বিশেষ সংবাদ
স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় তিস্তাপাড়ের কৃষকেরা
তিস্তা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বাড়ছে দুর্ভোগ। অসময়ের বন্যা কৃষকের সোনালি ফসল কেড়ে নিয়েছে। এ কারণে তিস্তাপাড়ের লাখো কৃষকের চোখে মুখে এখন অজানা আতঙ্কের ছাপ। পরিবার পরিজন নিয়ে বাকি দিনগুলো কীভাবে কাটবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
জেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত লালমনিরহাট সদর, আদিতমারি, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে সৃষ্ট এ বন্যায় বেশি ক্ষতির সম্মুখীন কৃষকেরা। কার্তিকে পানিশূন্যে তিস্তার বুকে শীতকালীন শাকসবজি ছাড়াও ভুট্টা, বাদাম, রসুন, পেঁয়াজ, আলু, মসুর ডাল, ধান ও অন্যান্য ফসল বুনেছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎ ভারতের উজান থেকে ভাটিতে আসা পানিতে সবকিছু যেন শেষ হয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় ফসলের চরম ক্ষতি হয়েছে।
বন্যায় ফসল হারিয়ে দিশেহারা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চর রুদ্রেশ্বর গ্রামের সাইদুর রহমান। কয়েক বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছিলেন তিনি। একদিনের বন্যায় তার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কীভাবে বছরের বাকিটা সময় তিনি পার করবেন তা নিয়ে পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।
আরও পড়ুন: তিস্তায় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে সরকার: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
করোনার দীর্ঘ ছুটিতে নতুন আঙ্গিকে শাবিপ্রবির চিকিৎসা কেন্দ্র
করোনার দীর্ঘ ছুটিতে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে রূপ নিয়েছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের (শাবিপ্রবি) চিকিৎসা কেন্দ্র। শিক্ষার্থীদের জন্য সার্বক্ষণিক ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, আইসোলেশন কেন্দ্রসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে নতুন রূপ পেয়েছে শাবিপ্রবির এই চিকিৎসা কেন্দ্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন এই মেডিকেল সেন্টারকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। মেডিকেল সেন্টারের সর্বত্র নতুন টাইলসের ব্যবহার, নতুন করে কেন্দ্রীয় ওষুধ সংরক্ষণ কক্ষ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, শিক্ষার্থীদের অপেক্ষারত কক্ষ ও ডাক্তারদের রোগী দেখার কক্ষ সংস্কার, অত্যাধনিক ড্রেসিং কক্ষ, বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা ও আইসোলেশন কেন্দ্রের ব্যবস্থা বিদ্যামান। বর্তমানে মেডিকেল সেন্টারটি কেবল সরকারি ওষুধের ওপর নির্ভরশীল নয়।
মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো থেকে ৩৩টি ও স্কয়ার থেকে ৩৪টিসহ মোট ৬৭টি আইটেমের ওষুধ ক্রয়ের প্রক্রিয়াধীন আছে। যা দ্রুত মেডিকেল সেন্টারে সরবরাহ করা হবে।
আরও পড়ুন: ওরা আর কখনো শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ফিরবে না
ধানক্ষেতের মাঝে ৪০ লাখ টাকার সেতু, ব্যবহার হয় ‘সেলফি’ তোলায়!
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী গড়িয়ালি গ্রামের ধানক্ষেতের মাঝখানে খালের ওপর নির্মিত একটি সেতু চার বছর আগে নির্মিত হলেও সংযোগ সড়কের অভাবে অব্যবহৃত পড়ে আছে।
তবে সবুজের মাঝে গড়ে উঠা সেতুর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে অনেকেই সেলফি ও ছবি তুলতে আসে। তাই কেউ কেউ এই সেতুকে এখন সেলফি সেতু নামেও চেনে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৬-১৭ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
সরেজমিনে গড়িয়ালি গ্রামের ওই সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের হিন্দুপাড়া সংলগ্ন খালের ওপর সেতুটি দৃশ্যমান থাকলেও দুই পাশে নেই কোন সংযোগ সড়ক। সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেও যাতায়াত করে না কেউ। ফলে সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না স্থানীয়দের।
আরও পড়ুন: টোকেন-স্টিকার দিয়ে সড়কে চলছে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা
ওরা আর কখনো শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ফিরবে না
করোনার দীর্ঘ ছুটি শেষে ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো৷ এরই ধারাবাহিকতায় খুলে যাচ্ছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও ক্যাম্পাসে আর ফিরবেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী তোরাবি বিনতে হক, একই বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের আছিয়া আকতার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের তৌহিদুল আলম প্রত্যয় ও রসায়ন বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ। তোরাবি বিনতে হক, আছিয়া আকতার, তৌহিদুল আলম প্রত্যয় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা এবং সাব্বির আহমেদ সড়ক দুর্ঘটনায় পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।
তাই ক্যাম্পাস খুললেও সহপাঠীদের আর বসা হবে না তাদের সাথে। করা হবে না খুনসুটি, ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে দুষ্টুমি।
মৃত তোরাবি বিনতে হক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি নেত্রোকোণা জেলার চল্লিশা ইউনিয়নের মোগরাটিয়া গ্রামে। ২০২০ সালের ৬ আগস্ট নেত্রকোণা পৌরসভার কাটলি এলাকায় নিজকক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। সেসময় পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় পড়াশোনা নিয়ে কথা বলায় মন খারাপ করে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তোরাবি।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও তোরাবি বিনতে হকের সহপাঠী জিষ্ণু চক্রবর্তী বলেন, সদা হাস্যোজ্জ্বল ও উদার মনের বন্ধু তোরাবির অকাল মৃত্যু আমাদের জন্য সত্যিই বেদনাদায়ক। কোনো শিক্ষার্থীরই এভাবে অকালে চলে যাওয়া কারো কাম্য নয়৷ সকলের পদচারণায় ক্যাম্পাস মুখরিত হলেও তোরাবিকে আমাদের বারবার মনে পড়বে, তার শূণ্যতা আমাদের স্মৃতিকাতর করে তুলবে।
আরও পড়ুন: দেড় বছর পর হলে ফিরলেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
বাংলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আছিয়া আকতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ বর্ষের ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ দেখার সুযোগ হয়েছিল মাত্র দেড়মাস। এরই মধ্যে শুরু হয় করোনাকালীন শিক্ষাছুটি। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর তোরাবির মতো আছিয়া আকতারও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন নিজ বাড়িতেই।
তার বাড়ি বগুড়া সদরের নামুজা ইউনিয়নের মথুরা গ্রামে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, মেয়েটির নিজ এলাকায় সম্পর্ক ছিল। আর এই সম্পর্কের জের ধরেই ২০২০ সালের ১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ফজর নামাজের আগে ঘরের বারান্দায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
আছিয়া আকতারের সহপাঠী বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা আকতার জানান, প্রতিটি মৃত্যুই অপ্রত্যাশিত। আর তা যদি সদা হাস্যোজ্বল কোনো বন্ধুর আত্মহত্যা হয় তাহলে সে কষ্টের পরিমাপ করা প্রায় অসম্ভব। আত্মার সম্পর্কের নাম বন্ধুত্ব। একটি ব্যাচে কিংবা একটি শিক্ষাঙ্গনে আমরা সবাই একে অপরের সাথে এক গভীর মমত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। আর এই বন্ধন থেকে সদা চঞ্চল, মিষ্টভাষী, প্রিয়মুখ আছিয়া যখন নিয়তির নির্মম পরিহাসে ছিন্ন হয়ে গেলো তখন শত শত মানুষের পদচারণায় চারপাশ মুখরিত থাকলেও আছিয়ার অভাব, তার অনুপস্থিতি আমাদের প্রত্যেকের অন্তরকে করে তুলবে গভীরভাবে স্মৃতিকাতর ও শোকাবহ।
তিনি বলেন, তার এই অকাল প্রয়াণ আমাদের মধ্যে যে গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে তা আর কোনোভাবেই পূরণীয় নয়। জীবনের চরম অসহায় অবস্থাতেও যেন আমরা হাল না ছেড়ে দিই, আর কোনো আছিয়াকে যেন আমাদের হারাতে না হয়, এটাই আমাদের কাম্য।
এদিকে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের তৌহিদুল আলম প্রত্যয়। মৃত তৌহিদুল আলম প্রত্যয় মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার এস.এম জাহিদুল আলমের সন্তান। জানা যায়, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালের সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী নতুনবাজার এলাকার স্বপ্নীল সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলার একটি মেসের ৬ নম্বর কক্ষে জানালার গ্রিলের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে প্রত্যয়ের আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। পরবর্তীতে প্রক্টরিয়ালবডির উপস্থিতিতে মৃত প্রত্যয়ের লাশ জালালাবাদ থানা পুলিশ উদ্ধার করে।
এছাড়াও চলতি বছরের ৫ মে রসায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। সিলেট নগরীর সুবিদবাজার পয়েন্টে মোটরসাইকেলযোগে আসামাত্র পেছন থেকে একটি ট্রাক তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এ সময় সাব্বির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলসহ নিয়ে নিচে পড়ে যান। এতে মাথায় গুরুতর আঘাতের ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
শাবিপ্রবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড.আলমগীর কবীর বলেন, এই অসময়ে আমাদের এই মেধাবী শিক্ষার্থীরা চলে যাবে তা আমাদের খুবই মর্মাহত করে। তবে এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান থাকবে ভবিষ্যতে এইধরনের দুর্ঘটনা যাতে না হয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সর্বত্র শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। শিক্ষার্থীদের মানসিকসহ যে কোনো সমস্যা, পরামর্শ নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে আমাদের দরজা সবসময় খোলা।
আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় নতুন ইতিহাস তৈরি হল: শাবিপ্রবি উপাচার্য
শাবিপ্রবিকে ‘শতভাগ ডিজিটাল’ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করব: উপাচার্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমদ বলেন, খুবই মর্মাহত হই যে, এই সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীরা অকালে ঝড়ে গেছে। যারা একদিন দেশের নেতৃত্ব দেবে, তারা এভাবে ঝরে যাবে তা মানতে কষ্টকর। আমরা চাই না আর কোনো সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা কোনো এরূপ ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন দীর্ঘ ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে। অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন রকম সমস্যায় পড়বেই। শিক্ষার্থীরা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত না নিয়ে সরাসরি আমাদের কাছে চলে আসার আহ্বান জানাবো। আমাদের ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টার অধীনে কাউন্সিলিং সাইকোলজিস্ট আছেন। যেকোনো মানসিক সমস্যায় সর্বত্র সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হবে শিক্ষার্থীদের প্রতি। আমরা চাই প্রতিটা শিক্ষার্থী মানসিক সুস্থতার মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবন পার করে তাদের ভবিষ্যত জীবনেও সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক।
উল্লেখ্য, এই চার শিক্ষার্থী ছাড়াও চলতি বছরের ৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ বর্ষের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আলমগীর কবির সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন এবং ১৬ অক্টোবর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষার জন্য পড়াশোনা করতে গিয়ে আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনাগুলো শাবিপ্রবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে হৃদয় বিদারক পরিবেশ তৈরি করেছে।
টোকেন-স্টিকার দিয়ে সড়কে চলছে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা
ফেনীতে প্রতি মাসে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার টোকেন-স্টিকার দিয়ে হাজারের অধিক অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা জেলার বিভিন্ন সড়কে চলছে। এসব অটোরিকশার নম্বর প্লেট, রোড পার্মিট কিংবা বৈধ কোনো কাজগপত্র না থাকলেও টোকেন দেখালে তাদের পুলিশ ছেড়ে দেয়।
চালকরা একটি টোকেন বা স্টিকার দিয়ে সড়ক ব্যবহার করছেন। পুলিশকে দেয়ার কথা বলে শ্রমিক সংগঠন প্রতি মাসে টোকেন প্রতি তাদের কাছ থেকে আদায় করছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফেনী জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা ২৪ হাজার অটোরিকশার ৯০ ভাগের নিবন্ধন কিংবা বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে নিবন্ধন করা ৯ হাজার ২০০ সিএনজি অটোরিকশা থাকলেও ছয় হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা নবায়ন করা হয়নি। মাত্র দুই হাজার ৬০০ সিএনজি বৈধভাবে চলছে। এছাড়া নিবন্ধিত চালক আছেন মাত্র এক হাজার ২৫৫ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক জানান, নবায়ন বা নতুন লাইসেন্স করতে ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তার উপর নানা হয়রানি। অথচ মাসে ৫০০ টাকা হারে বছরে ছয় হাজার টাকার স্টিকার খরচ দিয়ে ‘টেনশন ছাড়া’ চলছেন তিনি।
আরও পড়ুন: রাজধানীর প্রতিটি খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে: মন্ত্রী
নম্বরবিহীন কয়েকটি অটোরিকশা থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চাইলে চালকরা গাড়ির সামনের গ্লাসে লাগানো স্টিকার দেখান বা একটি টোকেন ধরিয়ে দেন। অনেক চালক তাদের হাতে চাবির রিং দেখিয়ে বলেন, এটা দিয়ে পুরো নোয়াখালী অঞ্চল বিনা বাধায় চলাচল করা যায়। তবে রিংয়ের দাম স্টিকার থেকে দিগুণ।
এসব টোকেনে লেখা পুলিশ ডিউটির জন্য! এর অর্থ জানতে চাইলে চালকরা জানান, এই টোকেন সড়কে চলাচলের বৈধতা। টোকেন থাকলে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিবন্ধন, ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেসবিহীন অবৈধ রুট পারমিটের বিরুদ্ধে বিআরটিএ এবং ট্রাফিক পুলিশ মাঝে মাঝে অভিযান চালায়। তবে অভিযানের খবর আগেই পেয়ে যান অবৈধ অটোরিকশা চালকরা। যেসব অটোরিকশাচালক অবৈধ টোকেন নিতে বিলম্ব করেন বা নিতে অস্বীকার করেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা কিংবা রেকার লাগিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়।
জানা গেছে, মোটরযান আইন অনুযায়ী বিআরটিএ’র নিবন্ধন ছাড়া কোনো গাড়ি রাস্তায় চলাচলের সুযোগ না থাকলেও শুধু শহর ও যানবাহন পরিদর্শক-ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন নামের টোকেনে ফেনী শহরে অনায়াসে চলছে এসব গাড়ি। রয়েছে ‘প্রাইভেট’ ও ‘নিলাম’সহ বিভিন্ন প্রতীকী সংকেত লেখা অনিবন্ধিত সিএনজিচালিত অটোরিকশা।
আরও পড়ুন: নবগঙ্গা নদী গর্ভে ১শ একর ফসলি জমি
রাজধানীর প্রতিটি খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে: মন্ত্রী
জনগণকে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে এই সরকারের মেয়েদেই রাজধানীর প্রতিটি খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ইউএনবিকে মন্ত্রী বলেন, ‘খাল দখলকারীরা যত বড় ক্ষমতাশালী হোক না কেন আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তাজুল ইসলাম বলেন, খাল উদ্ধারে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা শহরে যত খাল আছে তাতে একটি হাতিরঝিল নয়, এ রকম কয়েকটি হাতিরঝিল নির্মাণ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, রাজধানীর প্রতিটি খালের দুইপাড়ে বাঁধ দিয়ে ওয়াকওয়ে ( হাঁটার পথ ) নির্মাণ করা হবে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা খালগুলোও খুব শিগগিরই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ বিষয়ে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে, খাল দখল করে তার ওপরে বিল্ডিং বানানো হয়েছে। যারা এসব করেছে তারা যত ক্ষমতাশালী হোক না কেন আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা শহরের খালসমূহ উদ্ধার করা হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ওয়াসা থেকে খালগুলো বুঝে নিয়েছে। ইতোমধ্যে খাল সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, কল্যাণপুরে খালের ১৭৩ একর জমির মধ্যে ১৭০ একর জমি অবৈধ দখলে। কল্যাণপুরসহ সকল খাল শিগগিরই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
পড়ুন: চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় অবৈধ ঘরবাড়ি উচ্ছেদ
ঢাকার খালের প্রকৃত সংখ্যা:
ঢাকা মহানগরী এলাকায় ৫০টি খালের একটি তালিকা রয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে।
বাইশটেকী খাল: মিরপুরের উত্তর সেনপাড়ার পর্বতা মৌজায় ৬০ ফুট দৈর্ঘে্যর বাইশটেকী খাল অবৈধ দখল ও ভরাট হয়ে ৩০ ফুট হারিয়ে গেছে।
কল্যাণপুর খাল: পাইকপাড়া মৌজার এই খালটি অবস্থিত। সিটি জরিপ অনুযায়ী খালটির পরিমাণ রয়েছে এক দশমিক শূন্য পাঁচ একর। তবে দখল-দূষণে বিলীনের পথে খালটি। এটি কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়ার মাঝামাঝি দিয়ে কল্যাণপুর থেকে দারুসসালাম এলাকার গৈদারটেক হয়ে বেড়িবাঁধের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে এটি বগারমার খাল নামে পরিচিত। দখলের কারণে বর্তমানে এটি নালায় পরিণত হয়েছে। খালটির ৬০ ফুট হলেও বাস্তবে ৩ ফুটেরও কম প্রশস্ত রয়েছে।
কল্যাণপুর মেইন খাল: পাইনপাড়া ও বড়-ছোট সায়েক মৌজায় এই খালটি অবস্থিত। সিটি জরিপে খালটির জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে তিন দশমিক ৪৬ একর। কল্যাণপুর পাম্প স্টেশন হতে শুরু করে কাফরুলের একাংশ পর্যন্ত তিন দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি। এই কল্যাণপুর খালের একাধিক শাখা খাল রয়েছে। দুই কিলোমিটার দীর্ঘ একটি শাখা তালতলা (রোকেয়া সরণি) থেকে মূল খালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া দুই দশমিক ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ অপর একটি শাখা পীরেরবাগ থেকে মূল খালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ অন্য শাখাগুলো মূল খাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে, মিরপুর মাজার, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে।
পড়ুন: একটি দুষ্ট চক্র দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
রূপনগর খাল (আরামবাগ): দুয়ারীপাড়া মৌজায় এই খালটি অবস্থিত। সিটি জরিপের এই খালের জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে শূন্য দশমিক ২৯ একর। রূপনগর খালটি দুটি অংশে বিভক্ত। এর মধ্যে রূপনগর খাল (আরামবাগ খাল) এবং রূপনগর খাল (নিম্ন অংশ) নামে পরিচিত। মোহাম্মদপুর সার্কেলাধীন রূপনগর খালের নিম্নঅংশে দুয়ারীপাড়া মৌজার মহানগর ৭০১ নং দাগে প্রায় ৩০-৪০ ফুট প্রস্থ এবং ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্য এই খালের।
সাংবাদিক খাল: এটি প্যারিশ খাল হিসেবে পরিচিত। মিরপুরের উত্তর সেনপাড়া পর্বতা মৌজায় এই খালটি অবস্থিত। জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ।
দ্বিগুণ খাল: মিরপুরের দ্বিগুণ গড়ান চটবাড়ী মৌজায় খালটি অবস্থিত। খালটি গড়ান চটবাড়ি পাম্প স্টেশন থেকে শুরু হয়ে বাউনিয়া খালের মিলিত হয়েছে। খালের দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার। খালের বেশিরভাগ অংশই ভরাট হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। আরএস জরিপে খালের জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ছয় দশমিক ১০ একর।
কল্যাণপুর আংশিক খাল: মিরপুর মৌজায় এই খালটি অবস্থিত। আরএস জরিপে খালের জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ৫১৫৩ নং দাগে শূন্য দশমিক ৩০ একর, ৫১৫১ নং দাগে এক দশমিক ২৩ একর, ৫০৯৩ নং দাগে এক দশমিক ৯৩ একর, ৪১৬৩ নং দাগে শূন্য দশমিক ৫১ একর।
পড়ুন: নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর চেয়েও বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
নবগঙ্গা নদী গর্ভে ১শ একর ফসলি জমি
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবলা-হাসলা ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত হাসলা এলাকায় নবগঙ্গা নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রায় ১শ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানা গেছে। এর কারণে হাসলা ও পাটকেলবাড়ি গ্রামে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছর ৯ পরিবারের ১৩টি পাকা ও আধা পাকা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ, দু’টি ইটভাটা এবং তিন শতাধিক গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনটি ইটভাটা ও পাঁচটি বাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে। গত ১ অক্টোবর এলাকাবাসী বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ, নদী ভাঙনরোধ ও নদীর তীর স্থায়ী সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন করলেও বালু উত্তোলনকারীররা থামেনি।
আরও পড়ুন: হারিয়ে যাচ্ছে মুরাদনগরের ‘মৃৎশিল্প’
জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার বাবলা-হাসলা ইউনিয়নের তিনশ বছরের পুরোনো শুক্তগ্রাম বাজার, শুক্তগ্রাম কুমার ও চর পাড়া, হাসলা, চান্দেরচর, পাটকেলবাড়ি ও কাঞ্চনপুর গ্রাম তিন দশক ধরে প্রতি বছরই কম-বেশি নবগঙ্গা নদীতে ভাঙছে। এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক দোকান ও বসত-বাড়ি, অসংখ্য গাছপালা, তিনশ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসা-গোরস্থান, মন্দির ও বেড়িবাঁধ রয়েছে। এ বর্ষা মৌসুমেও প্রায় ১৫ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। এ অবস্থার মধ্যেও গত ১ বৈশাখ থেকে আগামী ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এক বছর এ ইউনিয়নের বৃ-হাসলা মৌজার বালুর চরটি কালিয়ার পুরুলিয়া ইউনিয়নের দিয়াডাঙ্গা গ্রামের ত্বকি সরদারের নামে প্রশাসনের কাছ থেকে দুই কোটি ৮৮ লাখ টাকায় ইজারা নেয়া হয়েছে।
হাসলা গ্রামের মোশাররেফ হোসেন বলেন, ‘বালুর চরের ইজারাদার বৃ-হাসলা মৌজায় ৯ একর জায়গার চর থেকে কাটার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে এসে দেড়’শ একরের বেশি জায়গায় রাত-দিন বালু উত্তোলন করছে। আগে ৩৫ ট্রলার ও ড্রেজার দিয়ে বালু কাটলেও বর্তমানে প্রায় ১৫টির মতো ড্রেজার দিয়ে কাটছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন পিকুল এর প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। এলাকার কয়েকশ মানুষ নিয়ে মানববন্ধন করেছি, কালিয়া থানার ওসি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। কিন্তু কেউ এবিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’
আরও পড়ুন: বাস্তবে জীবিত হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তারা মৃত!
হাসলা গ্রামের হাসি বেগম জানান, ‘আমার বাড়ির সামনে বালি কাটছে। গত ১ মাস আগে আমার একটি ঘর নদী গর্ভে চলে গেছে। বড়ো ঘরটি ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছি। গ্রামের জাফরুল মোল্যা, জোমাত সিকদার ও জাবেদ খানসহ অনেকেরই ১২টি ঘর চলে গেছে। এছাড়া শামসুর রহমান ও তানজিলাসহ অন্যানদের বাড়ি ভাঙনের মুখে। এখন অনেকে আবার নিজেরা ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন।
এ ইউনিয়নের মেম্বর বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘হাসলা মৌজা লাগোয়া পাটকেলবাড়ি এলাকার অনেক ফসলি জমি, দু’টি ইটভাটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। আরও তিনটি ভাটা ও অনেক ফসলি জমি ভাঙনের মুখে রয়েছে।’
বালু ঠিকাদার ত্বকি সরদারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে চরের ইজারাদার মো. মোশারফ জানান, নির্দিষ্ট চরের বাইরে এবং রাতের আঁধারে বালু কাটা হচ্ছে না। কৃষি জমি ও ঘর বাড়ি নদী গর্ভে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি জানান, কিছু ফসলি জমি ও বাড়ি ভাঙছে এটা কিছুটা সত্য। তবে বালুর চর থাকলে সেখান থেকে বালু না কাটলে পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে নদীর যে কোনো তীর ভাঙার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া বালু কাটার জন্য মসজিদ, সংগঠনে অনুদান ও বিভিন্ন মহলকে খুশি করতে হয় বলে জানান।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
স্থানীয় বাবলা-হাসলা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন পিকুলের সাথে যোগযোগ করা হলে তাকেও পাওয়া যায়নি।
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টির অভিযোগ পাওয়ার পর সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। তিনি মৌখিকভাবে আমাকে জানিয়েছেন অভিযোগের কিছু সত্যতা আছে। তবে লিখিত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যশোরে বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৯
যশোরে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বয়সী মানুষ জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে (শিশু) জেলার নতুন উপশহর এলাকার মেহেদী হাসান তাঁর তিন বছর বয়সী শিশু পুত্র মামুনকে নিয়ে আসেন। তিনি জানান, এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত তার ছেলে।
সদর উপজেলার হাশিমপুর গ্রামের জুয়েল রানা পাঁচ দিনের নবজাতক ইয়াসিনকে নিয়ে আসেন বহির্বিভাগে। তিনি জানান, তার কন্যার ঠাণ্ডা লাগার কারণে চিকিৎসকের কাছে এসেছেন।
অপরদিকে ধর্মতলা এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন আব্দুল গফুর (৩৫)। তিনি গত তিন সপ্তাহ ধরে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। তাই চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছেন।
আরও পড়ুন: ৫২টি জটিল রোগে আর্থিক সুরক্ষা দিতে মেটলাইফ বাংলাদেশের নতুন স্বাস্থ্য বীমা
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের রোগী বেড়ে যাওয়ায় অনেকে বেড না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ১ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শিশু আন্তবিভাগ থেকে চার হাজার ৫২৩ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়া শুধু বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) হাসপাতালে এ ধরনের সমস্যা নিয়ে ৭২৯ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫০৩ জন শিশু ও ২২৬ জন বিভিন্ন বয়সের নারী ও পুরুষ রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও আন্তবিভাগের রেজিস্টার খাতা অনুযায়ী, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ১২৩ জন শিশু ভর্তি এবং মেডিসিন বিভাগে ও সিসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও ৩৬ জন নারী ও পুরুষ।
যশোর মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, এখন শিশুরা ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। এখন যে আবহাওয়া তা শিশুদের জন্য উপযোগী নয়।
এ পরিস্থিতিতে শিশুদের সুস্থ রাখতে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঠাণ্ডা বা গরম পরিবেশে শিশু ও বয়স্কদের রাখা যাবে না। ঘাম শরীরে শুকানো যাবে না। শিশুদের বুকে ঘাম জমলে দ্রুত তা মুছে ফেলতে হবে। সময়োপযোগী জামা-কাপড় ব্যবহার করতে হবে।’
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে শিশু রোগী বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকরা নিবিড়ভাবে বয়স্ক ও শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে (হাসপাতালে) শতাধিক রোগী ভর্তি থাকছেন।’
আরও পড়ুন: যশোর থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট শুরু
যশোরে ট্রেনের ধাক্কায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
বন বিভাগের অনুমতির আগেই ২০০ গাছ কেটে ফেলল সিসিক
সিলেটে সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণের জন্য প্রায় ২০০ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের অনুমতি নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার এই গাছগুলো কেটেছে খোদ সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
গত সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত সিসিকের কর্মীরা উপশহরের সড়কের পাশের দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলে। আর কেটে ফেলা গাছগুলো টুকরো করে সড়কের পাশে রাখা হয়েছে। কেটে ফেলা গাছ ইতোমধ্যে বিক্রিও করা হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ট্রাকে করে সেগুলো সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতে গাছ কেটে অধিকাংশ বিক্রি করে ট্রাকে করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় একটি চক্র গাছ কেনাবেচায় কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। খবর পেয়ে বন বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করে কেনাবেচার সত্যতা পেয়েছে।
বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার পাওয়া আফতাব চৌধুরী উপশহর এলাকারই বাসিন্দা। এই সড়কের পাশের গাছগুলো তিনিই রোপন করেছিলেন। আফতাব চৌধুরী বলেন, ‘এই গাছগুলোর অধিকাংশ আমার হাতে লাগানো। কোনো বাছবিচার ছাড়াই নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। যেখানে ৫০টির মত গাছ কাটা প্রয়োজন সেখানে ২০০টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এই ২০০টি গাছ একেকটি এক লাখ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার মতো।’
পড়ুন: দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখছে ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল’ পালন
সিসিকের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরে ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেন নির্মাণ ও রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। শাহজালাল উপশহর এলাকার সি ব্লকের ২১, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর রাস্তায় সম্প্রতি ড্রেন ও রাস্তা বড় করার কাজ শুরু হয়। ওই এলাকার রাস্তার দুই পাশে রেইনট্রিসহ নানা প্রজাতির এসব গাছ ১৯৯০ সালের দিকে লাগানো হয়েছিল।
বন বিভাগের বিধিমালায় আছে, ব্যক্তি মালিকানাধীন অথবা সরকারি জমি থেকে গাছ কাটার আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। এরপর তদন্ত করে গাছ কাটার যৌক্তিকতা পাওয়া গেলে গাছের দরদাম নির্ধারণ ও পরবর্তী আরও গাছ লাগানোর শর্তে গাছ কাটার অনুমতি দেয়া হয়। এ প্রক্রিয়া বন বিভাগের মাধ্যমে করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জানা যায়, ড্রেন নির্মাণে উপশহর এলাকার কিছু গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের কাছে আবেদন করে সিসিক। তবে বন বিভাগ এখনও গাছ কাটার অনুমতি দেয়নি। অনুমতি পাওয়ার আগেই কেটে ফেলা হয়েছে ২০০ গাছ।
বন বিভাগের সিলেট শহর রেঞ্জের রেঞ্জার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘উপশহরে রাস্তার দুই পাশে ড্রেন নির্মাণ করতে কিছু গাছ কাটার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ১৭ অক্টোবর বন বিভাগকে একটি চিঠি দেয় সিটি করপোরেশন। পরদিন আমাদের কর্মীরা সেখানে গিয়ে দেখেন গাছ কাটা হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ঠিক কী পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে এবং কাটা গাছগুলো কোথায় নেয়া হয়েছে, তা আমরা খোঁজ নিচ্ছি।
শ্রমিকরা না বুঝেই গাছ কেটে ফেলেছে জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘ওইখানে ড্রেন নির্মাণ ও সড়ক সম্প্রসারণ হবে। এজন্য কিছু গাছ কাটা প্রয়োজন। গাছ কাটার জন্য আমরা বন বিভাগকে চিঠিও দিয়েছি। তবে অনুমতি পাওয়ার আগেই সিটি করপোরেশনের কিছু লোক গাছ কেটে ফেলেছেন। এ ব্যাপারে দায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
সিটি করপোরেশন গাছ রক্ষায় খুবই আন্তরিক দাবি করে তিনি বলেন, ‘উপশহরে গাছ কাটার বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে। আর যাতে অকারণে কোনো গাছ কাটা না হয়, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াব।’
পড়ুন: হারিয়ে যাচ্ছে মুরাদনগরের ‘মৃৎশিল্প’
‘ফাতেমা’ জাতের ধানে বিঘায় ৫০ মণ ফলন
দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখছে ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল’ পালন
চুয়াডাঙ্গা জেলায় দারিদ্র বিমোচনে ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট (কালো জাতের) ছাগল পালন ভূমিকা রেখে চলেছে। এই অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে কালো ছাগলের ছোট-বড় খামার করে অনেকেই স্বাবলম্বী। বিশ্বখ্যাত কালো জাতের ছাগল পালন করে এ জেলার কৃষি পরিবারসহ অস্বচ্ছল পরিবারেও ফিরেছে স্বচ্ছলতা।
বাংলাদেশের স্থানীয় জাত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল মানের দিক থেকে বিশ্বসেরা হিসেবে স্বীকৃত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএও এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইও ২০১৫ সালের মূল্যায়ন অনুযায়ী ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বিশ্বের অন্যতম সেরা জাত। আন্তর্জাতিক বাজারে এই ছগল ‘কুষ্টিয়া গ্রেড’ হিসেবে পরিচিত। তবে বর্তমানে বৃহত্তর কুষ্টিয়ার জেলার অংশ অধুনা, চুয়াডাঙ্গা জেলায় এই ছাগল বেশি পালন হওয়াতে জেলা প্রশাসন থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা ব্র্যান্ডিং হিসেবে ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল’ঘোষণা করা হয়েছে।
গুণগত মানের চামড়া ও সুস্বাদু মাংসের জন্য সারা পৃথিবীতে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের যেমন খ্যাতি রয়েছে তেমনি যে কোনো পরিবেশে দ্রুত মানিয়ে নেয়া ও বছরে দুবারে ৩- ৪টি বাচ্চা প্রদানের কারণে দারিদ্র বিমোচনে বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
শুধুমাত্র (ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট) কালো জাতের ছাগলই নয়, হরিয়ানা, যমুনাপাড়ী, তোতামুখি ও বিটল জাতের ছাগলও গৃহপালিত হিসেবে পালন করে আসছে এ জেলার মানুষেরা। চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে কয়েক প্রজাতির ছাগল দেখতে পাওয়া গেলেও এর মধ্যে ৭০ শতাংশই ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল। এই অঞ্চলের বেকার যুবক-যুবতী ও নতুন উদ্যোক্তা এবং দরিদ্র কৃষকরা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি জাতিকে পুষ্টি সরবরাহের কাজেও অগ্রণি ভূমিকা রাখছে।
এই ছাগল পালনে বাড়তি তেমন খরচ না থাকায় খুব সহজেই পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও দেখভাল করতে পারেন। অনেকেরই জীবনযাত্রা পাল্টে গেছে এই কালো জাতের ছাগল লালন-পালন করে। চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলা ঘুরে মূল সড়ক পেরিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তাঘাট এবং মেঠো পথেও দেখা যায় ব্ল্যাক বেঙ্গল গোটের। কোথাও উঠানে, কোথাও বা বাড়ির মাচায় চলছে ছাগল লালন-পালন। অনেক খামারি ২০-৩০টি ছাগল পালন করে বছরে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করছে।
আরও পড়ুন: হারিয়ে যাচ্ছে মুরাদনগরের ‘মৃৎশিল্প’