বিশেষ সংবাদ
হারিয়ে যাচ্ছে মুরাদনগরের ‘মৃৎশিল্প’
কালের বিবর্তনে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লার মুরাদনগরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ এই শিল্পটি সঙ্কটের মুখে পড়েছে।
প্লাস্টিক, মেলামাইন ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যের ভিড়ে দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্যের মৃৎশিল্প। এরপরও অনেকেরই চেষ্টা করেছেন পূর্বপুরুষদের এই ঐতিহ্যবাহী পেশাকে ধরে রাখার।
আরও পড়ুন: রাজগঞ্জের নারীদের তৈরি হস্তশিল্প যাচ্ছে ইউরোপে
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার রামচন্দ্রপুর ও কামাল্লার পালপাড়া এলাকায় এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত কয়েকশ' মৃৎশিল্পীর পরিবার এখন সবকিছু গুটিয়ে বসে আছে। মাটির তৈরি খেলনা, হাঁড়ি-পাতিল জাতীয় জিনিসগুলো বিক্রি না হওয়ায় কুমারপাড়া এখন অনেকটা নীরব। তাদের হাতে কোনো কাজ নেই, মানবেতর জীবন যাপন করছে উপজেলার কয়েকশ' মৃৎশিল্পীর পরিবার।
শিল্পীরা জানান, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র বের হওয়ার কারণে মাটির তৈরি জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো চলে না। দীর্ঘ এক বছর ধরে কোনো ধরনের মেলা বা সামাজিক অনুষ্ঠান না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। আগে তেমন একটা প্লাস্টিক ও অ্যালুমুনিয়াম জাতীয় পণ্য বাজারে না থাকায় মাটির তৈরি কলসি, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, মটকা, ফুলের টপসহ নানা সামগ্রী বেশি বেশি বিক্রি হতো। কিন্তু এখন প্লাস্টিক-অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় পণ্যে বাজারে সয়লাব, তার ওপর দাম কম থাকায় প্রতি ঘরে ঘরে এসব সামগ্রীর ব্যবহার বেড়ে গেছে। যার কারণে মাটির তৈরি তৈজসপত্র এখন তেমন একটা বিক্রি হয় না। ফলে মৃৎশিল্পীরা পরিবার নিয়ে আর্থিক সঙ্কটে দিন কাটচ্ছেন।
আরও পড়ুন:গবাদিপশুর সাথে মানুষের বসবাস
উপজেলার কামাল্লা গ্রামের সুমন পাল বলেন, বাপ-দাদার কাছে শেখা আমাদের এই জাত ব্যবসা আজও কিছুটা ধরে রেখেছি। কামাল্লাসহ আশপাশের এলাকায় এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল। কিন্তু বর্তমানে তেমন একটা চাহিদা নেই। আর মাটি থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম যে পরিমাণে বাড়ছে কাজ করে আর লাভের মুখ দেখি না।
মৃৎশিল্পী আসুতোশ পাল বলেন, ‘এখন আর আগের মতো নাই, দিন পাল্টেছে। মানুষ আর আমাদের জিনিসপত্র তেমন একটা নেয় না। চাহিদা কম, তার উপর আবার সকল জিনিসের দাম বেশি।’
আরও পড়ুন: পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
মৃৎশিল্পী নমিতা রাণী পাল বলেন, বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি। এছাড়া কোন কাজ জানি না। এতো কষ্ট করে সব তৈরি করি। তাতেও বাজারে তার কোন চাহিদা নেই। বিভিন্ন হাটে দোকান দিয়ে বেড়াই। যা বিক্রি হয়, তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোন রকম দিন কাটাচ্ছি।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশ বলেন, ‘অন্যান্য সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অনুদানের তালিকায় মৃৎশিল্পের নাম আনা হয়েছে। সমাজকল্যান অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে তারা আধুনিকতার সাথে মিল রেখে শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে পারে।’
আরও পড়ুন:
ইউএনও বলেন, ‘আমরা দুস্থ ও অসহায় পরিবারের মাঝে বিভিন্ন সময় শুকনো খাবারসহ ত্রাণ বিতরণ করেছি। তারপরও যদি মৃৎশিল্পীদের মধ্যে কোনো দুস্থ ও অভাবগ্রস্ত পরিবার আমাদের কাছে আসে, তাহলে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করবো।’
‘ফাতেমা’ জাতের ধানে বিঘায় ৫০ মণ ফলন
নওগাঁর মান্দায় ‘ফাতেমা’ জাতের ধান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এর প্রতিটি শীষে ৭৫০ থেকে এক হাজার ধান পাওয়া গেছে। দেশে উৎপাদিত প্রচলিত জাতের ধানের চেয়ে এই ধানের ফলন প্রায় তিনগুণ। চলতি মৌসুমে নওগাঁয় দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ৭৫ মণ ধানের ফলন হয়েছে।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের দোশতীনা গ্রামের সৌখিন কৃষক আশরাফুল ইসলাম বশিরই প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই প্রথম ‘ফাতেমা’ জাতের ধান চাষ শুরু করেন। তিনি পেশায় নওগাঁ জজ কোর্টের আইনজীবী। একই সাথে আধুনিক চাষাবাদে তার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। গতানুগতিক কৃষির পরিবর্তে নতুন জাতের এ ধান উৎপাদনে তিনি সাফল্য পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: আমনে পোকা, দুশ্চিন্তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকরা
বর্তমানে ওই ধান দেখতে এবং কিনতে তার বাড়িতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষ জন ভিড় জমাচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় তার মতো এলাকার অনেকেই এখন নতুন এ জাতের ধান চাষের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এতে অধিক ফলনশীল জাতের ধান দেশের আর কোথাও আছে বলে তাদের জানা নেই। ‘ফাতেমা’ জাতের এই ধান কোন জাতের এবং কোথায় থেকে কীভাবে এলো এসব জানতে গবেষণার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট।
আরও পড়ুন: বেশি লাভে আখ চাষে ঝুঁকেছেন মাগুরার কৃষকরা
দেখতে ব্রি-২৮ ধানের মতো এর জাতের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আশরাফুল ইসলাম বশির জানান, এই ধানের চাষ পদ্ধতি অন্য ধানের মতোই। আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ ধানের চাষ করা যায়। তবে বোরো মৌসুমে এর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। গাছের উচ্চতা প্রায় ৫ ফিট যা অন্য ধানের তুলনায় বেশি। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। আর এক একটি ধানের শীষে ৭৫০ থেকে এক হাজার করে ধান হয়। সাধারণ ধানের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি। ফলে এর উৎপাদনও অনেক বেশি। চলতি মৌসুমে তিনি দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ৭৫ মণ ধান পেয়েছেন। এধানে রোগ ও পোকামাকড়ের হার তুলনামূলক কম। এছাড়া চাল খুব চিকন ও ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু।
তিনি জানান, বীজপাতা তৈরি করার পর ১৫০ থেকে ১৫৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা যায়। এই ধান ঝড়, খড়া এবং লবণাক্ততা সহনীয়। ওই জাতের প্রতিটি ধানগাছের দৈর্ঘ্য ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার, গুছি গড়ে আটটি, প্রতিটি ধানের ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬ সেন্টিমিটার, গড়ে দানার সংখ্যা এক হাজারের ওপরে।
আরও পড়ুন: ৩০ বছর আগে লাগানো ছাদবাগানে ফুটেছে অপরূপ নাইট কুইন
জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামে লেবুয়াত শেখ (৪০) নিজেদের জমিতে ২০১৬ সালে প্রথম ওই ধান চাষ করেন। ওই বছর বোরো মৌসুমে তার বাড়ির পাশে জমিতে হাইব্রিড আফতাব-৫ জাতের ধান কাটার সময় তিনটি ভিন্ন জাতের ধানের শীষ তিনি দেখতে পান। ওই তিনটি শীষ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড় এবং শীষে ধানের দানার পরিমাণও অনেক বেশি ছিল। এরপর ওই ধানের শীষ তিনটি বাড়িতে এনে শুকিয়ে বীজ হিসেবে ব্যবহার করে এ ধান চাষ শুরু করেন। তিনি তার মায়ের নামানুসারে নাম না জানা এই ধানের নাম রাখেন ‘ফাতেমা ধান’।
বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষক লিটন, রঞ্জু, মামুন, আতাব আলী জানান, অনেক ফলন হচ্ছে শুনে তারা কৃষক বশিরের এ ধান দেখতে এসেছেন এবং তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন। আগামীতে তারা এ ধান চাষ করবেন।
আরও পড়ুন: চৌগাছায় ১৮০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ
জেলা কৃষি সশ্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সামসুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ওই ধানের ফলন শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারে। এত বেশি ফলন পাওয়া যায়, এমন কোনো জাতের ধান দেশে আছে বলে আমার জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই ধান খড়া ও লবণ সহ্যকারী এবং সারাদেশে চাষের উপযোগী। মনে হচ্ছে, সারা দেশে ওই ধান চাষ করা যাবে। এই ধান যদি সারা দেশে চাষ করা যায় তাহলে বার্ষিক উৎপাদন পাঁচ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে।’
খুলনায় চালকদের প্রতিযোগিতা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলে দুর্ঘটনা বাড়ছে
খুলনা বিভাগে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ উদঘাটন করেছে পুলিশ। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনায় প্রতি মাসে গড়ে দুর্ঘটনা হয়েছে একশ’র বেশি এবং এতে নিহত হয়েছে গড়ে ১৩ জন।
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে প্রধান কারণ হল সড়কে যানবাহন চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করা। এছাড়া সড়কগুলোতে কম গতি সম্পন্ন গাড়ি চলাচল, তিন চাকার নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল এবং পথচারীদের অন্য মনষ্ক হয়ে চলাচলও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তবে জনসচেনতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের আরও বেশি সচেতনতার কারণে নিয়ন্ত্রণ হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগের সূত্র জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে এক হাজার ৪৮৮টি। যা গড়ে প্রতি মাসে ১২৪টি। এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৬২ জন এবং আহত দুই হাজার ২০১ জন।
কেএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ জানায়, খুলনা মেট্রো এলাকায় গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৮টি দুর্ঘটনা হয়েছে। এতে ১৯ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ আরোহী নিহত
খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় জানায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ২৩টি দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় জড়িত গাড়িগুলো হলো ট্রাক, বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, বাই সাইকেল, রিকশা, ভ্যান।
খুলনা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ বলেন, করোনার সময় অনেক মালিক গাড়ি ফিটনেস আপডেট করতে পারিনি। বর্তমান সরকার জরিমানা ছাড়া করোনাকালীন সময়ে ফিটনেস করতে পারিনা। এতে জরিমানা ছাড়া ফিটনেস শুরু হয়েছে। প্রতিদিন অনেক গাড়ি ফিটনেস আপডেট করতে আসছেন। আমরা ৪৬টি পয়েন্ট যাচাই করেই ফিটনেস আপডেট করছি। এছাড়া পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি আটকের জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। খুলনায় প্রায় ১০ ভাগ গাড়ির ফিটনেস আপডেট নেই। প্রত্যেক মালিককে চিঠির মাধ্যমে ফিটনেস আপডেট করার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার তাজুল ইসলাম জানান, সড়কে চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এছাড়া ক্রটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল, হাইওয়েতে চলাচলের উপযোগী নয় এমন গাড়ি চলাচল করা, চালকদের সঠিক প্রশিক্ষণে ঘাটতি থাকা, পথচারীরা জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করার কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। এগুলোর বিষয়ে যথাপযোগী ব্যবস্থা নিলে দুর্ঘটনা কমে যাবে।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান জানান, সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিরোধের বিষয়ে বিট পুলিশিং কার্যক্রমে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সড়কে মোটরসাইকেলে হেলমেট ব্যবহার করা না হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। থ্রি হুইলার, ইজিবাইক এগুলোর বিষয়ে চালকদের আরও সতর্ক করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আরও সচেতন হতে হবে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩ বন্ধু নিহত
ধামরাইয়ে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিকসহ নিহত ৩
এক আঙিনায় মসজিদ-মন্দির, সম্প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন
একই উঠানে মসজিদ ও মন্দির। এক পাশে ধূপকাঠি, অন্য পাশে আতরের সুঘ্রাণ। এক পাশে উলুধ্বনি, অন্য পাশে চলছে জিকির। এভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যুগ যুগ ধরে চলছে পৃথক দু’টি ধর্মীয় উপাসনালয়।
ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন উজ্জ্বল নিদর্শন সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট শহরের কালীবাড়ী এলাকার পুরান বাজার জামে মসজিদ ও কালীবাড়ী কেন্দ্রীয় মন্দিরটি একই উঠানে রয়েছে। যে যার মতো ধর্ম পালন করে চলেছেন। এখন চলছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
স্থানীয়রা জানান, ১৮৩৬ সালে কালী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় লালমনিরহাট শহরে কালীবাড়ী এলাকার পুরান বাজার এলাকায় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যবসায়ীরা নামাজ করার জন্য তার পাশেই একটি ছোট ঘর তোলেন। আর সেটির নামকরণও করা হয় পুরান বাজার জামে মসজিদ হিসেবে। ওই সময় থেকে এক উঠানে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কাজ। পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দির কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেন। এ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
মন্দির ও মসজিদ দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে সাধারণ মানুষ। কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতও এই মন্দির ও মসজিদ পরিদর্শন করেছেন।
জানা গেছে, আজানের সময় থেকে নামাজের প্রথম জামায়াত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের মাইক, ঢাক-ঢোলসহ যাবতীয় শব্দ বন্ধ থাকে। নামাজের প্রথম জামায়াত শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। এখানে কোনো বিশৃঙ্খলাও হয় না। শালীনতা বজায় রেখে একই উঠানে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের মানুষ।
পড়ুন: চট্টগ্রামে ৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
বাগেরহাটে ফাঁদ পেতে অবাধে চলছে পাখি নিধন
বাগেরহাটের কোদালিয়া-কালশিরা বিলে চলছে অবাধে পাখি নিধন। বিলের কয়েক বিঘা এলাকা জুড়ে ফাঁদ পেতে অবাধে পাখি শিকার করছে শিকারি চক্র। ফাঁদে প্রতিদিন ধরা পড়ছে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পাখি।
এই প্রতিবেদক সরজমিনে গিয়ে দেখতে পান, চিতলমারী থেকে উত্তর- পশ্চিম দিকে বিলের কালশিরা স্থানে কয়েক বিঘা এলাকা জুড়ে ফাঁদ পাতা রয়েছে। পাখি ধরতে কট আর লাইলনের সুতা দিয়ে ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। পানিতে কিংবা পানি থেকে এক থেকে দেড় হাত উচুতে ফাঁদ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বাঁশের খুটিতে। এছাড়া পাখি ধরার জন্য বিলে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল এবং সাউন্ডবক্স।
এ সময় বিলে পাখি শিকারি ওসমান নামে এক যুবককে ফাঁদ পাততে দেখা গেছে। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে নৌকা নিয়ে তিনি দ্রুত বিলের মধ্যে পালিয়ে যান তিনি। সারা বছর বিলে পাখি শিকার চললেও শীত মৌসুমে পাখি শিকারিদের তৎপরতা কয়েক গুণ বেড়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। জীবিকার প্রয়োজনে ওই বিলে যাওয়া জেলে এবং শাপলা সংগ্রহকারীদের শিকারিরা নানাভাবে হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বাগেরহাটের চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলা জুড়ে বিশাল বিল রয়েছে। এই বিল কোদালিয়া-কালশিরা বা জয়খা জলমহল হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন প্রজাতির অংসখ্য পাখির বিচারণ ক্ষেত্র বিশাল এই বিল। মোবাইলের সাহায্যে বিভিন্ন পাখির ডাক উচ্চ স্বরে সাউন্ডবক্সে বাজানো হয়। বিলের উপর দিয়ে উড়ে বেড়ানোর সময় পাখির ঝাঁক ওই ডাক শুনে নিচে নেমে এলে ফাঁদে ধরা পড়ে। এই বিলে ডাহক, কোরা,জলপিপি, বক, মাছরঙ্গা ও জলহাঁসসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। আর অকেন প্রজাতির পখির বিচারণ ক্ষেত্রও এই বিল।
আরও পড়ুন: টিয়াসহ ২৩ পাখি উদ্ধার, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ জনের কারাদণ্ড
সবুজ মাল্টার ভালো ফলনে চাষিদের মুখে তৃপ্তির হাসি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ বছর সবুজ মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের মুখেও তৃপ্তির হাসি। চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৭ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি হবে বলে আশাবাদ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের।
অনুকূল আবহাওয়া ও উপযোগী পরিবেশ থাকায় প্রতি বছরই বাড়ছে মাল্টার চাষ। প্রতি বছরই চাষিরা মাল্টার নতুন নতুন বাগান করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৩৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টার চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হেক্টর, সরাইলে ২ হেক্টর, কসবায় ৩৫ হেক্টর, নবীনগরে ১০ হেক্টর, বাঞ্চারামপুরে ৫ হেক্টর, নাসিরনগরে ১ হেক্টর, আখাউড়ায় ১৫ হেক্টর, আশুগঞ্জে ১ হেক্টর ও বিজয়নগর উপজেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ করা হয়েছে। চলতি বছর গত বছরের তুলনায় সাড়ে তিন হেক্টর বেশি জমিতে মাল্টার চাষ করা হয়েছে।
জানা যায়, ছোট বড় মিলিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রয়েছে ১ হাজার ৮৮০টি মাল্টার বাগান। এর মধ্যে বিজয়নগরে ৭৫৪টি, কসবায় ৬৬০টি ও আখাউড়ায় ৪৬৬টি মাল্টার বাগান রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মাল্টার আবাদ শুরু হয়। ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে মাল্টার চাষ। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বারি মাল্টা-১ জাতের চাষই বেশি হয়।
পড়ুন: বিশ্ববাজারে কুমিল্লার সবজির চাহিদা বাড়ছে
বাস্তবে জীবিত হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তারা মৃত!
সুনামগঞ্জের ছাতকে তিনজন মেম্বার প্রার্থীর কপাল মন্দ। দু’জন মেম্বার প্রার্থী জীবিত থেকেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তারা ‘মৃত’ এবং একজন প্রার্থীর নিজ ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে ভোট স্থানান্তর করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
এই বিষয়ে সংশোধনের জন্য প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচন ও ইউএনও অফিসে যোগাযোগ করেও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না। ফলে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়া তাদের অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমন ঘটনায় এলাকার সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলছে।
আরও পড়ুন: তিন দশক গান গেয়েই চলছে অন্ধ বাউলের সংসার
এনআইডি কার্ড চেক যাছাই করে জীবিত মানুষদেরকে মৃত বিষয়টি প্রার্থীরা যেমন সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন তেমনি নির্বাচন অফিসের দায়িত্বশীলদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
এই বিষয়ে গত রবিবার ছাতক উপজেলা নির্বাচন কমিশনার বরাবরে পৃথক তিনটি অভিযোগ করেছেন আলী আহমদ, কমর আলী ও ছিদ্দেকুর রহমান নামের তিনজন ভুক্তভোগী।
উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ব্রাক্ষণগাঁও গ্রামের মৃত আসক আলীর ছেলে মো. আলী আহমদের অভিযোগ, ২০১৬ সালে সম্ভাব্য মেম্বার প্রার্থী হিসেবে ৮নং ওয়ার্ডে তিনি নির্বাচন করার ইচ্ছা করেছিলেন। এ বছরও তার আগ্রহ ছিল নির্বাচনে অংশ নেয়ার। কিন্তু গত ১ জুলাই গোবিন্দগঞ্জ পূবালী ব্যাংক শাখায় একাউন্ট করতে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান তার (৯০১২৩৮৫৫৭৬১৭৪) জাতীয় পরিচয়পত্রটি অনলাইনে দেখাচ্ছে না। পরে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানতে পারেন জাতীয় পরিচয়পত্রে তাকে মৃত দেখিয়ে পরিচয়পত্রটি বাতিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ব্রাক্ষণগাঁও গ্রামের মৃত আবদুল আউয়ালের ছেলে মো. কমর আলী’র জাতীয় পরিচয়পত্রেও তাকে মৃত দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে। তার অভিযোগে, ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৮নং ওয়ার্ড থেকে মেম্বার প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। সম্প্রতি করোনার টিকার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (৯০১২৩৮৫৫৭৬৩০৯) নিয়ে নিবন্ধন করতে গেলে তা হয়নি। পরে ওই কার্ড নিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যাওয়ার পর জানতে পারেন তিনি মৃত! এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রটি বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, একই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চাকল পাড়া গ্রামের মো. আবদুল আমিনের ছেলে মো. ছিদ্দেকুর রহমানের ৯নং ওয়ার্ডে ভোট স্থানান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি উপজেলা নির্বাচন কমিশনে পৃথক একটি অভিযোগে উল্লেখ করেন, এ ওয়ার্ডে মেম্বার পদে নির্বাচন করার জন্য তিনি কাজ করছেন। কিন্তু গত ৯ অক্টোবর একটি ফরম পূরণ করতে গেলে জানতে পারেন তিনি ৭নং ওয়ার্ডের ভোটার নন! একই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বেরাজপুরে তার ভোট স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাকে নির্বাচনে প্রার্থী থেকে বঞ্চিত করার জন্য বর্তমান জনপ্রতিনিধিসহ নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশে এমন কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: রমাকান্তরা আবার স্কুলে যেতে চায়
এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান জানান, এমন কাজের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তদন্তের মাধ্যমে অন্যায়কারীদের চিহিৃত করে দেশের আইন অনুযায়ী শাস্তি হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
প্রার্থীদের অভিযোগের কথা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফয়েজুর রহমান জানান, এগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
পার্কিং: রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দুই-তৃতীয়াংশ দখল
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় দিনে ও রাতে অবৈধভাবে বাস পার্কিং করে রাখায় এক বছরে প্রায় ছোট বড় ৫২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৭ জন নিহত ও কমপক্ষে ১১৫ জন আহত হয়েছে।
মাওয়া মহাসড়কে আট লেন রাস্তার দু লেনের মাঝের দু’পাশে ঢাকা-মাওয়াগামী ডিএম পরিবহনের ৭৫টি যাত্রীবাহী বাস পার্ক করে রাখা। এর মদতদাতা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাজী ফিরোজ আলম। তিনি থানা আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি। তার প্রভাব খাটিয়ে মাসের পর মাস বাস মালিকরা রাস্তার দু’পাশে ইচ্ছেমতো সিংহভাগ জায়গা দখল করে বিভিন্ন রুটের যানবাহন পার্কিং করে রাখা হয়। নিয়ম না থাকলেও যেখানে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে এসব বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। আর পার্কিং করে রাখায় সন্ধ্যার পর থেকে মূল রাস্তায় যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতাসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় রাত ৮টার পর রাস্তার প্রস্থের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে বাস পার্কিং করা আছে। এসব এলাকায় মূল সড়কের দু’পাশ জুড়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে বাস। এসব গাড়ির প্রতিটিতে শুয়ে আছেন ২-৩ জন করে লোক।
বর্তমানে ঢাকা থেকে দিনে-রাতে যেসব বাস বিভিন্ন জেলা শহরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়, সেগুলোর বেশিরভাগেরই নিজস্ব কোনো পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ফলে মালিকরা রাস্তার ওপর এসব গাড়ি রাখছেন। এছাড়া বিভিন্ন রুটে চলাচল করা বাস ও মিনিবাসগুলোও রাতে রাখা হচ্ছে রাস্তার ওপর। পার্কিং বাবদ প্রতিটি বাস চাঁদা নেয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা করে। নামিদামী পরিবহন সংস্থা যাদের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে, তারাও রাস্তায় গাড়ি রাখছে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানেরও মোট বাসের তুলনায় পার্কিংয়ের জায়গা কম।
আরও পড়ুন: দৌলতদিয়ায় ৩ ফেরি ঘাট স্থানান্তর, তীব্র যানজট
এ নিয়ে ভুক্তভুগী এলাকাবাসীরা বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েও কোন সুফল পায়নি।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত সকর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, মাওয়া হাইওয়ে রাস্তা দেখার দায়িত্ব হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির। এলাবাসী থানায় একাধিকবার অভিযোগ জানালেও তাদের কিছু করার নেই।
অন্যদিকে হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহরাব উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিশ্ববাজারে কুমিল্লার সবজির চাহিদা বাড়ছে
দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ববাজারে যাচ্ছে কুমিল্লার সবজি। দেশের বৃহৎ সবজি আড়ৎ কুমিল্লার নিমসার বাজার থেকে প্রতিদিনই রপ্তানি হচ্ছে এ সবজি। প্রান্তিক কৃষকদের নিয়ে গঠিত ২০টি সমিতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় বিদেশে রপ্তানিযোগ্য এ সবজি। এ কাজে স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস।
কুমিল্লার কচুর লতি, লাউ, কুমড়া, শসা, বরবটি, করল্লা, ধুন্দুল, পুঁই শাক, ডাটা, লালশাক, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বাজারে। নিরাপদ ও বিষমুক্ত এসব সবজি রপ্তানিতে চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। এখন প্রতি মাসে গড়ে সাত টন সবজি রপ্তানি হলেও শীতকালীন সময়ে মাসে গড়ে রপ্তানি হয় ১০ টনেরও বেশি। কুমিল্লার নিমসার কাঁচা বাজারে অবস্থিত কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা সজিব মোল্লা জানান, সেপ্টেম্বর মাসে কুমিল্লার নিমসার বাজার থেকে কচুর লতি লন্ডন ও ইতালিতে রপ্তানি হয়েছে চার হাজার ৬২০ কেজি। ইতালিতে লাউ রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ১৫ কেজি। ২২০ কেজি শসা রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাজ্যে। ইতালিতে মিষ্টি কুমড়া রপ্তানি হয়েছে ২২০ কেজি। ৮৪ জন প্রান্তিক কৃষক থেকে এ সবজি কেনা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রান্তিক কৃষকদের নিয়ে ২০টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। এ সমিতিতে রয়েছেন ৪০০ প্রান্তিক কৃষক। তারাই এ সবজি উৎপাদন ও সরবাহ করে। ফলে তারা ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করতে পারছে।
পড়ুন: অবশেষে আলোর মুখ দেখছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় ২১ হাজার ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হচ্ছে। বছরে দুই মৌসুমে মোট ৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৪ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদিত হয়। জেলার মানুষের চাহিদা বছরে দেড় লাখ মেট্রিক টন। বাকি সবজি ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। পাশাপাশি এখান থেকে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
সম্প্রতি কুমিল্লার বরুড়া, বুড়িচংয়ের নিমসার ও চান্দিনার বরকট ইউনিয়নের পূর্ব রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষকের বাজার কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে রপ্তানি করার জন্য আনা সবজি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রপ্তানির উপযোগী করছেন কৃষকরা।
সবজি নিয়ে আসা কোরপাইয়ে এলাকার কৃষক শহিদুল, বরকইট ইউনিয়নের পিহর গ্রামের কৃষক সাইফুলসহ অনেকে জানান, আগে সবজি হাটে নিয়ে বিপাকে পড়তে হতো। বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি হলে দাম কমে যেত। তখন অনেক সময় লোকসানে সবজি বিক্রি করতে হতো। এখন কৃষকের বাজার হওয়ায় সবজি বিক্রির আর কোনো সমস্যা হয় না। আর এখানে দিতে হয় না কোন খাজনা। আমরাও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন: মোংলায় ৮৫ শতাংশ মানুষের নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই
জলবায়ু পরিবর্তন: মোংলায় ৮৫ শতাংশ মানুষের নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের মোংলায় পানিতে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে পানিতে ৯ গুন বেশি লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। খাল-বিল, নদী-নালা, ডোবা ও ভূ-গর্ভস্থসহ সর্বত্রই পানিতে লবণ আর লবণ। লবণাক্ততার কারণে সুপেয় পানির চরম সংকট চলছে মোংলায়। উপজেলার ৮৫ শতাংশ মানুষ খাবারের নিরাপদ পানির জন্য হাহাকার করছে। জীবন বাঁচাতে খাবার পানির জন্য নারী-পুরুষকে কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিতে হচ্ছে। লবণাক্ত পানি পান করে অনেকে পেটের পীড়া এবং পাতলা পায়খানাসহ নানা রোগে ভুগছেন। অধিকাংশ মানুষের খবারের জন্য বৃষ্টি পানি একমাত্র ভরসা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মোংলা উপজেলা চারদিক থেকে নদী-খাল দ্বারা বেষ্টিত। গ্রামগুলোতে ডোবা-নালা আর মৎস্যঘেরে ভরা। যেদিকে চোখ যায় সবদিকেই পানি থৈ থৈ করছে। কিন্তু সব পানিই অতিমাত্রায় লবণাক্ত। ওই সব পানি খাবার তো দুরের কথা ব্যবহার যোগ্য নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মোংলা উপজেলার সর্বত্রই পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। কোন কোন পরিবারে ব্রাকের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি দেখা মিলেছে। পানির কথা বলতেই বিভিন্ন গ্রামের নারী-পুরুষরা এক বাক্যে তাদের সুপেয় পানির তীব্র সংকটের কথা জানালেন।
উপজেলার উত্তর চাঁদপাই গ্রামে মধ্য বয়সী রোজিনা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, টিনসেডের বাড়িটির এক পাশ দিয়ে খাল বয়ে গেছে। অপর দুই পাশে পুকুর আর মৎস্যঘের। বাড়ির তিন পাশেই পানি। কিন্তু সব পানিই লবণাক্ত। পাশে ফুলজান বিবির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাড়ির এক পাশে পুকুর আর অপর পাশ দিয়ে খাল বয়ে গেছে। ওই দুই বাড়িতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য দুই হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাংক এবং জীবানুমুক্ত করার জন্য পানি ফিল্টারের ব্যবস্থা দেখা গেছে। ব্রাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির আওতায় তাদেরকে ওই পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি দেয়া হয়েছে বলে তারা জানান।
বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর প্রভাবে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা এবং তীব্রতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সাথে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদী ও ভূ-গর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। যা এই অঞ্চলের কৃষি, স্বাস্থ্য ও জীবিকার ক্ষতি করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের ১৯ জেলার ৭০ উপজেলায় চার কোটি মানুষ বাস্তচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চার দশকে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। পশুর নদীর মোংলা পয়েন্টে ১৯৬২ সালে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল দুই পিপিটি। ২০০৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ পিপিটিতে। বর্তমানে দেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার ১৫৩ উপজেলায় প্রায় ৫ কোটি মানুষের বসবাস। যার মধ্যে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ অতিদরিদ্র।
তথ্য মতে, লবণাক্ততা বাড়ার কারণে উপকূলের তিন কোটি ৫০ লাখ মানুষ তীব্র খাবার পানি সংকটে ভুগছেন। এখানে একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে মাত্র দুই লিটার খাবার পানির মাধ্যমে ১৬ গ্রাম লবণ গ্রহণ করেন। যে খানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ দিনে পাঁচ গ্রাম। লবণাক্ততা ছাড়াও আয়রন, আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডও পাওয়া যায় এসব এলাকার পানিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, লবণাক্ততার প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ ৩০ থেকে ৫০ লাখ দরিদ্র ও ২০ থেকে ৩০ লাখ অতিদরিদ্র মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ প্রস্তাব