বিশেষ সংবাদ
‘মিয়ানমারে আমাদের নিজের ঘরে ফিরতে সাহায্য করুন’
কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে বিশাল জনসমাগমের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাঈদা নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাষায় দাবি জানিয়ে আসছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্ণপাত করছে না। আমরা ইংরেজিতেও আমাদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। তবুও তারা মনোযোগ দিচ্ছে না। আমরা হতাশ। আমরা শুধু ভুক্তভোগী নই, আমরা বেঁচে আছি এবং তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বলছি।’
তিনি বলেন, তিনি ২৫ আগস্টের দিনটি কখনোই ভুলতে পারবেন না এবং গত ৬ বছরে তারা তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে যেতে পারেননি।
অশ্রুসিক্ত সাঈদা বলেন, ‘ন্যায়বিচার বিলম্বিত হয়েছে, ন্যায়বিচার অস্বীকার করা হয়েছে। আমরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।’
তাদের সম্মিলিত দাবি- রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শক্তিশালী সমর্থন চায় বাংলাদেশ
অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও মর্যাদার নিশ্চয়তা, মিয়ানমারের অন্যান্য ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর মতো পূর্ণ অধিকারসহ নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধার।
বর্তমানে ১০ বছর বয়সী বনি আমিন ৬ বছর আগে মিয়ানমার থেকে দেশটির সামরিক জান্তার আক্রমণের সময় পরিবারের ৮ সদস্যের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছিল। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনবিকে এই শিশু বলেছে, ‘আমার মনে আছে কীভাবে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সামরিক বাহিনী আমাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিল। আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাই।’
আজকের (শুক্রবার) সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, তারা মিয়ানমার সরকারের কাছে আবেদন করতে চান যেন তারা আগের মতোই মিয়ানমারে ফিরে যেতে ও সেখানে বসবাস করতে এবং নাগরিক হিসেবে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারেন।
তারা বলেন, মিয়ানমারের অর্থনীতি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
রোহিঙ্গারা তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করছে ঢাকা ও বেইজিং
রোহিঙ্গা যুবক মুসা বলেন, ‘আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে সাহায্য করুন, ওটাই আমাদের দেশ। আমরা আর বাংলাদেশে থাকতে চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা এই দিনটিকে কেবল আমাদের অভিন্ন ট্র্যাজেডি মনে করিয়ে দেওয়ার নয়, বরং পদক্ষেপ নেওয়ার দিন হিসেবেও পালন করি। আসুন আমরা বেদনার ঊর্ধ্বে গিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচারের দাবি জানাই।’
মুসা আরও বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এমন একটি পথ সৃষ্টি করবে যে বিশ্বে এই ধরনের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি হবে না। এর ফলে এখানে শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে সব সম্প্রদায় সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।’
পরিবারের সদস্যদের হারানো নূর জাহান ইউএনবিকে বলেন, তারা ন্যায়বিচার চান এবং মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চান।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর তারিখ এখনো ঠিক হয়নি: সেহেলী সাবরীন
তিনি বলেন, তারা মিয়ানমারে পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার চান, যাতে তারা নিরাপদ বোধ করেন।
‘রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবস’ উপলক্ষে রোহিঙ্গারা একত্রিত হয়েছেন। তারা বলেন, এই ট্র্যাজেডিতে তাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত, যা তাদের কষ্ট দিয়েই চলেছে।
প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা কয়েক ডজন সমাবেশে যোগ দেন, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশটি কুতুপালং ক্যাম্পে ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যেই প্রায় ১০ হাজার শরণার্থীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
তারা এই দুঃসময়ে হাত বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৬ বছর পরেও সরকার তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দিকে মনোনিবেশ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, যদিও কিছু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের বাংলাদেশে একীভূত করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পর মিয়ানমারকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তারা (রোহিঙ্গারা) তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাবে, এটাই আমাদের অগ্রাধিকার। মিয়ানমারও তাদের ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছুক।’
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করবে যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়াম
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান শুরু করে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সরকার দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে এবং অন্যান্য দেশ থেকে আরও প্রচুর সংখ্যক জনসংখ্যার প্রয়োজন নেই।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা ১৯৭০, ৮০’ ও ৯০’ এর দশকে বাংলাদেশে এসেছিল। কিন্তু প্রতিবারই তারা ফিরে গিয়েছিল, এমনকি অতীতে সামরিক শাসনের সময়ও।
পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন বড় আকারের প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো বুঝতে সহায়তা করবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে কারো বাধা সৃষ্টি করা উচিত হবে না।
তিনি বলেন, ‘বড় পরিসরে প্রত্যাবাসনের আগে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতেই এই পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন। নিয়মিত প্রত্যাবাসনের উদ্যোগকে চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সমাধান আরও ভালোভাবে বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বলেননি যে তারা ফিরে যেতে চান না। বরং যখনই কোনো বিদেশি গণ্যমান্য ব্যক্তি ক্যাম্পে তাদের সঙ্গে দেখা করেন তখনই তারা দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অস্ত্র ও মাদক পাচারের ঘটনা ক্যাম্পে বেড়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষ সদস্যও নিহত ও আহত হয়েছেন।
তিনি বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য কীভাবে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ভাসানচরকে ‘একটি ভাসমান দ্বীপ’ বলে বর্ণনা করেছিল তা স্মরণ করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। যতদিন তারা বাংলাদেশে থাকবে ততদিন আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার সমাধান খুঁজতে মানবিক সাড়া ও রাজনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার জন্য নতুন করে অঙ্গীকারের আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘অবিচলভাবে মধ্যস্থতা করছে’ চীন: রাষ্ট্রদূত ইয়াও
ইউএনএইচসিআর বলেছে, মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের বারবার বলেছে, স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন নিরাপদ হলেই কেবল তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়।
সংস্থাটি আরও বলেছে, সম্মিলিত লক্ষ্য হওয়া উচিৎ রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। যেন, তারা তাদের জন্মস্থান বা পছন্দের জায়গায় অবাধে চলাফেরা করতে পারে এবং তাদের জীবন পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি, নাগরিকত্বের জন্য ব্যবস্থা, পরিষেবা এবং আয়ের সুযোগ পায়।
ঢাকা-নারিতা রুটে ১ সেপ্টেম্বর ফ্লাইট চালু করবে বিমান
ঢাকা থেকে জাপানের নারিতায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর সরাসরি ফ্লাইট চালু করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম ইউএনবিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সিইও জানান, উদ্বোধনী ফ্লাইটটি ১ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করবে। ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে জাপানের নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে।
আরও পড়ুন: ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং: বেবিচক চেয়ারম্যান
তিনি আরও বলেন, ২ সেপ্টেম্বর নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ফ্লাইট বিজি-৩৭৭ যাত্রা করবে।
শফিউল আজিম বলেন, ঢাকা থেকে নারিতা বিমানের ফ্লাইট প্রতি শুক্রবার, সোমবার ও বুধবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এবং নারিতা থেকে ঢাকার উদ্দেশে প্রতি শনিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ছাড়বে।
এ ছাড়া গত ২৫ জুলাই থেকে ঢাকা-নারিতা (টোকিও) সরাসরি ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
এদিকে ঢাকা-নারিতা রুটে একমুখী সর্বনিম্ন ভাড়া ৭০ হাজার ৮২৮ টাকা এবং ফিরতি টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ১ লাখ ১১ হাজার ৬৫৬ টাকা।
তবে নতুন রুট উদ্বোধন উপলক্ষে ছাড় দিয়েছে বিমান। ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ মূল্য ছাড় দেওয়া হয়।
এ সময় ঢাকা-নারিতা রুটে একমুখী সর্বনিম্ন ভাড়া জনপ্রতি সর্বমোট ৪৯ হাজার ১০০ টাকা এবং রিটার্ন টিকিটের ভাড়া শুরুতে ছিল ৮৪ হাজার ৪৯৬ টাকা। এরই মধ্যে উদ্বোধনী ফ্লাইটের অধিকাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে।
বিমানের মতে, জাপানে অবস্থান করা বাংলাদেশির সংখ্যা খুবই কম। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নিযুক্ত থাকা জাপানি নাগরিকরাই এই রুটের যাত্রী হবেন বলে আশা করা করে হচ্ছে।
বিমানের সিইও আরও বলেন, খুহ শিগগিরই আমরা ইন্টারন্যাশনাল সিস্টেমে ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টার চালু করতে যাচ্ছি। যাত্রীরা ২৪ ঘণ্টাই বিমানের সব আপডেট তথ্য জানতে পারবেন কল সেন্টারের মাধ্যমে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিইও জানিয়েছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হিসেবে বিমানে ব্যাগেজ ব্যবস্থা অটো করা হবে। যার যত কেজি ব্যাগেজ অনুমোদন থাকবে তার থেকে ১ কেজিও বেশি নেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, এটি সিস্টেমে আটকে যাবে। বেশি ওজন হলে বোর্ডিং আসবে না। ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই অটোমেটিক সিস্টেম চালু করা হবে।
আরও পড়ুন: অক্টোবরে ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে চালু হবে ১২ বোর্ডিং ব্রিজ: বেবিচক
ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: বিমান সিইও
চাঁদপুরে সরবরাহ বাড়লেও ইলিশ এখনও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে
গত কয়েকদিন (৫/৬) চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাটে ইলিশের সরবরাহ অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার মণ ইলিশ দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলো থেকে এ ঘাটে মাছটি আসছে।
ট্রলার, ট্রাক ও পিকআপে এসব মাছ এখানে আসতে থাকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত।
সরবরাহ বেশি হওয়ায় মাছ ঘাট আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে। ঘাটের প্রায় ৪ থেকে ৫ শত দিনমজুর ব্যস্ত সময় পার করছে। এমনটাই জানিয়েছেন নুর ইসলাম, হান্নান, আনিসসহ আরও কয়েকজন। পাশাপাশি বরফ কলগুলোও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ মাছই ৭০০, ৮০০ ও ৯০০ গ্রাম ওজনের।
এখান থেকে মাছগুলো প্যাকেট হয়ে আবার বিভিন্ন স্থানে- ঢাকার কাওরানবাজার, আজমপুর, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা; গাজীপুরের টঙ্গী; টাঙ্গাইল; কিশোরগঞ্জ; জামালপুর; ময়মনসিংহ; শ্রীমঙ্গল; সিলেটের বাজারগুলোতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে ট্রাকে। এখন আর রেলে এসব মাছ পাঠানো হয় না।
প্রতি কেজি ইলিশ ১৫০০ পাইকারি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ মাছ আবার শহরের বাজারে খুচরা ১ হাজারর ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ওদিকে পদ্মার ইলিশ এখনো কম ধরা পড়ছে। ভরা মৌসুমেও প্রতিদিন প্রায় ৪০ মণও পাওয়া যায় না বলে উল্লেখ করেন জেলে ও বিক্রেতারা।
আরও পড়ুন: ইলিশ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে রবিবার মধ্যরাতে
বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতায় নাজেহাল রাজধানীবাসী
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের। বর্ষা মৌসুম এলেই প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। টানা ২/১ ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট।
রাজধানীর নিচু এলাকায় পানি জমে যায়। এতে বেশ বিপাকে পড়তে হয় কর্মজীবী নগরবাসীকে।
অন্যদিকে, সেসময় পরিবহন সংকট তীব্র হয়ে যায়। কোনোমতে রিকশা বা সিনজি পাওয়া গেলেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে চালকেরা।
এভাবে প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে।
বৃষ্টি হলেই নগরীর অলিগলি ও ছোট পরিসরের রাস্তাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের পথগুলো আবর্জনায় ভরাট থাকায় দ্রুত পানি নামতে পারে না। ফলে প্রতিবারই এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সামান্য বৃষ্টিতে বিশেষ করে মতিঝিল, বাড্ডা, মালিবাগ, রামপুরা, শান্তিনগর, মৌচাক, বেইলি রোড, কাকরাইল, গুলিস্তান, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ভাটারা- বসুন্ধরা, খিলক্ষেতসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়।
এ বিষয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বলছে, অন্যান্যবারের তুলনায় এ বছর জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কম হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। এবার রাজধানীতে আর আগের মতো জলাবদ্ধতা থাকবে না।
কিন্তু গত ৯ আগস্টে টানা প্রায় এক ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল। ওইদিন প্রবল বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টির ফলে তলিয়ে গিয়েছিল শাহবাগ, বাংলামোটর, ধানমন্ডি, মগবাজার, মতিঝিল, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, বেইলি রোড, কাকরাইল, রামপুরা, শাহবাগ, ধানমন্ডি, পল্টন, প্রেস ক্লাব, মিরপুর, বসুন্ধরা ও ভাটারাসহ বিভিন্ন এলাকা।
তবে জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি নাকাল হতে হচ্ছে পুরান ঢাকাবাসীকে।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: বিমান সিইও
রামপুরার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, প্রতি বছর বৃষ্টি হলেই রামপুরাসহ আমাদের এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রের বক্তব্যে আমরা প্রায় শুনি রাজধানীতে আগের মতো আর জলাবদ্ধতা হবে না। গত কিছুদিন আগে এক ঘণ্টার বৃষ্টির পর আমাদের এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
তিনি আরও বলেন, বারবার শুনি এবার আর জলাবদ্ধতা হবে না, কিন্তু বর্ষা শুরুর আগেই অল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে সড়ক।
রাজধানীর জুরাইন, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, বনশ্রী ও ভূঁইয়া পাড়া এলাকায় জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা।
ভূঁইয়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন ইউএনবিকে জানান, প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের। অনেক বছর ধরে রাস্তা-ঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। আর বেশি বৃষ্টি হলে পানি নেমে যেতে সময় লাগে আরও বেশি।
বৃষ্টির ফলে প্রগতি সরণির কুড়িল-রামপুরা সড়কের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা যায়।
এই এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদ বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই প্রতি বছর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে কর্মজীবী মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
এ ছাড়া অতিবৃষ্টি হলে এই সড়কে যানবাহনও ধীরগতিতে চলাচল করে। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে পানি জমে থাকায় যানবাহনও কম পাওয়া যায়।
জলাবদ্ধতার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- খালগুলো অবৈধ দখলে থাকা, পানিপ্রবাহ ঠিক না থাকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যকর পরিকল্পনা না থাকা।
তবে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কী করছে জানতে চাইলে মেয়র আতিকুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, আমাদের ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার ড্রেন আছে। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কারের পাশাপাশি সেখানে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। খালগুলো থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। আশা করা যায় এবার জলাবদ্ধতা কিছুটা হলেও কমবে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া আমাদের কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা আছে। জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি জনদুর্ভোগে পড়েন কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার বাসিন্দারা। ওয়াসা থেকে প্রাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থায় এসব জটিলতার অবসান হয়েছে। এছাড়া ২৯টি খাল নিয়ে কাজ করছি। উদ্ধারের পর কিছু খনন, পরিষ্কার, খালপাড় সবুজায়ন, ওয়াক ওয়ে নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি জিআইএস পদ্ধতিতে খালের সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম চালু রেখেছে তার। সেখানে তারা এখন পর্যন্ত ৫২৪টি পিলার স্থাপনের কাজ শেষ করেছে। খালগুলোর নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান আছে। খাল দখলমুক্তের কাজ করছে।
আরও পড়ুন: ডিমের দাম বৃদ্ধির পেছনে বাজার অব্যবস্থাপনা
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ইব্রাহিমপুর, লাউতলা, কল্যাণপুর, রূপনগর, আব্দুল্লাহপুর, সিভিল এভিয়েশন, বাইশটেক ও বাউনিয়া খাল দখলমুক্তের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, উত্তরের মোট ১০৩টি স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পরিবেশ আছে। সেখানে অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। স্থানগুলো চিহ্নিত করে সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া তাৎক্ষণিক কোথাও জলাবদ্ধতা হলে ডিএনসিসির কুইক রেসপন্স টিম এবার কাজ করবে। এ ছাড়াও গত এক বছরে প্রায় ২ লাখ টন বর্জ্য অপসরণ করেছে।
অন্যদিকে, কল্যাণপুর রিটেনশন পন্ড-কে একটি অত্যাধুনিক হাইড্রো ইকোপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে বেদখল হওয়া ৫৩ একর জায়গা উদ্ধারের পর এখন খনন কাজ চলছে। কল্যাণপুর রিটেনশন পন্ড থেকে অপসারণ করা হয়েছে ৩০ লাখ ঘনফুট স্ল্যাজ। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে মগবাজার, মধুবাগ, কারওয়ান বাজার, উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরসহ এয়ারপোর্ট রোড ও বনানী রেলগেট থেকে কাকলী মোড় পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ ও পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কী করছে জানতে চাইলে প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা খালসহ করপোরেশনের আওতাভুক্ত নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করছি। আপনারা জানেন ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা একটা নিয়মিত বিষয়। এ ছাড়া কিছু জায়গাতে রাস্তার নির্মাণকাজ চলমান থাকায় সেখানে কিছু জলাবদ্ধতা হচ্ছে, যা কয়েক দিনে ঠিক হয়ে যাবে।
জলাবদ্ধতা নিরসনের পদক্ষেপের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ইউএনবিকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ইতোমধ্যে এর সুফল নগরবাসী পাওয়া শুরু করেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন, খাল, নর্দমা ও বক্স-কালভার্ট হতে বর্জ্য ও পলি অপসারণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আধুনিকায়ন, আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধার এবং খাল সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টির মতো কার্যক্রমের সুফল নগরবাসী ইতোমধ্যে পাওয়া আরম্ভ করেছে। আশা করা যায় জলাবদ্ধতাবিষয়ক সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। গত তিন বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে কাজ হয়েছে। যার সুফল গত বছর থেকেই নগরবাসী পেতে শুরু করেছে। আগে বৃষ্টির সময় নগরীর ৭০ শতাংশ ডুবে যেত। কিন্তু এখন জলাবদ্ধতা আগের মতো হচ্ছে না।
মেয়র তাপস বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গত তিন বছরে ১৩৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করেছে।
ধানমন্ডি- ২৭, পলাশী মোড়, আজিমপুর মোড়, শান্তিনগর, রাজারবাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল এলাকার নটরডেম কলেজের সামনের অংশ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সামনের রাস্তা, সূত্রাপুর শিল্পাঞ্চল এখন আগে থেকে কম পানি জমে বলে ডিএসসিসি দাবি করেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন শ্যামপুর, মান্ডা, জিরানী ও কালুনগর- এ চার খালের বর্জ্য ও পলি অপসারণ এবং খাল সংস্কার করে নান্দনিক পরিবেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। ৮৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হতে যাওয়া এ চার খালের নকশা, অঙ্কন ও জরিপ কাজ চলছে। একই সঙ্গে এসব খাল থেকে বর্জ্য অপসারণ ও ভূমি উন্নয়নের লক্ষ্যে দরপত্র কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
অন্যদিকে, কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চ্যানেলের বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম চলমান বলে জানায় ডিএসসিসি।
উল্লেখ্য, ঢাকা ওয়াসা দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শাখা-প্রশাখাসহ ১১টি অচল খাল, বর্জ্যে জমাটবদ্ধ পাঁচটি বক্স কালভার্ট ও প্রায় ২০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নর্দমার মালিকানা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছে। দায়িত্বভার গ্রহণের পর এসব খাল, বক্স-কালভার্ট ও নর্দমা থেকে বর্জ্য অপসারণ, সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্ত কার্যক্রম শুরু করে তারা।
এসব খাল, বক্স-কালভার্ট ও নর্দমা থেকে ২০২১ সালে ৮ লাখ ২২ হাজার টন, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টন এবং ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার টন বর্জ্য ও পলি অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের।
আরও পড়ুন: শিগগিরই শেষ হচ্ছে না হাতিরঝিলে চলাচলকারী যাত্রীদের ভোগান্তি
জনপ্রিয় ইউটিউবার এনায়েত চৌধুরী যেভাবে ভিডিওর বিষয় নির্ধারণ করেন
ইউটিউবে যারা ট্রেন্ডিং বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা এবং ধারণা প্রদান করে এমন তথ্যপূর্ণ বিষয়বস্তু খুঁজে থাকেন তাদের কাছে একটি পরিচিত নাম এনায়েত চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) -এর একজন গবেষক ও শিক্ষাবিদ।
বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট (আইডব্লিউএফএম) এর প্রভাষক বর্তমানে ইউটিউবে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার এবং ফেসবুকে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে সফল বাংলাদেশি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হয়ে উঠেছেন তিনি।
সম্প্রতি, এনায়েত চৌধুরীকে ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি) আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। যেখানে তিনি ব্যাখ্যামূলক ভিডিওর বিষয়বস্তু তৈরির উপর একটি বিশেষ তিন দিনের প্রশিক্ষণ সেশন পরিচালনা করেছিলেন। প্রশিক্ষণটি ডিডব্লিউ একাডেমি’র সহায়তায় আয়োজন করা হয়েছিল।
ইউএনবি-র সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে, এনায়েত তার বিষয়বস্তু তৈরির শুরু নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, শ্রোতারা আজকের বিশ্বের প্রধান অনুঘটক এবং তিনি তার প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য প্রধান স্টেকহোল্ডার হিসাবে তার শ্রোতাদেরও মূল্যায়ন করেন।
এনায়েত ইউএনবিকে বলেন, ‘আমি ২০২০ সালের ২৭ ইউটিউব এবং ফেসবুকে আমার কন্টেন্ট তৈরির যাত্রা শুরু করেছি। এরপর ২০২১ সালের ২৭ জুলাইয়ে আমি আমার ইউটিউব চ্যানেলে ১ লাখ ফলোয়ার অর্জনের মাইলফলক ছুঁয়েছি। ২০২০ সালে যখন আমি প্রথম ভিডিও তৈরি করা শুরু করি, তখন বাংলাদেশে ইউটিউবে এত বেশি পরিমাণে এডুটেইনমেন্ট (শিক্ষা + বিনোদন) সামগ্রী ছিল না। আমি বাংলাদেশে এই ধারায় কাজ করেছি, এবং আমি আশা করি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিস্তৃত হতে থাকবে।’
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের মদদপুষ্ট ৩৫ ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করল ভারত
তার ব্যাখ্যাকারী ভিডিও বিষয়গুলোর নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, এনায়েত ব্যাখ্যা করেছিলেন: ‘দর্শকদের চাহিদা চিহ্নিত করা বর্তমান বিষয়বস্তু শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, এবং আমি আমার শ্রোতারা আমার কাছ থেকে কী চায় তা অগ্রাধিকার দিই। আমি প্রায়ই ফেসবুক বা ইউটিউব -এর কমিউনিটি ট্যাবে আলাদা পোস্ট করি, তারা কোন বিষয়গুলোকে বৈশিষ্ট্যযুক্ত করতে চান তা জিজ্ঞাসা করি৷
‘এছাড়াও, আমার বিদ্যমান ভিডিওগুলোর মন্তব্য বিভাগে দর্শকরা প্রায়শই ভবিষ্যতের বিষয়গুলোর বিষয়ে তাদের পরামর্শ প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, বেশিরভাগ দর্শক স্টারলিংকের মতো প্রবণতামূলক বিষয়গুলোতে ব্যাখ্যাকারী ভিডিও চাইতে পারেন বা নিকোলা টেসলার মতো ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে চান; তাই আমি শনাক্ত করি এবং সেই অনুযায়ী ভিডিও তৈরি করি এবং বিষয় নির্বাচন প্রক্রিয়া আমার জন্য এভাবেই কাজ করে।’
এনায়েত চৌধুরীর ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন প্লেলিস্ট এবং সিরিজ রয়েছে, যেমন ‘সিম্পল এক্সপ্ল্যানেশন সিরিজ’ এবং ‘থিঙ্ক অ্যান্টিক্লকওয়াইজ’। এই ভিডিওগুলোর লক্ষ্য জটিল বিষয়গুলোকে সহজ এবং বোধগম্য ধারায় ব্যাখ্যা করা।
প্লেলিস্ট এবং সিরিজ থাকার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে এনায়েত বলেন, ‘আমার চ্যানেলে আমি বই পর্যালোচনা করি এবং ফিল্ড রিপোর্টের মতো ভিডিও তৈরি করি; ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের মতো বিষয় নিয়েও ভিডিও করেছি। আমি মনে করি প্লেলিস্টগুলো বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এবং শিরোনাম সহ সিরিজ আমাকে সেগুলো মনে রাখতে এবং যখনই আমার ভিডিওগুলোর প্রয়োজন হয় তখনি পিছনে গিয়ে দেখতে সাহায্য করে।’
আরও পড়ুন: ইউটিউবের সিইও পদে দেখা যাবে ভারতীয় বংশোদ্ভূত নীল মোহনকে
এগুলো বেশিরভাগই গুরুতর বিষয়, তাই এনায়েত তার ভিডিওগুলোতে একটি সূক্ষ্ম উপায়ে হাস্যরস যোগ করে যা তার বিষয়বস্তুকে বিনোদন দেয়। কখনও কখনও তার ডেস্কটপ ওয়ালপেপারের একটি হলুদ পটভূমিতে আকর্ষণীয় বার্তাসহ আসে। কখনও কখনও রেডডিট মিমি পর্যালোচনা সহ আসে। প্রায় সব সময় তার অনন্য কথা বলার শৈলীর ‘এক্সপ্লেনার নেক্সট ডোর’ পদ্ধতি থাকে।
তার অন্য পরিচয়টি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এবং সবচেয়ে বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। তিনি কীভাবে দুটির মধ্যে অনিবার্য তুলনা পরিচালনা করেন সে বিষয়ে ইউএনবি জানতে চাইলে এনায়েত উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি যখন শিক্ষকতা শুরু করি, তখন আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে আমি কখনই একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হব। আমি ২০১৯ সালে শিখতে শুরু করি এবং ২০২০ সালে আমি ভিডিও তৈরি শুরু করি৷ আমি প্রথমে ভেবেছিলাম অনেক ইউটিউবার এবং টিকটকারের মতো মানুষ আমাকে অবমূল্যায়ন করবে; কিন্তু আসল বিষয়টি হলো- এখন সবাই আমার কাজের গুণমানের প্রশংসা করে এবং উপভোগ করে। আমার সহকর্মীরা এবং সহযোগীরা এখন আমাকে নিয়ে গর্বিত, যা আমাকে আনন্দিত করে।’
আরও পড়ুন: ইউটিউব ভিডিও স্ক্রিপ্ট রাইটিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা
ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: বিমান সিইও
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউল আজিম বলেছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর কাজ নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, ‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর পরিদর্শনের সময় একটি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন, বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং উন্নত করতে হবে এবং বিশ্বমানের হতে হবে। সেই থেকে আমরা কাজ করছি।’
সিইও শফিউল আজিম বলেন, ‘তখন থেকে নতুন যন্ত্রপাতি কিনছি। নতুন করে ১ হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনেছি, পাইপ লাইনে আছে আরও ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার উপকরণ। আমরা জনবলও নিয়োগ দিয়েছি।’
তিনি বলেন, এতেও সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু আমরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে একটি প্রকল্প নিয়েও কাজ করছি, এটি এখনও চলমান।
আরও পড়ুন: অক্টোবরে ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে চালু হবে ১২ বোর্ডিং ব্রিজ: বেবিচক
কী কী থাকছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায়
বয়স্কদের একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতায় আনার উদ্যোগ হিসেবে আজ সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
উদ্বোধন করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম ব্যবস্থায় ১৮ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক যুক্ত হতে পারবেন। ৬০ বছর বয়স থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন। তবে ৫০ বছরের অধিক বয়সীরাও সর্বজনীন পেনশন সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে অন্যদের মতো ৬০ বছর বয়স থেকে নয়, তারা পেনশন সুবিধা পাবেন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধের পর। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প বিল সংসদে পেশ
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, বয়স্ক নাগরিকদের জন্য একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে। প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী—এই চার নামে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা : এসব স্কিমে যুক্ত হয়ে বেসরকারি খাতের কর্মচারী বা প্রবাসীরা তাদের মোট চাঁদার চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩১ গুণ অর্থ পেনশন হিসেবে পাবেন।
প্রথমে নিবন্ধন
যারা সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসতে চান, আগে তাদের নিবন্ধন করতে হবে। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সব নাগরিক তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় যোগ দিতে পারবেন।
যেভাবে চাঁদা দেবেন
ঘরে বসেই পেনশন কর্মসূচির আওতায় চাঁদা দেওয়া যাবে। এ জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশির এনআইডি নেই, তারা বৈধ পাসপোর্টের ভিত্তিতে ব্যাংকিং চ্যানেল অনুমোদিত মোবাইল আর্থিক পরিষেবা এবং এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিয়ে কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারবেন। নিবন্ধনের পর একটি নম্বর পাওয়া যাবে, যা দিয়ে সব সময় চাঁদা পরিশোধসহ সব কাজ করা যাবে। গ্রামীণ পর্যায়ে নিবন্ধন করতে সহযোগিতা করবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় নগদ টাকায় কোনো লেনদেন হবে না। সব কাজ হবে অনলাইনে। সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলবে। অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে তার নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে মাসিক চাঁদা দিতে হবে। প্রবাসীরা বিদেশ থেকে চাঁদা দিতে পারবেন। আর নিবাসীরা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কিংবা নগদ, বিকাশসহ যে কোনো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দাতার মাধ্যমে ওই অ্যাকাউন্টে দিতে পারবেন চাঁদা।
বেসরকারি কর্মীদের জন্য প্রগতি স্কিম
বেসরকারি কর্মচারীরা মাসিক ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে প্রগতি স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মীরা এবং বাকি ৫০ শতাংশ কোম্পানি পরিশোধ করতে পারবে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ না নিলে এর কর্মীরা স্ব-উদ্যোগে এতে অংশ নিতে পারবেন। বেসরকারি কর্মীরা ১৮ বছর বয়সে এ স্কিমে যোগ দিয়ে কোনো ব্যক্তি ৪২ বছরে মাসিক ২ হাজার টাকা চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স থেকে তিনি মাসে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা পেনশন পাবেন। একই মেয়াদে ৩ হাজার টাকা মাসিক চাঁদায় ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা মাসিক পেনশন পাবেন। ৫ হাজার টাকা মাসিক চাঁদায় ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা মাসিক পেনশন আজীবনের জন্য পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এ স্কিমে ৪২ বছর ধরে ৫ হাজার টাকা করে মাসিক চাঁদা দেওয়া হলে ন্যূনতম ৭৫ বছর পর্যন্ত সময়ে পেনশন হিসাবে মোট পাওয়া যাবে ৩ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ টাকা, যা মোট চাঁদার প্রায় ১২ দশমিক ৩১ গুণ। তবে এ স্কিমে ১০ বছরে ধরে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা করে দিলে ৬০ বছর বয়সের পর প্রতি মাসে পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৬০ টাকা। এ ক্ষেত্রেও মোট চাঁদার তুলনায় ২ দশমিক ৩০ গুণ বেশি পেনশন পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে
অনানুষ্ঠানিক খাতের জন্য ‘সুরক্ষা’
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’ নামে স্কিম থাকছে। কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এ স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা। সুরক্ষা স্কিমে ৪২ বছর ধরে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়ে ৬০ বছর বয়স থেকে মাসে ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা করে পেনশন পাওয়া যাবে। একই মেয়াদে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকার পেনশন পাওয়া যাবে। প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিলে আজীবন মাসিক ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা এবং প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিলে আজীবন মাসিক ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে পেনশন পাবেন।
অতি দরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’
সমতা স্কিমে চাঁদার পরিমাণ মাসে ১ হাজার টাকা। এর মধ্যে গ্রাহক প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দেবেন। বাকি ৫০০ টাকা সরকার পরিশোধ করবে। খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী অতিদরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হবে। এ স্কিমের আওতায় ১৮ বছর বয়সে অন্তর্ভুক্ত হয়ে মাসে ৫০০ টাকা চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা পেনশন পাওয়া যাবে। আর ৫০ বা তদূর্ধ্ব বয়সীরা অন্তত ১০ বছর ধরে মাসে ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ১ হাজার ৫৩০ টাকা করে পেনশন পাবেন।
প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস’
প্রবাসীদের জন্য প্রবাস স্কিমে মাসিক চাঁদা ধরা হয়েছে ৫ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার এবং ১০ হাজার টাকা। বিদেশ থেকে এ স্কিমে যোগদানের পর ৬০ বছর বয়সের আগেই কেউ দেশে ফিরলে তারা দেশীয় মুদ্রায় চাঁদা পরিশোধ করতে পারবেন অথবা স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। পেনশন স্কিমের মেয়াদ শেষে স্থানীয় মুদ্রায় পেনশন দেওয়া হবে। একজন প্রবাসী ১৮ বছর বয়সে এ স্কিমে যুক্ত হয়ে ৪২ বছর ধরে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স পর তিনি সরকারি তহবিলে মোট ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকার চাঁদা দেবেন। এর পর ৬০ বছর থেকে ন্যূনতম ৭৫ বছর পর্যন্ত মাসিক ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা করে পাবেন। ফলে তার মোট পাওয়া পেনশনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬ কোটি ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৯০০ টাকা, যা মোট চাঁদার প্রায় ১২ দশমিক ৩১ গুণ। একই স্কিমে যোগ দিয়ে কেউ ৪২ বছর ধরে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিলে তিনি ৬০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা পেনশন পাবেন। আবার একই মেয়াদে প্রতি মাসে সাড়ে ৭ হাজার টাকা চাঁদা দিলে প্রবাসীরা মাসিক ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯১ টাকা করে আজীবন পেনশন পাবেন। তবে যদি কেউ এই স্কিমের আওতায় সর্বনিম্ন ১০ বছর ধরে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দেন, তাহলে তিনি মোট জমা দেবেন ৬ লাখ টাকা। বিনিময়ে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে তিনি প্রতি মাসে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা করে মোট ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ১৮০ টাকার পেনশন পাবেন। এ ক্ষেত্রে মোট চাঁদার তুলনায় ২ দশমিক ৩০ গুণ বেশি পেনশন পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, উদ্বোধনের দিনেই অনলাইনে পেনশন কর্মসূচিতে চাঁদা দিয়ে অন্তর্ভুক্তি প্রদর্শনের আয়োজন করতে আট জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে তাঁদের মডেল পেনশনার প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে– গোপালগঞ্জ, সিলেট, রংপুর, পাবনা, বাগেরহাট, ময়মনসিংহ, রাঙামাটি ও বরগুনা। পেনশন কর্তৃপক্ষ একই ধরনের চিঠি দিয়েছে কুয়ালালামপুর ও জেদ্দায় থাকা বাংলাদেশ মিশনে।
এসব জেলা ও দূতাবাসের মাধ্যমে নির্বাচিত মডেল পেনশনারদের দিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তির জন্য অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। আর এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার। একই সঙ্গে উদ্বোধনের দিন থেকেই দেশে ও দেশের বাইরে সব বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়।
আরও পড়ুন: সবার জীবনকে অর্থবহ করতে চাই: প্রধানমন্ত্রী
ডিমের দাম বৃদ্ধির পেছনে বাজার অব্যবস্থাপনা
গত এক দশকে ডিমের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বাড়লেও বাজার তদারকি এবং সরবরাহের চ্যালেঞ্জের কারণে ডিমের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে গ্রাহকেরা প্রতি ডজন ডিমের জন্য প্রায় এক কেজি ব্রয়লার মুরগি কেনার সমান টাকা খরচ করছে।
এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। দেশি মুরগির ডিম কোথাও কোথাও প্রতি ডজন ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম বা ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়; সাদা ডিম ১৫০-১৬০; দেশি ডিম ২২০-২৩০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মহল্লার দোকানগুলোয় প্রতি পিস ডিম ১৫ থেকে ১৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বারিধারা নতুনবাজার মালিক সমিতির সভাপতি আলম ইউএনবিকে বলেন, আমি মনে করি বাজার অব্যবস্থাপনার কারণেই ডিমের দাম বার বার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিতে সরবরাহের অব্যবস্থাপনা ও বাজারে তদারকির অভাব রয়েছে। সময়ে সময়ে কোনো একটি পণ্যের দাম হুট করে বাড়লে তার কারণ চিহ্নিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রয়োজনে ডিম আমদানি করা হবে: মন্ত্রী
তিনি বলেন, লোক দেখানো বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা বাদ দিয়ে বাজারে হুট করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে দেওয়া বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। না হলে ডিমের দাম যে হারে বাড়ছে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
গুলশান কাঁচা বাজারে ডিম ক্রেতা নাদিম ইউএনবিকে বলেন, বাজার মনিটরিং ব্যবস্পনায় দুর্বলতা রয়েছে, ফলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত হুট করে দাম বাড়াচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি ডিমের উৎপাদন খরচ কত আর ব্যবসা করবে কতটা টাকা, এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তদারকি না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
ডিম ও মুরগি উৎপাদনকারী প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার ইউএনবিকে বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় অবশ্যই সমন্বয় থাকতে হবে। তদারকি জোরদার করতে হবে। উৎপাদন খরচের সঙ্গে ডিম-মুরগির দাম যৌক্তিক হারে সমন্বয় হতে হবে। তাহলে খামারিরা উৎপাদন বন্ধ করবেন না। তাতে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।
তিনি আরও বলেন, কোনো চক্র যাতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে না পারে, তা দেখার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। তা না হলে ডিম দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, এক সপ্তাহ আগেও বাজারে ফার্মের ডিমের দাম ছিল প্রতি ডজন ১৪০-১৫০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ডিম উৎপাদক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়। আর ডিমের একটি বড় অংশ আসে সারা দেশের খামারগুলো থেকে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে গত ১০ অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ১৭ কোটি, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩৩৮ কোটি।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিমের হালি ছিল ৩৪ টাকা। বর্তমানে বাজারের ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৫৫-৬০ টাকা।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সার্ভে অনুযায়ী, একটি ডিম উৎপাদনে সাড়ে ১০ টাকার ওপর খরচ পড়ে। তারপর অন্যান্য ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে কিছু লাভের বিষয় থাকে। আমার কাছে মনে হয়েছে, একটি ডিমের দাম ১২ টাকার বেশি নির্ধারিত হওয়া উচিত না। এই ১২ টাকা নির্ধারিত হলে যারা উৎপাদনকারী তাদেরও লাভ হবে। এর বাইরে কেউ অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করলে ভোক্তা অধিকার আইনের আওতায় যারা কর্তৃপক্ষ, তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উৎপাদনকারীদের বিভিন্নভাবে অনুরোধ করেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এরপরেও যদি কেউ জনদুর্ভোগ ডেকে আনে, তা দেখভাল করার জন্য ভোক্তা অধিকার আইন আছে। ভোক্তাদের অধিকার দেখার জন্য কর্তৃপক্ষ আছে। তারা প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবেন।’
আরও পড়ুন: ডিম এখন আর সাশ্রয়ী প্রোটিনের উৎস নয়
মন্ত্রণালয় দাম নির্ধারণ করে দেবে কিনা- এ বিষয়ে রেজাউল করিম বলেন, এটা দাম নির্ধারণ করার বিষয় না। এরআগে ২০১০ সালে ছোট বাচ্চা মুরগি ও অন্যান্য বিষয়ের দাম নির্ধারণের বিষয় উঠেছিল। সেক্ষেত্রে আদালত প্রশ্ন তুলেছিলেন, মন্ত্রণালয় এভাবে দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে না।
রবিবার (১৪ আগস্ট) সকালে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাইলেই ডিম আমদানি করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইমপোর্ট পারমিশন লাগবে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া ডিম আমদানির সুযোগ নেই। আমি আশা করবো শিগগিরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গ্রিন সিগন্যাল দিলেই ডিম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘ডিম আমদানি করা না করার বিষয়টি আমরা অন্যভাবে বিবেচনা করবো। এই বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইন্ডিপেন্ডেন্টলি বিবেচনা করবে কি করবে না এটা তাদের বিষয়। আমার কাছে মনে হয়েছে দেশে যে উৎপাদন আছে, আমরা যদি বাজার ব্যবস্থা বিন্যাস করতে পারি তবে আমদানির কোনো প্রয়োজন হবে না।’
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাজারে ডিমের দাম কত হবে তা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে দিলে আমাদের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ডিমের বাজার হঠাৎ অস্থিতিশীল হওয়ায় ভোক্তা অধিকার রাতে-দিনে রাজধানীর বিভিন্ন আড়তে অভিযান চালাচ্ছে এবং জরিমানা করছে।’
আরও পড়ুন: ডিমের ডজনে বাড়ল ৩০-৩৫ টাকা
শাস্তি এড়াতে বিদেশের আইনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিরা
বিদেশে আশ্রয় নেওয়া বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের চেষ্টা এখনো সফল হয়নি। এদের মধ্যে দুইজন তাদের অপরাধের শাস্তি এড়াতে সেইসব দেশের আইনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে চলেছেন।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অন্যতম আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে।
আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয় ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল। ফাঁসির আগ পর্যন্ত দীর্ঘদিন বিদেশে লুকিয়ে ছিলেন তিনি। এর আগে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসি কার্যকর হওয়া অন্য ৫ জন হলেন- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মহিউদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ১৪ বছর আগে ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
পলাতক ৫ খুনি হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খান। এদের মধ্যে নূর চৌধুরী ও রাশেদ চৌধুরী কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।
বিভিন্ন অজুহাতে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাংলাদেশে হস্তান্তর না করে আশ্রয় দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সমালোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি দেশ দু’টির জন্য লজ্জার এবং আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।’
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের তথ্য দিলে পুরস্কার দেবে সরকার: মোমেন
মোমেন বলেন, ‘সব খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করা হলে সরকার খুব খুশি হবে। কিন্তু আমরা এখনো তা করতে পারিনি। আমরা যদি তা করতে পারি, তাহলে বড় অর্জন হিসেবে মনে করব।’
তিনি বলেন, খুনিদের ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সরকারকে অনেক চিঠি দিয়েছে সরকার। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠিও লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের দুই খুনির বাসভবনের সামনে নিয়মিত বিক্ষোভ করার আহ্বান জানান মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের সম্পর্কে যারা তথ্য দিতে পারবে সরকার তাদের পুরস্কৃত করবে।
যারা ২১ বছর ধরে খুনিদের ব্যাপারে নীরব এবং খুনিদের পেছনে যারা ছিল তাদের মুখোশ উন্মোচন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা যদি তথ্য দিতে পারেন তবে আপনাদের পুরস্কৃত করা হবে। এই সমস্ত লোকদের মুখোশ খুলে দিতে হবে।’
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের আইনের শাসন অত্যন্ত শক্তিশালী উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের খুনিদের আশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ছায়াকেও ভয় পেতেন খুনিরা: তথ্যমন্ত্রী
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে এই আত্মস্বীকৃত খুনিরা তাদের অপরাধের শাস্তি এড়াতে দেশগুলোর (কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র) আইনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। কোনো দেশই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সমাধানে আগ্রহ দেখায়নি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের এই দাবির বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওইসব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস অথবা হাইকমিশনের মাধ্যমে এই আত্মস্বীকৃত খুনিদের সরাসরি দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছে।
সাবরিন বলেন, সমস্ত উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বাংলাদেশ সরকার এই ন্যায়সঙ্গত দাবি উত্থাপন করেছে এবং মনে করিয়ে দিয়েছে- যদি অপরাধীদের সাজা থেকে ছাড় দেওয়া হয়, তবে এটি কেবল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করে না, বরং ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি ও পরিবারের মানবাধিকারকে মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী হারজিৎ এস সজ্জনের সাম্প্রতিক বৈঠক, ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং বাংলাদেশ সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে খুনিদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে দিতে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ নেই
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, বিষয়টি তাদের বিচার বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত এবং এর সঙ্গে যুক্ত আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতার কথা উল্লেখ করে জানানো হয়, তাদের বিচার বিভাগ বাংলাদেশের দাবি সম্পর্কে অবগত রয়েছে।
কানাডা বলছে, তারা স্বাধীন বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করে না। তবে, বিষয়টি (নূর চৌধুরীর নির্বাসন ইস্যু) সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য যথাযথ স্থানেই রয়েছে।
কিছুদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং আত্মস্বীকৃত খুনিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে হস্তান্তরের বিষয়ে দেশটির মতামত জানতে চান।
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘বিদেশি পলাতক অপরাধীদের সমর্পণের বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করি না।’
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করা হবে। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার পরিবারের ১৮ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুন: এটা তাদের জন্য লজ্জার: বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
শিগগিরই শেষ হচ্ছে না হাতিরঝিলে চলাচলকারী যাত্রীদের ভোগান্তি
ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতের তারের কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে চরম ভোগান্তির শিকার হাতিরঝিলের দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী যাত্রীরা। এদিকে এ বিপত্তি থেকে মুক্তি পেতে যাত্রীদের আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এক দিকে খোঁড়াখুঁড়ি, অপরদিকে বর্ষা- নগরীর যাত্রীদের দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মূলত হাতিরঝিল সড়ক ব্যবহার করে যেসব যাত্রী দ্রুত গুলশান বা রামপুরা থেকে মগবাজারে পৌঁছাতে চান তাদেরই এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাগুলো কর্দমাক্ত হয়ে গেছে এবং প্রায়ই যানবাহন গর্তে আটকে যাচ্ছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) তাদের ওভারহেড তারগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য এলাকার রাস্তা খননের মাধ্যমে উচ্চ ভোল্টেজের ভুগর্ভস্থ তারগুলো স্থাপন করছে।
ডিপিডিসির মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাতিরঝিলের ওভারহেড ট্রান্সমিশন লাইনগুলো মাটির নিচে চলে যাচ্ছে।
পিজিসিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিপিডিসির তার স্থাপনের কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে। তবে পিজিসিবির কাজ এখনও চলছে। আর এটি সম্পূর্ণ হতে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: ধোলাইখাল জলাধারের পরিবেশ হাতিরঝিলের চাইতে সুন্দর ও নান্দনিক হবে: মেয়র তাপস