%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7%20%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6
ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কিশোরগঞ্জের হাওরের ধানচাষিরা
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, নিকলী হাওর উপজেলার ধানচাষিরা এবার বোরো ধান কাটার মৌসুমে চামরাঘাট, ভৈরব, আশুগঞ্জের পাইকারি বাজারে ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না।
ফলে মণ প্রতি ধানচাষিরা ১৫০-২৫০ টাকা লোকসান গুনছেন। যা তাদের আর্থিক সমস্যার মুখে ঠেলে দেবে।
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে অবিরাম বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় হাওরের চাষীরা ইতোমধ্যে দু’বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কায় হাওর এলাকার কৃষকেরা আধপাকা ধান কাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষকেরা আধপাকা ধান কাটার ফলে এগুলো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। এতে তারা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাছাড়া বোরো শ্রমিক সঙ্কটে লোকসান বেড়েছে। কারণ কৃষকেরা বোরো ফসল কাটার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক পেতে অতিরিক্ত টাকা গুনছেন।
আরও পড়ুন: তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
এবার ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া হাওরের কৃষকেরা হতাশায় নিমজ্জিত করছে। তারা এখন বিলাপ করছে এবং কীভাবে তারা স্থানীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে নেয়া তাদের ঋণ শোধ করবে তা ভেবে দিন পার করছে।
ধানের ন্যায্য মূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওরাঞ্চলের বোরো চাষিরা। কৃষকেরা ব্রি ধান ২৮ বিক্রি করতে পাইকারি বাজারে যাওয়ার পর থেকে তাদের হতাশা আরও বেড়েছে।
চামরাঘাট চালের বাজার পরিদর্শন করে ইউএনবি প্রতিনিধি দেখতে পান হাওর এলাকার কৃষকেরা নদীপথে ধান নিয়ে আসছেন। রাইস মিল মালিকেরা এখান থেকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনেন।
এ বছর ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। কারণ হাওর এলাকায় উৎপাদিত ধান খুব কম দামে কিনছেন মিল মালিকেরা।
শ্রম খরচসহ মোটা ধানের প্রতি মণের উৎপাদন খরচ ৯০০ টাকার কাছাকাছি, যেখানে তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়। চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়, যেগুলোর উৎপাদন খরচ ১০০০ টাকার কাছাকাছি।
ইটনা উপজেলার ধনপুরের কৃষক করিম মিয়া জানান, এক মণ ধান উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে এক হাজার টাকার বেশি। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কম দামে ধান বিক্রি করায়।
অষ্টগ্রাম উপজেলা থেকে ভৈরব বাজারের পাইকারি বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক আমিন মিয়া জানান, অষ্টগ্রামের অধিকাংশ কৃষকই মালিকদের কাছ থেকে ফসলি জমি ইজারা নিয়ে বোরো ধান চাষ করেছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় পাওনাদারদের কাছ থেকে টাকাও ধার নিয়েছেন। তাই কৃষকেরা এ বছর ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ঋণ পরিশোধ করে জীবিকা নির্বাহ করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ইটনা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘হাওর এলাকার অধিকাংশ কৃষকই অতিদরিদ্র। ধারের টাকা পরিশোধ করতে বৈশাখের প্রথম দিকেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা। কারণ বৈশাখ মাসে তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে মহাজনরা। তারা কয়েকদিন পর ধান বিক্রি করতে পারলে ধানের ভালো দাম পাবে।’
আরও পড়ুন: বন্যার পানি হাওরে ঢুকে ফসলহানির আশঙ্কা সুনামগঞ্জের কৃষকদের
তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
ঈদের ছুটিতে জাফলংয়ে পর্যটকের স্রোত
ঈদুল ফিতরের ছুটিতে আনন্দ ভাগাভাগি করতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। ঈদের পরদিন বুধবার সকাল দেশের অন্যতম এ পর্যটন কেন্দ্র জনস্রোতে মুখর হয়ে উঠে।
পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদুল ফিতরের আনন্দ কাটাতে জাফলংয়ে ভিড় করেছেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।
বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো জাফলং যেন লোকে লোকারণ্য। পিকআপ, প্রাইভেট কার, বাস ও ট্রাকযোগে যে যেভাবে পেরেছে পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছেছে। পুরো এলাকা ছিল পর্যটকবাহী যানবাহনের সারি। সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের গুচ্ছগ্রাম থেকে তামাবিল পর্যন্ত দীর্ঘকায় যানযট ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিকে প্রচণ্ড গরমে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পর্যটকরা।
অপরদিকে পর্যটক স্বেচ্ছাসেবক ও জাফলংয়ে নিযুক্ত টুরিস্ট পুলিশদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যটন স্পটের গুরুত্বপূর্ণ সবকটি পয়েন্টে সার্বক্ষনিক পর্যটক নিরাপত্তায় থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) এমরুল, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মশিউর রহমানের সমন্বয়ে একাধিক টিমের টহল চোখে পড়ে।
আরও পড়ুন: হাসপাতালের বেডে ঈদ
পর্যটন পুলিশের ইন্সপেক্টর রতন শেখকে সাঁতার না জানা পর্যটকের উদ্দেশে হ্যাণ্ড মাইকে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দিতে দেখা যায়।
এমনকি লাইফ জ্যাকেট জরুরি উদ্ধার সরঞ্জাম নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও প্রস্তুত রয়েছেন।
পর্যটক দম্পতি সোহেল মাহমুদ ও তামান্না ইসলাম বলেন, সারা দেশ এমনকি বহিঃবিশ্বেও জাফলং পর্যটন কেন্দ্রের আলাদা পরিচিতি রয়েছে। খুব ভালো এখানকার পরিবেশ প্রকৃতি। পাহাড় টিলা সবুজের সমারোহ, স্বচ্ছ জলারাশি, দিগন্ত জুড়ে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলী হৃদয়ে বাড়তি আনন্দের খোরাক জোগায়।
হাসপাতালের বেডে ঈদ
পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ। সারাদেশ ঈদ উদযাপন করছে। কিন্তু এর মধ্যেও অসংখ্য রোগী রয়েছেন যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই উৎসবের দিনটি তাদের হাসপাতালেই কাটাতে হবে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা এই মানুষগুলোর মধ্যে ঈদ কোনো আনন্দ নেই।
ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার সকালে ভর্তি হয়েছেন শাকিল হোসেন (৩০)। হাসপাতালের বেডে জায়গা হয়নি তার, বারান্দাতেই চলছে তার চিকিৎসা। শাকিল হোসেনের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলায়। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে ফরিদপুরে কর্মরত রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঈদের আনন্দ নেই গাইবান্ধার চরাঞ্চলের
শাকিল হোসেন বলেন, সোমবার সকালে হঠাৎ করেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হই। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হই। কিন্তু কিছুতেই বমি ও পায়খানা কমছে না। সাথে রয়েছে পেট ব্যথা।
রোগী শাকিলের মা আফসানা বেগম বলেন, ছেলের অসুস্থতার কথা শুনেই চলে এসেছি। হাসপাতালেই কেটে যাবে ঈদ। তবুও ছেলে সুস্থ হোক, সামনের বছর ঈদ পালন করবো।
ফরিদপুর সদর উপজেলার ধুলদী এলাকার বাসিন্দা আজিজ বেপারী। তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার থেকে ভর্তি রয়েছেন। বর্তমানে কিছুটা সুস্থ।
তিনি বলেন, চারদিন ধরে ভর্তি রয়েছি। এখন কিছুটা সুস্থ। সম্পূর্ন ভালো হতে আরও কয়েকদিন লাগবে। এবার আর ঈদের আনন্দ করা হবে না। হাসপাতালেই থাকতে হবে। বাড়িতে ছেলে মেয়ে রয়েছে, আমার জন্য তাদেরও ঈদ করা হবে না।
আরও পড়ুন: ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজারে ৫০ শতাংশ হোটেল আগাম বুকিং
শুধুমাত্র শাকিল, আজিজই নয় ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে বিভিন্ন বয়সের ৭০ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হাসপাতালের ডায়রিয়া রোগীদের সেবার কাজে নিয়োজিত সেবিকা গোলাপী বেগম জানান, রোগী আসছে প্রচুর, জায়গা দিতে পারছি না। নিরুপায় হয়ে অনেকেই ফ্লোর, বারান্দায় সেবা নিচ্ছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সেবা নিশ্চিত করতে।
ঈদের আনন্দ নেই গাইবান্ধার চরাঞ্চলের
ঈদুল-ফিতর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, আর উৎসব মানে আনন্দ: এই দিনটিকে নতুন পোশাক কিনে বিশেষ খাবারের সঙ্গে উপভোগ করা হয়। কিন্তু গাইবান্ধার ১৬৫টি চর এলাকার তিন লাখের বেশি পরিবারের জন্য তা নয়। খুবই দারিদ্রতার কারণে নতুন জামা-কাপড় কেনা ও উৎসবের জন্য বিশেষ খাবার তৈরি করতে পারে না তারা।
এ বছরও কোনো আনন্দ হবে না কারণ চরের মানুষ তিন বেলা খাবারেরই ব্যবস্থা করতে পারে না।
বাংলাদেশে মঙ্গলবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। কিন্তু ঈদ মানেই তাদের জন্য বিশেষ কোনো দিন নয় কারণ চর এলাকার অধিকাংশ মানুষ বেকার ও ভূমিহীন। ঈদ উপলক্ষে ভালো খাবার ও নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করা তাদের জন্য কঠিন। তাদের নিজস্ব কোন জমি নেই তাই তারা বিভিন্ন জেলায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজারে ৫০ শতাংশ হোটেল আগাম বুকিং
চরের মানুষ শিক্ষা, কাজ, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান সহ তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারে না। এসব এলাকার বাসিন্দারা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। এছাড়া বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাথে লড়াই করে তাদের বেঁচে থাকার হয়। এমনকি সরকারি কর্মসূচির আওতায় ত্রাণ পাওয়া থেকেও তারা বঞ্চিত।
জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া, বেলকা, শ্রীপুর ও হরিপুর তিস্তা নদীর তীরে চারটি চর রয়েছে
সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলা শহরের উত্তর-পূর্ব কাপাসিয়ার চর পরিদর্শনে গিয়ে কয়েকজন পরিবারের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।
লালচামার গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, তারা কোনো ত্রাণসামগ্রী পাননি। ফলে ধান কাটার মৌসুমে দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য পুরুষদের বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়।
আরও পড়ুন: ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ঘরমুখো যাত্রীদের ভোগান্তির শঙ্কা
ওই গ্রামের নারী ময়না বেগম জানান, তার স্বামী ময়নুল মিয়া কাজে বের হয়ে এখনও ফেরেননি। তবে স্বামী ফোন করে বলেছেন তিনি আসার সময় তার জন্য শাড়ি আনবেন । আর গাইবান্ধা থেকে সন্তানদের জন্য যা লাগে কিনে দিবেন।
ফুটপাতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা
ঈদুল ফিতর দরজায় কড়া নাড়ছে। আর তাই অনেক দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের মানুষদেরও সচ্ছল মানুষদের মতো কেনাকাটার ব্যস্ততা বেড়েছে।
কম বাজেটের ক্রেতারা তাদের পছন্দের পোশাক, জুতা, স্যান্ডেল, প্রসাধনী ও গয়নাসহ অন্যান্য পছন্দের জিনিসগুলো কম দামে কেনার জন্য ফুটপাত এবং অন্যান্য অস্থায়ী দোকানে ভিড় করছেন।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় ফুটপাত ও খোলা জায়গায় শতাধিক অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে মূলত নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের লক্ষ্য করে।
বিক্রেতাদের মতে, অনেক মধ্যবিত্ত ক্রেতাও তাদের স্টলে ভিড় করছেন। কারণ তাদের কাছে শপিং মলের মতো বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের পোশাক এবং অন্যান্য সব ধরনের পণ্য রয়েছে।
ফুটপাতের বিক্রেতারা আরও বলেছেন, যে তারা ভালো গ্রাহক টানছেন। কারণ করোনা মহামারির কারণে মানুষ দুই বছর বিরতির পর এবার পুরোদমে কেনাকাটা করার সুযোগ পেয়েছে।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, নিউমার্কেট, যাত্রাবাড়ী, ফকিরাপুল, মৌচাক, রামপুরা, বাড্ডা ও মিরপুর এলাকার অস্থায়ী দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় দেখা যায়।
মেয়েদের পোশাক, শিশুদের পোশাক, প্রসাধনী, পুরুষদের পোশাক যেমন- জিন্স ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, ট্রাউজার, জুতো, বেল্ট, ক্যাপ, লুঙ্গি, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শন করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন বিক্রেতারা।
আরও পড়ুন: দুই বছর পর মুসল্লিদের পদচারণায় মুখর হবে শোলাকিয়া
দুই বছর পর মুসল্লিদের পদচারণায় মুখর হবে শোলাকিয়া
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দুই বছর পর আবারও মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হবে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ। ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য ইতোমধ্যে দুই তৃতীয়াংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি। এবার চার স্তরে নিরাপত্তা বলয়ের বেষ্টনী থাকবে। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ।
জানা যায়, ১৭৫০ সাল থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সেই হিসাব অনুযায়ী শোলাকিয়া ঈদগাহের বয়স ২শ’ ৭১ বছর। প্রতিষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই সোয়ালাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া। কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের প্রতীক শোলাকিয়া ঈদগাহ স্থান করে আছে মানুষের হৃদয়ে। স্থানীয় হয়বতনগর সাহেব বাড়ির ঊর্ধ্বতন পুরুষ শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ (র.) ওই জামাতে ইমামতি করেন।
সর্বশেষ ১৯২তম জামাতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মো. ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।
শোলাকিয়ার এ ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহটি প্রতিষ্ঠা করেন কিশোরগঞ্জ শহরের হয়বতনগর জমিদার বাড়ির লোকজন। বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশাখাঁ’র ৬ষ্ঠ বংশধর হয়বতনগরের জমিদার দেওয়ান মান্নান দাদ খান তার মায়ের অসিয়াত মোতাবেক ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ৪.৩৫ একর জমি ওয়াক্ফ করেন। সেই ওয়াক্ফ দলিলে উল্লেখ রয়েছে, ১৭৫০ সাল থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
কিশোরগঞ্জ মৌজার এ মাঠের মূল আয়তন বর্তমানে ৬.৬১ একর। চারপাশে অনুচ্চ প্রাচীর ঘেরা শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে মোট ২৬৫টি কাতার রয়েছে যেখানে একসঙ্গে দেড় লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। এছাড়া মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঈদগাহ সংলগ্ন খালি জায়গা, রাস্তা এবং নিকটবর্তী এলাকায় দাঁড়িয়ে সমসংখ্যক মুসল্লি এ বৃহত্তম ঈদজামাতে শরিক হন।
পড়ুন: ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজারে ৫০ শতাংশ হোটেল আগাম বুকিং
প্রতি বছরই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিণত হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মহামিলন কেন্দ্রে। এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন ধনী-গরীব নির্বিশেষে। সবার উদ্দেশ্য একটাই, যেন কোন অবস্থাতেই হাত ছাড়া হয়ে না যায় জামাতে অংশগ্রহণ, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ। সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে এক নতুন সমাজ গড়ার শিক্ষা নিয়েই জামাত শেষে বাড়ির পথে শোলাকিয়া ছাড়েন তাঁরা।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, এবারের জামাতে জায়নামায ও মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। নিরাপত্তা জোরদারে মোবাইল নিয়েও প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থধাকবে। শোলাকিয়া ঈদগাহে নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে ঈদের দিনে কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। ড্রোন ক্যামেরাসহ ৫ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও মাঠে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা পুরো মাঠ মনিটরিং করা হবে। এ কাজে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার ব্রিগেডের দুটি ইউনিট সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকবে।
ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, এবার ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) বলেন, শোলাকিয়া ঈদগাহ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঈদের জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
পড়ুন: ঈদে পরিবহন খাতে ‘নৈরাজ্যের’ আশঙ্কা আরএসএফের
ঈদকে সামনে রেখে কক্সবাজারে ৫০ শতাংশ হোটেল আগাম বুকিং
আগামী ২ মে বা ৩ মে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে। আসন্ন এই ঈদকে সামনে রেখে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেল, মোটেল-কটেজ ও রেস্টুরেন্টগুলো মেরামত ও সাজসজ্জার প্রস্তুতির কাজ প্রায়ই শেষ।
এদিকে ঈদের ১০ দিন আগেই কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসের প্রায় ৫০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও সৈকতের ব্যবসীয় সমিতি । তবে কটেজ ও ফ্ল্যাট ব্যবসায়ীরা আগাম কক্ষ বুকিং দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া রমজানের শুরু থেকে কক্সবাজারে পর্যটক নেই বলে চলে। একইভাবে পর্যটন জোনের সব ধরনের রেস্টুরেন্টও প্রায় ক্রেতাশূন্য থাকে। তাই অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখা হয়।
আরও পড়ুন: নান্দনিক সড়কবাতিতে ঝলমলে রাজশাহী শহর
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, রমজানের শুরুতেই পর্যটক না থাকায় বহু হোটেল-কটেজে কর্মচারী ছাঁটাই করেছে। এতে পুরো রমজান ও ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের।
সৈকতের লাবণী পয়েন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিব উল্লাহ বলেন, রমজানের পর্যটক না থাকায় বেচাকেনা হয় না। তাই দোকান বন্ধ রাখা রয়েছে। তবে ঈদের পরে ব্যবসার জন্য নতুন করে মালামাল ওঠানোসহ সব রকমের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
ঈদযাত্রায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ঈদযাত্রায় যানজটে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মহাসড়কের পাশে বাজার বসায় এবং প্রায়ই সংস্থার কাজ চলায় এই আশঙ্কা করছেন চালক ও যাত্রীরা।
এছাড়া মহাসড়কে অবাধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন চাকার যানবাহন। ব্যস্ততম এই মহাসড়কে নিষিদ্ধ এসব যানবাহন চলাচলের কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এছাড়া নিষিদ্ধ এসব যানবাহনের কারণে এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে,বর্তমানে মহাসড়কের অন্তত ছয়টি স্থানে বাজার বসায় এবং সংস্থার কাজ চলার কারণে প্রায়ই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের কারণে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা ও দাউদকান্দি অংশে যানজটের কারণে অনেক সময় এক ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে চার থেকে ছয় ঘণ্টা।
তবে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ঈদযাত্রায় যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এছাড়া যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়োজিত থাকবে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাউদকান্দি উপজেলার টোলপ্লাজা এলাকা, গৌরিপুর, ইলিয়টগঞ্জ, চান্দিনার মাধাইয়া, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড ও বুড়িচং উপজেলার নিমসার এ ছয়টি স্থানে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া আদর্শ সদর উপজেলার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা, কুমিল্লা সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার ও চৌদ্দগ্রাম বাজারেও যানজট হয়। এসব এলাকায় মহাসড়কের ওপর বাজার বসার কারণে গাড়ি নিয়ে পথ চলতে বেগ পেতে হচ্ছে চালকদের।
আরও পড়ুন: শিগগিরই কমবে যানজট: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ যেভাবে একজন তরুণ আইটি উদ্যোক্তার জীবন বদলে দিয়েছে
মুন্সি সোহাগ হোসেন এক সময় ভ্যান চালাতেন এবং পড়াশোনার খরচ যোগাতে দোকানে কাজ করতেন। তবে তিনি এখন মাগুরার একজন তরুণ আইটি উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন।
মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের একটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন ২৪ বছর বয়সী যুবক সোহাগ।
২০১৬ সালে ভারতীয় আইসিসিআর স্কলারশিপ পেয়ে গুজরাট টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে আইটি বিষয়ে স্নাতক করার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন সোহাগ।
স্নাতক শেষ করার পর ২০২০ সালে আইটি সেক্টরে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল সেক্টর বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে।
স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সোহাগ মাগুরা সদরে ‘পলিটেকস’ নামে একটি ফার্ম গড়ে তোলেন, যা তার জীবন বদলে দেয়।
সম্প্রতি সোহাগের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কীভাবে একটি স্থায়ী বাড়ি তার পড়াশোনায় সহায়তা করেছে এবং ডিজিটাল বিপ্লব তাকে একজন আইটি উদ্যোক্তা করে তুলেছে।
১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে নোয়াখালীতে নদী ভাঙনে তাদের বাড়িঘর এবং সমস্ত সম্পদ হারিয়ে তার পরিবার উদ্বাস্তু জীবনযাপন করে। এরপর ১৯৮৬ সালে তারা মাগুরায় চলে আসেন। শেষে ১৯৯০-এর দশকে গৃহহীন পরিবারের জন্য তৈরি গুচ্ছগ্রামে একটি বাড়ি পান তার মা সখিনা বেগম।
পড়ুন: ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপ ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠা: জয়
২০১৭ সালে সোহাগ তার বাবা মুন্সি আবুল হোসেনকে হারিয়েছেন। তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে তিনি পরিবারে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছেন। অন্য দুই ভাইয়ের ভাঙ্গারি (ছোট) ব্যবসা আছে।
সোহাগ বিজ্ঞান বিভাগে ২০০৯ সালে এসএসসি এবং ২০১১ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। মাগুরা আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০১২ সালে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়ন বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেন।
হঠাৎ করেই ভারতীয় স্কলারশিপ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
সোহাগ বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন দিনমজুর। দরিদ্র্য হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল স্কলারশিপ নিয়ে ভারতে যাওয়া।’
স্কুল জীবনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে অনেক অপমান শুনতে হয়েছে। আমি যখন পড়াশোনায় ভালো করতাম, তখন সচ্ছল পরিবারের অনেক ছাত্র আমাকে অপমান করত। তবে কেউ কেউ আমাকে উৎসাহিত করেছেন।
২০২০ সালে সোহাগ যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন আইটি সেক্টরে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চাকরি না করার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ডিজিটাল বাংলাদেশে স্ব-কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বানে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি।’
সোহাগ তার আশেপাশের মানুষের প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্য 'পলিটেকস' নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছেন।
পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে মাটি ছাড়াই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষ
তিনি বলেন, ‘আমরা মাগুরা সদর উপজেলা প্রশাসনের জন্য একটি বড় ডেটা-ম্যানেজমেন্ট সফ্টওয়্যার তৈরি করেছি যাতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রকৃত তথ্য জানতে এবং সেই অনুযায়ী তাদের জন্য পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়।’
তার প্রতিষ্ঠানটি এখন একই উদ্দেশ্যে জেলার শ্রীপুর উপজেলায় আরেকটি ডেটা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি করছে।
তিনি জানান, তার ফার্ম বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরি করে এবং মাসে প্রায় এক লাখ টাকা আয় করে। তার ফার্মে তিনজন প্রকৌশলী ও দুজন বিপণন কর্মকর্তা রয়েছেন।
সোহাগ বলেন, ‘আমরা সিকমেড, তিরুপতি ইন্টারন্যাশনাল, শেরপাস্পেসের মতো কিছু বিদেশি কোম্পানির সাথেও কাজ করছি।
এছাড়াও সোহাগের ফার্ম যুব সম্প্রদায়ের জন্য তাদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং সাইবার-নিরাপত্তা জ্ঞানের জন্য কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘কীভাবে ব্যবসাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপ দিতে হয় সেই বিষয়ে আমি প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার, সোহাগ সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে (ডিজিটাল বাংলাদেশের) একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। তিনি আইটি আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং ব্যবহার করে একজন আইটি উদ্যোক্তা হয়েছেন।’
পড়ুন: বৃষ্টির পর ঢাকা শহরে এডিস মশার আতঙ্ক বেড়েছে
বৃষ্টির পর ঢাকা শহরে এডিস মশার আতঙ্ক বেড়েছে
রাজধানী ঢাকায় এডিস মশার ঘনত্ব আগের বছরের তুলনায় বেশি। আসন্ন বর্ষাকালে যা আরও বাড়তে পারে, ফলে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটতে পারে।
ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) এর গবেষকরা আশঙ্কা করেছেন, রাজধানীতে বৃষ্টির পরে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের হার উদ্বেগজনক পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত বছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে দেশে ১০৫ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং ২৮ হাজার ৪২৯ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই রাজধানী ঢাকার নাগরিক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস ট্রান্সমিশন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের সাম্প্রতিক এক জরিপে ভয়াবহ পরিস্থিতির তথ্য উঠে এসেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীনে ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি সাইটে ১০ দিনের তথ্য নিয়ে এই কীটতত্ত্ব জরিপটি পরিচালিত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুসারে, জরিপ করতে ২১ সদস্যের একটি দল সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রায় তিন হাজার বাড়ি পরিদর্শন করেছে। এতে ১৫০টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, যা মোট সংখ্যার ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস ট্রান্সমিশন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের আরেকটি দলও ঢাকায় বসবাসকারী মশার প্রজাতির সংখ্যা এবং অন্যান্য জীবাণু শনাক্ত করতে মশা ধরতে কাজ করছে।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকায় মারাত্মক পোকামাকড়ের অঞ্চল ভিত্তিক ঘনত্ব জানতে ইন্সটিটিউট অফ এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) গবেষণা পরিচালনার পর মশার ঘনত্ব দ্বারা জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ম্যাপিং সম্পন্ন করবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরামর্শ দিয়েছে যে ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশনকে এখনই মশা নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের জন্য মশার আতঙ্ক রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা উচিত।
এতে আরও বলা হয়েছে, নগরবাসীকেও এই অভিযানে সম্পৃক্ত করা উচিত।
আরও পড়ুন: মশা নিয়ে বিড়ম্বনায় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বসুন্ধরা, বাড্ডা, ভাটারা, কুড়িল, মিরপুর, আগারগাঁও, শ্যামলী, বনশ্রী, যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, ধানমন্ডিসহ পুরান ঢাকার অনেক এলাকা মশার উৎপাতের কেন্দ্রস্থল।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা এলাকায় সারা বছরই মশা থাকলেও সিটি করপোরেশন খুব কমই লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড স্প্রে করে।
তিনি বলেন, ‘মশার কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা সন্ধ্যায় ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারে না। আমরা মশার উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পেতে মশারি এবং কয়েল ব্যবহার করি।’
মিরপুরের বাসিন্দা মাইনুল হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশন মাঝেমধ্যে কীটনাশক স্প্রে করে, যা মশার বংশবৃদ্ধি রোধে পর্যাপ্ত নয়। সিটি করপোরেশনের উচিত এ বিষয়ে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।