বিশেষ সংবাদ
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ যেভাবে একজন তরুণ আইটি উদ্যোক্তার জীবন বদলে দিয়েছে
মুন্সি সোহাগ হোসেন এক সময় ভ্যান চালাতেন এবং পড়াশোনার খরচ যোগাতে দোকানে কাজ করতেন। তবে তিনি এখন মাগুরার একজন তরুণ আইটি উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন।
মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের একটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন ২৪ বছর বয়সী যুবক সোহাগ।
২০১৬ সালে ভারতীয় আইসিসিআর স্কলারশিপ পেয়ে গুজরাট টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে আইটি বিষয়ে স্নাতক করার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন সোহাগ।
স্নাতক শেষ করার পর ২০২০ সালে আইটি সেক্টরে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল সেক্টর বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে।
স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সোহাগ মাগুরা সদরে ‘পলিটেকস’ নামে একটি ফার্ম গড়ে তোলেন, যা তার জীবন বদলে দেয়।
সম্প্রতি সোহাগের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কীভাবে একটি স্থায়ী বাড়ি তার পড়াশোনায় সহায়তা করেছে এবং ডিজিটাল বিপ্লব তাকে একজন আইটি উদ্যোক্তা করে তুলেছে।
১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে নোয়াখালীতে নদী ভাঙনে তাদের বাড়িঘর এবং সমস্ত সম্পদ হারিয়ে তার পরিবার উদ্বাস্তু জীবনযাপন করে। এরপর ১৯৮৬ সালে তারা মাগুরায় চলে আসেন। শেষে ১৯৯০-এর দশকে গৃহহীন পরিবারের জন্য তৈরি গুচ্ছগ্রামে একটি বাড়ি পান তার মা সখিনা বেগম।
পড়ুন: ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপ ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠা: জয়
২০১৭ সালে সোহাগ তার বাবা মুন্সি আবুল হোসেনকে হারিয়েছেন। তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে তিনি পরিবারে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছেন। অন্য দুই ভাইয়ের ভাঙ্গারি (ছোট) ব্যবসা আছে।
সোহাগ বিজ্ঞান বিভাগে ২০০৯ সালে এসএসসি এবং ২০১১ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। মাগুরা আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০১২ সালে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়ন বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেন।
হঠাৎ করেই ভারতীয় স্কলারশিপ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
সোহাগ বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন দিনমজুর। দরিদ্র্য হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল স্কলারশিপ নিয়ে ভারতে যাওয়া।’
স্কুল জীবনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে অনেক অপমান শুনতে হয়েছে। আমি যখন পড়াশোনায় ভালো করতাম, তখন সচ্ছল পরিবারের অনেক ছাত্র আমাকে অপমান করত। তবে কেউ কেউ আমাকে উৎসাহিত করেছেন।
২০২০ সালে সোহাগ যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন আইটি সেক্টরে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চাকরি না করার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ডিজিটাল বাংলাদেশে স্ব-কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বানে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি।’
সোহাগ তার আশেপাশের মানুষের প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্য 'পলিটেকস' নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছেন।
পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে মাটি ছাড়াই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষ
তিনি বলেন, ‘আমরা মাগুরা সদর উপজেলা প্রশাসনের জন্য একটি বড় ডেটা-ম্যানেজমেন্ট সফ্টওয়্যার তৈরি করেছি যাতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রকৃত তথ্য জানতে এবং সেই অনুযায়ী তাদের জন্য পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়।’
তার প্রতিষ্ঠানটি এখন একই উদ্দেশ্যে জেলার শ্রীপুর উপজেলায় আরেকটি ডেটা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি করছে।
তিনি জানান, তার ফার্ম বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরি করে এবং মাসে প্রায় এক লাখ টাকা আয় করে। তার ফার্মে তিনজন প্রকৌশলী ও দুজন বিপণন কর্মকর্তা রয়েছেন।
সোহাগ বলেন, ‘আমরা সিকমেড, তিরুপতি ইন্টারন্যাশনাল, শেরপাস্পেসের মতো কিছু বিদেশি কোম্পানির সাথেও কাজ করছি।
এছাড়াও সোহাগের ফার্ম যুব সম্প্রদায়ের জন্য তাদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং সাইবার-নিরাপত্তা জ্ঞানের জন্য কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘কীভাবে ব্যবসাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপ দিতে হয় সেই বিষয়ে আমি প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার, সোহাগ সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে (ডিজিটাল বাংলাদেশের) একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। তিনি আইটি আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং ব্যবহার করে একজন আইটি উদ্যোক্তা হয়েছেন।’
পড়ুন: বৃষ্টির পর ঢাকা শহরে এডিস মশার আতঙ্ক বেড়েছে
বৃষ্টির পর ঢাকা শহরে এডিস মশার আতঙ্ক বেড়েছে
রাজধানী ঢাকায় এডিস মশার ঘনত্ব আগের বছরের তুলনায় বেশি। আসন্ন বর্ষাকালে যা আরও বাড়তে পারে, ফলে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটতে পারে।
ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) এর গবেষকরা আশঙ্কা করেছেন, রাজধানীতে বৃষ্টির পরে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের হার উদ্বেগজনক পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, গত বছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে দেশে ১০৫ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং ২৮ হাজার ৪২৯ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই রাজধানী ঢাকার নাগরিক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস ট্রান্সমিশন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের সাম্প্রতিক এক জরিপে ভয়াবহ পরিস্থিতির তথ্য উঠে এসেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীনে ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি সাইটে ১০ দিনের তথ্য নিয়ে এই কীটতত্ত্ব জরিপটি পরিচালিত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুসারে, জরিপ করতে ২১ সদস্যের একটি দল সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রায় তিন হাজার বাড়ি পরিদর্শন করেছে। এতে ১৫০টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, যা মোট সংখ্যার ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস ট্রান্সমিশন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের আরেকটি দলও ঢাকায় বসবাসকারী মশার প্রজাতির সংখ্যা এবং অন্যান্য জীবাণু শনাক্ত করতে মশা ধরতে কাজ করছে।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকায় মারাত্মক পোকামাকড়ের অঞ্চল ভিত্তিক ঘনত্ব জানতে ইন্সটিটিউট অফ এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) গবেষণা পরিচালনার পর মশার ঘনত্ব দ্বারা জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ম্যাপিং সম্পন্ন করবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরামর্শ দিয়েছে যে ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশনকে এখনই মশা নিয়ন্ত্রণ এবং মানুষের জন্য মশার আতঙ্ক রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা উচিত।
এতে আরও বলা হয়েছে, নগরবাসীকেও এই অভিযানে সম্পৃক্ত করা উচিত।
আরও পড়ুন: মশা নিয়ে বিড়ম্বনায় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বসুন্ধরা, বাড্ডা, ভাটারা, কুড়িল, মিরপুর, আগারগাঁও, শ্যামলী, বনশ্রী, যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, ধানমন্ডিসহ পুরান ঢাকার অনেক এলাকা মশার উৎপাতের কেন্দ্রস্থল।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা এলাকায় সারা বছরই মশা থাকলেও সিটি করপোরেশন খুব কমই লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড স্প্রে করে।
তিনি বলেন, ‘মশার কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা সন্ধ্যায় ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারে না। আমরা মশার উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পেতে মশারি এবং কয়েল ব্যবহার করি।’
মিরপুরের বাসিন্দা মাইনুল হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশন মাঝেমধ্যে কীটনাশক স্প্রে করে, যা মশার বংশবৃদ্ধি রোধে পর্যাপ্ত নয়। সিটি করপোরেশনের উচিত এ বিষয়ে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।
ঠাকুরগাঁওয়ে মাটি ছাড়াই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষ
দ্রুত নগরায়ণের কারণে কমছে কৃষি জমি। ফলে ইচ্ছে সত্ত্বেও অনেকে বাগান কিংবা সবজি চাষ করতে পারেন না। তবে আশার কথা হচ্ছে মাটি ছাড়াই অভিনব পদ্ধতিতে মাটির সংস্পর্শ ছাড়াই বিষমুক্ত লেটুসসহ শাক-সবিজ ও ফল চাষ হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে।
২০১৭ সালে ৬০ শতক জমি নিয়ে পরীক্ষামূলক মাটি ছাড়া এই বিশেষ পদ্ধতিতে খলিশাখুড়ি গ্রামের ৬ বন্ধু যৌথভাবে লেটুসসহ শাক-সবজি ও ফল চাষ শুরু করেন। অভিনব এই পদ্ধতিতে আবাদ করে সফলও হয়েছেন তারা। ২০১৯ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে তাদের খামারে বিদেশি সবজি লেটুসসহ দেশীয় ফল ও শাক-সবজি।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে এই ছয়জন উদ্যোক্তা হলেন জাফর ইবনে হাসান, নাহিদ হোসেন, আল আমিন, সাবাহ্ সাঈদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শাহরিয়ার।
আরও পড়ুন: খুলনাঞ্চলের বোরো ধানে পোকার আক্রমণ: লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা
গ্রীন হাউসের মতো এ বিশেষ পদ্ধতিতে উৎপাদিত নিরাপদ ও বিষমুক্ত এই সব শাক-সবজি সরবরাহ করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকার নামী-দামি রেস্টুরেন্ট গুলোতে। তবে সরকারি সহায়তা পেলে আরও বেশ কয়েকটি খামার গড়তে চান উদ্যোক্তারা।
সরেজমিনে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার খলিশাখুড়ি গ্রামে সবজি খামারে গিয়ে দেখা যায়, প্লাস্টিক পাইপের মাধ্যমে ১৬টি খাদ্য উপাদান মিশ্রিত পানি স্বয়ংক্রিয় পাম্পের মাধ্যমে সঞ্চালন করে মাটি ছাড়া চাষাবাদ চলছে। আর পাইপ ছিদ্র করে বেড়ে উঠা লাগোনো গাছে স্বল্পপরিসরে চাষ করা হচ্ছে শসা, লাউ, মরিচ, ধনেপাতা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, পেঁয়াজ, রসুন, তরমুজ, করলাসহ আরও কয়েক ধরনের সবজি।
একটি পানির পাম্প দিয়ে দিনে দু’বার মাটির বিভিন্ন উপাদান মিশ্রিত পানি আদান প্রদান করা হয়।
সবজির খামারের নিয়মিত শ্রমিকেরা বলেন, ‘অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করা খামারে কাজ করছি। এখানে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদন করা হয়। কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে মালিকের কথা অনুযায়ী কাজ করি আমরা।’
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরোর বাম্পার ফলনের আশা কৃষকের
ডুমুরিয়ায় খাল দখল করে চলছে মাছ চাষ
খুলনা জেলার ডুমুরিয়ায় সদ্য খনন করা আড়ুয়া দোয়ানী খালে অবৈধ দখল দিয়ে মাছ চাষের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খালটির একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়ে কয়েকটি অংশ তৈরি করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ফলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় রয়েছে এলাকাবাসী। তাছাড়া খালের পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করতে দেয়া হয় না এমনও অভিযোগ রয়েছে দখলদারদের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নে বিলপাবলা মৌজাধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাল হাতুড়ী দোয়ানী। ২০২০-২১ অর্থ বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার সরকারি টাকায় মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে খালটি খনন হয়। খনন হওয়ার পর শহর এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি খালটি অবৈধ দখলে নিয়ে কয়েকটি স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে।
কৃষক শহীদ মুন্সি ও লিয়াকত সরদার জানান, খাল খনন হওয়ায় উপকারের চেয়ে এখন ক্ষতির দিকটা বেশি হয়েছে। যারা খাল দখল করছে তারা খালপাড়ে লাগানো আমাদের ফসল জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিলাম এবার খালের পানি দিয়ে বোরো আবাদ করবো। কিন্তু ওরা (খাল দখলদাররা) খালের পানি নিতে দেয়নি।
পড়ুন: ঈদকে সামনে রেখে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় বিশেষ কর্মযজ্ঞ
ইউপি চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম বলেন, মৎস্য দপ্তর খালটি খনন করার পরপরই বয়রা এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি যে যার মত খালে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। কৃষকদের অভিযোগ আছে, দখলদাররা খাল থেকে কৃষিকাজে পানি দেয়নি। বিষয়টি আমি এসিল্যান্ডকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
তিনি বলেন, অবিলম্বে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা না হলে বিলপাবলা বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দিক বলেন, জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় খুলনা ইউনানী মেডিকেল কলেজ থেকে সাঈদ ঢালীর আম বাগান পর্যন্ত হাতুড়ি দোয়ানী খালটি গত বছর পুনঃখনন করা হয়। খালে স্থানীয় কৃষকদের মাছ চাষাবাদের কথা থাকলেও শহরকেন্দ্রিক কিছু লোক খালটি দখল করে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মামুনুর রশীদ জানান, সরকারি খালে অবৈধ বেড়িবাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কোন সুযোগ নেই। দ্রুত খালে অভিযানে যাব। অবৈধ ওইসব বাঁধ উচ্ছেদসহ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পড়ুন: খুলনাঞ্চলের বোরো ধানে পোকার আক্রমণ: লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা
ঈদকে সামনে রেখে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় বিশেষ কর্মযজ্ঞ
আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষদের বিশেষ সেবা দিতে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় চলছে বিশেষ কর্মযজ্ঞ। ৫০টি নতুন বগি প্রস্তুত করতে চলছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের এই ব্যস্ততা।
১৭ কোটিরও বেশি মানুষের দেশে চলাচলের জন্য রেল যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে আন্তঃজেলা ভ্রমণের ক্ষেত্রে রেলে সর্বোচ্চ মানুষ যাতায়ত করে।
নির্ধারিত কর্মঘণ্টার পরও অতিরিক্ত সময় দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কাজ করছেন এখানকার শ্রমিকরা। বাতিল করা হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকল ধরণের ছুটি।
আরও পড়ুন: রেলমন্ত্রীর আশ্বাসে রানিং স্টাফদের ধর্মঘট প্রত্যাহার
সরেজমিনে সৈয়দপুর কারখানার জিওএইচ, উৎপাদন মেশিন শপ, ক্যারেজ শপ, হুইল শপ, বগি শপ ও সিএইচআর শপ ঘুরে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের এমন ব্যস্ততা।
সকাল ৭টা থেকে শুরু করে টানা বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবিরাম কাজ হচ্ছে কারখানার ২৪টি বিভাগে।
কারখানায় শ্রমিকরা কেউ রঙ, কেউ বডি প্রস্তুত করণ, কেউ ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ তৈরি, কেউ চাকা মেরামত, কেউ ওলেল্ডিং, আবার কেউ কোচের সিট মেরামতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
ইতোমধ্যে প্রস্তুত হওয়া ৩০টি বগি হস্তান্তর করা হয়েছে রেলওয়ের পাকশি ও লালমনিরহাট বিভাগে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের রেল খাতে বিনিয়োগ করতে চায় স্পেন
উৎপাদন মেশিন শপের শ্রমিক রেজাউল ইসলাম জানান, ৩০ মিনিটের বিরতি ছাড়া তারা সকাল ৭টায় কারখানায় প্রবেশ করে বের হন বিকাল ৫টার পর। ঈদের কারণে তারা একঘণ্টা ওভারটাইম করছেন। তবে তারা কাজটি করতে পেরে খুশি।
একই বিভাগের আরেক শ্রমিক ইসকেন্দার আলী বলেন, ঈদের কারণে বাড়তি চাপ থাকে আমাদের উপর। সেকারণে অনেক কিছু ভুলে আমরা নিবেদিত হয়ে মানুষদের সেবায় কাজ করে থাকি।
তিনি বলেন, এখানে ৩০০ শ্রমিকের প্রয়োজন থাকলেও আছেন মাত্র ৫০ জন।
হুইল শপের শ্রমিক ইলিয়াস হোসেন নামে আরেক শ্রমিক জানান, অন্যান্য সময় দৈনিক আমি ২-৩টি চাকার কাজ করি, এখন ঈদকে ঘিরে চাপ থাকায় অতিরিক্ত সময় মিলে পাঁচটি পর্যন্ত করতে হচ্ছে।
কারখানার জিওএইচ শপের ইনচার্জ সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, এই ঈদে ৫০টি নতুন কোচ যুক্ত হবে আন্তঃনগরের বিভিন্ন বহরে। প্রতি কোচে ১০০ জন করে হলে ৫০টি কোচে পাঁচ হাজার যাত্রীকে অতিরিক্ত হিসাবে দৈনিক সেবা দেয়া যাবে বাড়তি ভাবে।
ঈদের সময় যাত্রী চাপ কয়েকগুণ বেশি থাকায় এ ব্যবস্থা জানান তিনি।
আরও পড়ুন: আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় রেলমন্ত্রীর অসন্তোষ
খুলনাঞ্চলের বোরো ধানে পোকার আক্রমণ: লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা
খুলনাঞ্চলের বোরো ধানের খেতে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনও সুফল মিলছে না। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা সূত্রে জানা গেছে, এ বছর খুলনা জেলায় ৬২ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা মেট্টোপলিটন এলাকায় ৫৩৫ হেক্টর, লবণচরা এলাকায় ৩৬০ হেক্টর, রূপসা উপজেলায় পাঁচ হাজার ৭১৫ হেক্টর, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ছয় হাজার ৫০ হেক্টর, দিঘলিয়া উপজেলায় চার হাজার ৯০০ হেক্টর, ফুলতলা উপজেলায় চার হাজার ২৩০ হেক্টর, ডুমুরিয়া উপজেলায় ২১ হাজার ৯০০ হেক্টর, তেরখাদা উপজেলায় আট হাজার ৩৫০ হেক্টর, দাকোপ উপজেলায় ২১৫ হেক্টর, পাইকগাছা উপজেলায় পাঁচ হাজার ৬২৫ হেক্টর ও করা উপজেলায় চার হাজার ৮৫০ হেক্টর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ধানক্ষেতে মাজরা পোকা দেখা দিলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এ পোকা ধানের ফলনে কোনও ক্ষতি করে না। পোকা দমনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে হবে।’
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে ঢলের আশঙ্কায় হাওরে দ্রুত ধান কাটার অনুরোধ করে মাইকিং
তবে ধানের ছড়া থেকে শীষ বের হতে শুরু করতেই শীষগুলোতে পোকার আক্রমণ দেখা দিচ্ছে।ফলে ওই ছড়াতে আর ধান না হয়ে শুকিয়ে সাদা (চিটা) হয়ে যাচ্ছে। ওই পোকার আক্রমণ থেকে বোরো ধান রক্ষায় কৃষকদের বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এর পরও প্রতি বিঘা জমিতে পাঁচ থেকে ছয় মণ করে ধান কম পাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
জদুর বিল এলাকার কৃষক সলেমান সরদার বলেন, ‘বোরো রোপণের পর ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত কোনও পোকা আক্রমণ করেনি। হঠাৎ করে ক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। রক্ষা পেতে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেছি। এরপরও প্রতিকার মিলছে না।’
কৃষক আবুল সরদার ও কামরুল ঢালী বলেন, ‘এ বছর বোরো ধানের বীজ খুবই ভালো ছিল। কিন্তু পোকা সব শেষ করে দিচ্ছে। ধানের শীষ কেটে দিয়েছে।’
কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কয়রা উপজেলার বিভিন্ন বোরো ক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। তাছাড়া কৃষকরা বেশি ফলনের আশায় কৃষি বিভাগের অনুমোদনহীন বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ করে থাকেন। সেই জাতগুলো নতুন ধরনের মাজরা পোকা ও রোগবালাই বহন করে এবং আক্রান্ত হয়। একই মাঠে বা পাশাপাশি জমিতে সেসব জাতের ধান চাষ করার কারণে পোকা ও রোগবালাই অনুমোদিত জাতের ধানেও ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে কৃষকদের সুপরামর্শ দেয়া হলেও তারা মানেন না। তবে ইতোমধ্যে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হবে: কৃষিমন্ত্রী
অপরদিকে পাইকগাছায় চলতি মওসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনেও হাঁসি নেই কৃষকের মুখে। কোন কোন এলাকায় শেষ সময়ে নেক ব্লাস্টের আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। প্রস্তুতি না থাকায় কৃষি বিভাগের পরামর্শেও কাজ হয়নি আক্রান্ত ক্ষেতে। ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় কর্তন শুরু হলেও শীষে ধান না থাকায় শ্রমিকের মজুরী উসুল হচ্ছেনা। এমন পরিস্থিতিতে প্রণোদনা দাবি করেছেন তারা।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘নেক ব্লাস্ট থেকে রক্ষা পেতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষক পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, মাইকিং, লিফলেট বিতরণপূর্বক ও কৃষকদের করণীয় তুলে ধরেছেন।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা উফশি জাতের ধান কাটা শুরু করেছেন। বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তবে কোন এলাকার কৃষকরা বলছেন ভিন্ন কথা, তাদের দাবি, প্রস্তুতি না থাকায় তারা ধানের পরিবর্তে চিটাসহ গাছ কর্তন করছেন। এজন্য তারা কৃষি বিভাগের আগাম সতর্কতা কিংবা পরিকল্পনাহীনতাকেই দায়ী করছেন।
কৃষি অফিস জানায়, চলতি মওসুমে নেক ব্লাস্ট উপজেলায় বোরো খেতে খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি। তাদের হিসাবমতে, উপজেলায় মাত্রা ৪০ হেক্টর জমিতে এ ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, কৃষি বিভাগের সার্বিক তদারকি ও কৃষকদের অতিরিক্ত সতর্কতায় নেক ব্লাস্ট খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি। ব্লাস্ট ছাড়া অন্যান্য রোগ-জীবাণুর প্রকোপ কম ছিল বলেও দাবি তার। সব মিলিয়ে সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বাঁধ উপচে হাওরে ঢুকছে ঢলের পানি
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ঘরমুখো যাত্রীদের ভোগান্তির শঙ্কা
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে প্রয়োজনের তুলনায় ফেরি ও ঘাট স্বল্পতা থাকায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপ নিয়েই নৌযান পারাপার চলছে। এছাড়া শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকায় এই দুটি ঘাটে বাড়তি চাপ পড়ছে।
ইতোমধ্যে প্রায় দুই মাস ধরে দৌলতদিয়া প্রান্তে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে শত শত গাড়ির লাইন থাকছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে ভোগান্তিতে পড়ছেন হাজারো মানুষ। ফেরি ও ঘাট স্বল্পতার দ্রুত সমাধান করতে না পারলে আসন্ন ঈদযাত্রায় বাড়তি ভোগান্তিতে পড়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ
এদিকে সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি যানবাহন ও যাত্রী পারাপারের বিশেষ ব্যবস্থার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া ফেরি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অনেকবার বাধার মুখে পড়েছি কিন্তু হাল ছাড়িনি: বান্নাহ
ঈদে টিভি চ্যানেলগুলোতে কয়েকশ নাটকের প্রচার হয়ে থাকে। সাত দিনব্যাপী প্রচারিত এই নাটকের সংখ্যা ও মান নিয়ে প্রতিবারই বিভিন্ন প্রশ্ন তৈরি হয়। এ নিয়ে নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ ইউএনবির সঙ্গে কথা বলেছেন।
প্রতি বছর ঈদে নাটকের সংখ্যাটা বাড়ছে। কিন্তু মান নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকছে। এতো সংখ্যক নাটকের মধ্যে মান ঠিক রাখাটা সম্ভব হয়ে উঠছে কি-না?
মাবরুর রশীদ বান্নাহ: সংখ্যার চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে কাজটা ঠিকঠাক হচ্ছে কি-না। কারণ নাটকের গল্প, অভিনয়, প্রোডাকশনসহ অন্যান্য বিষয়ে মানের দিকে নজর দিলে কাজটা ভালো হবে। যেমন আমি কিন্তু সংখ্যায় অনেক কাজ করি। কিন্তু সার্বিক মানের বিষয়টি আমি নিশ্চিত রাখার চেষ্টা করি। আমার দর্শকদের কাছ থেকেও এমন প্রতিক্রিয়া পাই। তবে সব কাজ যে শতভাগ ভালো হয় তেমনটাও না। সারাবছর হলিউডে কত কনটেন্ট তৈরি হয়, সবগুলোর কথা কী আমরা জানি। নেটফ্লিক্সে প্রতি সপ্তাহে একশর মতো নতুন কনটেন্ট মুক্তি পায়। সবগুলো কিন্তু আমরা দেখি না বা সবগুলো জনপ্রিয়তাও পায় না। আমরা সেগুলোর সম্পর্কেই জানি যেগুলোর মান ভালো এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাই বলব, যেহেতু এটা ব্যক্তিগত পেশাদার জায়গা। সেক্ষেত্রে সংখ্যা যাই হোক যদি প্রতিটি ক্ষেত্রে নজর দিতে পারি তাহলে মান ঠিক থাকবে মনে করি।
মান কমে যাওয়ার বড় একটা কারণ বাজেট সংকট। সংশ্লিষ্টরা এমটাই বলছেন। এক্ষেত্রে কী নাটকের সংখ্যার চেয়ে বাজেটের দিকে নজর দেয়া যায় না?
মাবরুর রশীদ বান্নাহ: বিষয়টা আমরা যত সহজে দেখি, ততটা সহজ নয়। কারণ আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল বেড়েছে যার সঙ্গে এখন ইউটিউব যোগ হয়েছে। সেই হিসেবে আমার তো মনে হয় এই পরিমাণ নাটক হওয়ার কথাই ছিল। কারণ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সাত দিনব্যাপী ঈদের অনুষ্ঠান প্রচার করে। যার মধ্যে অন্যতম নাটক। এক্ষেত্রে নির্মাতাদের বাজেটের ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। আমরা যদি মানের দিকে শক্তভাবে নজর দিয়ে কাজ করি তাহলে পরিস্থিতি বদলাবে। আর বাজেট বেশি হলে প্রোডাকশনের মানও পাল্টে যাবে। কিন্তু সংখ্যা কমানোটা সহজ হবে না। বরং আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন: অস্কার ২০২২:সেরা অভিনেত্রী জেসিকা চ্যাস্টেইন
নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেক প্রযোজকদের কাজটি নিয়ে বিভিন্ন প্রত্যাশা থাকে। নির্মাতা হিসেবে আপনারও নিজস্ব একটা ভাবনা থাকে। এই জায়গায় কখনও দ্বন্দ্ব হয় কি-না?
মাবরুর রশীদ বান্নাহ: যখন নবীন নির্মাতা ছিলাম তখন এমনটা অনেক সময় হয়েছে। দিন দিন সেটি কমেছে। এখন একবারেই যে হয় না তেমনটাও না। বিষয়টা এমন পর্যায়ও গেছে যে কাজ পর্যন্ত হয়নি। আসলে আমাদের এখানে টেলিভিশনগুলো চাহিদা থাকে। সেগুলোই প্রযোজকরা চায়। আমার মনে হয় তাদেরও জায়গাটা বুঝতে হবে। আমাদের তারকা নির্ভর কাজ প্রয়োজন। কিন্তু সব কাজ যদি তারকাদের নিয়ে হয় তাহলে নতুনরা কীভাবে সুযোগ পাবে। একুশটি শর্টফিল্ম নিয়ে 'বাইশে একুশ' নামে একটা প্রজেক্ট হচ্ছে। যেখানে আমার সঙ্গে বিভিন্ন সময় কাজ করেছেন এমন নির্মাতা বানিয়েছেন। এটির প্রযোজক আল ফাই। তাকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ নতুনদের সুযোগ দিলে সেখান থেকে আগামীর তারকারা বের হবেন।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আপনার কাজে অনেক নতুন মুখ দেখা যায়। তাদের অনেকে এখন জনপ্রিয়। নতুনদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে কেমন পড়তে হয়েছে?
মাবরুর রশীদ বান্নাহ: নতুনদের নিয়ে কাজ করাটা সবসময় চ্যালেঞ্জের। একপ্রকার বাজি ধরতে হয়। অনেক প্রযোজক ও টিভি চ্যানেলে সাপোর্ট পাওয়া যায় না। তবে আমি বোঝাতে চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয় বোঝালে বোঝে। সেক্ষেত্রে নির্মাতার সেই দায়িত্বটা নিতে হয়। বোঝানের দক্ষতা তার থাকা উচিত মনে করি। আর আমি সেই প্রমাণ দিয়েছি। যারা এক সময় নতুন ছিলেন, তাদের অনেকেই এখন দেশের জনপ্রিয় তারকা। ভালো কাজ করছেন। হ্যাঁ, আমি বাধার মুখে পড়েছি কিন্তু হাল ছাড়িনি।
এবার আপনার কাজের প্রসঙ্গে আসি। দর্শকরা ঈদে আপনার কোন নাটকগুলো পাচ্ছে?
মাবরুর রশীদ বান্নাহ: বেশ কয়েকটি নাটক এবার আসছে। সেগুলোর মধ্যে জোভান ও সাফা কবিরকে নিয়ে 'লাভ জার্নি', ইরফান সাজ্জাদ ও সাফা কবির জুটির 'অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ', তাহসান খান ও বিদ্যা সিনহা মিমের 'আদার হাফ' রয়েছে। এছাড়াও ঈদের আগে আরও কয়েকটি নাটকের কাজ শেষ করতে হবে। অন্যদিকে ১৪টি শর্টফিল্ম নিয়ে একটা বিশেষ প্রজেক্ট করেছি। নাম 'ত্রিপল এস'। এটা আমার এক্সপেরিমেন্টাল প্রজেক্ট। পোস্ট প্রোডকশনের কাজ চলছে। প্রজেক্টটি আমার ফেসবুক পেজ থেকে দেখানো হবে।
আরও পড়ুন: অস্কার ২০২২:সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম 'ড্রাইভ মাই কার'
ওটিটিতে এখন অনেক নির্মাতাই কাজ করছেন। ধারণা করা হচ্ছিল আপনাকেও এরসঙ্গে পাওয়া যাবে। যদিও সময়টি এখনও আসেনি। এর কারণ কী বলবেন?
মাবরুর রশীদ বান্নাহ: আসলেই সময়টা এখনও আসেনি। আর আমার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। মূল কথা ওটিটিতে আমি যেই কাজটি দর্শককে দেখাতে চাই সেই সুযোগ এখনও পাইনি। সবাই করছে, দেখেও ভালো লাগছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরোর বাম্পার ফলনের আশা কৃষকের
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বোরো ধানের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। ধান গাছে শীষ ফুটতে শুরু করেছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরো ধান গাছের সবুজ পাতা ও কাঁচা শীষ। আর সেই সাথে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। দিগন্ত জোড়া সবুজ ফসলের মাঠ দেখে কৃষকের চোখে মুখে এখন আনন্দ। বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে এবার বোরোর বাম্পার ফলন আশা করছেন কৃষকরা।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠে ঘুরে দেখা যায়, বোরো ধানের মাঠে সবুজের সমারোহ। ধানের খেতে উঁকি দিচ্ছে শীষ। কৃষকরা ব্যস্ত ধান ক্ষেতের পরিচর্যায়। কেউ কেউ ব্যস্ত জমিতে সেচ, সার, কীটনাশক প্রয়োগে, আবার কেউ কেউ ব্যস্ত আগাছা পরিষ্কারে।
কৃষকরা জানায়, এবার আবাদ মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে, বীজ, সার, সেচের কোন সমস্যা নেই। জমিতে এখন পর্যন্ত রোগ বালাই বা পোকা মাকড়ের তেমন বড় ধরনের সমস্যা হয়নি। দু’য়েক বার কীটনাশক প্রয়োগের ফলে তা সেরে গেছে। বোরো ধানের পরিস্থিতি ভালো। বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা কৃষকদের।
সদর উপজেলার আতাহার এলাকার বোরো চাষি আকবর আলী বলেন, এবার আমার ১০ বিঘা জমিতে বোরো আছে। এখন শীষ ফুটছে। অন্য বছরের চেয়ে এবার পোকামাকড়, রোগ বালাই তেমনভাবে নেই। এবার সবকিছু ভালোই আছে। এমন থাকলে ফলন ভালো হবে।
পড়ুন: সুনামগঞ্জে ঝুঁকিতে বোরো ফসল, আতঙ্কে কৃষক
অনেক জমিতে শীষ আসছে আবার অনেক জমিতে শীষ পুরোপুরি ফুটে গেছে।
একই এলাকার আরেক চাষি জাহাঙ্গীর জানান, এবার তিনি ৬ বিঘায় বোরো ধান চাষ করেছেন। এখন ধানের অবস্থা ভালো। শীষ আসতে শুরু করেছে। সার-সেচের সমস্যা নেই। বৈশাখ মাসের মাঝামঝিতে ধান কাটা শুরু হবে।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ যদি বালা মসিবত না দেয় তাহলে এবার বাস্পার ফলন হবে। ২৫-২৬ মন বিঘায় ফলন পাওয়া যাবে। বর্তমানে ধানের বাজার দর ভালো আছে। ১৩’শ-১৪’শ টাকা মন দও চলছে। এমন বাজার দর থাকলে কৃষকরা লাভবান হবে।’
নাচোল এলাকার চাষি সামাদ আলী জানান, মাঠের অবস্থা ভালো। আশা করি ভালো ফলন পাব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৯ হাজার ৪০০ হেক্টর। কিন্তু লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৫১ জাহার ২৪০ হেক্টর।
তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের লোক কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে, শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে এবার বোরোর ভালো ফলন হবে আশা করা হচ্ছে।
পড়ুন: থমকে আছে দর্শনা-দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর প্রকল্প
থমকে আছে দর্শনা-দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর প্রকল্প
বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও চুয়াডাঙ্গা জেলার দুটি শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দরে উন্নীত করার পরও বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
দর্শনা স্থলবন্দর ও দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙার দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলায় অবস্থিত।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, প্রতিবেশি দেশ ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি সহজতর করার জন্য দর্শনা এবং দৌলতগঞ্জ স্থল শুল্ক স্টেশনগুলোকে যথাক্রমে ২০০২ সালের ১২ জানুয়ারি এবং ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবে বেশ কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও এ দুটি স্থলবন্দর চালু হয়নি।
বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আংশিকভাবে রেলপথে দর্শনা শুল্ক স্টেশন দিয়ে করা হয়। তবে স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন এখনো অনেক দূরের কথা।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ দুটি স্থলবন্দর চালু হলে ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার কমে যাবে। বেনাপোল স্থলবন্দরের তুলনায় এ দুটি স্থলবন্দর রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াতের সময়ও ২-৩ ঘণ্টা কমিয়ে দেবে।
দূরত্ব ও সময় কমলে এ দুই বন্দর দিয়ে সহজে, দ্রুত এবং অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে পারবে। ফলে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের তুলনায় সরকার বেশি রাজস্ব আয় করতে পারবে।
দর্শনা ও দৌলতগঞ্জ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে সেখান দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে, এতে বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপর থেকে যেমন চাপ কমবে, ঠিক তেমনি আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের আর্থিক ক্ষতি অনেকটাই কমে আসবে।
চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, বন্দর দুটি চালু হলে জেলার ব্যবসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
তিনি বলেন, ‘বন্দর চালু হলে ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা জাগ্রত হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসবেন এখান দিয়ে পণ্য আমদানির জন্য। পাল্টে যাবে চুয়াডাঙ্গা জেলার অর্থনৈতিক দৃশ্যপট।’
দর্শনা স্থলবন্দর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর মহকুমার অন্তর্গত গেঁদে সীমান্ত বন্দরের বিপরীতে দর্শনা সীমান্তে অবস্থিত। এই বন্দরের রুট হল দর্শনা-গেঁদে রেল সংযোগ ও সড়ক।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে ঝুঁকিতে বোরো ফসল, আতঙ্কে কৃষক
ঢাকা থেকে দর্শনা স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ২৫৮ কিলোমিটার। এই স্থলবন্দরটি সড়ক ও রেলপথে ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত। তাই বন্দরটি চালু হলে এ বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো.আলমগীর চলতি বছরের ২২ মার্চ দর্শনা স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন।
বন্দর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে দর্শনা বন্দর পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। বন্দরের ভূমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে তার সংস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, ‘যখনই আমরা এখানে আসি, আমরা ভারতীয় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। তারা জানতে চায় বন্দর চালু করতে আমরা কতটা অগ্রগতি করেছি। আমরা ২০০৪ সালে এই বন্দরের অনুমোদনের চিঠি পেয়েছি। তারপর থেকে আমরা ভারত ও বাংলাদেশের উভয় পক্ষের মতামত নেয়ার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করছি।’
২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর দর্শনা- গেঁদে বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন ভারতের ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান ও বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সেক্রেটারি এন এন সিনহা। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানও সেসময় বন্দর কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
পরে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য জাকিয়া সুলতানার নেতৃত্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি দল স্থলবন্দরের জন্য ৪৫০ বিঘা জমি অধিগ্রহণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এ জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হলে হলে ট্রাক টার্মিনাল, রেলইয়ার্ড শেড, ওয়ার হাউজ, আবাসিক এলাকাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।