বিশেষ সংবাদ
হালদা নদীতে বিপন্ন ডলফিন, রক্ষার উদ্যোগ নেই
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদী। বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ নামেও পরিচিত প্রকৃতির বিস্ময়কর সৃষ্টি ‘হালদা নদী’ বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী, যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়।
এই হালদায় বসবাসকারী গাঙ্গেয় ডলফিন (প্লাটানিস্টা গাঙ্গেটিকা) বাংলাদেশের একটি বিপন্ন প্রজাতির স্বাদু পানির স্তন্যপায়ী প্রাণি। হালদা নদীকে ডলফিনের ‘অভয়াশ্রম’ হিসেবেই ধরা হয়। অথচ এই অভয়াশ্রমই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে ডলফিনের জন্য। পাঁচ বছর ধরে এই নদীতে প্রাণ হারাচ্ছে মিঠাপানির অতি বিপন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীটি।
স্থানীয় ভাষায় উতোম কিংবা শুশুক নামে পরিচিত মিঠাপানির এই প্রাণী হচ্ছে গাঙ্গেস বা গাঙ্গেয় ডলফিন। সাধারণত দূষণমুক্ত পরিষ্কার পানিতে গাঙ্গেয় ডলফিনের বিচরণ। কিন্তু মানবসৃষ্ঠ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের প্রভাবে হালদার জলজ পরিবেশ ডলফিনের জন্য ক্রমশ অনিরাপদ হয়ে উঠছে যা পরিবেশ ও হালদা জন্য সামগ্রিক অশনিসংকেত বলে মনে করছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট সাত প্রজাতির ডলফিন পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রধান গাঙ্গেয় ডলফিন। তবে দেশে বিপন্ন প্রাণী হিসেবে আইইউসিএনের লাল তালিকাভুক্ত এটি। স্তন্যপায়ী এই প্রাণীটি সাধারণত দেশীয় মিঠা পানির নদীতে পাওয়া যায়।
হালদা বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকাভূক্ত (অতি বিপন্ন প্রজাতি) জলজ প্রাণী হলো ডলফিন। বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন আছে মাত্র এক হাজার ১০০টি। এর মধ্যে শুধু হালদাতেই ছিল ১৭০টি। গত চার বছরে হালদায় ৩৯টি ডলফিন মারা গেছে। এর মধ্যে চলতি বছরে প্রাপ্ত মৃত ডলফিনের সংখ্যা ৬ টি। এরমধ্যে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে মৃত তিনটি উদ্বার করা হয়েছিল গত জুলাই মাসে।
আরও পড়ুন: ফেনীর অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন বছরের পর বছর ধরে বাক্সবন্দী
সর্বশেষ মৃত ডলফিনটি (৩৯ তম) উদ্ধার করা হয়েছে গত ৩রা নভেম্বর-২০২২। হাটহাজারীর পুরাতন হালদা নদীর দক্ষিণ বাড়িঘোনা উত্তর মসজিদের পাশে খালের ধারে আটকে ছিল। উদ্ধার করা ডলফিনটির শরীরের বিভিন্ন অংশ পচে যাওয়ায় মৃত্যুর কারণ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। একের পর এক এ জলজ প্রাণীর মৃত্যু হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলামের মতে প্রতিনিয়ত হালদা নদী ও এর শাখাখালের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের জাল,বঁড়শি ও বিষ ব্যবহার করে অবৈধভাবে মাছ ধরা হচ্ছে। এসব অবৈধজাল হালদায় ডলফিন মৃত্যুর অন্যতম কারণ। পাশাপাশি ডলফিনের বয়সবৃদ্ধি, খাদ্যের অভাব, দুষণ, পানির গুণাবলি পরিবর্তন ও জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি সম্পৃক্ত। হালদার বাস্ততন্তুকে ডলফিনের নিরাপদ আবাসস্থল করতে প্রশাসনের পাশাপাশি হালদা সম্পৃক্ত সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্র জানা গেছে, নৌযানের প্রপেলার, বালু–পাথর পরিবহনের ইঞ্জিনচালিত নৌকা–বাল্কহেড ও বালু তোলার যন্ত্র ড্রেজারের আঘাত, দূষণ, লবণাক্ততা এবং জালে আটকে ডলফিন মারা যাচ্ছে।
তারা জানায়, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৯টি ডলফিন মারা গেছে।
ফেনীর অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন বছরের পর বছর ধরে বাক্সবন্দী
ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ও ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়া জেলার আর কোনো সরকারি হাসপাতালে এক্স-রে যন্ত্র চালু নেই।
বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে আছে সোনাগাজী, ফুলগাজী, পরশুরাম ও দাগনভূঞা উপজেলায় কোটি টাকার এক্স-রে যন্ত্র।
ফেনীর মহিপালে অবস্থিত ২০ শয্যার ট্রমা সেন্টার ও বক্ষব্যাধি হাসপাতালেও এক্স-রে করা হয় না ১৫ বছর ধরে। হাসপাতালগুলোয় কোটি টাকা দামের নতুন এক্স-রে যন্ত্র সরবরাহ করা হলেও দক্ষ লোকবলের অভাবে সেগুলো স্থাপন (ইনস্টল) করা যাচ্ছে না।
ফেনীর সোনাগাজী, ফুলগাজী, পরশুরাম ও দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বছরের পর বছর ধরে রোগীরা এক্স-রে সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনটি এক্স-রে যন্ত্র থাকলেও ১০ বছর ধরে সেবা পাচ্ছে না মানুষ।
এ উপজেলায় ২০১৬ সালে ৩০০ এমএ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র দেয়া হয়। সেটি স্থাপন করা হলেও চালানোর জন্য দক্ষ লোক নেই। এরপর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ৫০০ এমএ ক্ষমতাসম্পন্ন সিমেন্স কোম্পানির আরেকটি ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র সেখানে পাঠানো হয়, তা এখনো স্থাপন করা হয়নি।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের যক্ষ্মা শনাক্তে ভ্রাম্যমাণ এক্স-রে ভ্যান চালু
একই অবস্থা পরশুরাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরও এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক্স-রে যন্ত্র নষ্ট হয় ২০১৬ সালে। সেটি মেরামত না করেই ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৫০০ এমএ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র দেয়া হয়। কিন্তু যন্ত্রটি স্থাপন করার মতো দক্ষ লোক না থাকায় সেটিও বাক্সবন্দী পড়ে আছে।
দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১৩ সাল থেকে এক্স-রে করা হয় না। ২০২১ সালের ২ মার্চ ৫০০ এমএ ক্ষমতাসম্পন্ন ফিলিপস কোম্পানির একটি ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র দেয়া হয়। কিন্তু স্থাপন না হওয়ায় তা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
২০১৮ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে সোনাগাজী উপজেলায় নতুন ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র বরাদ্দ দেয়। তবে তা চালু করার জন্য আজও কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব টেকনালেজিস্ট মাহবুব আলম বলেন, ২০০৭ সালে জানে আলম ও ২০১৩ সালে মাহবুব আলম নামের দুজন এক্স-রে টেকনালজিস্ট হাসপাতালে যোগ দেন। কিন্তু এক্স-রে যন্ত্র বিকল হওয়ায় দু-এক মাস পর তারা বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান।
একই অবস্থা ফুলগাজী উপজেলায়ও।
প্রায় ১০ বছর ধরে সেখানে কোনো মেডিকেল টেকনালেজিস্ট নেই। দাগনভূঞা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও এক্স-রে করার মতো লোক নেই ২০০৮ সাল থেকে।
সরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান ফেনীর মহিপাল এলাকার ২০ শয্যার ট্রমা সেন্টারে ১৫ বছর ও ফেনীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ১০ বছর ধরে টেকনালেজিস্ট নেই। এ কারণে এসব হাসপাতালেও এক্স-রে হয় না।
ফেনীর সিভিল সার্জন রফিক-উস ছালেহীন বলেন, ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্র স্থাপন ও পরিচালনার প্রশিক্ষণ নেই স্বাস্থ্যকর্মীদের। জনবল নিয়োগ ছাড়া এক্স-রে সেবা দেয়া সম্ভব নয়। নিয়োগের ব্যাপারটি প্রক্রিয়াধীন। যদি অনুমোদন পাই, তাহলে নিয়োগের মাধ্যমে সেবা আরও ভালোভাবে দেয়া যাবে।
থ্রি আই মার্চেন্ডাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ফেনীতে নতুন ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্রগুলো সরবরাহ করেছে। সেগুলো ইনস্টল করতে ওই প্রতিষ্ঠানকে অনেকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা আসেনি।
আরও পড়ুন: নবীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্সরে মেশিনটি ১১ বছর ধরে কক্ষবন্দী
দেশজুড়ে বাড়ছে কক্সবাজারের সুপারির কদর, যাচ্ছে বিদেশেও
সারাদেশে বাড়ছে কক্সবাজারের সুপারির কদর। আর এবারে কক্সবাজারে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই সুপারির বাগান মালিকদের মুখে হাসিও ফুটেছে।
জেলার তিন হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় এক কোটি ২৭ লাথ ৫০ হাজারটি গাছে ১২ হাজার ২৫০ মেট্রিকটন সুপারি উৎপাদিত হয়েছে।
প্রতি টন সুপারি বিক্রি হয় দুই লাখ টাকায়। সর্বমোট যার দাম ২৪৫ কোটি টাকা।
এরমধ্যে সব চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়।
কক্সবাজার জেলা কৃষি অফিসার কবির হোসেন জানান, জেলার উখিয়া ও টেকনাফে প্রায় দুই হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়।
আরও পড়ুন: অল ওয়েদার রোডে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুপারিশ
কপ-২৭ সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজ স্বীকৃতি পেয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, চলমান কপ-২৭ সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে লস এন্ড ড্যামেজে অর্থায়ন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, লস এন্ড ড্যামেজের ক্ষতি পোষাতে আমরা গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড এর মতো পৃথক ফান্ড চাই।
মিশরের শারম আল শেখ শহরে ৬ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলমান কপ-২৭ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ যোগ দেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ কপ-২৭ সম্মেলনের গত এক সপ্তাহের অগ্রগতি নিয়ে শনিবার ইউএনবিকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষৎকারে এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন এবারের কপ-২৭ আলোচনার মূল ফোকাস: তথ্যমন্ত্রী
লস এন্ড ড্যামেজ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের লস এন্ড ড্যামেজ বেশি হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধির বড় উদাহরণ। আবার বন্যায় শুধু আমাদের অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে না, বানভাসি মানুষও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা তাদের জীবিকা ও ফসল হারাচ্ছে। তবে এবার আশার বিষয় হলো এবারের জলবায়ু সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজ স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে ডেনমার্ক ও বেলজিয়ামসহ আরও কয়েকটি দেশ লস এন্ড ড্যামেজে অর্থায়ন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে এই সম্মেলনে।
পরিবেশবিদ ও তথ্যমন্ত্রী বলেন, আরও একটি ভালো দিক হচ্ছে প্রায় ১০০টি দেশের সরকার/রাষ্ট্রপ্রধান এতে অংশ নিয়েছেন। কপ-২৭ এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত আশাপ্রদ। এটাই প্রতীয়মান হয় এই সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা অংশ নেয়া মানে জলবায়ু পরিববর্তনকে গুরুত্ব সহকারে দেখা। এই গুরুত্বটা আমি মনে করি তাপমাত্রা কমাতে ইতিবাচক হবে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
মন্ত্রী বলেন, লস এন্ড ড্যামেজ পোষাতে আমরা গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড এর মত পৃথক ফান্ড চাই। এজন্য আমরা দাবি করছি বাংলাদেশ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এটিকে আরও জোরালো করতে হবে।
ক্লাইমেট ফিনান্স বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কপ সম্মেলনে একটা বার্নিং কিছু থাকে ক্লাইমেট ফিনান্স নিয়ে। এই কপে এটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, বিতর্ক হচ্ছে। এই বিতর্কটাকে উস্কে দিচ্ছে উন্নত দেশগুলো। গত বছর ৮২ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে; কিভাবে তারা (উন্নত দেশগুলো) ফান্ড দিয়েছে বা কাকে দিয়েছে সে বিষয়ে একটা শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। যে সমস্ত বাইলেটারাল সহায়তা আছে, সেগুলোও এখানে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ কথা ছিল টু এডিশনাল সাহায্য দিবে। সেটা তারা করেনি।
তিনি আরও বলেন, এই ফান্ডিং এর ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা খুবই জরুরি। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বচ্ছতা আসবে না, ততক্ষণ ক্লাইমেট ফান্ড এর গতি আসবে না।
আরও পড়ুন: কপ-২৭ আলোচনায় সবুজ জলবায়ু তহবিল আদায়কে অগ্রাধিকার দেয় বাংলাদেশ: ইউএবনবিকে জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী
এবারে কপ সম্মেলনকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে যুদ্ধ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে যে স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন চলছে, তা জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে মানুষকে। তাই পৃথিবীর মানুষকে বাঁচাতে হলে আগে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধের কারণে জলবায়ু অর্থায়ন হুমকির মুখে পড়েছে। যুদ্ধ বন্ধ না হলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ পাবে কি-না সেটি এখন আমাদের সামনে বড় প্রশ্ন।
জলবায়ু সম্মেলনে বেশ কয়েকটি সাইড ইভেন্টে তথ্যমন্ত্রীর যোগদান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে দেশের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামোর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতি মেটাতে বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে পৃথকভাবে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির এ বিষয়টি প্রথমে অনেকে স্বীকারই করতে চায়নি। অথচ বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা অনেক দেশের জনজীবনে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। পরিবেশ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজনের জন্য বরাদ্দ থেকে অর্থায়ন নয়, এই ক্ষয়ক্ষতি পূরণ ও নিরসনের জন্য আলাদা খাত তৈরি করে পৃথকভাবে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের মধ্যে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা ও পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অসময়ে বৃষ্টিপাত, খরা ও উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জল বেড়ে যাওয়া, নদীতীর ক্ষয়, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ, শহরাঞ্চল ও জলাধার সন্নিকট এলাকায় বন্যায় সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরেছি। বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে। স্যানিটেশনেও রয়েছে প্রায় শতভাগ সাফল্য। এক্ষেত্রে ভারত- পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের এই সাফল্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা নিরাপদ পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদেরকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগুতে হচ্ছে।
জলবায়ু সম্মেলনে কৃষি নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কৃষিখাতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর চাপের মুখেও দেশ। কিন্ত যখন কৃষিখাত থেকে মিথেন ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে বলা হয়, তখন সেটি আমাদের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কৃষিখাতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে বলা হলেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখেই আমাদের কৃষিকে জলবায়ু সহিষ্ণু করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে আমরা কিছু করতে পারবো না।
আরও পড়ুন: কপ ২৭: উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা চায় বাংলাদেশ
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন এবারের কপ-২৭ আলোচনার মূল ফোকাস: তথ্যমন্ত্রী
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির অভিযোজন ও প্রশমন নিয়ে এবারের জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে (কপ-২৭) ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা চিহ্নিত করা ও তা পূরণের জন্য অভিযোজন ও প্রশমনের সুনির্দিষ্ট পন্থা এবারের জলবায়ু সম্মেলনে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে, যা আশাব্যঞ্জক।
শুক্রবার জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের ষষ্ঠ দিন। মিশরের শারম-আল-শেখ শহরে ৬ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলমান জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে (কপ-২৭) প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানরত তথ্যমন্ত্রী ইউএনবিকে এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে যে পরিমাণ অর্থ জমার পড়ার কথা ছিল, সেটি এখনো জমা হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমিয়ে আনতে সেই অর্থ সমবণ্টনের কথা ছিল, কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি যেভাবে সমাধান করার কথা ছিল, সেভাবে হচ্ছে না। এসব বিষষ নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে।
কয়েকটি সাইড ইভেন্টে যোগদান শেষে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এবারের সম্মেলনে পৃথিবীর বহু দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান অংশগ্রহণ করছেন। যেটি প্যারিস ও কোপেনহেগেনে হয়েছিল, কিন্তু গত কয়েকটি কপে হয়নি। এটি আশার কথা।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ইউএনবিকে বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন বন্ধ না হলে ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা বাড়তে থাকবে। চলমান কপ সম্মেলনে ক্রমবর্ধমান অভিযোজন চাহিদা সমাধানের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক নির্গমণ হ্রাসের তাগিদ দিচ্ছি আমরা।
আরও পড়ুন: কপ ২৭: উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা চায় বাংলাদেশ
মন্ত্রী আরও বলেন, উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হবে। যাতে জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনের মধ্যে ৫০:৫০ ভারসাম্য থাকে। অভিযোজন অর্থের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হলে তা বাংলাদেশসহ দুর্বল দেশগুলোর অভিযোজন চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
মন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই বিশ্বব্যাপী প্রশমন প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে হবে।
এছাড়া উন্নত দেশগুলো; বিশেষ করে জি-২০ দেশগুলোকেও এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়ার আহ্বান জানচ্ছি।
বাংলাদেশ থেকে আগত জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা জানান, শুক্রবার ১১ নভেম্বর জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের ষষ্ঠ দিনে, আজকে জাতিসংঘ কপ২৭ এর ডিকার্বনাইজেশন দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেছেন।
আজকে মূলত বিভিন্ন সেক্টর থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
ডিকার্বনাইজেশন এর ওপর আলোচনায় তেল, গ্যাস, স্টিল ও সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য বর্তমানে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও কিভাবে কার্বন নিঃসরণ কমানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী কলকারখানার মধ্যে স্টিল ইন্ডাস্ট্রি একটি। মূলত স্টিল ইন্ডাস্ট্রি থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর জন্য বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেয়া হবে।
তেল ও গ্যাস ইন্ডাস্ট্রিতে এবং সার কারখানাগুলোতে কিভাবে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এছাড়াও টেকনোলজি ট্রান্সফার, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এবং ফাইনান্সিং এর মাধ্যমে কিভাবে তেল এবং গ্যাস ইন্ডাস্ট্রি থেকে মানবসৃষ্ট মিথেন নিঃসরণ কমানো যায় তা নিয়েও আলোচনা করা হবে।
তাছাড়া এবারের সম্মেলনে এই প্রথমবারের মতো তরুণ ও শিশুদের জলবায়ু পরিবতর্ন মোকাবিলা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের জন্য সম্মেলন কেন্দ্রে স্টল খোলা হয়েছে। এতে তরুণ ও শিশুরা আনুষ্ঠানিকভাবে জলবায়ু কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলো।
এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, তরুণ ও শিশুদের জলবায়ু কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ফলে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সচেতনতা সৃষ্টিতে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: বহুবিষয়ে অগ্রগতি নেই, তবে কপ২৭ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের যোগদান আশাপ্রদ: তথ্যমন্ত্রী
কপ-২৭ আলোচনায় সবুজ জলবায়ু তহবিল আদায়কে অগ্রাধিকার দেয় বাংলাদেশ: ইউএবনবিকে জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী
কপ-২৭ আলোচনায় সবুজ জলবায়ু তহবিল আদায়কে অগ্রাধিকার দেয় বাংলাদেশ: ইউএবনবিকে জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ইউএনবিকে বলেছেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত এবং গ্লাসগো-শার্ম আল শেখ ওয়ার্ক প্রোগ্রাম অন দ্যা গ্লোবাল গোল অন এডাপটেশন বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
তিনি আরও বলনে, বাংলাদেশ প্রণীত ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান বাস্তবায়নে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ)বাস্তবায়নে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ‘তহবিল ও সমাধান’-এর মাধ্যমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ও ন্যূনতম দায়ী দেশগুলোর জন্য কাজ ও সহায়তা করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো কপ সম্মলেনে আলোচনায় অংশ নিবে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ক্ষয়ক্ষতির জন্য একটি সুনির্দিষ্ট অর্থায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ফাইন্যান্স এর হিসাবমতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় আট দশমিক ৮ থেকে ৯ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।
আরও পড়ুন: বহুবিষয়ে অগ্রগতি নেই, তবে কপ২৭ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের যোগদান আশাপ্রদ: তথ্যমন্ত্রী
কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানায় নৌ চলাচল ব্যাহত: সীমাহীন দুর্ভোগে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার জন্য যানজটের কারণে রবিবার থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং চলমান এসএসসি টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা সময়মতো যেতে পারছে না পরীক্ষা কেন্দ্রে।
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের কাপ্তাই উপজেলার জেটিঘাট, শহীদ শামসুদ্দিন ঘাঁট, বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়ি, বিলাইছড়িসহ হ্রদের অনেক স্থানে তীব্র কচুরিপানার যানজটে পণ্য পরিবহন ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
এছাড়া সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে কাপ্তাই হ্রদের আশেপাশে বসবাসকারী শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীরা।
পরীক্ষার্থী আনন্দ তনচংগ্যা, সুবির চাকমা, মিনতি চাকমা জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও কাপ্তাই হ্রদে ধেয়ে এসেছে কচুরিপানার জঞ্জাল। মাত্র তিন মিনিটের গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগছে তিন ঘন্টা। আবার মাঝপথে ইঞ্জিন চালিত বোট বা লঞ্চের তেল ফুরিয়ে বিপাকে পড়ছি আমরা।
নৌযান চালক শাহ আলম ও দুলাল জানান, কচুরিপানা যানজট পাড়ি দিতে গিয়ে ইঞ্জিনের পাখা ভেঙ্গে সীমাহীন দুর্ভোগে ভুগতে হচ্ছে আমাদের। গত এক সপ্তাহ যাবৎ কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন এলাকা থেকে কচুরিপানা আপস্টিম জেটিগেটে এসে জড়ো হচ্ছে। যার ফলে আইল্যান্ড এলাকা থেকে জেটিঘাট ২ থেকে ৩ মিনিটের জায়গায় পৌঁছাতে নৌযানের সময় লাগছে ২ থেকে ৩ ঘন্টা।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, কক্সবাজারের জেলেদের মুখে হাসি
বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, কক্সবাজারের জেলেদের মুখে হাসি
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। মাছ ধরার ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা। ইলিশের পাশাপাশি ধরা পড়ছে রূপচাঁদাসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। দামও সহনীয় পর্যায়ে। সাগরে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ায় ব্যবসায়ী ও জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে। আড়তগুলোতে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় উৎসবের আমেজ। টানা তিন-চার মাস কোলাহল না থাকায় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে।
বৈরী আবহাওয়া ও ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগর থেকে টন-টন ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে শত শত মাছ ধরার ট্রলার। ঘাট থেকে ডিঙি নৌকায় ঝুড়ি নিয়ে মোকামে (গুদাম ঘর) তোলা হচ্ছে ছোট-বড় ইলিশ। সেখানে কারও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। কেউ বরফ ভাঙছে, কেউ ইলিশ সাজাতে ব্যস্ত। অনেক ব্যবসায়ী কাঙ্ক্ষিত দাম পেয়ে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন ইলিশের চালান।
আরও পড়ুন: ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ থেকে ইলিশ ধরা শুরু
জামায়াতের সাথে বিএনপির রাজনীতির আদর্শিক মিল নেই; ভারত বিশেষ বন্ধু: ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আদর্শ ও রাজনৈতিক নীতির দিক থেকে তার দল জামায়াতে ইসলামীর চেয়ে আলাদা। জামায়াতের আদর্শের সঙ্গে বিএনপির কোনও মিল নেই।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি আশা করে ভারতসহ গণতান্ত্রিক দেশগুলো বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, তবে তাদের দল এখানকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনও দেশের সরাসরি হস্তক্ষেপের বিরোধী।
বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে
সম্প্রতি উত্তরার বাসায় ইউএনবিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
জামায়াতের আদর্শের সঙ্গে বিএনপির কোনও মিল নেই। ‘আমরা গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সকল ধর্মের ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করি। কিন্তু জামায়াত ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করে এবং আমাদের সঙ্গে তা মেলে না।’
তিনি বলেন, তবে সংসদীয় রাজনীতিতে অনেক সমীকরণ ও মেরুকরণ রয়েছে। ‘এখানে প্রধান সমস্যা হল সংখ্যা বা ১৫১ আসন। প্রতিটি দল ১৫১টি আসন পাওয়ার চেষ্টা করে এবং সে কারণে দলগুলো জোট গঠন না করে জামায়াতের সঙ্গে জোট করে বা একটি বোঝাপড়া করে। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সালে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সময় জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুস্পষ্ট সম্পর্ক ছিল।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের দলের নির্বাচনী জোট আছে, কিন্তু আদর্শিক জোট নয়। ‘আমাদের রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে আমাদের স্বার্থের ওপর নির্ভর করবে। আমরা এখন আমাদের যুগপৎ আন্দোলন স্বাধীনভাবে করতে যাচ্ছি, কিন্তু কোনও জোটের অধীনে নয়।’
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলে, কিন্তু এখন পর্যন্ত দলটিকে নিষিদ্ধ করার কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, তাদের দল চায় বামপন্থী ও ইসলামী দলগুলোসহ সব বিরোধী দল একযোগে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করুক।
ফখরুল বলেন, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পর সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের কথাও বলছেন তারা। ‘এটা জাতীয় সরকার বা জোট সরকারের নামে হতে পারে। দেশে আওয়ামী লীগ যে সংকট তৈরি করেছে তা কোনও রাজনৈতিক দলের একার পক্ষে সমাধান করা কঠিন। জাতীয় ঐকমত্য না থাকলে সমস্যা থেকে উত্তরণ সহজ হবে না।
বিএনপি ইতোমধ্যেই সফল ‘যুগপৎ' আন্দোলনের শক্ত পটভূমি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের জন্য রাজপথের আন্দোলন থেকে গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর এবার পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন: র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে নির্ভীক বিএনপি: ফখরুল
বড়ধরনের কর ফাঁকির জন্য লোকসান গুনছে এনবিআর
ভ্যাট নিবন্ধন নেয়া সত্ত্বেও প্রায় ২২ শতাংশ কোম্পানি তাদের ভ্যাট রিটার্ন জমা দিচ্ছে না। করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক ব্যক্তি কর নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছেন।
গত অর্থবছরে মোট ২৬ লাখ মানুষ বা ৫২ দশমিক ৪১ শতাংশ করদাতা তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেননি। ৫০ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ধারকের মধ্যে প্রায় ২৪ লাখ গত অর্থবছরে তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
ফলে বড় অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
আরও পড়ুন: ২০২১-২২ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করায় সাড়া কম: এনবিআর ডাটা
কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্য বা সেবার জন্য ভ্যাট নিলেও সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিচ্ছে না।
সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্মকর্তারা এনবিআরকে বিভিন্নভাবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদ ও খাতের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা বারবার দেশের রাজস্ব খাতকে এমনভাবে সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছেন যাতে করে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) করের অনুপাত অর্থনীতির আয়তন অনুযায়ী বৃদ্ধি পায়।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম। ২০১৬ সালের বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার কর-জিডিপি অনুপাত নেপালে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ, ভুটানে ১৬ শতাংশ, ভারতে ১২ শতাংশ, আফগানিস্তানে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, মালদ্বীপে ৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং বাংলাদেশে এটি ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
সরকারি তথ্য বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির চিত্র দেখালেও কর সংগ্রহে প্রায় বিপরীত প্রবণতা দেখা যায়।
জিডিপির শতাংশ হিসাবে কর সংগ্রহ ২০১৭ সালে প্রায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে গেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন এবং বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশগুলোর একটি।
এটি অর্থনীতিবিদদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে প্রশ্ন করতে প্ররোচিত করে, কারণ রাজস্ব প্রাপ্তি অর্থনীতির সম্প্রসারণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ ইউএনবিকে জানান, বড় কোম্পানিগুলো বিভিন্ন উপায়ে ভ্যাট এড়িয়ে যেতে পারে। সক্ষমতার অভাবে এনবিআর তা শনাক্ত করতে পারে না।
তিনি রাজস্ব খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাজস্ব কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন, যাতে মানুষ ঝামেলামুক্ত পরিবেশে কর প্রদানে উৎসাহিত হয়।
আরও পড়ুন: প্রথম ত্রৈমাসিকে রাজস্ব সংগ্রহ ১৩% কমেছে: এনবিআর
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কিছু পরিসরে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ব্যবসাগুলো ২০২২ অর্থবছরে মহামারির কারণে লোকসান থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে আসতে পারেনি। এতেই বড় কোম্পানিগুলো থেকে ভ্যাট সংগ্রহে কম প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
ব্যাংকিং খাত থেকে কম সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো বর্তমানে মুনাফায় মন্দাভাবের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে।
মনসুর বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশীয় উৎস থেকে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য মোট ভ্যাট ও কর খাতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘যা বড়ধরনের অমিল দেখায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি দেখায় যে জিডিপি বৃদ্ধি ও রাজস্ব সংগ্রহের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও অন্যান্য দেশে কর-জিডিপি অনুপাত অর্থনীতির বৃদ্ধির কারণেই বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটা ধাঁধা।’
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে তিন লাখ ৭২ হাজার কোম্পানি। যদিও এর মধ্যে দুই লাখ ৯০ হাজার কোম্পানি বা ৭৮ দশমিক ২১ শতাংশ নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক সূত্রে জানা গেছে যে তবে এখনও প্রায় ২২ শতাংশ কোম্পানি ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয় না।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তিন লাখ ৭২ হাজার ব্যবসা ভ্যাট নিবন্ধন করেছে। তাদের মধ্যে দুই দশমিক ৪৩ লাখ বা ৮৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রিটার্ন দাখিল করেছেন।
ভ্যাট আইন অনুযায়ী, ৫০ লাখ টাকার নিচে বার্ষিক টার্নওভার আছে এমন কোম্পানির ভ্যাট নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট লাগবে না: এনবিআর