%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7%20%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6
২০৩০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে চায় সরকার
কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর বর্তমান সংখ্যা ১৭ শতাংশ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হিসেবে সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
একটি সরকারি নথি অনুসারে, সেই লক্ষ্যে সরকার স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) ভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিচ্ছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা পূরণের জন্য সরকার শ্রেণিকক্ষে উপযুক্ত প্রযুক্তি-ভিত্তিক বিষয় পড়ানোকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং পাঠ্যক্রমে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবি-তে বাজেট বরাদ্দ করছে।
এছাড়া দক্ষ আইটি জনবল তৈরির লক্ষ্যে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের চাহিদা মেটাতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৬০ হাজারেরও বেশি তরুণ-তরুণীকে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এক লাখ তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
ইতোমধ্যে ৩৬ হাজারের বেশি লোককে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) আয়োজিত প্রকল্পটি প্রায় ২ লাখ ৩৪ হাজার লোককে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে এবং তাদের বেশিরভাগই দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন আইসিটি কোম্পানি-প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে।
উদ্দীপিত বাস্তবতা এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটিসহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে নথিতে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হবে এবং এ ধরনের ৫৭টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে।
৬৪টি জেলায় এবং ১৬টি ডিজিটাল ভিলেজে শেখ কামাল আইটি প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে যাতে তরুণদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া যায়।
পাশাপাশি প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, ব্লক-চেইন, রোবোটিক্স, বিগ ডেটা, ক্লাউড কম্পিউটিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি তার কার্যালয়ে (পিএমও) অনুষ্ঠিত জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) পরিচালনা পর্ষদের প্রথম বৈঠকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ লোক চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। এই বিশাল জনশক্তিকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে সঠিকভাবে গড়ে তোলা গেলে তা দেশের জন্য বিরাট সুফল বয়ে আনবে।
তিনি আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য প্রযুক্তি-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্সূচিতে মনোযোগ দেয়ার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
সরকারি নথি অনুযায়ী, কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ১২ বছর আগে ছিল ১ দশমিক শুন্য শতাংশের কম, বর্তমানে এখন ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
কারিগরি শিক্ষার তালিকাভুক্তির হার হল শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিসহ কারিগরি-বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমে নথিভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের শতকরা হার।
২০২২ শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ২৬ হাজার ৮৪৬ জন শিক্ষার্থী প্রাক-ভোকেশনাল কোর্সে নথিভুক্ত হয়েছে এবং ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩৪টি কারিগরি স্কুল ও কলেজের ৯ম শ্রেণির ২০ হাজার ৬১৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা নিশ্চিতের সুপারিশ কারিগরি কমিটির
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কারিগরি কমিটির ৫ সুপারিশ
প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী
খরা: খুলনায় আমনের আবাদ নিয়ে শঙ্কা
অনাবৃষ্টির কারণে আমন ধান চাষ প্রক্রিয়া প্রায় দেড় মাস বিলম্বিত হওয়ায় খুলনা জেলার ৮০ হাজারের বেশি কৃষকের আশঙ্কা যে তারা এ বছর উৎপাদন খরচও তুলতে পারবেন না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বর্ষা মৌসুমে ৯৩ হাজার একশ’ ৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও এ পর্যন্ত মাত্র ১৬ হাজার পাঁচশ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর খুলনায় প্রায় চার থেকে পাঁচ গুণ কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
২০২১ সালের জুন মাসে ৩৮৮ দশমিক ৮৯ মিলিমিটার, জুলাই মাসে ৫০৬ মিলিমিটার ও আগস্ট মাসে ২১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এ বছরের জুন মাসে ৯৪ দশমিক ৩৬ মিলিমিটার, জুলাই মাসে ৯১ দশমিক ২৭ মিলিমিটার এবং ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ১৬১ দশমিক ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পড়ুন: দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ঢাকা-ভাঙা রেলপথের কাজ
চলতি মৌসুমে জেলায় তিন হাজার ছয়শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে আউশ, এক হাজার তিনশ’ ১৬ হেক্টর জমিতে পাট, ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো, দুইশ’ ৭৩ হেক্টর জমিতে তরমুজ, দুইশ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে সীম, আট হাজার দুইশ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ হয়েছে। অধিকাংশ ফসলে সেচ দিতে হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ফুলতলা, তেরখাদা, রূপসা, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, দিঘলিয়া ও দাকোপ উপজেলায় নদী থেকে পানি উত্তোলন করে আমন আবাদ করা হচ্ছে। পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার নদীর পানি এখনো নোনা থাকায় এ দুই উপজেলায় নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই বীজতলা একশ’ শতাংশ সম্পন্ন হলেও আমন উৎপাদন কম হবে।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় আমন রোপনের অগ্রগতি কম। রোপনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৪০ শতাংশ আমন আবাদ হয়েছে। সাড়ে চারশ’ একর জমির উৎপাদিত পাট নদীর জোয়ারের পানিতে, আবার অন্য কোথাও গর্ত করে পলিথিন বিছিয়ে মাটি চাপা দিয়ে পঁচানো হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহায়তায় সেচ দেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
দাকোপ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আমন চাষে বিলম্বের পাশাপাশি পানখালী ইউনিয়নে তরমুজ ও সবজির উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনায় বন্ধ হওয়া ৬ ট্রেন চালু হয়নি, দুর্ভোগে যাত্রীরা
দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ঢাকা-ভাঙা রেলপথের কাজ
ফরিদপুরের ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ের পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতু লিংক রেলপথের (ফরিদপুরের ভাঙ্গা প্রান্ত রেলপথ) জংশন ও রেললাইনের কাজ। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী সার্বক্ষণিক এ কাজে তদারকি করছে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে এখন রেল চলাচলের অপেক্ষায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষেরা। আর সেই লক্ষেই দ্রুত গতিতে এই রেল সংযোগের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের আশা পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল এ অঞ্চলের যোগযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। পরিবর্তন হবে আর্থসামাজিক উন্নয়নের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রড সেট করে বসানো হচ্ছে বিশেষভাবে তৈরি কংক্রিট স্লিপার। আর দুই পাশে থাকছে স্টিলের রেলপাত। রড, স্লিপার ও পাত স্থাপনের পর দেয়া হচ্ছে ঢালাই।
আরও পড়ুন: খুলনা-মোংলা রেললাইনে ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ হচ্ছে
পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন খুলছে ১ সেপ্টেম্বর
বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে। প্রজনন মৌসুমে বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদের প্রজনন বাড়াতে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট সুন্দরবনে সব ধরণের মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। একটানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোকে ভ্রমণ উপযোগী করে তোলা হয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য ট্যুর অপারেটরগুলো তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ঢল নামবে বলে বন বিভাগ ও ট্যুর অপারেটরদের প্রত্যাশা।
বন বিভাগ বলছে, প্রজনন মৌসুমে ৩ মাস সুন্দরবনে সব ধরণের মানুষের প্রবেশ বন্ধ থাকায় বন্যপ্রাণীরা নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পেরেছে। বনে বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে বনের নদী, খালে মাছও বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকালয়ের কাছাকাছি এবং বন বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরের পাশে হরিণ, বানর, বন্য শুকুর, সাপ, অজগর, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর প্রায়ই দেখা মিলছে। এমনকি বনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের ডাকও শোনা গেছে।
সুন্দরবন বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সুন্দরবনের মোট আয়াতন ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ চার হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার এবং জলভাগের পরিমাণ এক হাজার ৮৭৩ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবন জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ বিশ্বের মধ্যে সমৃদ্ধশালী একটি ইকোসিস্টেম। অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও আবাসস্থল সুন্দরবন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন।
আরও পড়ুন: জেলে-পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: নিজস্ব রূপে ফিরেছে সুন্দরবন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনায় বন্ধ হওয়া ৬ ট্রেন চালু হয়নি, দুর্ভোগে যাত্রীরা
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখনো চালু হয়নি বন্ধ হয়ে যাওয়া ৬টি ট্রেন সার্ভিস। বর্তমানে মাত্র ৩টি ট্রেন চলাচল করছে। ফলে এই জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। অবিলম্বে বন্ধ হওয়া ট্রেন সার্ভিস চালুর দাবি জেলাবাসীর।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশন জানায়, করোনার আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আন্তঃনগর, মেইল ও লোকালসহ মোট ৯টি ট্রেন সার্ভিস চালু ছিল। কিন্তু
করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০ সালের ২৪ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি হলে একই
বছরের ৩০ মে থেকে পুনরায় রেল সার্ভিস চালু করা হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি আন্তঃনগরসহ তিনটি ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। আরও ছয়টি ট্রেন সার্ভিস এখনো বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: স্কুলশিক্ষকের তৈরি ভাসমান সেতুতে দুর্ভোগের অবসান হলো গ্রামবাসীর
এদিকে দীর্ঘদিন থেকে ট্রেন সার্ভিসগুলো বন্ধ থাকায় রেল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ জেলার সাধারণ মানুষ।
যাত্রীরা জানান, করোনার আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আন্তঃনগর বনলতা, সিল্কসিটি, ধুমকেতু ছাড়াও লোকালসহ ৯টি ট্রেন চলাচল করত। তখন দিনের বিভিন্ন সময়ে ট্রেন চলাচল থাকায় অন্যত্র যেতে সমস্যা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে দিনে ও রাতে মাত্র তিনটি ট্রেন চলাচল করছে। এতে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আখতার হোসেন জানান, তিনি ঢাকায় বসবাস করেন, তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাগঞ্জে। ট্রেনে যাতায়াত নিরাপদ ও আরামদায়ক হওয়ায় তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ট্রেনেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাতায়াত করেন। করোনার আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন ছিল। তখন টিকিট পেতে সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন মাত্র একটি ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেস চলাচল করছে। এতে করে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় টিকিট পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিনি চা বাগান
টিলাঘেরা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) সবুজ ক্যাম্পাসের দুটি টিলায় শুরু হয়েছে চা নিয়ে গবেষণা। দুই একর জায়গা নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম এই অর্থকরী ফসলের চাষ ও গবেষণা চলছে। গত তিন বছর ধরে এই চা বাগান গড়ে তুলেছেন কৃষি অনুষদের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও চা উৎপাদন প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.এফ.এম. সাইফুল ইসলাম।
সকালের সোনালী আলোতে চা বাগানে ঢুকতেই উঁচু নিচু সবুজ ল্যান্ডস্কেপ মনকে তরতাজা করে দেয়। এই ভাদ্র মাসে ছায়াগাছ দিয়ে আবৃত চা বাগান কচি কশিলয়ের ঘ্রাণে মো মো করছে। বোঝাই যাচ্ছে চায়ের পাতার তোলার উপযুক্ত সময় চলছে। ছায়াগাছের গোড়ায় গোড়ায় লাগানো গোলমরিচ ও খুলনা বিভাগের বিখ্যাত চুই ঝাল গাছ লতে বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে।
শুধু চা নয় কফি গাছেরও দেখা মিলল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি চা বাগানে। পানীয় ফসলের এই বাগানে আরও রয়েছে লেমন ঘাস ও তুলসি। অধ্যাপক সাইফুল জানিয়েছেন এগুলো চায়ের মূল্য সংযোজন করে। আরও রয়েছে কাজু বাদাম। এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান থাকার কারণে চা নিজেই ওষধি গাছ। তুলসী, বাদাম এবং লেমন ঘাস এর ঘ্রাণ ও মানের সাথে ওষুধি গুণাগুণও বাড়িয়ে দেবে।
চা গাছে যেমন কচি পাতা এসেছে, কফি গাছেও এসেছে থোকায় থোকায় ফল। কফি এরাবিক ও কফি রোবাস্তা এই দুই জাতের কফির গবেষণা চলছে এখানে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে কফির চারা সংগ্রহ করা হয়। চাষ ব্যবস্থাপনা, জাত নির্বাচনের তারতম্যে কফি উৎপাদনে কী প্রভাব পড়ছে সেটি দেখাই মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও ফল সংগ্রহের সময় এবং বেকিং টইম কম বেশি করে কফির উৎপাদন ও মান বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা চলছে।
ড. সাইফুল বলেন, ‘পাট শিল্প, চিনি শিল্প ইতোমধ্য নিঃশ্বেষ হয়ে গেছে, চা শিল্পের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র চলছে। গ্রাম থেকে শহর আবাল-বৃদ্ধবনিতা প্রিয় পানীয় চা। বাংলাদেশে দিনদিন এর চাহিদা বেড়েছে কিন্তু উৎপাদন সে অনুপাতে বাড়েনি। চাহিদার কথা মাথায় রেখে সরকারকে ২০১৫ সাল থেকে বাইরের দেশ থেকে চা আমদানি করতে হচ্ছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৫ মাস খরার সময় বাংলাদেশে চা পাতা তোলা যায় না। তাই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চা বাগানে ড্রট টলারেন্ট ভ্যারাইটি বা খরা সহিষ্ণু চায়ের জাত উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া চলছে।’
পড়ুন: কাজে ফিরেছেন চা শ্রমিকরা
তিনি জানান, একজন পিএইডি ছাত্র তার সাথে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে গবেষক দলটি দেশ বিদেশের বিভিন্ন বাগানের সেরা সেরা চায়ের চারা সংগ্রহ করেছে। সেচের পরিমাণ কমিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে চা গাছ টেকানো যায় কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি মাইট (পাতার রস খেয়ে ফেলে এক ধরণের ক্ষুদ্র পোকা) এবং অন্যান্য পোকা চা পাতার কি কি ক্ষতি করছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং মাইট ও পোকা সহিষ্ণু চায়ের জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দুই প্রকার চায়ের চাষ হয়। একটি চীনের চা বা ক্যামেলিয়া সাইনেসিস, আরেকটি আসামের চা বা ক্যামেলিয়া আসামিকা। সিলেট এক সময় ভারতের আসাম অঞ্চলেরই অংশ ছিল। সিলেট ও আসামের ভূপ্রকৃতি এবং আবহাওয়া প্রায় একই রকম। তাই সিলেটের উপত্যকায় আসামিকা চায়েরই উৎপাদন বেশি। স্ট্রং মল্ট ফ্লেভার এবং বড় দানার জন্য এর চাহিদা ব্যাপক। আসামের টোকলাই চা গবেষণা কেন্দ্র থেকে আনা হয়েছে বিশেষ প্রজাতির ৯টি জাত। তবে গবেষক ড. সাইফুল মানের দিক দিয়ে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিটি-২ চা কে এগিয়ে রেখেছেন।
তিনি বলেন, বিটি-২ এর পপুলেশন ডেনসিটি (স্থান অনুযায়ী গাছের আধিক্য) সামান্য বাড়িয়ে দিলেই মোট উৎপাদন বেড়ে যায়। তিনি প্লান্ট স্পেসিং (এক গাছের থেকে আরেক গাছের দূরত্ব) কমিয়ে বিটি-২ চাষ করতে চা বাগান মালিকদের পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, পাতা বড় দেখে অনেকে আসামিকা জাত চাষ করে থাকেন। কিন্তু মানের দিকে বাংলাদেশি জাতগুলোই সেরা।
উৎপাদন বাড়াতে তিনি একশ বছরের বুড়ো চা গাছগুলোকে রিপ্লেস করার জন্য টি স্টেটগুলোকে অনুরোধ করেছেন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চা বাগানে ৯ প্রজাতির ভারতীয় টোকলাই প্রজাতির চা গাছ ছাড়াও, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিটি-১ থেকে বিটি-২২ পর্যন্ত ক্লোনগুলো চাষাবাদ হচ্ছে। সাথে রয়েছে একটি বাইক্লোনাল ভ্যারাইটি ও ৪টি বাংলাদেশি বাগানের ক্লোন। ল্যাটিন স্কয়ার ডিজাইনের এই গবেষণা মাঠ থেকে প্রতিদিন ২৪টি প্যারামিটারে তথ্য সংগ্রহ চলছে।
পড়ুন: পেঁয়াজ সংরক্ষণে আলোর মুখ দেখাচ্ছে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’
চা শিল্পের বেহাল দশা নিয়ে গবেষক ড. সাইফুলের কিছু আক্ষেপ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় ৩০টিরও বেশি বাগান পরিদর্শন করে দেখেছি, চা উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় চা বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন এমন লোক নেই। বাগানগুলোতে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ হচ্ছে না বিধায় আজ চা শিল্পের বেহাল দশা। চা উৎপাদনশীলতা, চা গাছের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও মান নিয়ন্ত্রণের জন্য অবশ্যই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা গ্রাজুয়েট লাগবে।’
সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষ না থাকলে একসময় এ শিল্পটি মুখ থুবরে পড়তে পারে বলে এই গবেষক আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রতিটি চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক পদে উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কৃষিবিদ নিয়োগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সিকৃবির জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর জানায়, ক্যাম্পাসের এই ছোট্ট চা বাগানটি প্রাথমিক অবস্থায় এনএটিপির প্রজেক্ট ছিল। পরবর্তীতে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এখন বড় একটি জার্মপ্লাজম স্থাপিত হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও চা উৎপাদন প্রযুক্তি বিভাগ ও কীটতত্ত্ব বিভাগ এই গবেষণায় সরাসরি যুক্ত হয়েছে। প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. এ.এফ.এম. সাইফুল ইসলাম ছাড়াও এই গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মালেক এবং রশীদুল হাসান।
পড়ুন: রাজধানীতে বাস মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ
পেঁয়াজ সংরক্ষণে আলোর মুখ দেখাচ্ছে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’
দেশে বছরে ৩৩ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে এক-চতুর্থাংশই নষ্ট হয়ে যায়। এই কারণে স্থানীয় চাষিদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। পেঁয়াজ নিয়ে এই সংকট মোকাবিলায় আশার আলো দেখাচ্ছে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’।
ইতোমধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে পেঁয়াজের এসি খ্যাত এই মেশিন। আর সুফল মেলায় খুশি সংশ্লিষ্টরা।
পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতার জেরে নেয়া পদক্ষেপের সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ। গত কয়েকবছর ধরে ক্রমাগত উৎপাদন বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী বাংলাদেশ। এরপরও ঘাটতি মেটাতে আমদানি করতে হচ্ছে বছর পর বছর। আর আমদানি কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়ে। আবার দাম পড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। তবে ঘাটতির অন্যতম কারণে হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে পেঁয়াজের অপচয় বা নষ্ট হওয়াকে।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমদানির কারণে দেশের অর্থ যেমন অপচয় হচ্ছে তেমনি ভালো দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চাষিরা।
আরও পড়ুন: বৃষ্টি অভাবে খুলনায় ফসল আবাদে নদীর পানি ব্যবহার
সনাতন পদ্ধতিতে বাঁশের মাচায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ হলেও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, অধিক তাপমাত্রায় ও অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পে পচন ধরে যায়। এই প্রেক্ষাপটে উদ্ভাবন হলো ‘বায়ু প্রবাহ যন্ত্রের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ’প্রযুক্তি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায়ের পরামর্শক দলের উদ্ভাবিত ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’ব্যবহৃত হচ্ছে ফরিদপুরের বিভিন্ন গ্রামে। এই মেশিন স্থাপনে মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ পড়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরিদপুরের সদর ও সালথা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বেশ কিছু পেঁয়াজ চাষিকে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে দেখা গেছে। ছাদযুক্ত টিনের কিংবা ইটের ঘরের মেঝেতে ইট দিয়ে মাচা তৈরির পর ছিদ্রযুক্ত মাদুর বা বানা দিয়ে ঢেকে তার মধ্যে সাড়ে ছয় ফুট লম্বা ও ১৪ ইঞ্চি চওড়া একটি ভার্টিকাল সিলিন্ডার বসানো হয়েছে। এক হর্স পাওয়ারের একটি বৈদ্যুতিক মোটরযুক্ত করে পাখার সাহায্যে উপর থেকে বাতাস টেনে নিয়ে নামিয়ে নেয়ার পর আটকে থাকা বাতাস পেঁয়াজের মধ্যে দিয়ে বের হচ্ছে। ছোট্ট একটি কক্ষে এভাবে বাতাস প্রবাহ করে মজুদকৃত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
রাজধানীতে বাস মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ
নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে আবার বাস মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ফলে সাধারণ যাত্রীদের ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামের একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে পল্টন পর্যন্ত ‘গ্রিন ঢাকা’ নামের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে ভাড়া হিসেবে তাকে বর্তমানে ১০০ টাকা দিতে হচ্ছে। আগে এর ভাড়া ছিলো ৬০ টাকা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গত ৬ আগস্ট রাজধানীর বাস মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে আগের প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা থেকে ৩৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২টাকা ৫০ পয়সা আদায়ের অনুমতি দেয়।
এ হিসেবে ‘গ্রিন ঢাকা’ নামের বাসটির ভাড়া বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিকরকম বেশি।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ
পুরান ঢাকাকে পুনঃ উন্নয়নের উদ্যোগ রাজউকের
এমন এক পুরান ঢাকার কথা ভাবুন যেখানে চওড়া সড়ক, কম যানজট, বিশুদ্ধ পানি, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ রয়েছে। ঠিক এ কাজটিই করতে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। পুরানো এই শহরে সংস্কার কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজউক।
পুনঃ উন্নয়নের অংশ হিসাবে প্রাথমিকভাবে সাতটি স্থান নির্ধারণ করেছে রাজউক। শিগগিরই এসব স্থানে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) শুরু হবে।
পুরান ঢাকার ইসলামুর, চকবাজার, বংশাল, মৌলভীবাজার, হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা, কামরাঙ্গীরচর ও সোয়ারিঘাট এই সাত স্থানে কাজ শুরু হবে।
পুরান ঢাকা অপরিকল্পিত শহর হওয়ায় বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এর কারণ শহরটি সরু সড়ক, ঘনবসতিপূর্ণ আবাস, অপরিকল্পিত দালানসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। সেজন্য এখানে বসবাস করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
জরাজীর্ণ ভবন, সংকীর্ণ সড়ক, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ, অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, উন্মুক্ত স্থানের ঘাটতি, ত্রুটিপূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা, উচ্চ ঘনত্ব, নিম্নমানের জীবনযাপন, ভূমিকম্প ও অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।
বর্তমানে পুরান ঢাকায় নাগরিক সুবিধা বলতে কিছুই নেই, ফলে পুরান ঢাকাতে আধুনিক শহরে রুপান্তর করতে রাজউক রিডেভেলপমেন্ট করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিয়া ইউএনবিকে বলেন, ‘পুরান ঢাকাকে আধুনিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে রিডেভেলপমেন্টের কাজ করতে ইতোমধ্যে জাপান, চায়নাসহ বেশ কয়েকটি দাতা সংস্থার সাথে বৈঠক হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। খুব কম সুদে এই কাজটি করা হবে।’
রাজউক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, পুরান ঢাকার ইসলামুর, চকবাজার, বংশাল, মৌলভীবাজার, হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা, কামরাঙ্গীরচর ও সোয়ারিঘাট এই সাতটি স্থানে আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হবে। তারপর পাইলটিং হিসাবে শুরুতে দুয়েকটি স্থানে কাজ শুরু করা হবে। তারপর বাকি গুলো শুরু হবে।
আরও পড়ুন: অরক্ষিত রেলক্রসিং অধিকাংশ রেল দুর্ঘটনার জন্য দায়ী
করমজল পর্যটন কেন্দ্র: প্রজনন হচ্ছে লবণ পানির কুমির ও ‘বাটাগুর বাসকা’ কচ্ছপ
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে লবণ পানির কুমির আর বিরল প্রজাতির কচ্ছপ ‘বাটাগুর বাসকা’ জন্ম নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। তাছাড়া করমজলে ভ্রমণে গিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসব বন্যপ্রাণী দেখে অনেক খুশি। বিশেষ করে শিশুরা কুমির ও কচ্ছপ ছানা দেখে বেশি উচ্ছ্বসিত।
সোমবার দুপুরেও প্রজনন কেন্দ্রের ডিজিটাল ইনকিউবেটর থেকে কুমিরের ছানা ফুটেছে। ছানা ফুটাতে কুমিরের ৩৮টি ডিম ৮২ দিন ইনকিউবেটরে রেখে নিবিড় পরিচর্যা করে বন বিভাগ। প্রজনন কেন্দ্রের চৌবাচ্চায় রেখে কুমিরের বাচ্চাগুলোকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। এবার বন বিভাগ কুমিরের ডিম থেকে শতভাগ বাচ্চা ফুটাতে সফল হয়েছে এবং পুকুরে বিরল প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা প্রজনন হচ্ছে।
জানা গেছে, সরকার ২০০০ সালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলে। লবণ পানির কুমির এবং বিরল প্রজাতির বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ এই কেন্দ্রে প্রজনন হয়। ২০০৫ সাল থেকে রোমিও-জুলিয়েট কুমির জুটি দিয়ে প্রজনন শুরু হয়। এরপর ওই প্রজনন কেন্দ্রে পিলপিল-আলেকজান্ডার যুক্ত হয়। বর্তমানে রোমিও এবং জুলিয়েট প্রজনন ক্ষমতা হারিয়েছে বলে বন বিভাগ জানায়। আর ২০১৪ সালে বিরল প্রজাতির আটটি বাটাগুর কচ্ছপ নিয়ে কচ্ছপ প্রজনন শুরু করে বন বিভাগ।
পড়ুন: পাটের দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের ১ জুন পর্যন্ত প্রজনন কেন্দ্রে কুমির এক হাজার ১৫০টি ডিম দিয়েছে। এর মধ্যে ৫০৭টি ডিম থেকে ছানা ফুটে বের হয়। বর্তমানে প্রজনন কেন্দ্রে এক থেকে ৪০ বছর বয়সের ১২৯টি কুমির রয়েছে। এই পর্যন্ত জন্ম নেয়া ২০৬টি কুমির সুন্দরবনের নদী-খালে অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত কচ্ছপে ৩২৭টি ডিম পাড়ে এবং ২৭৪টি কচ্ছপের ছানা ফোটে। বর্তমানে কেন্দ্রে ৪৩২টি কচ্ছপ রয়েছে।
সূত্র মতে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরে জুলিয়েট এবং পিলপিল দুটি কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ১৬৪টি ডিম পাড়ে। কিন্তু বন বিভাগ ডিমগুলো থেকে একটি ছানাও ফোটাতে পারেনি। আর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কুমিরের চারটি ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। ২০২১ সালে প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরে একটি ডিমও পাড়েনি।
পড়ুন: চা শ্রমিকদের মজুরি ২০১৯ সালেই বৃদ্ধি করা উচিৎ ছিল: গবেষক আশ্রাফুল
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, চলতি বছর ২২ জুন প্রজনন কেন্দ্রের কুমির পিলপিল ৩৮টি ডিম পাড়ে এবং ডিজিটাল ইনকিউবেটরে রাখা হয়। ৮২ দিন পর সবগুলো থেকেই বাচ্চা ফুটেছে। প্রজনন কেন্দ্রে চৌবাচ্চায় কুমিরের ছানাগুলো লালন পালন করে বড় করে তোলা হবে। সেখানে বিভিন্ন সাইজের ১৬টি চৌবাচ্চা রয়েছে। ৬ থেকে ৭ বছর চৌবাচ্চায় কুমির থাকবে। পরবর্তীতে সুন্দরবনের নদী-খালে এই কুমির অবমুক্ত করা হবে।
এই পর্যন্ত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেয়া ২০৬টি কুমির সুন্দরবনের নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয় বলে তিনি জানান।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তথ্য মতে, বিলুপ্তপ্রায় বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের জীবনচারণ, প্রজনন ও সংখ্যা নির্ধারণসহ নানা বিষয়ে জানতে করমজল থেকে গত ২০১৭ সালে জিপিএস ট্রান্সমিটার স্যাটেলাইটযুক্ত দুটি, ২০১৮ সালে পাঁচটি এবং ২০১৯ সালে পাঁচটি কচ্ছপ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে ছাড়া হয়। স্যাটেলাইটযুক্ত ১২টি কচ্ছপের মধ্যে ২০১৮ সালে একটি বরিশালে গিয়ে মারা যায়, দুটি ভারতে বিচরণ করছিল, দুটি বিভিন্ন নদী-খালে কয়েশত কিলোমিটার বিচরণ করার পর জেলেদের জালে ধরা পড়ে। পরবর্তীতে জেলেদের কাছ থেকে উদ্ধার করে কচ্ছপ দুটি করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে রাখা হয়।
বাকি কচ্ছপগুলোর বর্তমান অবস্থান তারা জানে না। তবে জিপিএস ট্রান্সমিটার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওই কচ্ছপের বিচরণের সময় বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। অস্ট্রিয়া ভিয়েনাজু, টিএসএ, প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশন এবং বন বিভাগ সুন্দরবনের করমজলে বাটাগুর বাসকা নামে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ধরা পড়ছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা
বন বিভাগের তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে ২১ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়। সমুদ্রে পাঁচ প্রজাতির কচ্ছপের বাস। সারা বিশ্বে ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ আছে। প্রকার ভেদে একটি কচ্ছপের গড় আয়ু ২০০ থেকে প্রায় ৩০০ বছর।
বিভিন্ন সময় সুন্দরবনের করমজলে ভ্রমণে যাওয়া নানা বয়সের নারী-পুরুষ পর্যটকরা জানান, প্রাকৃতিভাবে গড়ে উঠা সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য তাদেরকে মুগ্ধ করে। বিশেষ করে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে গিয়ে কুমির এবং কচ্ছপ দেখে তারা বেশি আনন্দ পায়। আর সে কারণের ছেলে মেয়েদের নিয়ে তারা প্রায় প্রতিবছর সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ঘুরতে আসেন।