বিশেষ সংবাদ
মিলছে না ন্যায্যমূল্য, লোকসানে চুয়াডাঙ্গার পান চাষিরা
চুয়াডাঙ্গার প্রধান অর্থকরী ফসল হচ্ছে পান। পান চাষে এই জেলার অসংখ্য চাষি স্বাবলম্বীও হয়েছেন। এ জেলার পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হতো। কিন্তু বর্তমানে করোনাসহ নানা কারণে এখন রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া অসময়ে বৃষ্টি, ছত্রাকজনিত নানা রোগ, কুয়াশা ও তীব্র শীতে পান পেকে যাওয়া, সার, কীটনাশক, মজুরিসহ উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে পান চাষিদের। তবে জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকদের পানের ন্যায্যমূল্যে নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এদিকে, অধিক খরচ আর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় দিনে দিনে পান চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে চুয়াডাঙ্গার পান চাষিরা। প্রতি বছর লোকসান গুনতে গুনতে অনেকেই পানের বরজ ভেঙে অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছেন। এরই মধ্যে নতুন করে পানের বাজারে বড় দরপতনে আবারও পান চাষ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ জেলায় প্রচুর পান হয়ে থাকে। তুলানামূলক উঁচু জমিতে পান আবাদ ভালো হওয়ায় যুগযুগ ধরে পানের আবাদ করে আসছে এখানকার চাষিরা। পানকে জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল বলা হলেও বর্তমানে তা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। এখনকার বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। এক সময়ে এ পানের আবাদকে কেন্দ্র করেই জেলায় ঘুরেছে অর্থনীতির চাকা। ধীরে ধীরে সে চাকার গতিও কমে আসছে। পানের চাষ পরিবর্তন করে অনেকেই শুরু করেছেন ভুট্টা, ধানসহ নানা ধরনের ফসলের আবাদ।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় খাল পুনঃখননে কৃষকের মুখে হাসি
তবে স্থানীয়রা পান চাষিদের অভিযোগ,‘যে দামে পান বিক্রি করতে হচ্ছে তা দিয়ে উৎপাদন খরচ উঠছে না। কষ্ট করে পানের আবাদ করি আমরা (চাষিরা) আর মুনাফা যায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের পকেটে।’
ঝিনাইদহে গড়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গড়াই নদী আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত ভাঙনে বসতভিটা ও চাষের জমি হারিয়ে অনেকে সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন। যে হাতে মুঠো ভরে সাহায্য দিতো অন্যকে, সেই হাত এখন সাহায্যের জন্য হাত বাড়ায়।
অনেকে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ তখন যে টাকা ছিল তা দিয়ে নতুন জমি কিনতে পারত।
কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেক মন্ডল তাদের একজন।
গত কয়েক বছরে তিনি নদীর তীব্র ভাঙন থেকে বাঁচতে অন্তত সাতবার জায়গা বদল করেছেন।
এক সময় তার একটি টিনশেড ঘর, দশ বিঘা ফসলি জমি থাকলেও এখন তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
মালেক বলেন, ‘ভিটেবাড়ি আর চাষের জমি সবই চলে গেছে গড়াই নদীর গর্ভে। একটা সময় ছিল যখন আমি অন্যদের সাহায্য করতাম। এখন আমি অন্যদের কাছে সাহায্য চাই।’
মালেকের মতো নদীতে বাড়িঘর ও জমি হারিয়েছে বহু মানুষ।
একই গ্রামের আব্দুর রহিম মন্ডল জানান, তিনি বসতবাড়ির জায়গা পাল্টেছেন ছয় বার। তারও ৮ বিঘা জমি ছিল। পাঁকা পোতার টিনের চৌরি ঘর ছিল। বাড়িতে গরু-ছাগল ছিল। যা হারিয়ে এখন অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। তারও সবকিছু চলে গেছে এই গড়াই নদীতেই।
এই অবস্থা ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের উত্তরপাড়ার। যে পাড়াতে ৪০টি পরিবার বসবাস করতেন, এখন সেখানে আছেন ৫টি। বাকিরা নদী ভাঙনে সব হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। অনেকে ভিটেবাড়ি হারিয়ে যাবাবরের মতো জীবন কাটাচ্ছেন। যারা এখনও আছেন তারাও নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে।
পড়ুন: সেতুর অভাবে ৩০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ
সেতুর অভাবে ৩০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ
ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা ‘ছোট ফেনী নদী’। নদীর দু’পাশে রয়েছে ১০ থেকে ১৫টি গ্রাম। নদী পাড়ি দিয়ে দুই পাশের প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে চলাচল করতে হয়। নদীতে একটি সেতু নিমার্ণের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো সুফল পায়নি। সেতুর অভাবে এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ জনগণের ভোগান্তির শেষ নেই। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে কথা বলে দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন ফেনীর জেলা প্রশাসক।
জানা গেছে, যারা নিয়মিত ছোট ফেনী নদী পারাপার হয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করেন, তাদের একমাত্র ভরসা একটি খেয়ানৌকা। বিশেষ করে ইউনিয়নের পূর্বঘোনা গ্রামের জনসাধারণদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামটির তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ছোট ফেনী নদী। এই গ্রামের স্কুল-মাদরাসা ও কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ হাজারও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন দড়িটানা নৌকা দিয়ে পার হয়ে ফেনী সদর এলাকায় যাতায়াত করতে হয়। নদী পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। বর্ষা মৌসুমে এই নদী পার হওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।
পড়ুন: পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বার্ষিক বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের
স্থানীয় বিরলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, একটি সেতুর জন্য ভুক্তভোগী মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সেতু নির্মাণের কার্যকর কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ছে না। এই অবস্থায় দুটি উপজেলার কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩০ হাজার মানুষ সেতুর অভাবে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দাবি জানাতে জানাতে এখন সাধারন মানুষ হতাশ হয়ে গেছে।
রাজাপুর ও পাঁচগাছিয়ার নদী পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আশেপাশের ১০-১৫টি গ্রাম ফেনী সদর ও দাগনভূঁঞা উপজেলার অর্ন্তভুক্ত হলেও এসব গ্রাম তাদের উপজেলা সদর থেকে অন্তত ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই এসব গ্রামের মানুষ বাজার-খরচ থেকে শুরু করে শিক্ষা-চিকিৎসা সেবাসহ নানা কাজে ও আত্মীয়তার সূত্রে জেলা ও উপজেলা শহরে যেতে হয়। এ অবস্থায় একটি সেতুর অভাবে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চলাচলকারী লোকজনের মধ্যে অন্তত পাঁচ শতাধিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছে।
বিরলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, তাঁর বিদ্যালয়ের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীর অধিকাংশই রাজাপুর ঘোনার বাসিন্দা। ওই শিক্ষার্থীদের আশেপাশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে নৌকাডুবির আশংকা থাকায় স্কুলে আসে না।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া সুলতানা বলেন, ‘নৌকা পারাপারে আমাদের খুব ভয় হয়। কখনো কখনো নৌকায় উঠতে-নামতে আমাদের বই-খাতা, ড্রেস ভিজে যায়। তাই বাধ্য হয়ে ক্লাস না করে আমরা বাড়ি ফিরে যাই।’
বিরলী দারুল উলুম ইসলামীয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য মনোয়ার হোসেন শিমুল বলেন, এখানে ছোট ফেনী নদীর ওপর কোনো সেতু না থাকায় দিনের বেলায় নৌকা পাওয়া গেলেও রাতে মাঝি থাকে না। এতে রোগীসহ জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগে দুর্ভোগের অন্ত থাকে না স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পড়ুন: প্রতিকূলতার মাঝেও শিক্ষা গ্রহণে সাফল্যের পথে উপকূলের নারীরা
পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক লিটন বলেন, ‘এখানে একটি সেতু নির্মাণ হলে জনদুর্ভোগ অনেক কমবে। এ ব্যাপারে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে দ্রুতযোগযোগ করে সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, ‘উন্নয়নের বড় নিয়ামকই হচ্ছে যোগাযোগ। যোগাযোগের ফলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। ওই এলাকার জনগণ যেটি চাচ্ছেন সেটি অবশ্যই একটি বিবেচনার বিষয়। এ বিষয়ে আমি স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলবো এবং যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবো।’
পড়ুন: স্বাবলম্বী জমির প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ও জমি দিলেন অন্য গৃহহীনকে
কুমিল্লায় খাল পুনঃখননে কৃষকের মুখে হাসি
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তত্ত্বাবধানে কুমিল্লার চান্দিনার কাজীপাড়া খাল ও চৌদ্দগ্রামের কানাইল খাল পুনঃখননে তিন হাজার একর ফসলি জমি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এতে দুই উপজেলার কৃষকরা নতুন আশার স্বপ্ন দেখছেন।
স্থানীয় কৃষক ও বিএডিসির সূত্র জানায়, চান্দিনার কাজীপাড়া খালটি সাড়ে তিন কিলোমিটার ও চৌদ্দগ্রামের কানাই খালটি চার কিলোমিটার খনন করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কুমিল্লা। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন ও বন্যায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার একর জমির ফসল রক্ষা পাবে। এছাড়া খালে ধারণকৃত পানি শুকনো মৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: স্বাবলম্বী জমির প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ও জমি দিলেন অন্য গৃহহীনকে
এদিকে, কানাইল খালটি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের লালাপুর ব্রিজের পশ্চিম পাশ হতে কানাইল খালের অবস্থান। খালটি খননে প্রায় এক হাজার একর জমির ফসল রক্ষা পাবে।
সরেজমিন চান্দিনার বাড়েরা এলাকায় দেখা গেছে, খনন না হওয়ায় কাজীপাড়া খালটি ভরাট হয়ে যায়। এক সময় সেখানে অনেকে ধান চাষ হতো। পানির সংকট ও জলাবদ্ধতায় কারণে বেশ কিছুদিন জমিগুলো অনাবাদী ছিল। বর্তমানে খনন হওয়ায় খালে পানি এসেছে। এখন কৃষকরা খাল থেকে পানি তুলে ধান ও সবজির খেতে দিচ্ছেন।
স্বাবলম্বী জমির প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ও জমি দিলেন অন্য গৃহহীনকে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার ঘর ও জমি পেয়ে জমির উদ্দীন এখন নিজেই স্বাবলম্বী। নিজের বসবাসের ঘরটি এলাকার অন্য দরিদ্র অসহায় মানুষকে দেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে ঘর ও জমির দলিল হস্তান্তর করে প্রশাংসায় ভাসছেন তিনি।
জমির উদ্দিন বিশ্বাস (২৮), চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের মৃত খেদের বকসোর ছেলে। এক মেয়ে, স্ত্রী নিয়ে সংসার তাঁর।
গত বছরের ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৮টি ঘর উদ্বোধন করেন। সেই থেকে ভূমিহীন দিনমজুর জমির উদ্দিন আন্দুলবাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে উপহারকৃত বাড়িতে পরিবারসহ বসবাস শুরু করেন। তখন থেকে তার আয় বাড়ায় তিনি এখন স্বাবলম্বী।
আরও পড়ুন: ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫০ হাজার ঘর নির্মাণ হচ্ছে
তাই জমির উদ্দিন বিশ্বাস সম্প্রতি সস্ত্রীক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার বসত ঘর ও জমির দলিল জমা দেন এবং অন্য কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে এই ঘর দেয়ার অনুরোধ জানান। এই ঘরটি অন্য কোনো গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
জমির উদ্দিন বিশ্বাস পেশায় ছিলেন একজন দিনমজুর। সারা দিনের উপার্জিত অর্থ দিয়ে কোনো রকমে চলছিল সংসার। তবে ভূমিহীন হওয়ায় ঠাঁই হয়েছিল মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া শাহাপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে। এতে কিছুটা আর্থিক কষ্ট লাঘব হলেও স্বাচ্ছন্দ্য আসছিল না। তবে এবার মাথা গোজার ঠাঁই হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে কলা ক্রয় করে বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করে প্রতিদিন আয় করছেন ৫শ’ থেকে এক হাজার টাকা। এতে প্রতি মাসে আয় হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ফলে পরিবারে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন ভালোই আছেন তিনি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর জমির উদ্দিন বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী আফরোজা খাতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার বসত-ঘর ও জমির দলিল জমা দেন।
তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী (অফিসার ইউএনও) আরিফুল ইসলাম রাসেল, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ুন কবির, আন্দুলবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তারসহ জমির উদ্দিনের বাড়িতে হাজির হন এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় জমির উদ্দিন বলেন, ‘আমার তো এখন নিজের মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। সমাজে আমি ছাড়া এখনও অনেক দরিদ্র, ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তি আছে, এই ঘরটা আমি তাদের দিতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই আমি স্বাবলম্বী হয়ে জমি ও ঘর তৈরি করে ফেলেছি। এখন এই ঘর ও জমি আমার আর প্রয়োজন নেই। তাই আমি চাই, এই ঘরটা অন্য কোনো দরিদ্র মানুষ পাক।’
আরও পড়ুন: হুমকির মুখে আশ্রয়ণ প্রকল্প, গাইবান্ধায় ২১ গ্রাম প্লাবিত
আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্যান্য বাসিন্দারা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্রয়স্থল দিয়েছেন। আগে আমাদের খুব খারাপ দিন গেছে। এখন আমাদের থাকার জায়গা হয়েছে, সেই সঙ্গে সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য আয়ের সুযোগও হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।’
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম রাসেল বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি স্বপ্ন, দেশে যাতে কেউ গৃহহীন না থাকে, সে জন্য তিনি ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তিদের জমি এবং ঘর দিয়েছেন। সে ধারাবাহিকতায় জীবননগর উপজেলার শাহপুর গ্রামের দিনমজুর জমির উদ্দিনকে একটি ঘর দেয়া হয়েছিল। সেই ঘরে বসবাস করে নিজে পরিশ্রম করে আজ তিনি স্বাবলম্বী। এ জন্য তিনি নিজ নামে অন্য স্থানে জমি কিনে ঘর করে বসবাস করায় নিজে লিখিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া জমি ও ঘর হস্তান্তর করেন। এবং অন্য দরিদ্র ব্যক্তিকে দেয়ার জন্য বলেন। তাঁর এই মহতী উদ্যোগের জন্য জীবননগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই।’
উল্লেখ্য, জীবননগর আন্দলবাড়িয়ার শাহাপুরে ভূমিহীন পরিবারগুলোর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে একটি আদর্শ আশ্রয়ণ প্রকল্প। এ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেয়া ঘর পান ভূমিহীনরা।
প্রতিকূলতার মাঝেও শিক্ষা গ্রহণে সাফল্যের পথে উপকূলের নারীরা
উপকূলীয় অঞ্চলে জেডিসি বা এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়া নারীদের আনেকেই তাদের স্বামীর সহযোগিতা এবং নিজস্ব প্রচেষ্টায় সাফল্যের পথে রয়েছে।
কেউ কেউ গর্ভবতী অবস্থায় দিয়েছেন পরীক্ষা। বিয়ের পর থেকে সংসারের কাজ তো করেই চলেছেন তারা। তবুও অদম্য ইচ্ছায় থেমে নেই উপকূলের এসব নারীরা। এসএসসি/দাখিলের মত এইচএসসি/ আলিমেও সফল তারা।
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার নারীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির সম্মুখীন, দারিদ্রতা, বিয়ে, সংসার, স্বামীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায়, সন্তান লালন-পালন, সমাজের বাধাসহ নানা প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে শিক্ষা জীবনে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে তিন শতাধিক পরিবার
দুই সন্তানের জননী রেদওয়ানা আক্তার মীম। কয়রা উপজেলার দেয়াড়া পশ্চিমপাড়ার মুদি ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিনের দুই মেয়ের মধ্যে বড় তিনি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় পার্শ্ববর্তী শিমলার আইট গ্রামের নাসির হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। স্বামী মৎস্য দপ্তরের একটি প্রকল্পে চাকরি করেন। চাকরির সুবাদে বিয়ের পরে স্বামীর সঙ্গে চলে যেতে হয় ভিন্ন উপজেলায়। বিয়ের পরে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলেও পরবর্তীতে স্বামীর অনুপ্রেরণা তার পড়ালেখার গতি আরও বাড়িয়ে দেয়। সংসার সামলানোর পাশাপাশি বাসায় বসে লেখাপড়া চালু রাখেন তিনি। শিক্ষিত হওয়ায় বাড়িতে পাঠদানে সহযোগিতা করতেন তার স্বামী । একপর্যায়ে জয়পুর শিমলারআইট দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসা থেকে ২০১৭ সালে জিপিএ-৪.৫৫ নিয়ে জেডিসি পাশ করেন। পরে একই মাদরাসা থেকে ২০১৯ সালে গর্ভবতী অবস্থায় জিপিএ-৪.০৬ নিয়ে দাখিল পাশ করেন তিনি। পরবর্তীতে তার কোল জুড়ে আসে ছেলে সন্তান।
পরে আলিম পরীক্ষার ৩ মাস পূর্বে আরও একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ৩ মাস বয়সের ছেলেকে কেন্দ্রে নিয়ে এবারের আলিম পরীক্ষায় কালনা আমিনিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে জিপিএ-৪.৩৬ অর্জন করেছেন। সর্বদা স্বামীর একান্ত সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
খুলনার রূপসা উপজেলার তালিমপুর গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের মেয়ে শামীমা আক্তার। ১০ম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় বিয়ে হয় কয়রার দেয়াড়া পশ্চিমপাড়ার নিম্নবিত্ত পরিবারের মুজাহিদ নামের এক অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তার স্বামী দারিদ্রতার কষাঘাতে খুলনা শহরে ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি উভয়ের পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। রূপসা উপজেলার নৈহাটী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে জিপিএ-৩.৯৭ নিয়ে বাণিজ্য বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে সন্তানকে লালনপালনের পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যান। তবে অর্থাভাবে গেল বছরের ফরম পূরণ করতে পারিনি। এবার পরীক্ষা দেয়ার ইচ্ছা নিয়ে শেষের দিকে কয়েক মাস কোচিং করেন তিনি, ঋণ নিয়ে করেন ফরম পূরণ। বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ- ৪.৩৩ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী নারীরা: প্রধানমন্ত্রী
খুলনার দাকোপ উপজেলার এক দারিদ্র পরিবারের মেয়ে মর্জিনা। ১০ম শ্রেণিতে থাকাবস্থায় বিয়ে হয় কয়রা উপজেলার বাগালী গ্রামের ইদ্রিস হোসেনের সাথে। দাকোপের নলীয়ান দাখিল মাদরাসা থেকে ২০১৮ সালে জিপিএ- ৪.৬৫ নিয়ে দাখিল পাশ করেন। সন্তান লালন পালন, দারিদ্রতাসহ নানা প্রতিকূলতায় কৃতিত্বের সঙ্গে পাশের পরেও আলিমে ভর্তি হতে পারেননি তিনি। কিন্তু প্রবল ইচ্ছায় পরের বছর স্বামী ও পরিবারের সহযোগিতায় আলিমে ভর্তি হন।এ বছরের আলিম পরিক্ষায় জিপিএ-৪.৩৬ অর্জন করেছেন তিনি। স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি।
শুধু মীম, শামীমা, মর্জিনা নয়, উপকূলীয় প্রতিকূলতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে টিকে থাকা বহু নারী বিয়ের পরেও সাফল্যের সাথে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেয়াড়া পশ্চিমপাড়ার আরেক নারী বিয়ের পরেও এবছর কয়রা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। তিনি এসএসসিতে জিপিএ- ৪.৬৩ ও জেএসসিতে ৪.৮৩ অর্জন করেছিলেন। তবে অধিকাংশ মেধাবী ছাত্রীরা দারিদ্রতার কষাঘাতে মেধার বিকাশ ঘটাতে পারছেন না।
এইসএসসি পাশের পর বিয়ে হলেও অর্থাভাবসহ নানা প্রতিকূলতায় স্বামী ও পরিবারের সহযোগিতা না পেয়ে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে এমন নারীও রয়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বে বাংলাদেশের নারীরা যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কয়রা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেশমা আক্তার রুমি বলেন, বাল্যবিবাহের মত সেই বাধাকে টপকিয়ে স্বামী, সন্তান, সংসার সামলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রান্তিক সমাজের অদম্য এসব নারীরা। এসকল অদম্যদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। তাদের জন্য দোয়া রইল যেন আল্লাহর কৃপায় সফলতার চূড়ায় পৌঁছাতে পারে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে শুধু নিজেদেরকেই নয় পুরো পরিবার, সমাজ এমনকি বিশ্বকে-ই আলোকিত করবে ইনশাল্লাহ। আমরাও চেষ্টা করব উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের পাশে থাকার।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘উপকূলীয় জনপদের নারীরা পিছিয়ে না থেকে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাক এটা সবারই প্রত্যাশা। তবে তারা যাতে বাল্যবিবাহের শিকার না হয়, এ ব্যাপারে সচেতন থাকার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’
পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বার্ষিক বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের
দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সরকার পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বার্ষিক বরাদ্দ ১৪ শতাংশ করে বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
এই খাতে মোট ব্যয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮৬১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন টাকা; ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৮৭ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন টাকা এবং চলতি অর্থবছর ২০২১-২২ এ ৭২০ দশমিক ২৮ বিলিয়ন টাকা ধরা হয়েছে।
এর আগে এই খাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪৫০ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন টাকা; ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৩৭ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬০১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন টাকা।
বাজেট নথি অনুসারে, একটি সুসংগঠিত পরিবহন ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক কাঁচামাল এবং চূড়ান্ত পণ্যের সুষম উত্পাদন ও বণ্টন নিশ্চিত করে দামের স্থিতিশীলতা রক্ষা করে ও দ্রুত শিল্পায়ন নিশ্চিত করে।
এতে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সরকার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিকে সহায়তা করতে সড়ক, রেল, সেতু, নৌপথ, বেসামরিক বিমান চলাচল ও টেলিযোগাযোগ খাতে চলমান সরকারি বিনিয়োগ বজায় রাখবে ও সম্প্রসারণ করবে।
আরও পড়ুন: প্রজন্মের উন্নয়নে চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ নতুন সড়ক নির্মাণ, পুরাতন সড়ক সংস্কার, ফ্লাইওভার/ওভারপাস, সেতু/কালভার্ট নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে এই বিভাগ দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোকে চার বা ততোধিক লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে।
বসন্ত দোলায় পর্যটকরা: ফাগুনে মেরিনড্রাইভ সেজেছে পলাশ-শিমুলের অপরূপ সাজে
আজ পহেলা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। আর ফাল্গুনের শুরুতেই অপরূপ সাজে সেজেছে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের দু’পাশ। পাহাড় আর সাগরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়টির দু’পাশে গাছে গাছে রং ছড়াচ্ছে পলাশ, শিমুলসহ নানা রঙের বাহারী ফুলে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে আমের মুকুল ও বাহারি নানা ফুল।
পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রকৃতির এমন রূপ দেখতে পর্যটকরা এখানে ভিড় করছেন। বসন্ত উৎসব উপলক্ষে হোটেল মোটেলগুলো পর্যটকদের জন্য নানা আয়োজন রেখেছে। এছাড়া পর্যটকদের জন্য প্রশাসনের পক্ষে থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: অবহেলায় ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি, সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই
সরেজমিনে দেখা গেছে, শীত শেষের দিকে ফাল্গুনে প্রকৃতির সাজে মুখরিত সমুদ্রসহ মেরিন ড্রাইভ সড়ক দেখতে আসে পর্যটকরা। মেরিন ড্রাইভের একপাশে সবুজের সমারোহ নিয়ে উঁচু পাহাড়, আরেক পাশে সমুদ্র। দু’পাশের সারি সারি পলাশ ও শিমুল গাছে ফুটেছে বাহারি রঙের ফুল। মাঝে মাঝে আমের মুকুল ও নানা রঙের ফুল শোভা বাড়িয়েছে বহু গুণ। গাছে গাছে পাখির কলতান আর মৌমাছির গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে ভিন্ন পরিবেশ। প্রকৃতির এমন রূপ দেখে আনন্দিত পর্যটকরা।
ঢাকার সাভার থেকে আসা দম্পতি মো. সাব্বির ও রেহেনা ইয়াসমিন জানান, কক্সবাজারের সমুদ্রের টানে এখানে আসলেও ফাল্গুনের শুরুতে মেরিন ড্রাইভ রোডের দু’পাশে ফোটা পলাশ, শিমুলও আকর্ষণের একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা সমুদ্র এবং পাহাড়ের মাঝাখানে রং ছিটিয়ে দিয়ে অপরূপভাবে সেজেছে। গতবছর মিডিয়ায় মেরিনড্রাইভের এমন সৌন্দর্য্য দেখে এবার কক্সবাজার ছুটে এসেছেন তারা।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ সূত্র জানায়, মেরিনড্রাইভ সড়কে ২০১২-১৩ অর্থবছরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১০ হাজার চারা রোপন করে। এসব গাছে ফুল ফোটে সড়কটি ফুলে ফুলে সুশোভিত হয়েছে। এসব গাছে পাখির কলতান আর মৌমাছির গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে ভিন্ন পরিবেশ। এর ধারাহিকতায় মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়িতে একটি ক্যাকটাস হাউজ, একটি অর্কিড হাউজ ও আরও তিন হাজার শুভাবর্ধনকারী চারা রোপন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে চলছে ইউপি কার্যক্রম
অবহেলায় ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি, সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই
অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি। বর্তমানে বাড়িটি দেখে বোঝার উপায় নেই এখানেই ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বসবাস করতেন। এটি এখন ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি, এতে ভাষা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
২০১০ সালে তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বাড়িটি পরিদর্শনে এসে এখানে ‘ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও গত প্রায় ১২ বছরেও এর বাস্তবায়ন হয়নি।
জানা যায়, ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের করাচিতে গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি ওই অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে সোচ্চার হন। তিনি অধিবেশনে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, গণপরিষদে যে কার্যবিবরণী লেখা হয় তা ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় লিপিবদ্ধ হয়। সমগ্র পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন। অধিবেশনে ইংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলা ভাষা ব্যবহারের দাবি তোলেন তিনি।
আরও পড়ুন: জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে চলছে ইউপি কার্যক্রম
তখনকার পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এতে ক্ষিপ্ত হন। এতে ধীরেন্দ্রনাথ তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রোষাণলে পড়ে কয়েকবার কারাবরণ করেন।
ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য আগে থেকেই টার্গেটে ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ। আর সে কারণেই ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ের এই বাড়ি থেকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তার ছেলে দিলীপ কুমার দত্তকে ধরে নিয়ে যায় কুমিল্লা সেনানিবাসে। সেখানে ৮৫ বছর বয়স্ক এই দেশপ্রেমিক রাজনীতিককে অমানবিক নির্যাতন চালায়। পরে বাবা-ছেলে দুজনকেই হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে তাদের মরদেহের সন্ধানও পায়নি পরিবার।
এরপর থেকে এ বাড়ির অবকাঠামো ক্রমেই ভেঙে পড়তে থাকে। এই বাড়ি দেখে এখন আর বোঝার উপায় নেই, এখানে এক সময় অবিভক্ত পাকিস্তানের এক প্রথিতযশা বর্ষীয়ান রাজনীতিক বসবাস করতেন।
আরও পড়ুন: সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না ৩১ লাখ টাকার সেতু
গবেষক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আহসানুল কবির বলেন, ধীরেন্দ্রনাথের বাড়িটি শুধু কুমিল্লাবাসীর না, এটি দেশের মানুষের অহংকারের জায়গা। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় আজ বাড়িটি জীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। বাড়িটিকে কেন্দ্র করে আরও আগেই অনেক কিছু হতে পারতো। কেন হয়নি এটি না ভেবে, এখনই রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাড়িটি সংস্করণে যদি আইনগত কোনো বাধা না থাকে প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করে এখানে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে একটি জাদুঘর করা হোক। যেটি দেখে শত শত বছর বাংলা ভাষা-ভাষি মানুষ অনুপ্রাণিত হবে।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নাজমুল বারী চৌধুরী বলেন, ‘বাংলা ভাষার প্রস্তাবক ও ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতি রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আমরা আন্দোলন সংগ্রামসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। জেলা প্রাশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছি। আমাদের দাবি এখানে ধীরেন্দ্রনাথের নামে একটি ভাষা জাদুঘর স্থাপন করা হোক।’
আরও পড়ুন: দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা: শীতেও ভবদহ অঞ্চলে ভোগান্তি
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সবকিছু করা সম্ভব নয়। ইতোপূর্বে আমরা ২২ লাখ টাকা খরচ করে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে স্টেডিয়ামের মূল গেটটি নির্মাণ করে দিয়েছি। ধীরেন্দ্রনাথ পরিবারের লোকজন বাড়িটি সংস্কারের দাবি তুললে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় দ্রুত সেটা করে দেবে। যেমনভাবে কুমিল্লায় শচীন দেববর্মণের বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছে।’
দেশে উচ্চ মাত্রার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রেখে যেতে পারে ওমিক্রন: প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞদের
করোনাভাইরাসের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ চলতি মাসের শেষের দিকেই হ্রাস পেতে পারে। একই সঙ্গে এটি দেশে অতি উচ্চ মাত্রার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও রেখে যেতে পারে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেছেন, ওমিক্রনের ব্যাপক বিস্তার বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে। এমনকি বিশ্বের অধিকাংশ দেশ অবশেষে করোনা মহামারির প্রায় দুই বছর ধরে বহুল আলোচিত হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে পারে।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিজন কুমার শীল, ডা. বে-নজির আহমেদ ও ডা. এম এইচ চৌধুরী লেনিন বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণের মাধ্যমে অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভবিষ্যতে করোনার একই ধরনের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারে।
তবে এই হার্ড ইমিউনিটি কতটা টেকসই হবে বা ভবিষ্যতে করোনার অন্য কোনো ধরনের বিরুদ্ধে কতটা ভাল কাজ করবে, তা তারা নিশ্চিত নন।
আরও পড়ুন: ৮৮ শতাংশ করোনা রোগী ওমিক্রনে আক্রান্ত: বিএসএমএমইউ’র জরিপ
ছদ্মবেশে আশীর্বাদ
গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডা. বিজন কুমার শীল বলেন, ওমিক্রনের ফলে অর্জিত অ্যান্টিবডি করোনার ডেল্টা বা অন্য সব ধরনকে টেক্কা দিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ফলে সৃষ্ট অ্যান্টিবডি ওমিক্রনকে প্রতিরোধ করতে পারেনি। তাই ওমিক্রন খুব শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। তাই বলা যায়, ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে, এই ইমিউনিটি ভবিষ্যতে ভাইরাসের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টকে প্রতিরোধ করতে পারবে।’
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়; বিশ্বের প্রায় সব দেশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের কারণে প্রাকৃতিক হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে যাচ্ছে।
ডা. বিজন বলেন, ওমিক্রনের উদ্ভবের আগে সারা বিশ্বে ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষের প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম অ্যান্টিবডি ছিল। ‘যেহেতু ওমিক্রন সারা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, তাই খুব কম মানুষই এই ঢেউয়ের ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডির বাইরে থাকবে। সুতরাং, ভবিষ্যতে আসা নতুন ধরনের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই।’
‘আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ ইতোমধ্যেই ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছে এবং বাকিরাও আগামী দিনে এটিতে সংক্রমিত হবে। তাই আমরা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক হার্ড ইমিউনিটির দিকে পৌঁছে যাচ্ছি।
তিনি ওমিক্রনকে ছদ্মবেশে আসা আশীর্বাদ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন এই ভ্যারিয়েন্টটি যে হার্ড ইমিউনিটি রেখে যাচ্ছে, তা ভবিষ্যতে করোনার অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট থেকে পরিত্রাণ পেতে সহায়তা করতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ বলেন, যে ভাইরাস যত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তা তত দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ‘ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও এটি হচ্ছে। কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা না ঘটলে এই মাসের মধ্যে ওমিক্রনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বন্ধ হয়ে যাবে। এর মানে আমরা এই সময়ের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করব।’
তিনি বলেন, একবার হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হলে যদি ভবিষ্যতে একই রকমের ভ্যারিয়েন্ট আসেও, তবুও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে না। ‘কিন্তু এই অ্যান্টিবডি কতদিন কাজ করবে তা বলা কঠিন। এটাও বলা মুশকিল যে নতুন এমন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসবে না, যা আগের ভ্যারিয়েন্ট বা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে অর্জিত অ্যান্টিবডিকে কাবু করে ফেলতে পারে।’
পড়ুন: ওমিক্রনের নতুন উপধরন আরও বেশি সংক্রামক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
প্রাকৃতিক টিকা
সারা বিশ্বে টিকার বৈষম্য রয়েছে জানিয়ে বিজন কুমার শীল বলেন, ‘অনেক দেশ এখনও তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিন দিতে পারেনি। স্বাভাবিকভাবেই ওমিক্রন এই বৈষম্য দূর করতে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ব্যাপক সংক্রমণের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে তা মূল্যবান। ‘এটি ভবিষ্যতে আসতে পারে এমন যে কোনো ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে একটি খুব শক্তিশালী অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করবে। এটি টিকার মতো কাজ করবে এবং অসুস্থতার তীব্রতা কমিয়ে আনবে। এটি টিকার মতো সংক্রমণ বন্ধ নাও করতে পারে, তবে এটি অসুস্থতার তীব্রতা কমিয়ে মানুষকে রক্ষা করবে।’
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, যদিও ওমিক্রন তুলনামূলকভাবে একটি ক্ষণস্থায়ী ধরন, তবুও এটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তৈরি করছে যা টিকার মতো কাজ করে।
তিনি অবশ্য বলেন, করোনার বিরুদ্ধে খুব শক্তিশালী প্রতিরোধ তৈরি করতে এখনও টিকার প্রয়োজন আছে। ‘যাদের প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি আছে তাদের যদি ভ্যাকসিন দেয়া হয়, তাহলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যাতে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবে।’
পড়ুন: করোনা রোগীদের ৭০-৮০ ভাগই ওমিক্রনে আক্রান্ত: স্বাস্থ্যমন্ত্রী