বিশেষ সংবাদ
বাংলাদেশকে নতুন রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে ভাবছে চীনা কফি উৎপাদনকারীরা
চীনের কফি উৎপাদনকারীরা তাদের পণ্য ও কফি বিন রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে নতুন গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করছে।
সম্প্রতি চীনের ইউনান প্রদেশের পুয়েরের সিমাও জেলায় একদল বাংলাদেশি সাংবাদিক তার কফি বাগান ও উৎপাদন ইউনিট পরিদর্শনকালে বেইগুই কফি কোম্পানির ব্যবস্থাপক ডেং জিয়ালু বলেন, ‘আমরা চীনে সেরা কফি উৎপাদন করছি এবং এগুলো বাংলাদেশে রপ্তানি করতে আগ্রহী।’
বেইগুই কফি কোম্পানি চীনের অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের উৎপাদক। ৪০০ হেক্টর জমিতে তাদের বেশ কয়েকটি কফি বাগান রয়েছে, যা সিমাও জেলার কফি রোপণ এলাকার ২ দশমিক ৮ শতাংশ। তারা বার্ষিক ৭২০০ টনেরও বেশি তাজা কফি ফল উৎপাদন করে, যা তাজা কফির বার্ষিক উৎপাদনের ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
ডেং জানান, নেসলে ও স্টারবাকসের মতো অনেক আন্তর্জাতিক কফি ব্র্যান্ড তার কোম্পানি থেকে কফি বিন আমদানি করছে সারা বিশ্বে সরবরাহ করার জন্য।
তিনি বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় নতুন গন্তব্য খুঁজছি। বাংলাদেশ আমাদের পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে, কারণ কফির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।’
বৈশ্বিক বাণিজ্যের অনলাইন ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন প্ল্যাটফর্ম অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি (ওইসি) অনুসারে, ২০২১ সালে বাংলাদেশ ১ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ডলার কফি আমদানি করেছে, যার মধ্যদিয়ে দেশটি বিশ্বের ১৩৬তম বৃহত্তম কফি আমদানিকারক হয়ে উঠেছে। একই বছরে, কফি ছিল বাংলাদেশে ৭৯২তম আমদানিকৃত পণ্য।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের একটি জাতীয় হাইড্রোজেন কৌশল প্রয়োজন: অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী ড. নওশাদ
বাংলাদেশ মূলত: সিঙ্গাপুর (৬৫০ হাজার ডলার), সংযুক্ত আরব আমিরাত (৫৫ হাজার ডলার), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৮৮ দশমিক ৭ হাজার ডলার), নেদারল্যান্ডস (৪৬ দশমিক ৯হাজার ডলার), এবং অস্ট্রেলিয়া (৪৩ দশমিক ৫হাজার ডলার) থেকে কফি আমদানি করে।
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিস্তার মতে, ২০২১-২২ কফি শস্য বছরের জুন পর্যন্ত চীন প্রায় ২ মিলিয়ন ৬০ কিলোগ্রাম ব্যাগ কফি উৎপাদন করেছে, যা আগের বছরে ছিল ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন। চীনে উৎপাদিত কফির বেশিরভাগই ইউনান প্রদেশ থেকে আসে।
কাঁচা মরিচের ঝাঁজে পুড়ছে বরিশাল
টানা বর্ষণে নষ্ট হওয়া ও ঈদের ছুটিতে সরবরাহ বন্ধের কারণ দেখিয়ে ৫০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বরিশালে।
চাহিদার চেয়ে মরিচের যোগান কম থাকায় অতি মুনাফা লোভীরা এই দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
আরও পড়ুন: জেনে নিন কাঁচা মরিচের যত গুণ
নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে মরিচ না থাকার কারণে বেশি দামে কিনে কম লাভে বিক্রি করছেন।
শুক্রবার নগরীর একাধিক ফুটপাতের সবজির দোকান ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সবজির বাজারে চলমান আগুনে উত্তাপ বাড়িয়েছে কাঁচা মরিচ। বুধবার যে মরিচ বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকা কেজি, সেই মরিচ একদিন পরই ছয়শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতাদের দাবি, ১৫ দিন আগেও এই মরিচের কেজি ছিল মাত্র ৫০ টাকা।
বর্তমানে ঈদ চলমান হওয়ায় পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকায় মরিচ না আসা ও বৃষ্টির কারণে পঁচে যাওয়ায় মরিচের দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
নগরীর কাউনিয়ার বাসিন্দা ক্রেতা মোতাহার উদ্দিন জানান, বেতন পাই ৯ হাজার টাকা আর কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ টাকা। দাম শুনে কাঁচা মরিচ না কিনে শুকনা মরিচ কিনে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অন্যান্য সবজির দামও ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
তিনি আরও বলেন যে এর মধ্যে নানান অজুহাতে কাঁচা মরিচেরও দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। নিয়মিত বাজার মনিটরিং থাকলে লাফিয়ে দাম বৃদ্ধি হতো না।
কলেজছাত্র আরাফাত জানান, মেসে রান্না করে খাই। সবজি কিনতে এসে দেখি টমেটোর কেজি ২৫০ আর কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ টাকা। তাই কাঁচা মরিচ না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়িয়েছেন।
তিনি আরও বলেন যে ১৫ দিন আগে এই কাঁচা মরিচ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। একদিন আগেও ছিল ৫০০ টাকা, সেই কাঁচা মরিচ এক দিনের ব্যবধানে ৬০০ টাকা হয়ে গেছে।
বরিশাল নগরীর জেলখানার মোড় এলাকার সবজি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রহমত বলেন, বাজারে কাঁচা মরিচ নেই। যে কয় কেজি ওঠে তার দামও অনেক বেশি। ৫০০ টাকায় এক কেজি পাইকারি মরিচ কিনে এনেছি। ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রির জন্য দাম চাইছি, কেউ কিনছে না।
তিনি আরও বলেন, দাম শুনে চলে যাচ্ছে। মরিচের দাম বেশি তা প্রমাণ করার জন্য ভাউচার দেখালেও ক্রেতারা বিশ্বাস করছেন না। মরিচ কিনেও বিপদে পরেছি।
আরেক সবজি বিক্রেতা কামাল উদ্দিন বলেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে মরিচ নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ঈদ চলছে। তাই বাজারে কাঁচা মরিচ আসছে না। আমরা সামান্য লাভ করি। বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করি। আমাদের কিছু করার নেই।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, বৃর্ষ্টিতে কাঁচা মরিচ পঁচে গিয়েছে। এছাড়া বন্ধের কারণে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সবজি আসছে না। আমাদের নিয়মিত কর্মসূচির আওতায় বাজার মনিটরিং চলছে।
আরও পড়ুন: হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু
দাম বৃদ্ধির কারণে দেশে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি
সিলেটের কানাইঘাটে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ শতাধিক গরুর মৃত্যু
সিলেটের কানাইঘাটে লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি) নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিন শতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে। আরও শত শত গরু আক্রান্ত হচ্ছে। এতে গরুর মালিক ও খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার সব জায়গায় গরুর ভাইরাসজনিত রোগ ছড়িয়ে পড়ায় আসন্ন কোরবানির ঈদে এর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
জানা গেছে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসার উদ্দেশ্যে খামারে যারা গরু লালন-পালন করছেন তাদের খামারের গরুই বেশিরভাগ ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কোরবানির ঈদে কিশোরগঞ্জের দম্পতির উপহার হিসেবে গরু গ্রহণ করলেন প্রধানমন্ত্রী
ভাইরাসজনিত রোগ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এখন পর্যন্ত উপজেলার পশুর হাটগুলো জমে উঠেনি। সুস্থ গরু কোরবানি দিতে পারবেন কি না এ নিয়েও অনেকে শঙ্কায় রয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি) নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক গরু মারা গেছে। এতে করে খামারিরা ও যারা বাড়িতে গরু লালন-পালন করে থাকেন তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
দিন দিন লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে গরুর দেহে। আক্রান্ত হচ্ছে শত শত গরু। কিছু এলাকায় মারাত্মক আক্রান্ত অসুস্থ গরু জবাই করে নদীতেও ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলার লক্ষীপ্রাসাদ পশ্চিম, লক্ষীপ্রাসাদ পূর্ব, দিঘীরপাড় পূর্ব, সাতবাঁক, পৌরসভা এলাকায় ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বেশি বলে গরুর মালিকরা জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে জনবল কম থাকার কারণে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও কর্মচারীরা। অনেকে জানিয়েছেন, প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গিয়ে পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন না তারা।
গরুর মালিক ও খামারিরা জানান, প্রায় আড়াই মাস আগে থেকে গরুর শরীরে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। গরুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বসন্তের মতো বড় বড় গুটি বের হয়, গরুর পুরো শরীরের ফুলে যায়, একপর্যায়ে পঁচন ধরে গরুর চামড়ায় লালচে গর্ত দেখা দেয়, চামড়া খসে পড়ে।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে গরু ও মহিষের ১০ গাড়িতে করে বরযাত্রা!
আক্রান্ত গরুগুলো খাবার খেতে পারে না, গলা ফুলে জিহ্বা থেকে লালা পড়ে এবং ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে বেশিরভাগ আক্রান্ত গরু মারা যায়। চিকিৎসা করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গরু সুস্থ হতে কয়েকমাস সময় লাগে। অনেকে সনাতন পদ্ধতিতে চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবার মাধ্যমে আক্রান্ত গরু সুস্থ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. নবনীতা সরকার তন্বী বলেন, ‘ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন রোগে (এলএসডি) আক্রান্ত হচ্ছে বেশিরভাগ গরু, যার কোনো চিকিৎসার সঠিক ওষুধ বা টিকা নেই। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের পক্ষ থেকে গরুর মালিক ও খামারিদের সচেতন করার জন্য উপজেলা জুড়ে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রামে গিয়ে গরুর মালিক ও খামারিদের সঙ্গে সচেতনতামূলক সভাও করা হয়েছে। জনবল কম থাকার পরও আক্রান্ত গরুগুলোকে সুস্থ করার জন্য যেসব ওষুধ হাসপাতালে রয়েছে সেগুলো দিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
ডা. নবনীতা সরকার বলেন, অসুস্থ গরুগুলো সুস্থ হতে অন্তত তিন থেকে থেকে চার মাস সময় লাগে। এ অবস্থায় গরুর মালিকদের ধৈর্য ধরার পাশাপাশি সঠিক সেবা করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘সচেতনতার অভাবে ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গরু নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। অসুস্থ গরুগুলো সুস্থ গরু থেকে আলাদা করে মশারি দিয়ে রাখার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ মশা-মাছি থেকে আক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গরুগুলো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।’
আরও পড়ুন: পাবনায় বজ্রপাতে ১৪ গরুসহ প্রাণ গেল কৃষকের
ঠাকুরগাঁওয়ে বোরোর বাম্পার ফলন, দামে খুশি কৃষক
কৃষিতে স্বনির্ভর দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়ায় প্রতিকূলতার কারণে গত মৌসুমে বোরোতে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হয়েছিল কৃষকদের।
এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো এবং গত মৌসুমের তুলনায় এই মৌসুমে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি জেলার কৃষকেরা।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে রোপা আমনের বাম্পার ফলন
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তেমন বড় কোনো ঝড়-বৃষ্টি ও দুর্যোগ না হওয়ায় ধানের ফলনের গতবছরের তুলনায় এবার একরপ্রতি ৫-১০ মণ করে ফলন বেশি হয়েছে।
কারও কারও বিঘায় ৬০-৬৫ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। আর বর্তমানে ৮০ কেজির এক বস্তা কাঁচা ধান ১৮শ’ থেকে প্রায় ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হচ্ছে।
এক বিঘা জমিতে তাদের খরচ হয়েছে ২০-২২ হাজার টাকা, আর বিক্রি করছেন ৪৫ থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তাই এবার তারা ফলন ও দামে সন্তুষ্ট।
মাঠেই ধান মাড়াই করে আবার মাঠেই ধান বিক্রয় করছিলেন সদর উপজেলার রহিমানপুর দাসপাড়া গ্রামের কৃষক গোবিন্দ রায়।
তিনি বলেন, এবার আমাদের ৫০ শতকের এক বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ৫০ মণ করে। আর প্রতি মণ ধান বিক্রয় করলাম ৯২৫ টাকা করে। তাতে এক বিঘা জমির ধানের মূল্য পেয়েছি ৪৬ হাজার টাকার ওপরে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের বাম্পার ফলন
খোলা পানি বিক্রির দোকানে দীর্ঘ লাইন
খুলনা জেলার দাকোপে শুষ্ক মওসুমের শুরু থেকেই সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বিশুদ্ধ খোলা পানি বিক্রির দোকানেও পড়ছে দীর্ঘ লাইন। কিছু লোক আবার দূর-দূরান্ত থেকেও সংগ্রহ করছেন এই পানি। বাধ্য হয়েও কেউ কেউ ডোবা-নালার পানি খেয়ে ডায়রিয়াসহ পানি বাহিত নানা রোগে ভুগছেন।
সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা এই উপজেলা ৩টি পৃথক দ্বীপের সমন্বয় গঠিত। এর চারপাশে নদীতে লবণ পানির প্রচণ্ড চাপ থাকায় খরা মওসুমে সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দেয়। প্রতি বছরের মতো এবারও একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের সর্বত্রই সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
বর্তমানে দুই লাখেরও বেশি মানুষ সুপেয় পানির জন্য হা-হুতাশ করছেন। এমনকি চায়ের দোকান, খাবার হোটেল, মিষ্টির দোকানে খরিদ্দারকে বিশুদ্ধ পানি দিতে না পেরে দোকানদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
আবার চলতি রবি মওসুমে এ অঞ্চলের প্রধান ফসল তরমুজ, বোরো ক্ষেতেও সেচ দিতে না পারায় গাছ মরাসহ ফল ভালো বড় না হওয়ার কারণে অনেক কৃষকের লোকসান হয়েছে। এখানে কোথাও গভীর নলকুপ সফল না হওয়ায় রয়েছে অগভীর নলকুপ যেগুলোর অধিকাংশই অকেজো। আবার কোন কোন নলকুপের পানিতে লবণ, আর্সেনিক এবং অতিরিক্ত আয়রনযুক্ত।
আরও পড়ুন: নিরাপদ খাবার পানি: দ. এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান ৫ম, বিশ্বে ১২৮তম
এছাড়া এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃস্টির পানিও নেই। যে কারণে এলাকার মানুষের খাবার পানির একমাত্র ব্যবস্থা পুকুরের পানি ফিল্টার করে খাওয়া। কিন্তু অপ্রতুল পুকুরগুলোতে পানি স্বল্পতার কারণে প্রায় সকল ফিল্টার বা পিএসএফগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। এলাকার কতিপয় স্বচ্ছল ব্যক্তিরা বটিয়াঘাটা, খুলনাসহ বাহিরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি কিনে জীবন ধারণ করছেন। আর মধ্যবিত্ত এবং নিন্ম আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে যে পুকুরে পানি আছে সেখান থেকেই সরাসরি পানি নিয়ে পান করছেন।
বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটের কারণে এই বৃহৎ জনগোষ্টিকে বাধ্য হয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার অনুপযোগী পানি খেয়ে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে। এতে অনেকেই ডায়রিয়াসহ পানি বাহিত নানা রোগে ভুগছেন বলে জানা গেছে।
কালাবগি এলাকার ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিমাই মন্ডলসহ আরও অনেকে জানান, প্রায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ নৌকায় যাওয়া আসা করে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন কৈলাশগঞ্জ এলাকা থেকে অতি কষ্টে বিশুদ্ধ পানি এনে খেতে হচ্ছে। আর যাদের ভাল অবস্থা টাকা পয়সা আছে তারা বাহিরে থেকে পানি কিনে খায়। আবার এলাকার কিছু অসহায় গরিব মানুষ সরাসরি পুকুরের খাবার অনুপযোগী পানি পান করছেন বলে তিনি জানান।
চালনা বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী সমরেশ মন্ডল বলেন, পানি সংকটের কারণে ক্রেতাদের পানি দিতে পারছি না। পুকুরের পানি খাবার অনুপযোগী হওয়ায় তা দিয়ে প্লেট ধোয়া পরিষ্কারের কাজ চলছে আর খরিদ্দারদের এক টাকারও বেশি দামে প্রতি লিটার পানি কিনে খেতে দিতে হচ্ছে। তার মতো চা দোকানদার মিলন মল্লিকও একই অভিমত ব্যক্ত করেন।
চালনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মেহেদী হাসান বুলবুল বলেন, সুপেয় পানি সংকট নিরসনে এ পৌরসভায় পানির প্রকল্পের আওতায় একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের কাজ শেষ হয়েছে। একইসঙ্গে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি পাইপ লাইনের কাজও শেষ হয়েছে। বর্তমানে সেটি পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে আর এই কাজ সম্পন্ন হলেই পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সংকট অনেকটা নিরসন হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে দাকোপ উপজেলা উপ-সহকারি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, বর্তমানে এখানে সুপেয় পানির আধারের মধ্যে ২৬৬৮টি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং (ট্যাংকি), ২৭টি গভীর নলকূপ, ৫০০টি অগভীর নলকূপ সচল রয়েছে। এছাড়া সমগ্রদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের ২৩৪টি, উপকূলীয় জেলা সমুহে বৃষ্টির পানি সরবরাহ প্রকল্পের ৮৩৩টি ট্যাংকি, কমিউনিটি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ২১টি, ১৮টি পন্ড আল্টা ফিল্টার, আরও প্লান্ট ২টি ও ১৫টি ভ্যাসেল টাইপ পিএসএফের কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া কয়েকটি এনজিও কিছু পানির ট্যাংকি ও কয়েকটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট নির্মাণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় রয়েছে অপ্রতুল। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ নিরাপদ সুপেয় পানির জন্য রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং এর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রচণ্ড তাপদাহ এবং খরার কারণে পানির চাহিদা তীব্র থাকে। এ অঞ্চলে তরমুজ চাষের সময়ও ব্যাপক পানির সংকট দেখা দেয়। উক্ত সময়ের জন্য ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পুকুর, দিঘি খনন করা প্রয়োজন। এছাড়াও বিভিন্ন খাল খননের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচ এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, পানি সংকট সমাধানের জন্য এ অঞ্চলে আরও অনেক বেশি রেইন ওয়টার হারভেস্টিং (ট্যাংকি) ও পুকুর খনন করা দরকার। একই সঙ্গে পানির জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণও করতে হবে।
এ ব্যাপারে দাকোপ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খান বলেন, এ উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। সে কারণে উপজেলা পরিষদ থেকে হতদরিদ্র পরিবারের জন্য পানির ট্যাংকি বিতরণ করার জন্য একটা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি যে সকল এলাকায় মোজা পুকুর ও খাল আছে তা পযার্য়ক্রমে খননের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সায়দাবাদ পানি পরিশোধন প্রকল্পের দূষণ প্রতিরোধে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে: মন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গায় আমের দাম নিয়ে হতাশ চাষি ও ব্যবসায়ীরা
চুয়াডাঙ্গায় আনুষ্ঠানিকভাবে আম পাড়ার দুই সপ্তাহ পার হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে দর নিয়ে হতাশ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। সব ধরনের আমের দাম গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। পাইকারি বাজার এমন থাকলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আঁটি, গুটি ও বোম্বাইয়ের পর চুয়াডাঙ্গার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হিমসাগর আমও।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের তৈরি করা ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, গত ১৪ মে থেকে জেলায় আম সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ে এক সপ্তাহ ধরে আঁটি, গুটি ও বোম্বাই আম বেচাকেনা আশানুরূপ ছিল না। আবার এর মধ্যেই দ্বিতীয় পর্যায়ে ২২ মে থেকে হিমসাগর আম সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। বাজারে নতুন আমের আমদানি প্রচুর কিন্তু চাহিদা একেবারেই কম।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সেখানে ২৮ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আর চলতি মৌসুমে এ জেলার দুই হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমির আমের বাগানে আম চাষ হয়েছে। ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে ল্যাংড়া, ৫ জুন আম্রপালি ও বারি-৩, ২১ জুন ফজলি ও ১ জুলাই আশ্বিনা ও বারি-৪ আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করা হবে।
উল্লেখ্য, জেলার আমের সবচেয়ে বড় মোকাম চুয়াডাঙ্গা শহরের মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত বড়বাজার ফলপট্টিতে। প্রতিদিন ভোর থেকেই আম আমদানি ও বেচাকেনা শুরু হয় এখানে। বর্তমানে বাজারে চার ধরনের আম বাজারজাত হচ্ছে, এর মধ্যে বোম্বাই ও হিমসাগর আমের চাহিদাই বেশি। আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য বছরের তুলনায় আমের দাম এবার কম।
ঘূর্ণিঝড় মোখা: বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকায় আতঙ্ক, ৪৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত
ঘূর্ণিঝড় মোখা ধেঁয়ে আসার খবরে বাগেরহাটের উপকূলবর্তী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কখন, কোথায় ঝড় আঘাত হানবে এবং কত উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হবে তা নিয়ে উপকূলের মানুষের ভাবনার শেষ নেই। বিশেষ করে শরণখোলায় বলেশ্বর, মোংলায় পশুর এবং মোড়েলগঞ্জের পানগুছি নদী পাড়ের মানুষ আকাশে মেঘ আর নদীতে পানি বাড়লেই তাদের নির্ঘুম রাত কাটে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারে পাঁচ ফুট পানি বৃদ্ধি পেলে অধিকাংশ এলাকায় বাঁধ উপচে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হতে পারে।
জলোচ্ছ্বাস হলে কয়েক হাজার মৎস্যঘের ডুবে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে যেতে পারে। সব মিলে জেলার উপকূলবাসী আতঙ্কে রয়েছেন।
জেলা প্রশসানের পক্ষ থেকে জেলায় ৪৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এরই মধ্যে জেলায় মোট আবাদের ৯৮ শতাংশ জমির বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে।
বাগেরহাটে জলোচ্ছ্বাসে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদী পাড়ের বাঁধ। প্রচন্ড ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়। মানুষের ঘরবাড়ি, সম্পদ, ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি কি জলোচ্ছ্বাসে মানুষও ভেসে যায়।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোখা: সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত
কমনওয়েলথ লিডার্স ইভেন্টে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে মতবিনিময় প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার বিকালে লন্ডনে কমনওয়েলথ লিডার্স ইভেন্টে যোগ দেন। পালমলে কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের মার্লবোরো হাউসে স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা) অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ডেলিগেট লাউঞ্জে কমনওয়েলথের প্রধান রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি মার্লবোরো হাউসের গার্ডেনে কমনওয়েলথ যৌথ পরিবারের ফটো সেশনে যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনা সেখানে প্রধান সম্মেলন কক্ষে কমনওয়েলথ নেতাদের আলোচনায় যোগ দেবেন, যেখানে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট এবং অফিসে কমনওয়েলথ চেয়ার পল কাগামে সভাপতিত্ব করবেন।
সন্ধ্যায় তিনি বাকিংহাম প্যালেসে রাজা ও রানী কনসোর্টের রাজ্যাভিষেকের উপলক্ষে আসা রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার ও বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন অধ্যাপক পায়ম আখাভান।
আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লন্ডনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
আখাভান আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাসি কলেজের সিনিয়র ফেলো, স্থায়ী সালিশি আদালতের সদস্য এবং প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অফিসের প্রাক্তন আইনি উপদেষ্টা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ মে বাকিংহাম প্যালেসে আয়োজিত যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার ভোররাতে ওয়াশিংটন থেকে যুক্তরাজ্যে সরকারি সফরে লন্ডনে পৌঁছেছেন। অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
৬ মে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে এটি অনুষ্ঠিত হবে, এদিন রাজা রানি কনসোর্টের সঙ্গে মুকুট পরবেন। তিনি ১০৬৬ সাল থেকে সেখানে মুকুট পরা ৪০তম রাজা হবেন।
৫ মে বাকিংহাম প্যালেসে রাজা ও রানি কনসোর্টের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি।
জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৫ দিনের ত্রিদেশীয় সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী আগামী ৯ মে দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সুনাকের সঙ্গে শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে পদ্মা সেতুর চিত্রকর্ম উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী
খুলনাঞ্চলে দফায় দফায় বাড়ছে গো-খাদ্যের দাম
খুলনাঞ্চলে দফায় দফায় গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা। খাদ্যের এ দাম না কমলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের।
আসাদুজ্জামান মঈন কাঠ ফাটা রোদ্রে শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের খেলার মাঠ থেকে ঘাস সংগ্রহ করছেন গরুর খাবারের জন্য। গরমে ঘাম ঝরছে শরীর থেকে, তারপরও ঘাস কাটছেন আর কিছুক্ষণ পর পর কপাল মুছে ঘাম সরিয়ে ফেলছেন।
কথা বলতেই তিনি বললেন, ভাই গো-খাদ্যের দাম বাড়ছে, প্রতি সপ্তাহে বাজারে গেলে শোনা যায় দাম বাড়ছে। এখন আর আগের মতো ফাঁকা মাঠে, বিলে লম্বা ঘাস পাওয়া যায় না।
আরও পড়ুন: গরু কিনে ‘ডিজিটাল পশুর হাট’ উদ্বোধন করলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
চট্টগ্রামে এবার গরু ফ্যাশন শো!
তিনি আরও বলেন, গো-খাদ্যের যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে কারণে বিকল্প খাদ্য হিসেবে ঘাসের সন্ধানে নেমেছি। ঘাস কাটার সময়ে শরীরে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হয়।
আগের মতো এখন ঘাস দেখা যায় না। এই জায়গায় কিছু ঘাস আছে, তবে ছোট ছোট ঘাস যতটুকু পারি গরুর পেটে একটু খাবার যোগান দিতে পারব।
এছাড়া এখন বাজারে ৩৭ কেজির দেশি গমের ভুসি বস্তাপ্রতি এক হাজার ৯০০ থেকে এক হাজার ৯৫০ টাকা, ৫০ কেজির ধানের গুড়া বস্তাপ্রতি ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, ৩৭ কেজির সরিষার খৈল বস্তাপ্রতি এক হাজার ৪৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা, ২৫ কেজির দানাদার ফিড বস্তাপ্রতি এক হাজার ৩৮০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া সয়াবিন খৈলের এক কেজির দাম ৮৫ টাকা, পাশপাশি বিছালি এক মুঠি দাম আট টাকা পরিবহন খরচ বাদে।
খামারি মো. রিয়াদ হোসেন বলেন, আমাদের আগে পাঁচটি গরু ছিল, এখন মাত্র তিনটি গরু আছে। দুটি গরু আসন্ন কুরবানি ঈদে বিক্রি করব। তারপর আর মনে হয় গরুর খামারের ব্যবসা করা হবে না। একটি বড় জাতের সবল পুরুষ গরু প্রতিদিন ২০০ টাকার খাবার খায়।
তিনি আরও বলেন যে নিজেদের পরিশ্রম করাসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এখন খামারিরা খুবই লোকসানে আছে। যেসব খামারিদের দীর্ঘদিন যাবৎ গরুর খামার ছিল, তারাও এখন এই খামারি ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার মতো পর্যায়ে চলে এসেছে।
দুধের ও মাংসের দাম বাড়লেও খামারিরা খুব একটা লাভজনক অবস্থানে নেই। এভাবে চলতে থাকলে, সপ্তাহে সপ্তাহে দাম বাড়লে দেশীয় গরুর খামার এক সময় হারিয়ে যেতে পারে।
এখন আগের মতো গরু চড়ানোর বড় মাঠ আর ঘাস নেই। সব খাবার ক্রয় করে গরুর সামনে দিতে হয়।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরে কর্মকর্তা ডা. অরুণ কান্তি মন্ডল বলেন, গো-খাদ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এখানে সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। মূলত কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব কারসাজি করছে। আর বিপদে পড়ছে গরিব খামারিরা।
তিনি আরও বলেন, আমার জানা মতে ভুট্টার দাম কিছু বেড়েছে, সেই সঙ্গে সয়াবিনের খৈলেরও। আমরা সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খামারিদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি। বর্তমানে এক ধরনের ঘাস আছে যার নাম পাংচুন ঘাস। এই ঘাস দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এক শতাংশ জমিতে বছরে প্রায় দুই হাজার কেজি ঘাস জন্ম হয়। এই ঘাস গরুদের খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। এখন এই ঘাস আড়ংঘাটা শাহাপুর এলাকায় দেখা যায়। আমার পরামর্শ, এই ঘাস চাষ করলে খামারিরা বিকল্প খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। তাতে খরচ অনেক কমাতে পারবে।
আরও পড়ুন: ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে গরুকে আলিঙ্গন করার আবেদন প্রত্যাহার করল ভারত
মেঘনায় গরুবাহী ট্রলারে ডাকাতি, ৩০ লাখ টাকা লুট!
ঘেরে চিংড়ি মারা যাওয়ায় হতাশ খুলনার চাষীরা
দক্ষিণাঞ্চলের আয়ের অন্যতম উৎস সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি চাষ। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের অধিকাংশ মানুষ চিংড়ি চাষের উপর নির্ভরশীল। তবে বিক্রি উপযোগীর পূর্ব মূহুর্তে মারা যাচ্ছে ঘেরের চিংড়ি। উৎপাদন মৌসুমের শুরুতেই পুঁজি হারিয়ে আর্থিক বিপর্যয়ে পড়েছেন চাষিরা। ঋণগ্রস্ত হয়ে ঘের ফেলে রেখে জীবিকার উদ্দেশে অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকে।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা, ঘেরের গভীরতা সংকট, পানির উৎসের সমস্যা, অক্সিজেন স্বল্পতা ও খাদ্য সংকটের পাশাপাশি অতিরিক্ত গরমে চিংড়ি মারা যাচ্ছে।
চিংড়ি চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর উৎপাদনের শুরুতেই অধিকাংশ ঘেরের চিংড়ি মাছ মারা গেছে। মৎস্য কর্মকর্তাদের পরামর্শে বিভিন্ন কিছু ব্যবহার করলেও চিংড়ি মৃত্যু বন্ধ হচ্ছে না। প্রথম দফার পূঁজি হারিয়ে ঋণ করে পরবর্তীতে চুনসহ আনুষঙ্গিক দ্রব্য প্রয়োগ করে পোনা ছাড়লেও ঘেরের পরিবেশ তেমন ভালো অবস্থায় নেই। সেই মাছও মারা যাচ্ছে অনেকের। ঘেরে বিনিয়োগ করা মূলধন হারিয়ে দিশেহারা তারা। এর সঙ্গে রয়েছে ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ পরিশোধের তাড়া। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অনেকে চরম আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়ে জীবিকার উদ্দেশে এলাকা ছাড়ছেন। বিগত কয়েক বছর যাবৎ ৩৫ থেকে ৪৫ দিন বয়সের চিংড়ি মারা যাচ্ছে। বিক্রি উপযোগী হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে বাগদা মারা যাওয়ায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। এতে বিনিয়োগের পাশাপাশি উৎপাদনের সময়ও নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া যে ঘেরে একবার মাছ মারা যায় তার পরিবেশ অনুকূলে থাকে না। ছোট পোনাও মারা যায়। একবার মাছ মরা ধরলে স্বাভাবিক হতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগে।
আরও পড়ুন: রপ্তানিতে সুদিন ফেরাতে পারে ভেনামি চিংড়ি, বাণিজ্যিক চাষ দাবি
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়, মাঘ মাসের শেষের দিকে দক্ষিণাঞ্চলে ঘের প্রস্তুতির পর পোনা ছাড়া শুরু হয়। পানি উত্তোলনে সমস্যার কারণে অনেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝিতে পোনা ছাড়ে। আর এসব পোনা বিক্রির উপযোগী হতে দুই থেকে তিন মাস লাগে। সাধারণত দুই মাস পরে প্রতিটি ১৫-২০ গ্রাম ওজনের হয়। আর তিন মাস পরে ৩০-৩৫ গ্রাম ওজনের হয়। বাগদা মারা যাওয়ার শঙ্কায় বর্তমানে অধিকাংশ চাষি দুই মাসের আগেই মাছ ধরা শুরু করে। প্রথম দফা পোনা ছাড়ার পর থেকে প্রতি মাসে বিঘা প্রতি দুই থেকে তিন হাজার পোনা ছাড়া হয়। আর মাছ ধরা শুরুর পর থেকে প্রতি গোণে কিছু কিছু মাছ ধরা হয়। এভাবে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত বাগদার চাষ করা হয়। ঘেরে ব্যবহার করা হয় চুন, সার, জিওলাইট, চিটাগুড়, অটো পালিস। অধিকাংশ ঘেরের পানির গভীরতা দেড় থেকে দুই ফুট। জৈব নিরাপত্তা নেই আর শ্যাওলায় ভরা। প্রায় ৯৫ শতাংশ ঘেরে এই পদ্ধতিতে বাগদা চাষ করা হয়। এটিকে সনাতন পদ্ধতি বলা হয়।খুলনার কয়রা উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের চিংড়ি চাষি তৈয়েবুর রহমান বলেন, তিন বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করি। পোনা ছাড়ার ৩৭ দিন পর মাছ মরা শুরু করে। আশা করেছিলাম ৫০-৫৫ দিন পর ৬০ থেকে ৭০ পিস এ কেজি হলে বাগদা ধরা (বিক্রি) শুরু করবো।
তিনি আরও বলেন, গত বছর উৎপাদন খরচ তুলতে পারিনি। এ বছর শুরুতেই ক্ষতির মুখে পড়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি।
একই এলাকার চিংড়ি চাষী আব্দুল হাই বলেন, নিজেদের ৫ বিঘা জমিতে বাগদা চাষ করি। সেই আয় দিয়ে সংসার চালাতে হয়। এক মাস ১০ দিন পর মাছ মরা শুরু হয়। ঘেরে ফের পোনা ও চুন-খাবার দেই। সেই ছোট পোনাও বড় বাগদার সাথে মরা পাচ্ছি। ঋণ করে সংসার চালাচ্ছি। বাধ্য হয়ে ঘের ফেলে রেখে বাইরে কাজে যাচ্ছি।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আবু দাউদ জানান, তাদের এলাকার অধিকাংশ ঘেরের চিংড়ি ৩৫ থেকে ৪৫ দিন বয়সে মারা যাচ্ছে। অনেকে ছোট থাকতে বাগদা বিক্রি শুরু করে কোন রকমে পোনা ছাড়ার টাকা তুলতে পেরেছে। তবে কিছু ঘের ভালো রয়েছে।
বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলা মৎস্য চাষী সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল বলেন, বর্তমানে বড় সমস্যা ৩৫ থেকে ৪৫ দিন বয়সের বাগদা মারা যাচ্ছে। এবছর অধিকাংশ ঘেরের প্রথম দফার চিংড়ি দেড় ইঞ্চি সাইজের হওয়ার পরে মারা গেছে। এখন কিছুটা ভালো থাকলেও মরা বন্ধ হয়নি। একবার কোন ঘেরে বাগদা মরা শুরু করলে পাশ্ববর্তী ঘেরগুলোও আক্রান্ত হয়। আর ঘেরের পরিবেশ ঠিক করতে প্রায় দুই থেকে তিন মাস লাগে। তবে দ্বিতীয়বার মারা গেলে চাষির ক্ষতির অন্ত থাকেনা।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় চিংড়ির চাহিদায় রদবদল, জনপ্রিয় হচ্ছে ভেনামি চিংড়ি
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে, খুলনা জেলায় ২০ হাজার ৪৩০ টি বাগদা চাষের ঘের রয়েছে। যার মোট আয়তন ৩২ হাজার ৯৯৮ হেক্টর। সাতক্ষীরা জেলায় ৬৬ হাজার ৫৯৭টি বাগদা চাষের ঘের রয়েছে। যার মোট আয়তন ৭৮ হাজার ২৪০ হেক্টর।
খুলনার কয়রার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুর হক বলেন, সম্প্রতি কোথাও কোথাও ইএমএস (আর্লি মর্টালিটি সিনড্রম) দেখা দিচ্ছে। এর ফলে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে মাছ মারা যায়। ভিব্রিও প্যারাহিমোলাইটিক্যাস ও ভিব্রিও হার্বি নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে এটি দেখা দেয়। এছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেও সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত প্রতিরোধে ঘেরের জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চারপাশে নেট ব্যবহার করতে হবে। সব সময় ৩ থেকে ৫ ফুট পানি ধরে রাখতে অবশ্যই গভীরতা বাড়াতে হবে। এছাড়া ভাইরাসমুক্ত পিসিএফ পোনা ছাড়ার পাশাপাশি গুড এ্যাকোয়া কালচার পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, ঘেরগুলোতে পানির গভীরতা না থাকায় অতিরিক্ত গরমে পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অক্সিজেন ঘাটতি হচ্ছে। এছাড়া ঘেরগুলোর ম্যানেজমেন্ট চিংড়ি চাষের উপযোগী নয়। চিংড়ি চাষীদের করণীয় সম্পর্কে আমাদের পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
তবে ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যাম্পল টেষ্ট করা হয়নি। পরীক্ষা না করে বলা সম্ভব হবে না।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ল্যাবে নমুনা পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত প্রকৃত কারণ বলা যাবে না। তবে অতিরিক্ত গরমে পরিবেশগত সমস্যায় বাগদা মারা যাচ্ছে। এছাড়া রোগেও মারা যেতে পারে। এক্ষেত্রে গভীরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: অবশেষে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দিল সরকার