বিশেষ সংবাদ
করমজল পর্যটন কেন্দ্র: প্রজনন হচ্ছে লবণ পানির কুমির ও ‘বাটাগুর বাসকা’ কচ্ছপ
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে লবণ পানির কুমির আর বিরল প্রজাতির কচ্ছপ ‘বাটাগুর বাসকা’ জন্ম নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। তাছাড়া করমজলে ভ্রমণে গিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এসব বন্যপ্রাণী দেখে অনেক খুশি। বিশেষ করে শিশুরা কুমির ও কচ্ছপ ছানা দেখে বেশি উচ্ছ্বসিত।
সোমবার দুপুরেও প্রজনন কেন্দ্রের ডিজিটাল ইনকিউবেটর থেকে কুমিরের ছানা ফুটেছে। ছানা ফুটাতে কুমিরের ৩৮টি ডিম ৮২ দিন ইনকিউবেটরে রেখে নিবিড় পরিচর্যা করে বন বিভাগ। প্রজনন কেন্দ্রের চৌবাচ্চায় রেখে কুমিরের বাচ্চাগুলোকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। এবার বন বিভাগ কুমিরের ডিম থেকে শতভাগ বাচ্চা ফুটাতে সফল হয়েছে এবং পুকুরে বিরল প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা প্রজনন হচ্ছে।
জানা গেছে, সরকার ২০০০ সালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলে। লবণ পানির কুমির এবং বিরল প্রজাতির বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ এই কেন্দ্রে প্রজনন হয়। ২০০৫ সাল থেকে রোমিও-জুলিয়েট কুমির জুটি দিয়ে প্রজনন শুরু হয়। এরপর ওই প্রজনন কেন্দ্রে পিলপিল-আলেকজান্ডার যুক্ত হয়। বর্তমানে রোমিও এবং জুলিয়েট প্রজনন ক্ষমতা হারিয়েছে বলে বন বিভাগ জানায়। আর ২০১৪ সালে বিরল প্রজাতির আটটি বাটাগুর কচ্ছপ নিয়ে কচ্ছপ প্রজনন শুরু করে বন বিভাগ।
পড়ুন: পাটের দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের ১ জুন পর্যন্ত প্রজনন কেন্দ্রে কুমির এক হাজার ১৫০টি ডিম দিয়েছে। এর মধ্যে ৫০৭টি ডিম থেকে ছানা ফুটে বের হয়। বর্তমানে প্রজনন কেন্দ্রে এক থেকে ৪০ বছর বয়সের ১২৯টি কুমির রয়েছে। এই পর্যন্ত জন্ম নেয়া ২০৬টি কুমির সুন্দরবনের নদী-খালে অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত কচ্ছপে ৩২৭টি ডিম পাড়ে এবং ২৭৪টি কচ্ছপের ছানা ফোটে। বর্তমানে কেন্দ্রে ৪৩২টি কচ্ছপ রয়েছে।
সূত্র মতে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরে জুলিয়েট এবং পিলপিল দুটি কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ১৬৪টি ডিম পাড়ে। কিন্তু বন বিভাগ ডিমগুলো থেকে একটি ছানাও ফোটাতে পারেনি। আর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কুমিরের চারটি ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। ২০২১ সালে প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরে একটি ডিমও পাড়েনি।
পড়ুন: চা শ্রমিকদের মজুরি ২০১৯ সালেই বৃদ্ধি করা উচিৎ ছিল: গবেষক আশ্রাফুল
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, চলতি বছর ২২ জুন প্রজনন কেন্দ্রের কুমির পিলপিল ৩৮টি ডিম পাড়ে এবং ডিজিটাল ইনকিউবেটরে রাখা হয়। ৮২ দিন পর সবগুলো থেকেই বাচ্চা ফুটেছে। প্রজনন কেন্দ্রে চৌবাচ্চায় কুমিরের ছানাগুলো লালন পালন করে বড় করে তোলা হবে। সেখানে বিভিন্ন সাইজের ১৬টি চৌবাচ্চা রয়েছে। ৬ থেকে ৭ বছর চৌবাচ্চায় কুমির থাকবে। পরবর্তীতে সুন্দরবনের নদী-খালে এই কুমির অবমুক্ত করা হবে।
এই পর্যন্ত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেয়া ২০৬টি কুমির সুন্দরবনের নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয় বলে তিনি জানান।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তথ্য মতে, বিলুপ্তপ্রায় বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের জীবনচারণ, প্রজনন ও সংখ্যা নির্ধারণসহ নানা বিষয়ে জানতে করমজল থেকে গত ২০১৭ সালে জিপিএস ট্রান্সমিটার স্যাটেলাইটযুক্ত দুটি, ২০১৮ সালে পাঁচটি এবং ২০১৯ সালে পাঁচটি কচ্ছপ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে ছাড়া হয়। স্যাটেলাইটযুক্ত ১২টি কচ্ছপের মধ্যে ২০১৮ সালে একটি বরিশালে গিয়ে মারা যায়, দুটি ভারতে বিচরণ করছিল, দুটি বিভিন্ন নদী-খালে কয়েশত কিলোমিটার বিচরণ করার পর জেলেদের জালে ধরা পড়ে। পরবর্তীতে জেলেদের কাছ থেকে উদ্ধার করে কচ্ছপ দুটি করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে রাখা হয়।
বাকি কচ্ছপগুলোর বর্তমান অবস্থান তারা জানে না। তবে জিপিএস ট্রান্সমিটার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওই কচ্ছপের বিচরণের সময় বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। অস্ট্রিয়া ভিয়েনাজু, টিএসএ, প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশন এবং বন বিভাগ সুন্দরবনের করমজলে বাটাগুর বাসকা নামে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ধরা পড়ছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা
বন বিভাগের তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে ২১ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়। সমুদ্রে পাঁচ প্রজাতির কচ্ছপের বাস। সারা বিশ্বে ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ আছে। প্রকার ভেদে একটি কচ্ছপের গড় আয়ু ২০০ থেকে প্রায় ৩০০ বছর।
বিভিন্ন সময় সুন্দরবনের করমজলে ভ্রমণে যাওয়া নানা বয়সের নারী-পুরুষ পর্যটকরা জানান, প্রাকৃতিভাবে গড়ে উঠা সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য তাদেরকে মুগ্ধ করে। বিশেষ করে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে গিয়ে কুমির এবং কচ্ছপ দেখে তারা বেশি আনন্দ পায়। আর সে কারণের ছেলে মেয়েদের নিয়ে তারা প্রায় প্রতিবছর সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ঘুরতে আসেন।
অরক্ষিত রেলক্রসিং অধিকাংশ রেল দুর্ঘটনার জন্য দায়ী
গত মাসে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের কাছে খৈয়াছড়া ঝরণা এলাকায় রেললাইন পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জন নিহত হন।
সিরাজগঞ্জে রেলক্রসিংয়ে নবদম্পতির ওপর দিয়ে ট্রেন চলে যাওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর ২৯ জুলাই দুর্ঘটনাটি ঘটে। মূলত মাইক্রোবাসটি একটি অরক্ষিত রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী ট্রেনের ধাক্কায় ছাত্রদের মৃত্যু হয়।
এ ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অবৈধ ও গেটম্যানবিহীন রেলক্রসিং।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রেলওয়ের দুই হাজার ৮২২টি রেলগেটের মধ্যে এক হাজার ৩৫৪টি অবৈধ, গেটম্যান নেই দুই হাজার ২৫৮টিতে এবং বৈধ ৯০৪টি গেটও গেটম্যানবিহীন।
রেল গেটগুলোতে যত দুর্ঘটনা ঘটছে তার ৯০ শতাংশ লেভেল ক্রসিংয়ে। যার বেশির ভাগই অবৈধ।
রেল সূত্র বলছে, রেলের অধিকাংশ বৈধ গেটও প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত এক যুগে রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯৩৬টি। এসব দুর্ঘটনায় ৫১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ।
বাংলাদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, রেলে দুই হাজার ২৫৮টি অরক্ষিত গেইট অর্থাৎ সেখানে কোনো গেটম্যান নেই। শুধু তাই নয়, দুই পাশের লোহার ব্যারিকেডও নেই। এমনকি বৈধ গেটের মধ্যে ৯০৪টি গেটও অরক্ষিত। মাত্র গেটম্যান আছে ৫৬৪টিতে। এসব গেটম্যানরা বেশির ভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অস্থায়ী কর্মচারী। স্থায়ীভাবে আছে মাত্র ৩৩১ জন। একটি গেটে ন্যূনতম ৬ জন গেটম্যান থাকার কথা। অথচ সে হারে কোথাও লোকবল নেই। প্রয়োজন রয়েছে ১৬ হাজার ৯৩২ জন গেটম্যানের।
পড়ুন: মিরসরাই ট্রাজেডি: আয়াতের পর এবার চলে গেলেন তাসমির হাসান
এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন ইউএনবিকে বলেন, ‘রেল দুর্ঘটনা বিষয়ে আমি বলতে চাই, সড়কের যান রেললাইনের ওপড়ে উঠে দুর্ঘটনা সৃষ্টি করে। ৯০ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে রেলের লেভেল ক্রসিংগুলোতে। আপনাদের মনে রাখতে হবে ট্রেন কাউকে ধাক্কা দেয় না বরং বাইরে থেকে এসে ট্রেন কে ধাক্কা দেয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ট্রেন তার নিজস্ব লাইনে চলে। অন্য কেউ এসে রেলকে ধাক্কা মারলে, ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায় রেলের নয়। এর জন্য আমাদের সচেতনতা জরুরি। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে এবং যেখানে যার দায়িত্ব সেটা সঠিকভাবে পালন করতে হবে। ট্রেনকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্যই আমরা লেভেল ক্রসিংয়ে লোক নিয়োগ দিয়ে থাকি কিন্তু বিভিন্ন সংস্থা তাদের মত করে রেললাইনের ওপর রাস্তা তৈরি করছে। এক্ষেত্রে তাদেরকেই নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘রেলে অবৈধ ক্রসিংগুলো বন্ধ করতে পারলে দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে। আমরা এ বিষয়ে অনেক চেষ্টা করলেও বন্ধ করতে পারিনি। স্থানীয়ভাবে কিছু লোক এসব অবৈধ ক্রসিং তৈরি করে যা বড় অপরাধ। অবৈধ গেট বন্ধ করতে দুই পাশে আমরা লোহার বেড়া দিয়েছি এবং রাস্তা কেটে দিয়েছি তারপরও আটকাতে পারিনি। একদিকে আমরা লৌহার বেড়া দেই আবার রাতের আঁধারে এসব বেড়া তুলে ফেলে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার ইউএনবিকে জানান, ‘লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা কমাতে একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। বৈধ গেটগুলোতে সেন্সর পদ্ধতিতে বেশকিছু গেটে বিশেষ অ্যালার্ম স্থাপন করা হবে। এর ফলে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে থেকে ট্রেন থাকা অবস্থায় গেটে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অ্যালার্ম বেজে উঠবে। ফলে দুর্ঘটনা কমে যাবে। আমরা কাজ করছি যত দ্রুত সময়ে প্রকল্পটি নেয়া যায়।’
তিনি আরও বলেন, আমরা রেলের পক্ষ থেকে বৈধ লেভেলক্রসিংগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রহরী দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি। আর অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোতে আমরা তাদেরকে লিখিত আকারে ও সরাসরি জানাচ্ছি বন্ধ করতে কিংবা যথাযথভাবে গেট নির্মাণ করে প্রহরী নিয়োগ করতে। কিন্তু কোনো বিষয়ে তারা কান দিচ্ছে না এবং এ বিষয়ে আমরা খুবই আতঙ্কে আছি কখন একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইউএনবিকে বলেছেন, ‘অবৈধ লেভেল ক্রসিং যারা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক পরিচয়েও কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া আরও জোরদার করতে হবে। আগের মতো রেল ব্যবস্থা থাকলে হবে না। আধুনিক করে রেলকে যেভাবে এগিয়ে নিতে হবে ঠিক এই দুর্ঘটনা চাইলেই বন্ধ করা সম্ভব যদি রেল ও স্থানীয় প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করে।
পড়ুন: মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা: গেটম্যান সাময়িক বরখাস্ত, মামলা
রেলের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই: মন্ত্রী
পাটের দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
পাটের রাজধানী ফদিরপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে সোনালী আশ খ্যাত পাট। সংসারের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে উৎপাদিত এই পণ্য বাজারে এনে কাঙ্খিত দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা।
জেলার সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারীসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি হাটেই পাট উঠতে শুরু করেছে। তবে এবার সময় মতো পাট জাগের পানি না পাওয়ায় অধিক মূল্য দিয়ে ডিজেল চালিত সেলো মেশিন দিয়ে ভূগর্ভস্থল থেকে পানি তুলে জাগ দিতে হয়েছে। এতে চাষিদের খরচ বেড়েছে। অথচ পাটের এই ভরা মৌসুমে উৎপাদন খরচই তুলতে পারছে না তারা।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সাড়ে ১০ লাখ বেল পাট উৎপাদন, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
এদিকে, পাটের বাজার হিসেবে জেলায় প্রসিদ্ধ হাট কানাইপুর। সপ্তাহে শুক্র ও মঙ্গলবার এখানে বাজার বসে। তাই প্রান্তিক চাষিরা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাদের উৎপাদিত পাট নিয়ে আসে এখানে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই বাজারে পাট উৎপাদন মৌসুমে প্রতি হাটে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার মণ পাট কেনা বেচা হয়। বর্তমানে কানাইপুর হাটে পাটের দর রয়েছে ২২শ থেকে ২৮শ টাকা। তবে দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা।
তৃতীয় দেশের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল কিনতে পারে বাংলাদেশ
সম্ভাব্য বাণিজ্য ঝুঁকি এড়াতে বাংলাদেশ তৃতীয় কোনো দেশের সহায়তায় রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করতে পারে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাশিয়ার তেল আমদানিতে প্রতিবেশি ভারত এক্ষেত্রে বাংলাদেশের তৃতীয় পছন্দের দেশ হতে পারে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে ভারত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাশিয়ার তেল আমদানি করছে। ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় তেল শোধনাগার থেকে পরিশোধিত তেল কেনার বিষয়ে ভারতের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি আছে বাংলাদেশের।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থাকে, তাহলে এই ধরনের ব্যবসা করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, কম খরচে রাশিয়ার তেল আমদানির ঝুঁকি এড়ানোর ভালো উপায় হতে পারে এটি।
একটি রুশ কোম্পানি বাংলাদেশের কাছে সস্তায় পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম; বিশেষ করে ডিজেল বিক্রির প্রস্তাব দেয়ায়, রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানির সম্ভাবনার বিষয়টি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আলোচনায় আসে।
মস্কোভিত্তিক রুশ তেল কোম্পানি রুশনেফট সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) প্রতি ব্যারেল পেট্রোলিয়াম ৫৯ ডলারে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে, বর্তমানে যার বৈশ্বিক বাজার মূল্য ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারের বেশি।
এছাড়া, রুশ কোম্পানিটি পরিবহন খরচসহ পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম এই মূল্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ কোম্পানির এই প্রস্তাব সম্পর্কে কিছু জানায়নি।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বৃহস্পতিবার তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত (এ বিষয়ে) কোনো আপডেট নেই।’
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, রাশিয়া কাছ থেকে তেল আমদানি করার বিষয়টি, অন্য দেশ থেকে জ্বালানি আমদানির মতো না।
তারা জানায়, বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানির সম্ভাব্য ঝুঁকি মূল্যায়ন করছে। কারণ এই ধরনের আমদানির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা ক্ষুব্ধ হতে পারে।
আরও পড়ুন:সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পর থেকে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের আরোপিত বিশাল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, যদি কোন দেশ সরাসরি রাশিয়ান তেল আমদানি করে তবে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে। তাই এ বিষয়ের যেকোনও পদক্ষেপ শুধুমাত্র বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে না।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ‘রাশিয়ার কাছ থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানির প্রস্তাব পাওয়ার পর বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্ভাব্য ঝুঁকি ও বিভিন্ন বিষয় মূল্যায়ন করছে।’
গত ১৬ আগস্ট একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, সরকার রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল, সার ও গম কিনতে চায়।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তিনি তার মূখ্য সচিবকে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দায়িত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারে, আমরা তাদের (রাশিয়া) কাছ থেকে আমাদের নিজস্ব মুদ্রা দিয়ে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করব। কারণ সুইফট বন্ধ এবং ডলারের দাম অনেক বেশি।’
এদিকে পাওয়ার সেলের পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সরকার যদি কম দামে ডিজেল আমদানির ব্যবস্থা করতে পারে তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আবার চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকার গত ১৯ জুলাই থেকে দেশের ডিজেল-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করে এবং ডিজেল আমদানি কমাতে ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চালু করে।
এক ঘণ্টা এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করার কথা থাকলেও সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধারে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং থাকার অভিযোগ করে ভোক্তারা। তাদের দাবি গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরও বেশি সময় ধরে লোডশেডিং চলে।
সরকার ৭ জুলাই থেকে মার্কেট ও শপিংমল রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়।
এছাড়া, কমিউনিটি সেন্টার, শপিংমল, দোকান, অফিস ও বাড়িতে বিভিন্ন সামাজিক জমায়েতে আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ করা হয়।
সবশেষে বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস সংরক্ষণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১১ আগস্ট থেকে শিল্পাঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন ছুটির দিন ঘোষণা করে সরকার।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি: বিপাকে ভোলার লক্ষাধিক জেলে
চা শ্রমিকদের মজুরি ২০১৯ সালেই বৃদ্ধি করা উচিৎ ছিল: গবেষক আশ্রাফুল
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী চা শ্রমিকদের কৃত্য নাট্য, সংস্কৃতি, ভাষা, সংগীত ও আর্থসামাজিক বিষয়াবলী গবেষক এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশ্রাফুল করিম বলেছেন, চা শ্রমিকদের মজুরি ২০১৯ সালেই বৃদ্ধি করা উচিৎ ছিল।
তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মালিক পক্ষ বলে থাকে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু ২০১৯ সালে বাংলাদেশে চায়ের বাম্পার ফলন ফলন হয়েছিল। ওইসময় সাত কোটি ৭০ লাখ কেজি টার্গেট ধরা হলেও চায়ের উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি। ওইসময় থেকেই মালিক পক্ষের উচিৎ ছিল মজুরি বৃদ্ধি করা। আর্থাৎ চা শ্রমিকদের মজুরি তখন থেকেই ৩০০ টাকা হওয়া উচিৎ ছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন প্রসঙ্গে ইউএনবিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কাল থেকে চা শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট
তিনি বলেন, আমি ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চা শ্রমিকদের ভাষা, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এসব নিয়ে গবেষণা ও গবেষণা রিলেটেড কাজ করছি। চা শ্রমিকদের দাবি আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়। এর বড় কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে ১২০ টাকা মজুরিতে একবেলা আহারও জোটার কথা না।
তাদের বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক আশ্রাফুল করিম বলেন, আমি মনে করি চা শ্রমিকরা আমাদেরই লোক। তবে চা শ্রমিকদের মন থেকে আমাদের লোক গ্রহণ করতে পারছি না। তারা যেহেতু চা বাগান এলাকায় থাকে আমরা তাদের থেকে দূরে থাকতে চাই। অনেকেই চা শ্রমিকদের মনে করে ভারতের অধিবাসী। তারা যখন ১৮৫৪ সালে আমাদের দেশে আসে তখন বাংলাদেশ নামে কোনো দেশ ছিল না। তখন সবাই আমরা ভারত বর্ষের নাগরিক ছিলাম।
তিনি বলেন, আমরা যে যে পর্যায় আছি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সকলেই আমরা অবদান রাখছি। চা শ্রমিকেরা চা উৎপাদনের মাধ্যমেও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। একজন কৃষি শ্রমিক সকাল বেলা কাজ শুরু করলে দুপুর পর্যন্ত একরোজ শেষ। আবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত আরেকটি পর্ব থাকে। সাধারণ শ্রমিকেরা যেখানে ৮ ঘণ্টা কাজ করে সেখানে একজন চা শ্রমিকের কর্মঘণ্টা ১২ ঘণ্টা (ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত)। কিন্তু এই শ্রমের বিনিময়ে সঠিক প্রাপ্তিটা নিশ্চিত হচ্ছে না।
মুক্তিযুদ্ধেও চা শ্রমিকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক আশ্রাফুল করিম বলেন, ১৯৭১ সালে অন্যান্য আপামর জনতার মতো তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। দেশের চা বাগানগুলোতে অনেক সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে। ৬০৩ জন চা শ্রমিক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন।
তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে তাদের অবশ্যই ন্যায্য মজুরি হওয়া উচিৎ। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চা শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অবদান হলো চা শ্রমিকদের স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ। এই অবদানের কথা চা শ্রমিকরা আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
আরও পড়ুন: ‘প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে চা শ্রমিকদের ধর্মঘট স্থগিত, প্রত্যাহার নয়’
এছাড়া তিনি চা ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উচ্চফলনশীল বীজ উদ্ভাবনের সক্ষমতা অর্জনের পদক্ষেপ গ্রহণ, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মালিকানাবিহীন ও পরিত্যক্ত চা বাগানগুলোর পুনর্বাসনের নির্দেশনা, চা গবেষণা স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটে রূপান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ, চা শ্রমিকদের বিনামূল্যে বাসস্থানের ব্যবস্থা, রেশন, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের উদ্যোগও গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে এর ধারাবাহিকতা আর রক্ষিত হয়নি বলে জানান এই গবেষক।
বাগেরহাটে অস্বাভাবিক হারে চালের দাম বৃদ্ধি, মিলমালিকদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের অভিযোগ
বাগেরহাটের খুচরা বাজারে চালের দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর পাইকারি বাজারে ২৫ কেজির এক বস্তা চালের দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। অস্বাভাবিক হারে চালের দাম বাড়ায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ধাক্কা লেগেছে। মিল থেকে চাহিদা মতো চাল পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। চাল ব্যবসায়ীদের দাবি মিলমালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে চলেছে। এ অবস্থায় চালের বাজার কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সম্প্রতি বাগেরহাট শহরের চাউপট্টি এবং নাগেরবাজারে খুচরা ও পাইকারি চালের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, চালের অস্বাভাবিক মূল্যে বৃদ্ধির কারণে ক্রেতা-বিক্রেতারা নানা কথায় জড়াচ্ছেন। চালের মূল্য এত বেশি কেন ক্রেতাদের এমন প্রশ্নে দোকানিদের উত্তর, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চালের দাম বেড়েছে। যে মূল্যে চাল ক্রয় করা হচ্ছে সেই হারে বিক্রি করা হচ্ছে। আমাদের কিছুই করার নেই। দোকানিদের এমন উত্তরে ক্রেতারা খুশি নয়। নিম্ন আয়ের অনেক খুচরা ক্রেতাকে প্রয়োজনের তুলনা কম পরিমাণ চাল নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বাগেরহাটে চালের দাম বেড়েই চলেছে। প্রতি কেজি চালের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখানে খুচরা বাজারে সর্বনিম্ন প্রায় ৫০ টাকা থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি হচ্ছে। এমনকি স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা মোটা চালেরও দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সুযোগ বুঝে খুচরা বিক্রেতারা ইচ্ছা মতো দাম বেঁধে চাল বিক্রি করছেন। আর একের পর এক হাত বদলে গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারে চালের দাম আরও বাড়ানো হচ্ছে।
নাগেরবাজার এলাকার পাইকারি চাল বিক্রেতা প্রদীপ কুমার সাহা জানান, তাদের যে পরিমাণ চালের দরকার অর্ডার দিলেও তা পাচ্ছে না। ১০০ বস্তা চালের অর্ডার দিলে মোকাম থেকে মাত্র ২০ বস্তা চাল দিচ্ছে। এ অবস্থায় চালের ঘাটতি দেখা গিয়েছে।
তিনি জানান, ৬ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কেজি বেড়ছে চালের দাম বেড়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি মিলমালিকদের সিন্ডকেটের কারণে চালের দাম বেড়েছে বলে ওই ব্যবসায়ী জানান।
ফলপট্টি-মসজিদ রোডের খুচরা চাল ব্যবসায়ী প্রবীর সাহা অভিযোগ করে বলেন, চালের মিলমালিকরা সিন্ডিকেট করে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতি বস্তায় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে চালের দাম বাড়িয়েছে। অস্বাভাবিক হারে চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের কাছে তাদের হেনস্তা হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চালের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে।
নাগেরবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী গোপাল সাহা জানান, দিনমজুর এবং নিম্ন আয়ের মানুষ সাধারণত যে ধরণের চাল খায় বাজারে সেই চালের বেশি সংকট। চাহিদা অনুযায়ী সেই চাল পাওয়া যাচ্ছেনা। নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদার চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা। বাজারে চালের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী।
পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে অনাবৃষ্টিতে আমন চাষ নিয়ে শঙ্কায় কৃষক
ঠাকুরগাঁওয়ে অনাবৃষ্টিতে আমন চাষ নিয়ে শঙ্কায় কৃষক
আমনের ভরা মৌসুমে অনাবৃষ্টিতে ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকরা ধান রোপন করতে পারছেন না। এছাড়া ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকেরা পড়েছেন নতুন সমস্যায়। এ অবস্থায় জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান উৎপাদন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে জেলা কৃষি অফিস।
দেশের উত্তরের কৃষি নির্ভর একটি জেলা ঠাকুরগাঁও। বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে আমন চাষ করে অধিকাংশ মানুষ। যেখানে সেচ সুবিধা রয়েছে সেখানে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দানারহাট, বরুনাগাঁও, শীবগঞ্জ, নারগুন, বেগুনবাড়ি, খোঁচাবাড়ি ও জেলার পীরগঞ্জ, হরিপুর, রানীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষক আমন চারা রোপন করছেন। সেচ এলাকায় কৃষক আমনের চারা তুলছেন, আবার কোথায় চারা রোপন করছেন। তবে বৃষ্টির পানির অভাবে উঁচু জমিতে লাগানো ধানের ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। এখনো বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় রয়েছেন এ জেলার কৃষক।
অপরদিকে ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকেরা পড়েছেন সমস্যায়। আমনের ক্ষেতে পানি নিতে শ্যালো মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু কিছু স্থানে বিদ্যুতচালিত পাম্প ব্যবহার করে সেচ কাজ করার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ না থাকায় তাও ব্যাহত হচ্ছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপগুলিও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে ঠিকমত চলতে পারছে না। ফলে নানামুখী সমস্যায় রয়েছেন কৃষকেরা।
সদর উপজেলার ভেলজান গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি এ বছর আড়াই একর জমিতে আমন ধান লাগানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড রোদ ও তাপদাহে এবং বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি।
সদর উপজেলার পারপুগী এলাকার কৃষক গিয়াস উদ্দিন জানান, প্রত্যেক বছরের মত এ বছর তিনি ৩ একর জমিতে আমন চারা লাগাবেন। জমি প্রস্তুতও করেছেন, কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে শ্রমিক নিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। এ অবস্থায় আমন লাগানোর সময় পার হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর। এর মধ্যে এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে মাত্র ১৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, অন্যান্য ফসলের মতো ধানের জন্যও বিখ্যাত এ জেলা। প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন হয় এ জেলায়। প্রত্যেক বছরের ন্যায় এ বছরও কৃষকদের যাবতীয় কৃষি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বৃষ্টির পানির অভাবে একটু সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে উচু জমিগুলোতে পানি থাকছে না।
তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি না হওয়া পর্যন্ত সম্পূরক সেচ ব্যবস্থা চালু রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেচ পাম্পগুলোও সচল রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান উৎপাদন হবে। কৃষকেরা এ বছরও ধানের ন্যায্য দাম পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পড়ুন: ফরিদপুর জেলা কারাগার: ৯১৪ বন্দির জন্য একজন ফার্মাসিস্ট, নেই চিকিৎসক
চলাচলের অনুপযোগী ফরিদপুর পৌরসভার শতাধিক কিলোমিটার সড়ক
ফরিদপুর জেলা কারাগার: ৯১৪ বন্দির জন্য একজন ফার্মাসিস্ট, নেই চিকিৎসক
ফরিদপুর জেলা কারাগারে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক না থাকায় পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না বন্দিরা। অসুস্থ বন্দিদের জন্য ডায়াগনস্টিক পরীক্ষারও কোন ব্যবস্থা নেই। প্রাচীন এই কারাগারে বিপুল সংখ্যক বন্দিদের জন্য টিনসেডে ঘরের একটি কক্ষ রোগীদের জন্য রাখা হয়েছে, যদিও তা ব্যবহারের অনুপযোগী।
১৮২৫ সালে ৩৪ একর জায়গা নিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্র মূল সড়কের ( মুজিব সড়ক) ঝিলটুলী এলাকাতে প্রতিষ্ঠিত হয় এই কারাগার। ৯ একর জায়গা বন্দিদের থাকার ব্যবস্থার স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, অন্য ২৫ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে পুকুর, কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসনের ইমারত।
ফরিদপুর কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানিয়েছেন, প্রাচীন এই বন্দিশালায় ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৪২০ জন। বর্তমানে ৮৯৭ জন পুরুষ, ১৭ নারী বন্দি অবস্থান করছেন, যদিও প্রতিদিন বন্দি কম-বেশি আপডাউন করে। এখানে একটি পদ রয়েছে সহকারি সার্জন, সেটি এক যুগের বেশি সময়ে শূন্য রয়েছে।
তিনি বলেন, বন্দিদের কেউ অসুস্থ হলে আমরা ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করি। এছাড়াও জেলা সিভিল সার্জন অফিস একজন চিকিৎসককে প্রেষনে দায়িত্ব দিয়েছেন, তিনি মাঝে মধ্যে আছেন। এর বাইরে আমাদের একজন সিনিয়র ফার্মাসিস্ট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যে জনবল রয়েছে তাতে বন্দি রোগী একজনকে বাইরের হাসপাতালে প্রেরণ করলে তার পেছনে তিন জন ফোর্স দিতে হয়। এতে অন্য কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
ফরিদপুরের কারাগারের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার দায়িত্বে থাকা ফার্মাসিস্ট আশরাফুল আলম জানান, কম করে হলেও কারাগারে বন্দিদের জন্য দুই থেকে তিন জন চিকিৎসক দরকার। এছাড়াও অসুস্থ বন্দিদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য পৃথক একটি হাসপাতাল পাশাপাশি তিন থেকে চার জন সেবিকা ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখার দরকার।
জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে বিভিন্ন রোগ নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছে এক হাজার ৫০ বন্দি, বর্তমানে দুইজন বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে। এছাড়াও গত এক মাসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এক বন্দি।
জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক জানান, শুধু ফরিদপুর কারাগারে বন্দী নয় পার্শ্ববর্তী অন্য জেলার কারাগার থেকে অসুস্থ বন্দি আসেন এখানে। তাদের কারাবিধি নিয়মানুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য কারারক্ষীদের প্রহরায় সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ফরিদপুর কারাগারের বেসরকারি কারা পরিদর্শক কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, ফরিদপুরের কারাগারের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বন্দি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বন্দিদের নানাবিধ সমস্যা হয় এটা সত্য।
তিনি বলেন, কারাগারের বন্দিদের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চিকিৎসা সেবাসমূহ নিশ্চত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিতে হবে।
ফরিদপুর কারাগারের বন্দিদের চিকিৎসা সেবা অপ্রতুল প্রসঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) অতুল সরকার বলেন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে একজন চিকিৎসককে কারাগারে সংযুক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত কারাগার পরিদর্শন করা হয়, বন্দিদের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ নেয়া হয়। বড় কোন সমস্যা সৃষ্টিহলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।
পড়ুন: চলাচলের অনুপযোগী ফরিদপুর পৌরসভার শতাধিক কিলোমিটার সড়ক
অরক্ষিত রেলক্রসিং: ফেনীতে ৭ মাসে ৯ জনের মৃত্যু
চলাচলের অনুপযোগী ফরিদপুর পৌরসভার শতাধিক কিলোমিটার সড়ক
পাঁচ লাখেরও বেশি জনসংখ্যার ফরদিপুর পৌরসভার সড়কগুলো সংস্কারে গত চার বছরে নতুন কোনো প্রকল্প নেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় সড়কগুলোতে ছোট বড় গর্ত তৈরি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে ২২.৩৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ফরিদপুর শহরকে ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে পৌরসভায় রুপান্তর করা হয়। ১৯৮৩ সালে এই পৌরসভাকে ‘গ’ থেকে ‘খ’ শ্রেণীতে এবং ১৯৮৬ সালে ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নতী হয়।
বর্তমানে ৬৬.৩১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে ফরিদপুর পৌরসভা কাজ চলছে। ২০০৯ সালে পৌরসভার জনসংখ্যা ছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৩৭ জন। ২০১৯ সালের হিসেবে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় পাঁচ লাখ ৫৭ লাখ ৬৩১ জন।
এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য পৌরসভার মালিকানাধীন সড়ক রয়েছে ৪৪৫ কিলোমিটারের ২৮টি সড়ক। এর মধ্যে ১২৫ কিলোমিটারের ১৬টি সড়কের অবস্থা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
দীর্ঘ সময় সংস্কার না হওয়া সড়কগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান সড়ক অম্বিকা চরণ মজুমদার সড়ক। এটি ঝিলটুলী মহল্লা এলাকার জেলা পরিষদের ডাকবাংলো থেকে শুরু হয়ে মহাকালী পাঠশালার মোড়ে গিয়ে মিশেছে।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি চরকলাপুর ও পূর্বখাবাসপুর লঞ্চঘাট জোড়া সেতু হয়ে শহরে প্রবেশের জন্য একটি সংযোগ সড়ক হিসেবেও কাজ করে।
এই সড়কের পুরো অংশে ছোট বড় গর্ত হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, অনেকদিন হলো সড়কটি মেরামত হচ্ছে না। বাড়ি থেকে বের হয়েই সড়কে নেমে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়। বৃষ্টি হলে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়।
পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার সুফি আব্দুল বারি সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ে আছে। ওই এলাকার বাসিন্দা ঠিকাদার দুলাল হোসেন বলেন, কয়েক বছর হলো সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে না। খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে, বৃষ্টি হলে আর চলাচলের উপায় থাকে না।
পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার কানিজ সড়কে তিনশ মিটার অংশ সংস্কার না করায় ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক গাজী মোকসেদুর রহমান (৬৫) বলেন, সড়কটি নিয়ে বিপদে রয়েছি। এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার। পৌরকর বাড়ছে, নাগরিক সুবিধা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।
পড়ুন: অরক্ষিত রেলক্রসিং: ফেনীতে ৭ মাসে ৯ জনের মৃত্যু
অরক্ষিত রেলক্রসিং: ফেনীতে ৭ মাসে ৯ জনের মৃত্যু
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ফেনী অংশে শশর্দী থেকে মুহুরীগঞ্জ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটারের মধ্যে অনুমোদনহীন অরক্ষিত ১২টি ও ২১টি অনুমোদিত রেলক্রসিং রয়েছে। চলতি বছরের ৭ মাসে রেলপথের ফেনী অংশে ট্রেনে কাটা পড়ে ৯ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
ট্রেনকে ভ্রমণের অন্যতম নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা সত্ত্বেও প্রতি বছর বাংলাদেশে রেল দুর্ঘটনায় বহু মানুষ মারা যায়। জানুয়ারি ২০২২ সালে প্রকাশিত রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে ১২৩টি রেল দুর্ঘটনায় প্রায় ১৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
গত ২৯ জুলাই মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ১১ তরুণের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও দুজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্য দিয়ে নিরাপদ রেলক্রসিংয়ের বিষয়টি ফের সামনে উঠে আসে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঊর্ধ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশলী (পথ) রিটন চাকমা জানান, প্রতিনিয়ত ইচ্ছেমতো রেলের ওপর দিয়ে পথ তৈরি করা হচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব ক্রসিংগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে মুহুরীগঞ্জে। এখানে ৬টি অনুমোদনহীন রেলক্রসিং তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া শর্শদী, দেওয়ানগঞ্জ, ফাজিলপুরে রয়েছে আরও ৬টি। সবচেয়ে ঝূকিপূর্ণ হচ্ছে মুহুরীগঞ্জ।
ফেনীর বারাহীপুর রেলক্রসিং এলাকার দায়িত্বে থাকা গেটম্যান জীবন জানান, ট্রেন আসার আগেই গেট বন্ধ করা হয়। কিন্তু গাড়ীর ড্রাইভার ও পথচারীরা দ্রুতত রেল লাইন পার হওয়ার চেষ্টা করে। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়।
অনুমোদনহীন এসব রেলক্রসিং প্রসঙ্গে ফেনী রেলস্টেশন মাস্টার সাইফুল ইসলাম বলেন, রেলপথের পাশে বসতঘর থাকায় বিভিন্ন সময় অনুমোদনহীন ক্রসিং তৈরি করা হয়। ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কা অনেক বেশি বাড়ছে।
রেলওয়ে পুলিশের ফেনী ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নফিল উদ্দিন জানান, চলতি বছরের ৭ মাসে রেলপথের ফেনী অংশে ট্রেনে কাটা পড়ে ৯ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় ৯টি অপমৃত্যুর মামলাসহ ১২ মামলা রেকর্ড হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত বছরের ১১ অক্টোবর ভোরের দিকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফতেহপুর রেলক্রসিংয়ে যাত্রীবাহি বাস রেললাইনে উঠে পড়লে ট্রেনের সাথে সংঘর্ষ ঘটে। এতে ৪ ব্যক্তি প্রাণ হারান। এছাড়া বারাহীপুর রেলক্রসিং, শহরের রেলগেট ক্রসিংয়ে সাম্প্রতিককালে দুর্ঘটনা ঘটে এবং প্রাণহানিও হয়।
পড়ুন: মিরসরাই ট্রাজেডি: আয়াতের পর এবার চলে গেলেন তাসমির হাসান