শীতের আমেজে ঘরে ঘরে ‘কুমড়ো বড়ি’ তৈরির হিড়িক
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে শীতের আমেজে ঘরে ঘরে ‘কুমড়ো বড়ি’ তৈরির হিড়িক পড়েছে। প্রতিটি পরিবারে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারীরা।
চলছে কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করছেন অনেকেই। আবার অনেকে শীতকালে কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে সংসার চালান।
জানা গেছে, মাষকলাইয়ের ডাল করার পর তা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর সেই ডাল ভালো করে পরিষ্কার করে শিল-পাটায় বেটে কিংবা মেশিনে ভাঙিয়ে তার সঙ্গে চাল কুমড়োর পুর মিশিয়ে সুস্বাদু বড়ি তৈরি করা হয়। গ্রামীণ ৮০ ভাগ নারীরা পালা করে বড়ি দেয়ার কাজ করে থাকেন।
উপজেলার বহরমপুর গ্রামের গৃহবধূ পারভীনা খাতুন বলেন, আমার স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। তিনি কুমড়োর বড়ি খুব পছন্দ করেন। এই মাসের শেষের দিকে ছুটিতে বাড়িতে আসবে। তাই আগে থেকেই বড়ি তৈরি করে রাখতে হচ্ছে। বিদেশ থেকে ফোন করে জানিয়েছে বেশি করে তৈরি করতে, এক মাস পরে আবার যাওয়ার সময় বিদেশি বন্ধুদের জন্য নিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: হালদা নদীতে বিপন্ন ডলফিন, রক্ষার উদ্যোগ নেই
রুবিনা খাতুন বলেন, আমার স্বামী দুই বছর আগে মারা গেছেন। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। এক ছেলে,এক মেয়ে। বাপ মারা যাওয়ার পারে মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে ছোট অন্যান্য সময় বিভিন্ন কাজ করি। শীতকালে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বিক্রি করি। চাল কুমড়ো পাওয়া না গেলে পেঁপে, লাউ ছাড়াও বিভিন্ন সবজি ও কলাই দিয়ে বড়ি তৈরি করি।
পৌর এলাকার স্বপ্না খাতুন বলেন, বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর চালকুমড়ো ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহি করে রাখতে হয়। তারপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। পরে ডালের পানি ছেঁকে শিল,পাটায় বেটে নিতে হয়। এরপর ডালের সঙ্গে কুমড়ো মেশাতে হবে। খুব ভালো করে মেশাতে হবে যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়। তারপর কড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হবে। বড়ি তিন থেকে চারদিন এভাবে রোদে শুকানোর পর তা অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।
শাহিন নামে পৌর শহরের এক মুদি ব্যবসায়ী জানান, মুদি ব্যবসার পাশাপাশি শীত এলেই কুমড়োর বড়ি বিক্রি করি। শীতকালে বড়ি তৈরির জন্য অনেকেই চাল কুমড়োর আবাদ করেন। গেল বছর একটু কম দামে বিক্রি হলেও এবার দাম বেড়েছে। বড়ি তৈরির উপকরণ ও শ্রমমূল্য বৃদ্ধির কারণে বড়ির দামও বেড়েছে।
সরকারি কে এম এইচ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আনিসুর রহমান বলেন, গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যের মধ্যে কুমড়োর বড়ি অন্যতম। শীতকালে কুমড়োর বড়ি তৈরি না করলেই যেন নয়। এটি যেমন মুখরোচক তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। নারীরা পালা করে বড়ি তৈরি করে থাকে। এতে প্রতিবেশীদের মধ্যে যেমন সম্পর্ক দৃঢ় হয়। বড়ি তৈরি করে বিভিন্ন আত্মীয়র বাড়িতে পাঠিয়ে থাকে অনেকে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শিলা বেগম বলেন, নারীরা বিভিন্ন কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। বিশেষ করে শীত এলেই এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে কুমড়ো বড়ি তৈরির উৎসব চলে। এক সময় পরিবারের প্রয়োজনে কুমড়ো বড়ি তৈরি করা হলেও এখন বাণিজ্যিক হয়ে গেছে। আবার এখন নারীরা অনলাইনের মাধ্যমে শহরে কুমড়ো বড়ির অর্ডারের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে বাড়ছে কক্সবাজারের সুপারির কদর, যাচ্ছে বিদেশেও
করোনা মহামারি এবং চড়া সুদের দাদনের কারণে বিপাকে পিরোজপুরের ভাসমান চাষীরা
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে দুই বছর লাগতে পারে: বীর বাহাদুর উশৈ সিং
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি স্বীকার করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এতে আরও ‘এক থেকে দুই বছর’ সময় লাগতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির রজত জয়ন্তী উপলক্ষে ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উশৈ সিং বলেন, ‘কেউ বা অনেকে বলেন যে শান্তিচুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। আমি মনে করি, পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি এটি সত্যি। আবার শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছ এটাও সত্য। বাকি ধারাগুলো পর্যবেক্ষণের শক্তিশালী জাতীয় কমিটি আছে। যেটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধিত্ব করছেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ।’ এই কমিটিকে সহযোগিতা করে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫ বছর: সরকার চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করবে বলে আশাবাদী পাহাড়ি নেতারা
তিনি আরও বলেন, ‘এই কমিটি মূলত দেখছে কোথায় ধীরগতি, বাধা রয়েছে। এসব সমাধান করে এগিয়ে যাচ্ছে কমিটি। যতটুকু বাকি আছে আমরা সবাই আন্তরিক হলে সমাধান করতে পারব।’
তৃতীয় পক্ষের সহযোগিতা ছাড়াই শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও দূরদর্শিতার কারণে দুই পক্ষ মিলে এই সমস্যার সমাধান করা হবে। বিষয়টিকে মন্ত্রী বিশ্বে প্রথম ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘অশান্ত পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রধানমন্ত্রীর কমিটমেন্ট থেকেই ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি হয়। যারা আন্দোলন করছিলেন তাদের যত সমস্যা সেগুলো শোনার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার কারণে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কয়েকটি বৈঠক হয়েছে জাতীয় কমিটির। এই দীর্ঘ সমস্যার সমাধানে আমরা একটি জায়গায় পৌঁছে সক্ষম হয়েছি।’
আরও পড়ুন: পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক: উশৈ সিং
উশৈ সিং ইউএনবিকে বলেন, ‘১৯৯৭ সালের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ তার আন্তরিকতা, মমত্ববোধের কারণেই পার্বত্য এলাকা বর্তমান অবস্থায় এসেছে।’
শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে কত সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এতে দুই বছরও লাগতে পারে, আবার এক বছরও। আমরা চাচ্ছি কম সময়ের মধ্যে পরিপূর্ণ শান্তিচুক্তিটি বাস্তবায়ন করতে। এটিই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা। আমরা সে চেষ্টাই করছি।’
শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন কোন কোন বিষয়ে হয়নি জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ করে ভূমির বিষয়টি রয়েছে। এছাড়াও টুকিটাকি কিছু বিষয় আছে। তবে ভূমিই প্রধান। এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, আমাদের আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধিসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় বসেছিল। আমরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। আর কিছুটা বাকি আছে, আলোচনা করলে হয়তো বা এগিয়ে যেতে পারব, এই সমস্যার সমাধান হবে আশা করছি।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থানীয় কিছু সমস্যা সম্প্রতি হচ্ছে, ‘এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো অশান্তি চাই না। কিন্তু কিছু ঘটনা ঘটছে, কিছু গ্রুপ আছে, চাঁদাবাজি আছে- এসব বিষয়ে মানুষের কোনো জানমালের ক্ষতি না হয় এ বিষয়ে আমরা খুবই সজাগ আছি। কোনো একটা ঘটনা ঘটলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, কোনো ধরনের সমস্যা আমরা চাই না। সকল মানুষকে শান্তিচুক্তি অনুযায়ী থাক আমরা তাই চাই। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এগিয়ে যেতে চাই।
আরও পড়ুন: রাঙামাটিতে ৩২ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ
নভেম্বরে রপ্তানি আয় পাঁচশ’ কোটি ছাড়াল, ডলার সংকট কেটে যাওয়ার আশা
পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধিতে নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি করে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে। যা এক মাসে রেকর্ড পরিমাণ আয়। কর্মকর্তাদের পরিসংখ্যান এ তথ্য তুলে ধরেছে।
বৃহস্পতিবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রতিবেদনে নভেম্বরের রপ্তানি আয় পাঁচ দশমিক ০৯ বিলিয়ন যা গত জুনে আগের মাসিক সর্বোচ্চ চার দশমিক ০৯৮ বিলিয়ন আয়কে ছাড়িয়ে গেছে।
ইপিবি জানিয়েছে, নভেম্বরে অর্জিত পাঁচ দশমিক ০৯ বিলিয়ন আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বগতি এমন এক সময়ে হলো যখন পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান ক্রেতা। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকটে হতাশাজনক চাহিদার সঙ্গে লড়াই করছে।
চলতি বছরের জুলাই থেকে বাংলাদেশ ডলার সংকটে ভুগছে। সেই সময়ে এই অর্জন ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকট লাঘবের আশা জাগিয়েছে।
আরও পড়ুন: মোবাইলে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন
সাম্প্রতিক ইপিবি তথ্য দেখায়, ২০২৩ অর্থবছরে একটি ইতিবাচক প্রবণতায় প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের রপ্তানি আয় এক মাসে পাঁচ বিলিয়ন বিলিয়ন অতিক্রম করেছে কারণ প্রস্তুতকারকরা, বিশেষ করে পোশাক, পশ্চিমা ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি অর্ডার এবং রপ্তানি চালান পেয়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ইউএনবিকে বলেছেন যে পোশাকের অর্ডার, যা গত কয়েক মাসে কমছে, পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ এবং দক্ষিণ কোরিয়া, নন-ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সদস্য দেশ এবং কিছু আফ্রিকান দেশের এর মতো নতুন রপ্তানি গন্তব্য যুক্ত হওয়ার কারণে এটি একটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশের সরবরাহ ক্ষমতা ভালো এবং কাপড়ের দাম এখন পর্যন্ত খুবই সাশ্রয়ী হওয়ায় শীত ও ক্রিসমাস উদযাপনের সময় অর্ডার আরও বাড়বে।
বিজিএমইএ সভাপতি উল্লেখ করেন যে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও স্থগিত চালানের শিপমেন্ট পুনরায় শুরু করা এবং বৈচিত্র্যকরণের ওপর বেশি মনোযোগ দেয়া বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সব ধরণের ক্রেতাদের জন্য একটি ভালো বিকল্প তৈরি করছে।
ইউরোপীয় বাণিজ্য গবেষক ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ কমমূল্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পোশাক রপ্তানি করছে, যার চাহিদা ইউরোপের বাজারে কিছুটা বেড়েছে।
আরও পড়ুন: ইউরোপে পোশাক রপ্তানিতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের
ইউরোপে সাশ্রয়ী মূল্যে পোশাকের চাহিদা বেড়েছে যেখানে মূল্যস্ফীতি-আক্রান্ত ক্রেতারা চড়া দামের সঙ্গে লড়াই করছে।
রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ নিয়মিত পরিধান এবং বাড়িতে বুনন কাপড় আইটেম তৈরি করে এবং এটি ইইউ বাজারে তার রপ্তানিতে প্রাধান্য পায়।
এছাড়া ইইউভুক্ত দেশগুলোতে ফল, সবজি, হিমায়িত মাছ, পাট ও চামড়াজাত পণ্য এবং হস্তশিল্পের রপ্তানিও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের লক্ষণ দৃশ্যমান হওয়ায় ইইউ প্লাস দেশ, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি গন্তব্য ক্রমাগত বাড়বে।
ঢাবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ রাজ্জাকের আশাবাদের উল্লেখ করে বলেছেন যে ইইউ বাজার বাংলাদেশের জন্য খুবই সম্ভাবনাময়।
তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রতিবছর বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নভেম্বরে সেই ফলাফল দেখতে পাচ্ছি, যেখানে প্রথমবারের মতো রপ্তানি আয় পাঁচ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে এবং এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।’
আরও পড়ুন: মাছের আঁশ: রপ্তানি বৈচিত্র্যে আশা জাগানো নতুন পণ্য
অর্থসংকটে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে নিহত মৌয়ালদের পরিবার
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যতিন্দ্রনগর গ্রামের হালিমা খাতুন।
২০০৬ সালে বন বিভাগ থেকে পাশ দিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য যান তার স্বামী গোলাম গাজী। দু’দিন পরে খবর আসে গোলাপ গাজী বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। এর কয়েকদিন পরে তার ছিন্ন-বিছিন্ন লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে তার সঙ্গে যাওয়া অন্য মৌয়ালরা।
সেই থেকে হালিমা খাতুন তার ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে বাস করছেন। বর্তমানে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তার ছেলে।
স্বামীকে হারিয়ে ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে খুব কষ্টে দিনযাপন করছেন হালিমা খাতুন।
সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের হাতে প্রাণ হারানো অপর ব্যক্তি শ্যামনগরের গাবুরা গ্রামের বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন।
মোশাররফের মা খালেদা বেগম ইউএনবিকে জানান, ২০১২ সালে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন মোশাররফ।
একই উপজেলার হরিনগর গ্রামের সুন্নত আলী শেখের স্ত্রী কোহিনূর বেগম জানান, ২০১৪ সালে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি তার স্বামী সুন্নত আলী শেখ।
তিনি জানান, পরে শুধু তিনি শুনেছেন, তার স্বামীকে বাঘে খেয়েছে। আর কোনো সন্ধান তিনি পাননি তার প্রিয় স্বামীর।
অন্যদিকে নিহত মৌয়াল শ্যামনগরের কাউসার গাইনের ভায়রা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চলতি বছরের ২০মে বাঘের আক্রমণে মারা যান কাউসার।
একইভাবে ২০২১ সালে প্রাণ হারান হাবিবুর মোল্লা ও জিয়াউল ইসলাম নামের দুজন মৌয়াল।
গত এক দশকে ছয়জন মৌয়াল সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। এরা সকলেই সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বাসিন্দা।
নিহতদের কোন পরিবার আর চায়না তাদের পরিবারের কেউ আর সুন্দরবনের সঙ্গে জড়িত থাকুক।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় লোকালয়ে বাঘ, আতঙ্কে গ্রামবাসী
সুন্দরবন বাংলাদেশ তথা বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন। দেশের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলা নিয়ে বিস্তৃত এ বন। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। যার মধ্যে বাংলাদেশে পড়েছে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার, আর ভারতের পশ্চিম বাংলায় রয়েছে প্রায় ৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
পৃথিবী বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য সুন্দরবন বিখ্যাত। এ ছাড়া হরিণ, বানর, কুমির সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও রয়েছে এ বনে।
সুন্দরবনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদীতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার মাছ। আর রয়েছে মধু, এ বনের মধু পৃথিবী বিখ্যাত।
পর্যটকদের জন্য বরাবরই সুন্দরবন একটি আকর্ষণীয় জায়গা। আর পদ্মাসেতু হওয়ার পর পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধু পর্যটন নয়, এই বনকে ঘিরে কয়েক লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। কেউ বনজীবী, জেলে বা মংস্য সংগ্রহকারী আবার কেউ মৌয়াল বা মধু সংগ্রহকারী।
এই সুন্দরবনকে ঘিরে অনেকে যেমন জীবিকা নির্বাহ করে তেমনি অনেকে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের শিকার হয়েছেন বা আক্রমণে মারা গেছেন। এদের অধিকাংশই ছিল মৌয়াল।
সম্প্রতি প্রথমবারের মতো খুলনায় মৌয়াল, চাষি, বণিক, গবেষক ও ভোক্তা জাতীয় জোটের উদ্যোগে বাঘের আক্রমণে নিহত মৌয়ালদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
এসময় মেয়র বলেন, মৌয়াল, চাষি, গবেষক ও ভোক্তা জাতীয় জোট বাঘের আক্রমণে নিহতদের পরিবারকে অর্থিক সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন, মৌয়াল, চাষি, গবেষক ও ভোক্তা জাতীয় জোটের এই সহযোগিতা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. মো. মোহসীন হোসেন বলেন, মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে যারা নিহত হন, বন বিভাগ তাদের বিষয়ে সচেতন।
তিনি আরও বলেন, বন বিভাগ সবসময়ই তাদেরকে সহযোগিতা করে থাকে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন বাঘের আক্রমণে মৌয়াল নিহত
সুন্দরবনে বাঘের হামলায় নিহত জেলের মরদেহ উদ্ধার
করোনা মহামারি এবং চড়া সুদের দাদনের কারণে বিপাকে পিরোজপুরের ভাসমান চাষীরা
পিরোজপুরের নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলার কিছু এলাকা প্রায় সারাবছরই জলাবদ্ধতার কারণে কচুরিপানা ভরা থাকে। আর এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে প্রায় বছরজুড়েই এখানে চলে ভাসমান সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনের মহোৎসব। কিন্ত মহামারি করোনা ও লকডাউনের কারণে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে এ ভাসমান সবজির চাষীরা।
প্রতি বছর যেভাবে এখানে উৎপাদিত চারার যে দাম পাওয়া যেত বর্তমানে চারার দাম অনেকটাই কম এবং মহাজনদের থেকে নেয়া চড়া সুদের দাদনের টাকা নিয়ে মন্দা বিক্রির কারণে হিমশিম খাচ্ছে ভাসমান সবজি চাষীরা।
জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের মতে, প্রায় শত বছরের বেশি সময় ধরে পিরোজপুরের নাজিরপুর ও নেছারাবাদে ভাসমান সবজির চাষাবাদ করে আসছে চাষীরা। জেলার নাজিরপুর উপজেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে এবং নেছারাবাদ উপজেলায় ৩৭ হেক্টর নিচু জমিতে ধাপের উপরে ভাসমান ভাবে সবজি ও চারার আবাদ করা হয়।
এই দুই উপজেলায় প্রায় ৩২০০ জন চাষী ভাসমান সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত। কচুরিপানার ধাপ তৈরি হলেই সেসব ভাসমান ধাপের উপরে বীজতলায় কোনটায় পেঁপে, লাউ, কুমড়া, শিম, বরবটি; আবার অন্যগুলো টমেটো, বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সবুজ ফুলকপি ও শসার চারা উৎপাদন এবং লাউশাক, লালশাক, পালংশাক, ডাঁটাশাক বা সাদা শাকের চাষও করেন চাষীরা।
সম্ভাবনাময় এই কৃষিক্ষেত্রে সরকারি কোন সহযোগিতা না থাকার ফলে অনেকটাই হতাশ এ এলাকার চাষীরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয় এ ভাসমান সবজি চারা।
চলতি বছরে করোনা মহামারির ফলে সবকিছু বন্ধ থাকায় চাষীরা বিভিন্ন মহাজনদের থেকে চড়া সুদে লোন নিয়ে চাষাবাদ করেছে। কিন্ত মৌসুম শুরু হলেও চারার বাজার ব্যাপক মন্দা যাচ্ছে। তেমনি আগের মত আগ্রহ নেই ক্রেতাদের মধ্যে ফলে বিপাকে পড়েছে ভাসমান সবজি চাষীরা।
এবছরে দুই উপজেলা মিলে মোট ১৫৭ হেক্টর জমিতে ৮৬ লাখ ৫০ হাজার চারা উৎপাদন হওয়ার কথা থাকলেও, চারা নিয়ে ভালো দাম না পাওয়ায় হতাশ ভাসমান চাষীরা।
ভৌগোলিকভাবেই পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ী-দোবড়া, কলারদোয়ানিয়া ও মালিখালী এবং নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা সারাবছর ৫-৮ ফুট পানিতে ডুবে থাকে।
ফলে সেখানে কোন প্রকার চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। রবি, খরিপ-১ ও খরিপ-২ মৌসুমে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদে চাষীরা ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ সুবিধা না পাওয়ায় স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বহুমুখী এ ফসল আবাদ করেও বেশিরভাগ সময় লাভের মুখ দেখেন না।
আবার এই সুদখোর মহাজনদের দাদন ব্যবসার জালে জড়িয়ে অনেক চাষী এখন সর্বশান্ত হওয়ার পথে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ফসলহানি, পণ্যের মূল্যহ্রাস, বাজারজাত করণে অসুবিধা ও সংরক্ষণ সুবিধার অভাব ইত্যাদি কারণে চাষীরা প্রতি বছর কাঙ্ক্ষিত লাভ পায় না, বরং মোটা লোকসানের কবলে পড়ে। যার অধিকাংশ কৃষক ভূমিহীন ও বর্গাচাষী। তাই এ পেশায় চাষীদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা পাওয়া প্রত্যাশা স্থানীয় চাষীদের।
স্থানীয় চাষী জামাল হোসেন জানান, জমি বর্গা নিয়ে ভাসমান সবজির চাষাবাদ করছি। এই জমিতেই গড়ে তোলা হয়েছে ভাসমান সবজির খেত। ভাসমান অবস্থায় তৈরি হয় বেড বা ধাপ। আমার নিজের চাষ করার মতো ১৫/১৬ টি ধাপ আছে। সিম, পেঁপে, টমেটো, মরিচ ও লাউসহ বিভিন্ন সবজির চাষ হয় এখানে। ৬০ হাত একটি বেড কিনে আনলে কৃষাণ খরচসহ ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয় প্রতি বেডে। করোনার কারণে ব্যাপারীদের আসা যাওয়া না থাকায় এ বছর দাম ভালো পাচ্ছিনা।
পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. নজরুল ইসলাম সিকদার জানান, নাজিরপুর উপজেলার গাওখালী, মনোহরপুর, দেওলবাড়ি ও মালিখালী এই সমস্ত জায়গাগুলোতে সাধারণত দেখা যায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কৃষক এই ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত। আমরা এসব কৃষকদের চাষাবাদের মান রক্ষার্থে পরামর্শ ও চাষীদেরকে উদ্বুদ্ধকরণ, ভ্রমণ, বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার জন্য চাষিরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। তা নাহলে এই চাষ পদ্ধতিতে কতদিন টিকিয়ে রাখা যাবে সেটা সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
বিপিডিবি’র আর্থিক ক্ষতি দুই-তৃতীয়াংশ বেড়ে ৪৮ হাজার কোটি টাকা
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) আর্থিক ক্ষতি এক বছরে ১৮ হাজার ৯৪ কোটি টাকা বাড়তে পারে। এতে মোট ক্ষতি ৪৮ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করবে।
বিপিডিবি’র সর্বশেষ নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী, আর্থিক ক্ষতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করবে, যা শতকরা হিসাবে ৬৭ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানটির সূত্র থেকে জানা যায় যে নিরীক্ষিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিপিডিবির অর্থ বিভাগ এই হিসাব তৈরি করেছে।
বিপিডিবির অর্থ বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে আনুমানিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র সাত মাসের জন্য কিছু অতিরিক্ত রাজস্ব পেয়েছি। কারণ নতুন পাইকারি মূল্য ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই বছরের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।’ প্রতিটি অর্থবছর ১ জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত হিসাব করা হয়।
পিডিবি বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৫ দশমিক ২১ টাকা ধার্য করেছে, যা ইউনিট প্রতি ১ দশমিক ০৩ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
হিসাব অনুযায়ী, আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অত্যধিক বেড়েছে মূলত দুটি কারণে—প্রাথমিক জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘এই দুই কারণের মধ্যে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।’
তিনি জানান, শুধুমাত্র মার্কিন ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে বিপিডিবি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে যাচ্ছে।
সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে যে বেসরকারি পাওয়ার প্ল্যান্ট অপারেটরদের অর্থ পরিশোধ ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যাংকে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বা প্রত্যয়পত্র খোলার ক্ষেত্রে বর্তমানে ১০৭ টাকায় মার্কিন ডলারের বিনিময় হার গণনা করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক বাড়াতে বিপিডিবি’র রিভিউ আপিল
উক্ত কর্মকর্তা জানান যে কিছুদিন আগেও বিপিডিবি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ৮৫ টাকায় হিসাব করেছে। এখন ১০৭ টাকার বিনিময় হার মানে প্রতি ডলার দিতে ২২ টাকা অতিরিক্ত।
বিপিডিবির বিপুল সংখ্যক বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির সঙ্গে তাদের বিদ্যুৎ কেনার জন্য বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) রয়েছে।
পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি এবং ৫০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ বেসরকারি খাতে স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি), ভাড়া ও দ্রুত ভাড়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়।
ভারত থেকে বিদ্যুতের আমদানিও বেসরকারি খাতের উৎপাদন হিসেবে গণনা করা হয়।
বেসরকারি খাতের অপারেটররা মূলত ফার্নেস অয়েল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও ডিজেল ব্যবহার করে। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করে চার হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) অনুসারে, মোট ২৫ হাজার ৫৮৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রের প্ল্যান্ট রয়েছে এক হাজার ৭৬৮ মেগাওয়াট (৬ দশমিক ৯১ শতাংশ) কয়লাভিত্তিক, ১১ হাজার ৩৩০ মেগাওয়াট (৪৪ দশমিক ২৮ শতাংশ) গ্যাসভিত্তিক, ছয় হাজার ২৩৮ মেগাওয়াট (২৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ) ফার্নেস অয়েলভিত্তিক, এক হাজার ৩৪১ মেগাওয়াট (৫ দশমিক ২৪ শতাংশ) ডিজেলভিত্তিক, আমদানি এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট (৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ), নবায়নযোগ্য ৯৪৮ দশমিক ১২ মেগাওয়াট (৩ দশমিক ৭১ শতাংশ) ও ক্যাপটিভ দুই হাজার ৮০০ মেগাওয়াট (১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ)।
বিপিডিবির কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটিকে ২০২১-২০২২ সালে ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন তরল জ্বালানি আমদানির জন্য ৩১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়, প্রধানত ফার্নেস অয়েল।
চলতি অর্থবছরে, বিপিডিবি ৩ দশমিক ৬ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করবে বলে নির্ধারণ করেছে, যা এক দশমিক ২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কম, কারণ অত্যধিক দামের কারণে সরকার ইতোমধ্যে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
বিপিডিবির কর্মকর্তা বলেন, কম পরিমাণ ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে সরকারকে ২০২২-২০২৩ সালের চলতি অর্থবছরে ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।
যদিও ফার্নেস অয়েলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে এক দশমিক ২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কমে যাচ্ছে, বিপিডিবিকে আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি দামে তরল জ্বালানি আমদানি করতে হবে বলে খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি।
আগের অর্থবছরে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের মূল্য ছিল ৬৫ টাকা। দাম নির্ধারণের কাজে জড়িত বিপিডিবির আরেক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরে এর দাম বেড়েছে হয়েছে ৮৫ টাকা প্রতি লিটারে।
তিনি বলেন, ফার্নেস অয়েলের দাম ২০ টাকা বাড়লে শেষ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত বোঝা তৈরি হবে। স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার উচ্চমূল্য ও বিদ্যুতের আমদানিও বিপিডিবির সামগ্রিক ব্যয় বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে।
আরও পড়ুন: প্রতি ইউনিট খুচরা বিদ্যুৎ ৯.০৩ টাকা করার প্রস্তাব বিপিডিবি’র
চার বিতরণ অঞ্চলে ডিজিটাল কল সেন্টার স্থাপন করবে বিপিডিবি
মাছের আঁশ: রপ্তানি বৈচিত্র্যে আশা জাগানো নতুন পণ্য
যশোরের মাছ ব্যবসায়ীরা আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। তবে তারা মাছ নয় এবার ফেলনা মাছের আঁশ রপ্তানি করেই দেশে আনছে ডলার। শুনতে সত্যিই অবাক লাগছে? হ্যাঁ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত যশোর জেলার অনেকের মুখে হাসিও ফুটছে।
যশোরের মাছ বাজারগুলোর বটি ওয়ালারা ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন এ আঁশ। তারপর এক-দুই হাত ঘুরে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকার বেশি মাছের আঁশ রপ্তানি হচ্ছে। বিদেশে এ আঁশ দিয়ে তৈরি হয় ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র, কৃত্রিম কর্নিয়া ও কৃত্রিম হাড়, ওষুধ, মাছ ও মুরগির খাবার, নেইলপালিশ, লিপস্টিকসহ নানা প্রসাধনী।
যশোরের মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে, যশোরে মাছের আঁশের চাহিদা এখন অনেক বেশি। বড় বাজারে নিয়মিত মাছ কাটেন (বটি ওয়ালা) জনি। মাছ কাটতে প্রতি কেজিতে তিনি নেন ১০ টাকা করে। এর বাইরে মাছের আঁশ বিক্রি করে বছরে কমপক্ষে বাড়তি আয় করছেন ২০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: হালদা নদীতে বিপন্ন ডলফিন, রক্ষার উদ্যোগ নেই
মাছ কাটার কাজ করেন এমন আরও একজন জাহিদ। তিনি জানান, শুধু আঁশ নয় মাছের নাড়িভুঁড়িও বিক্রি হয়। নাড়িভুঁড়ি ব্যবহার করা হয় মাছের খাদ্য হিসেবে। শুনেছি এগুলো শুকিয়ে বিদেশেও পাঠানো হয়। মাছের ফুলকো শুকনো করে বিদেশে সুপ তৈরি হয়। এছাড়া মাছের ফুলকা, পিত্ত, চর্বি দিয়ে আরও অনেক রকমের জিনিস তৈরি হয়।
শহরের শুধু বড় বাজার নয়, আশপাশের সব বাজারের বটি ওয়ালারাও নাড়িভুড়ি ও আঁশ বিক্রি করে থাকেন। কেউ কেউ বাসা বাড়ি থেকেও মাছের আঁশ সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন।
শহরের বড় মাছ বাজারের একজন আড়তদার বাবলু, যিনি প্রতিদিন বিভিন্ন বাজার থেকে কয়েক মণ মাছের আঁশ সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, আঁশ শুকিয়ে তিনি চট্টগ্রামের হক সাহেব, সিরাজ হাজী, আনোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে প্রতি মণ আঁশ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা এই আঁশ চট্টগ্রামের আড়তদাররা বিদেশে রপ্তানি করেন।
তিনি জানান, দেশে এ ব্যবসা প্রথম শুরু করেন ঢাকার শামসুল আলম নামে এক ব্যবসায়ী। যিনি তার জাপানি বন্ধুর কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে মাছের আঁশের ব্যবসা শুরু করেন।
মাছের আঁশ দিয়ে আসলে কী হয়?
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন মাছের আঁশে আছে কোলাজেন ফাইবার আ্যামাইনো এসিড এর মতো কয়েকটি গুণ। ফলে এই আঁশ দিয়ে তৈরি হয় পাউডার, যা ঔষুধ শিল্প, প্রসাধনী শিল্প ও খাদ্য শিল্পসহ পরিবেশ রক্ষার নানা সামগ্রীতে কাজে লাগে। মাছের আঁশ সংগ্রহের ফলে পরিবেশও দূষণ মুক্ত হচ্ছে বলে পরিবেশবিদদের অভিমত।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আঁশ সংগ্রহ করার পর সেই আঁশগুলো পরিষ্কার পানিতে অথবা অল্প গরম পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এমনভাবে পরিষ্কার করা হয় যেন মাছের গায়ে লেগে থাকা তৈলাক্ত পদার্থ সম্পূর্ণ ধুয়ে যায়। তারপর সামান্য রোদে শুকানোর পর ঝরঝরে করা হয়। এরপরই বিক্রির উপযোগী হয়। অবশ্য কেউ কেউ মিক্সার গ্রান্ডারে গুড়ো করে পাউডার আকারেও মাছের আঁশ বিক্রি করেন।
ব্যবসায়ীদের মতে, মাছের ধরন অনুযায়ী আঁশের দাম ভিন্ন হয়। রুই , কাতলার মতো বড় মাছের আঁশের দাম একটু বেশি। চিংড়ি মাছের মাথার খোসার দাম আরেক রকম। মাছের ফুলকার দামও আলাদা। প্রতিটা মাছের চর্বিরও দাম ভিন্ন।
রপ্তানি প্রাক্রিয়াজাতকরণ সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে মাত্র ১০ থেকে ১২ জন ব্যক্তি আঁশ রপ্তানি করেন। তবে এই ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকার বেশি মাছের আঁশ সাত থেকে আটটি দেশে রপ্তানি হয়। প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার টন আঁশ রপ্তানি হয় জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোয়। সেখানে মাছের আঁশ থেকে কোলাজেন ও জিলেটিন তৈরি করা হয়। ওষুধ, প্রসাধনী সামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট তৈরিতে মাছের আঁশ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কোলাজেন ও জিলেটিন মাছের আঁশ দিয়ে তৈরি হয়, যা ওষুধ ও প্রসাধন সামগ্রীতে কাজে লাগে।
মাছের আঁশ ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার যদি এ বিষয়ে নজর দেন, তাহলে এ ব্যবসার আরও পরিধি বাড়বে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, এই শিল্পকে যেন সামনের দিকে আরও এগিয়ে নেয়া যায় সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানাবো।
আরও পড়ুন: ফেনীর অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন বছরের পর বছর ধরে বাক্সবন্দী
দেশজুড়ে বাড়ছে কক্সবাজারের সুপারির কদর, যাচ্ছে বিদেশেও