বিশেষ সংবাদ
বাগেরহাটে দেড় বছরে ৩১৭৮ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে
বাগেরহাটে গত দেড় বছরে তিন সহস্রাধিক অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। বাল্যবিয়ের শিকার এসব কিশোরী মেয়েরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তারা পড়ালেখা বন্ধ করে এখন স্বামীর সংসার করছে। এদিকে, বাল্যবিবাহ রোধ করতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সচেতন হওয়া জরুরি বলে জেলা প্রশাসক মনে করছে।
শিক্ষা বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলায় করোনাকালীন সময়ে তিন হাজার ১৭৮ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই সময়ে প্রায় ৪০০ বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের সময় অনেক মা ও শিশু মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে।
করোনাকালে বাল্যবিয়ের শিকার নীলাঞ্জনা (ছদ্মনাম) বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি রহমানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। গত বছর নভেম্বর মাসে তার বিয়ে হয়। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা এবং লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে মা-বাবা সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে সে ওই বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা পেশায় একজন হকার।
বিয়ের তিন মাসের মধ্যে স্বামীকে ডিভোর্স দেয়া নবম শ্রেণির ছাত্রী নীলাঞ্জনা জানায়, বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরিবারে অভাব অনটন মা-বাবাকে ভাবিয়ে তোলে। পরিবারের সিদ্ধান্তে সে বিয়েতে রাজি হয়। বিয়ের পর সে স্বামীর সংসারে চলে যায়। কিছুদিন পর স্বামী তার উপর নির্যাতন চালাতে থাকে। নির্যাতন সইতে না পেরে সে বাবার বাড়ি চলে আসে। বিয়ের তিন মাসের মধ্যে সে তার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছে। এখন সে আবারও পড়ালেখা করতে চায়। পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় নীলাঞ্জনা।
পড়ুন: বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সাংসদদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ: স্পিকার
সড়ক খুঁড়ে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ, পথচারীদের দুর্ভোগ
সড়ক খুঁড়ে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগের কাজ চলায় খুলনা মহানগরীর খালিশপুর নতুন বিআইডিসি সড়কের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই খানা খন্দে কারণে বর্ষায় মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমে এবং কাদা মাটির কারণে পথচারীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। আর এই কারণে প্রায় ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাময়িকভাবে সড়কটির বিভিন্ন বড় বড় গর্তগুলো ইটের টুকরো দিয়ে সংস্কার করলেও ভারি যানবহন চলাচলের সময়ে আবারও গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে সড়কে চলাচলে প্রায় সময়ে ইজিবাইক, অটোরিকশসহ ছোট ছোট যানবহন উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
আরও পড়ুন: সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন: কাঁটাতারে বাঁধা শিক্ষক-শিক্ষার্থী!
স্থানীয় বাসিন্দা ইমন মোল্লা জানান, খুলনার মধ্যে ব্যস্ততম একটি সড়ক হচ্ছে এই নতুন রাস্তা থেকে বিআইডিসি সড়ক। তবে বর্তমান সময়ে সড়কটির মধ্য খানে কাটা থাকায় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এই বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমে সড়ক জুড়ে পিচলা কাদামক্ত হয়ে আছে। সড়কটি আগে ভালোই ছিল। তবে সড়কটি খুড়ে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ স্থাপন করার জন্য পুরো সড়ক গর্তে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আকমল আহসান বলেন, ‘এই বিআইডিসি সড়কটি একটি গুরুত্বপুর্ণ সড়ক। বাজার, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পাটকলসহ এখানে তিনটি তেলের ডিপো রয়েছে। যার কারণে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ট্যাংক লড়ি ও বিভিন্ন যানবহন চলাচল করে। খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবারাহের জন্য জ্বালানি তেলবহনকারী যান এই রুট ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ পাটকল শ্রমিকরা এই সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে। যে কারণে সড়কটি সব সময়ে ব্যস্ত থাকে অথচ বর্তমানে সড়কটি অবস্থা খুবই বেহাল দশা।
আরও পড়ুন: মামলা জটিলতায় স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ, ঝুঁকিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই কাদা-পানিসহ নানা ধরনের সমস্যা হয়। তাছাড়া শুষ্ক মৌসুমে সড়কটিতে ধুলো বালি উড়তে থাকে। আমরা এই সড়কটি দ্রুত সংস্কার করারা জন্য মেয়রের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।’
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ (পিন্টু) বলেন, বিআইডিসি সড়কটির অবস্থা খুবই বেহাল। তবে বর্তমান বর্ষা মৌসুমে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ বর্ষার পানিতে যা করব, সেসব নষ্ট হয়ে যাবে। তবে একটু বর্ষা কমলে সাময়িকভাবে সংস্কার করা হবে। সড়কটি নতুনভাবে স্থায়ী সংস্কারের জন্য মেয়র খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।
আরও পড়ুন: ৫০০ পরিবারের একমাত্র ভরসা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো!
এ ব্যাপারে কেসিসির প্যানেল মেয়র-১ আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘সড়কটি বেহাল ছিল তবে কিছুদিন আগে ইট দিয়ে রোলিং করেছি তারপরও আমি বিষয়টি দেখছি। দ্রুত সংস্কার করার জন্য বিষয়টি নিয়ে মেয়রের সাথে কথা বলে সাময়িকভাবে চলাচলের জন্য একটি ব্যবস্থা করা হবে। পরবর্তীতে নতুন দরপত্র করে একটি মডেল সড়ক তৈরি করা হবে।’
গতি ফিরছে বাণিজ্যে, বদলে যাচ্ছে মোংলা বন্দর
শ্রমিক অসন্তোষ, কয়েকদিন পর পর ধর্মঘট, দিনের পর দিন জাহাজশূন্য পশুর চ্যানেল, কর্মহীন শ্রমিকের আত্মহত্যা এসব ভয়ংকর ঘটনা এখন অতীত। বর্তমানে সেই পশুর চ্যানেলে সারি সারি জাহাজ। সেখানে কাজ করছে অসংখ্য শ্রমিক। দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলায় সর্বোচ্চ জাহাজ আগমনও রেকর্ড গড়েছে। সংকট কাটিয়ে মৃতপ্রায় মোংলা বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি ফিরেছে। বন্দরের সুবিধাদি বৃদ্ধির জন্য ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এদিকে, পদ্মা সেতু ও খুলনা-মোংলা রেলসেতু এবং রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ায় মোংলা বন্দরকেন্দ্রিক দেশের শিল্প-বাণিজ্যের সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে শুরু করেছে নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। এতে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে গোটা বন্দর এলাকা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থ ও হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত মোংলা বন্দর ৪৯৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে। এ সময় বন্দরে তিন হাজার ৭০০টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে।
পড়ুন: লকডাউনে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক
তিনি জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোংলা বন্দর ৬৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ বছর বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে ৪৮২টি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জন হয়েছে। এ বছর বন্দরে ৬২৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০৯ কোটি ৩৩ লাখ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জন হয়েছে। এ বছর বন্দরে ৭৮০টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩৩ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন হয়েছে। এ বছর বন্দরে ৯১২টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। এছাড়া সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১৭ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন হয়েছে। এই বছর বন্দরটিতে বাণিজ্যিক জাহাজ এসেছে ৯০৩টি।
পড়ুন: মোংলা বন্দরে জাহাজ আগমনে রেকর্ড সৃষ্টি
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, ২০০৯ সালের শুরুতেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে মৃতপ্রায় মোংলা বন্দরকে কার্যক্ষম ও কর্মচঞ্চল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯ সালের জুন থেকে এ বন্দরের মাধ্যমে গাড়ি আমদানি শুরু হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসমূহের নির্দেশনা, বন্দর উপদেষ্টা কমিটি ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সুপারিশ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বন্দর ব্যবস্থাপনায় মোংলা বন্দর ধীরে ধীরে গতিশীলতা অর্জন করতে থাকে।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা বন্দরের নাব্য সংকট কাটিয়ে উঠেছি। এখন বন্দরের হারবাড়িয়ায় ৯.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারছে। আগামী বছরের প্রথম থেকেই বন্দরের মূল জেটিতেও এসব জাহাজ ভিড়তে পারবে।’
মোংলা বন্দরের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০২০ পর্যন্ত ১৮টি উন্নয়ন প্রকল্পসহ ৫০টির অধিক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন ও তিনটি প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় আছে।
পড়ুন: ডিসেম্বরের মধ্যে খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন নির্মাণ কাজ শেষ করার নির্দেশ
তিনি বলেন, মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের দ্রুত ও দক্ষ সেবা প্রদানে যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে আছে ৭০টি কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ৮০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর প্যানেল স্থাপন, তিনটি কার ইয়ার্ড নির্মাণ, ১০টি বিভিন্ন ধরনের সহায়ক জলযান ক্রয়, ৬২টি বিভিন্ন ধরনের লাইটেড বয়া, দুটি রোটেটিং বিকন, ছয়টি জিআরপি লাইট টাওয়ার সংগ্রহ ও স্থাপন, একটি মোবাইল হারবার ক্রেন, একটি স্টাফিং-আনস্টাফিং শেড, একটি ওয়েব্রিজ মোবাইল স্ক্যানার সংগ্রহ। এছাড়া রুজভেল্ট জেটির বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে মোংলা বন্দরে ১০টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসবের বাইরে বন্দরের অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম সংগ্রহ পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং, সহায়ক জলযান সংগ্রহ, বর্জ্য নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ থেকে পিপিপি’র আওতায় মোংলা বন্দরের দুটি অসম্পূর্ণ জেটির নির্মাণকাজও শেষ করা হবে ২০২১ সালের মধ্যে। চলমান এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে আট হাজার কোটি টাকা।
স্বামী হার্টের রোগী, সাইকেলে ফেরি করে সংসারের হাল ধরেছেন স্ত্রী
সাইকেলের সামনে ও পেছনে একাধিক ব্যাগ ও কাগজের কার্টুনে মালামাল নিয়ে ফেরি করার উদ্দেশে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন মুসলিমা। খালিশপুর হাউজিং বাজারের এস লাইনে এক বাড়ির সামনে জটলা পাকিয়ে রয়েছেন কয়েকজন নারী। মাঝে মুসলিমা চুড়ি, টিপ, চিরুনিসহ গ্রাহকের চাহিদা মাফিক মালামাল খুলে দেখাচ্ছেন। অনেকে পছন্দের জিনিস কিনছেন, অনেকে আবার দর কষছেন। সামান্য লাভ হলেই জিনিস ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি। কেউ কেউ নগদ টাকা দিয়ে পছন্দের জিনিস কিনছেন, কেউবা বাকিতে খাতায় লিখে রাখছেন।
এভাবেই দৈনিক সাইকেলে বাড়ি বাড়ি ফেরি করে মালামাল বিক্রি করছেন মুসলিমা। জীবনযুদ্ধে এক সংগ্রামী নারী তিনি।
স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে ভালোই চলছিল খুলনার দৌলতপুর জুটমিলের শ্রমিক ওবায়দুর রহমানের (৫০) সংসার। সেই সুখে ছেদ পড়ে ২০১৯ সালে। হার্টের সমস্যার কারণে রিং পড়ানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা করানোর অর্থ ছিল না তার। ধীরে ধীরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
এদিকে জুট মিল বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েন ওবায়দুর। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তির আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। সংসারে দেখা দেয় অভাব-অনটন। তিন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ তো দূরের কথা, ধার-দেনা করে তাদের খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। নিরূপায় হয়ে পথে নামেন ওবায়দুরের স্ত্রী তসলিমা বেগম মুসলিমা (৪১)। শুরু করেন বাড়ি বাড়ি ঘুরে কাপড় বিক্রির কাজ।
পড়ুন: পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি
শুরুতে হেঁটে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে থ্রি-পিসসহ নারীদের পোশাক বিক্রি করেন। তাতেও চলছিল না সংসার। পরে একটি বাইসাইকেল কেনেন। সেই সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চুড়ি, ফিতা, গোল্ডপ্লেটের কানের দুল, আংটি, চেইন, টিপ, চিরুনিসহ প্রয়োজনীয় মালামাল বিক্রি শুরু করেন।
মুসলিমার স্বামী ওবায়দুর রহমান বলেন, দুই বছর আগে থেকেই আমার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। ২০১৯ সালে মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়তাম। এরপর খুলনার শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাই। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে। আমি হাটতে গেলে হাঁপিয়ে যেতাম, অনেক সময় বুকে ব্যথা অনুভব করতাম। হার্টের ৯০ শতাংশ ব্লক ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা দ্রুত এনজিওগ্রাম করে রিং পরানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে রিং পড়ানো সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় চিকিৎসাও নিতে পারছি না। জুটমিলও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েছি। এখন সংসার চালাচ্ছেন আমার স্ত্রী। ভারী কোনো কাজ করতেও পারি না। আর হৃদরোগে আক্রান্ত শুনলে কেউ কাজও দিতে চায় না। দুর্দশার মধ্যে আছি। তিন মেয়ের লেখাপড়াও ঠিকমতো করাতে পারছি না। যদি কোনো ব্যক্তি আর্থিক সহায়তা করতে পারে তাহলে উপকৃত হতাম।’
খালিশপুর হাউজিং বাজার এস লাইনের গৃহবধূ শাহানারা বেগম বলেন, মুসলিমা ভাবিকে ২২ বছর ধরে চিনি। খুব ভালো তিনি। কিন্তু খুব কষ্ট তার। স্বামী হৃদরোগে আক্রান্ত। এখন বাধ্য হয়ে এলাকায় সাইকেলে মালামাল বিক্রি করার জন্য নেমেছেন। সরকার বা কোনো বিত্তবান যদি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে আমরাও খুশি হব।
ওই এলাকার মুদি দোকানি বলেন, স্বামী অসুস্থ থাকায় দারিদ্র্যতার কারণে ওই নারী পর্দার মধ্যে থেকে রাস্তায় নেমে কাজ করছেন। প্রতিদিনই তিনি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মালামাল বিক্রি করছেন। যেটা পুরুষদের করার কথা। এটা দেখলেও খারাপ লাগে, কিন্তু কী করব? এটা ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।
উকিল বাড়ির বাসিন্দা জসেদা রানী বিশ্বাস বলেন, তার কাছ থেকে প্রায় মালামাল কিনি। তার তিনটি মেয়ে আছে। স্বামী অসুস্থ থাকায় তিনি বাড়ি বাড়ি মালামাল বিক্রি করে সংসার এবং মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন।
পড়ুন: রমাকান্তরা আবার স্কুলে যেতে চায়
জীবনযুদ্ধে হার না মানা সংগ্রামী নারী তসলিমা বেগম মুসলিমা বলেন, আমার স্বামীর হার্টে ৯০ শতাংশ ব্লক ধরা পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে তার চিকিৎসা করাবো কীভাবে? তারপরও আমি হাল ছাড়িনি। দৈনিক ফেরি করি, বাচ্চাদের পড়ালেখা ও খাবারের ব্যবস্থা করছি। স্বামীর চিকিৎসার টাকার ব্যবস্থা করছি।
তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমি ব্যাগ কাঁধে করে নারীদের আনুষঙ্গিক জিনিস বিক্রি শুরু করি। এখন আর কাঁধে করতে পারি না। মেরুদন্ডের হাড়ে সমস্যা হয়ে গেছে। এরপর সাইকেল কিনলাম। এখন কখনও সাইকেল চালিয়ে, কখনও হেঁটে হেঁটে জিনিস বিক্রি করি। দৈনিক ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। খুব কষ্ট করেই চলছে। বিত্তবানরা যদি আমাদের পাশে দাঁড়াতেন তাহলে খুব উপকার হতো।’
নতুন রাস্তা এলাকার একটি মসজিদের ইমাম আবু তালেব। খুতবা পড়ানোর সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। মসজিদের মুসল্লিরা তাকে শেখ আবু নাসের হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারও হৃদরোগ ধরা পড়ে।
আবু তালেব বলেন, হাসপাতালে নেয়ার পর ইনজেকশন দেয়। ওষুধ খেয়ে ও রেস্ট নেয়ার পর কিছুটা সুস্থ হই। এখন বাড়িতে আছি। তবে চিকিৎসক তিন মাস সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। কোন ধরনের ভারী কাজ করতে মানা করেছেন।
শুধু ওবায়দুর-আবু তালেব নয়, প্রতিনিয়তই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। অনেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সহায়-সম্বল হারিয়ে আর্থিকভাবে নিঃস্ব হচ্ছেন। বিশেষ করে মধ্য ও নিম্নবিত্তরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
পড়ুন: রাজগঞ্জের নারীদের তৈরি হস্তশিল্প যাচ্ছে ইউরোপে
খুলনার শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. এসএম কামরুল হক বলেন, হাসপাতালে হার্টের রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য ৩০টি শয্যা রয়েছে। পদ্মার এ পাড়ের সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখান থেকে সেবা নিচ্ছেন। স্বল্প জনবল নিয়েও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষের অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন (শরীরচর্চা না করা, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড ও কোলেস্টরল ফুডের প্রতি ঝোক, কায়িক পরিশ্রম না করা), অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকস, উচ্চরক্তচাপ, শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং আরও একটি বড় কারণ হচ্ছে ধূমপান। হাতে গোনা কয়েকটি কারণ আমরা নিজেরাই প্রতিরোধ করতে পারি। এসব যদি সঠিকভাবে মেনে চলতে পারি তাহলে আমরা হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে পারি।
হৃদরোগ প্রতিরোধে নিয়মিত শরীর চর্চা, ধূমপান ত্যাগ, ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার ত্যাগ, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়া সর্বোপরি লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন এই দুই চিকিৎসক।
পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি
পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। প্রতিটি হোটেল/মোটেলে ৫০শতাংশ আবাসন খালি রাখার কথা থাকলেও আবাসন খালি রাখছে না হোটেল কর্তৃপক্ষ।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল এসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান ইউএনবিকে জানান, কক্সবাজারসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক সংখ্যা বেশি হওয়ায় হোটেলগুলোতে ৫০ শতাংশ আবাসন খালি রাখার ইচ্ছা থাকলেও সরকারের শর্ত মানছে না হোটেল কর্তৃপক্ষ। পর্যটন এলাকায় প্রতিটি হোটেলে প্রচুর পর্যটক রয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্হ্যবিধি নিশ্চিতের ওপর স্হানীয় প্রশাসনকে আরও জোর দিতে হবে। তানাহলে, এখন যেভাবে স্বাস্হ্যবিধি না মেনে পর্যটক আসছে তাতে কোভিড বাড়ার আশংকা রয়েছে।
তিনি বলেন, পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে কী পরিমাণ পর্যটক কেরি করা যাবে বা প্রতিদিন কতজন পর্যটক আসা যাবে। এ বিষয়ে পর্যটক সংখা নির্ধারণ করতে পারলে স্বাস্হ্যবিধি মেনে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। পাশাপাশি স্হানীয় প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং থাকতে হবে। দেশের অন্যতম টুরিস্ট এলাকা কক্সবাজার । সেখানে ছোট বড় হোটেল/মোটেল আছে ৫০০ উপরে। ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ( টিওএবি) সভাপতি রাফিউজ্জামান ইউএনবিকে বলেন, উম্মুক্ত স্হানে টুরিস্টরা কোনো স্বাস্হ্যবিধি মানছে না । টুরিজম আসলে কন্ট্রোলে থাকে না। আমরা মিটিং করে অপারেটরদের বলছি, স্বাস্হ্যবিধি মেনে ট্যুর অপারেট করতে। কিন্তু যারা ব্যক্তিগতভাবে যাচ্ছেন, এসব টুরিস্টরা আসলে স্বাস্হ্যবিধি তেমন মানছেন না। ব্যক্তিগতভাবেই বেশি পর্যটক গিয়ে থাকেন ।
আরও পড়ুন: পাঁচ মাস পর ৬ শর্তে খুলেছে খাগড়াছড়ির সব পর্যটন কেন্দ্র
তিনি বলেন, এখন ছুটির দিনে কক্সবাজারসহ প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে মানুষের ভিড়। সরকার স্বাস্হবিধি মেনে চলার কথা বললেও তেমন মানছে না । দীর্ঘদিন পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় মানুষ কোথাও বেড়াতে যেতে পারছিল না। খুলে দেয়ার পর প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে এখন প্রচুর পর্যটক রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মেনে হোটেলগুলোর ৫০ শতাংশ আবাসন খালি রাখছে কি না জানতে চাইলে সভাপতি বলেন, পর্যটন এলাকায় পাঁচ তারকা ও উন্নত মানের হোটেলগুলো স্বাস্হ্যবিধি মেনে হয়তোবা আবাসন খালি রাখছে। কিন্তু ছোট খাট হোটেলগুলো কোনো আবাসন খালি রাখছে না। তবে এ বিষয়ে স্হানীয় প্রশাসন বলতে পারবে ৫০ শতাংশ আবাসন খালি রাখার বিষয়ে কতটুকু কোন হোটেল মানছে।
তিনি বলেন, পর্যটন এলাকায় স্হানীয় প্রশাসন মাইকিং ও ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। সেটি আরও জোরদার করতে হবে। স্বাস্হ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে ট্যুরিস্টদের আরও সচেতন হতে হবে। স্বাস্হ্যবিধি না মানলে কোভিড বাড়ার আশংকা রয়েছে।
দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে কক্সবাজার এলাকায় ভালো মানের হোটেলে বুকিং আগে থেকে দিতে হয়। পর্যটকদের চাহিদা থাকায় এখন প্রায় প্রতিটি হোটেলেই বুকট। সে হিসেবে সরকারের নির্দশনা মেনে ৫০ শতাংশ সিট খালি রাখার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না। কারণ পর্যটকদের বেশি চাহিদা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রে লোক সমাগমে নিষেধাজ্ঞা
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ দাবি করছেন ,স্বাস্হ্যবিধি মেনেই পর্যটকরা থাকছেন। হোটেল মোটেলগুলোতে আমরা প্রতিনিয়ত মনিটর করছি। সাথে হোটেল এসোসিয়েশন ও টুরিস্ট পুলিশ সহযোগিতা করছেন। যাতে সরকারের নির্দশনা মোতাবেক আবাসন খালি এবং স্বাস্হ্যবিধি যথাযথ ভাবে মানা হয়।
রমাকান্তরা আবার স্কুলে যেতে চায়
ছোটবেলায় খুব চঞ্চল ছিল রমাকান্ত। একদিন বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে পড়ে গেলে সেই সময় উঠে দাঁড়ালেও একসময় হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। সেই থেকে বাড়িতেই শুয়ে-বসে দিন কাটছে তার। একই অবস্থা রমাকান্তের মেজ ভাই জয়ন্তরও। আর ছোট ভাই হরিদ্রও ধীরে ধীরে বড় ভাইদের অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা তিন সহোদরই এখন প্রায় পঙ্গু বলা যেতে পারে।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের বলিহন্দ গ্রামে রমাকান্তদের বাড়ি। তাদের বাবার নাম বাদুল সিংহ।
চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশু তিনটি দুরারোগ্য ‘ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি’ রোগে আক্রান্ত। এটি জিনগত রোগ, তবে সংক্রামক নয়। এ রোগে আক্রান্ত রোগী কখনোই সেরে ওঠে না। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বেশি দিন বাঁচেও না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির বারান্দায় রমাকান্ত (১৪), জয়ন্ত (১২) ও হরিদ্র (৬) বসে রয়েছে। রমাকান্ত ও জয়ন্তর হাত-পা শুকিয়ে হাড্ডিসার হয়ে গেছে। তবে রমাকান্ত ও জয়ন্তর মতো লক্ষণ দেখা দিলেও হাঁটাচলা করতে পারছে হরিদ্র। গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ত মা কাজলী রানী কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছেলেদের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: কোটিপতি ছেলের বাসায় আশ্রয় হলো না মায়ের
কাজলী রানী জানান, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে হাঁটতে হাঁটতে পড়ে যায় রমাকান্ত। সেদিন উঠে দাঁড়ালেও কিছুদিনের মধ্যে পা দুর্বল হতে শুরু করে তার। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেয়ার পরও রমাকান্তের হাত-পা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যেতে থাকে। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও এক পর্যায়ে রমাকান্ত চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলে। ধীরে ধীরে শারীরিক ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে। আর চার বছর আগে জয়ন্তও একই রোগে আক্রান্ত হয়। এখন সেও রমাকান্তের মতো চলাফেরার শক্তি পায় না। এখন হরিদ্রেরও সেই রোগের লক্ষণ শুরু হয়েছে।
মা কাজলী রানী বলেন, ঘর থেকে বের করে আনা, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে গোসল পর্যন্ত করিয়ে দিতে হয় ছেলেদের। অবস্থা দেখে শিক্ষকেরা তাদের স্কুলে যেতে নিষেধ করে দিয়েছেন।
চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলার পাশাপাশি এখন কথা বলতেও অসুবিধা হয় রমাকান্ত ও জয়ন্তর।
তবুও রমাকান্ত বলে, ‘আমি বেড়াতে চাই। কিন্তু পারি না।’
জয়ন্ত বলে, ‘চার বছর থেকে আমি এই অবস্থায়। বেড়াতে ইচ্ছা করে, আবার স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে।’
আরও পড়ুন: বান্দরবানের সুরের জাদুকর মং নু মং
বাবা বাদুল সিংহ বলেন, ‘শ্রম দিয়ে সংসার চলে। ছেলেদের কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। নিশ্চিত হয়েছেন ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি রোগ হয়েছে তাদের, যা সম্বল ছিল চিকিৎসায় সব শেষ হয়ে গেছে। চিকিৎসার ব্যয়ভার আর টানা এখন সম্ভব হচ্ছে না। এখন কী করব, ভেবে পাচ্ছি না।’
সম্প্রতি বাদুল সিংহ তার ছেলেদের নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য যান। শারীরিক পরীক্ষার পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আসাদুজ্জামান তাদের পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে চিকিৎসক মো. আসাদুজ্জামান জানান, ওই তিনটি ছেলেই দুরারোগ্য ‘ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি’ রোগে আক্রান্ত। এটি একটি জিনগত রোগ, তবে সংক্রামক নয়।
তিনি জানান, এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের সাত-আট বছর বয়স থেকে হাঁটতে সমস্যা হয়। একসময় মাংসপেশি জমাট বাঁধতে শুরু করে। এ কারণে একেক সময় শরীরের একেকটা অঙ্গ দুর্বল হতে শুরু করে। একসময় রোগী নিস্তেজ হয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বেশি দিন বাঁচে না। এ রোগ থেকে সেরে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: তিন বছর ঘুরেও কৃষি সহায়তা পাচ্ছেন না কব্জি হারানো মুক্তার
আসাদুজ্জামান জানান, তাদের পুষ্টি খুব দরকার। চিকিৎসা করলে হয়তো একটু আরাম হয়। মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার দরকার হয়, কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয় না। এ রোগে আক্রান্তরা সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০ বছর বাঁচতে পারে।
হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল করিম বলেন, ‘ওই তিন শিশুর চিকিৎসার জন্য যা যা করণীয় আমরা তা করতে চাই।’
৩ লাখ মানুষের ভাগ্য পাল্টে যাবে ৪ কিলোমিটার রাস্তায়
২১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এই উপজেলায় যোগাযোগের তেমন পরির্বতন হয়নি। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে গেলেও নবীনগর উপজেলার উরখুলিয়া গ্রামটি হাওরবেস্টিত এলাকা হওয়ায় এখনো উন্নয়নবঞ্চিত রয়ে গেছে। আর এই গ্রামটির উন্নয়নে বদলে যেতে পারে অবহেলিত পূর্বাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের তিন লাখ সাধারণ মানুষের ভাগ্য।
তবে ইতোমধ্যে স্থানীয় সাংসদ মো. এবাদুল করিম বুলবুলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এশিয়ান হাইওয়ে নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা সড়কের কাজ। চলমান রয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে নবীনগর টু আশুগঞ্জ রাস্তার কাজ। রাস্তা দুটির নির্মাণ সম্পন্ন হলে নবীনগরে যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিল্পব ঘটবে।
এদিকে মাত্র চার কিলোমিটার রাস্তা আর ১৫০ মিটার করে দুটি সেতু নির্মাণ করা হলে নবীনগর টু আশুগঞ্জ রাস্তার সাথে যুক্ত হলে অবহেলিত পূর্বাঞ্চলের ৬টি ইউয়নিয়নের তিন লাখ মানুষের জীবন-যাপন পাল্টে যাবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ২০২০ -২১ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে টিআর-কাবিটার প্রকল্পের মাধ্যমে নতুনভাবে হাওরের মাঝ দিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা বিদ্যাকুট থেকে উরখুলিয়া পর্যন্ত নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও উরখুলিয়া গ্রামের দুপাশে একই অর্থে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয়ে়ছে।
৬টি ইউনিয়নসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, বিদ্যাকুট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উড়খুলিয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা কার্পেটিং একটি ১৫০ মিটার সেতু এবং উড়খুলিয়ার পশ্চিমে ঈদগাঁহের কাছে দ্বিতীয় আরেকটি ১৫০ মিটার সেতু নির্মাণ করে মাত্র দুই কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ হলে বদলে যাবে এই এলাকার দৃশ্যপট। তাছাড়া উড়খুলিয়া চান্দের চর থেকে ১৫০ মিটার সেতু থেকে উত্তর-দক্ষিণে মাত্র ৫০০ মিটার রাস্তা সংযোগ করে দিলে বিকল্প রাস্তা হিসেবে মেরকুটা টু বগডহড়ের জিসি সড়ক নির্মাণের ফলে যোগাযোগের এক নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
পড়ুন: রাজগঞ্জের নারীদের তৈরি হস্তশিল্প যাচ্ছে ইউরোপে
রাজগঞ্জের নারীদের তৈরি হস্তশিল্প যাচ্ছে ইউরোপে
হস্তশিল্প একদিকে যেমন দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, অপরদিকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দ্বারও খুলে দিয়েছে। তেমনি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ এলাকার নারীদের নিপুণ হাতে তৈরি হস্তশিল্পের নানা সামগ্রী ইউরোপের ৩২ দেশে যাচ্ছে। এতে দরিদ্র এসব নারীরা সংসারে অর্থের যোগান দেয়ার পাশাপাশি নিজেদের খরচ চালিয়ে নিতে পারছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে,ওই গ্রামের নারীদের কেউ কেউ নিজের বাড়ির আঙ্গিনায়, আবার কেউ দল বেঁধে গাছ তলায় বসে আপন মনে নিপুণ হাতে নানা সামগ্রী তৈরি করে চলেছেন।
আরও পড়ুন: মামলা জটিলতায় স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ, ঝুঁকিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
মুক্তা, নাইমা, নাহার, হাসিনাসহ একাধিক নারী জানান, পাশের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়ার সাহেব বাড়ি মিশন থেকে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পর দীর্ঘ ২১ বছর ধরে অবসর সময় তারা এসব সামগ্রী তৈরি করছেন। যা এএসকের (হ্যান্ডিক্রাফট লিমিটেডের) মাধ্যমে পরিচালিত হয়।কোম্পানির ব্যবস্থাপক (সাহেব বাড়ি) সৈদয় আরাফাত হোসেন রাজিবের নির্দেশনা মতো খেজুর গাছের শুকনো কচিপাতা ও খড়ের উপকরণ দিয়ে পয়সা সেট, বিভিন্ন আকৃতির ড্রাম (লন্ডি নামে পরিচিত) ওভাল, কাসারুল, বাটিসেট, বলবাটি, হাড়ি, কড়াই, বালতি ইত্যাদি সামগ্রী তৈরি করেন। এতে করে প্রতি মাসে এসব নারীরা তিন থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করেন। ফলে সংসারে যোগান দেয়ার পাশাপাশি নিজেদের খরচ চলে।
কারিগর মুক্তা জানান, পয়সা সেট বিভিন্ন আকৃতির হয়। এটি আকৃতিভেদে দেড়শ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় কিনে নেয়া হয়। খরচ হয় ৫০ টাকার মতো। কাজের ফাঁকে এটি তৈরিতে তিন দিন সময় লাগে। তবে একটানা তৈরি করলে একদিনে বানানো সম্ভব।
ঠাকুরগাঁওয়ে মাল্টা ও কমলা চাষে লাভবান চাষিরা
গাছে থোকায় থোকায় দুলছে মালটা, কমলা, বাদামি লেবু। এমনই দৃশ্য দেখা গেছে উত্তরের জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্নস্থানে। জেলার সদর উপজেলা, রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জে গড়ে উঠেছে অনেক মাল্টা ও কমলার বাগান।
এ যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। দেখলেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ মাল্টা বাগান দেখতে আসছেন এখানে।
এমনি একটি বাগানের মালিক রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ করনাইট নতুন বাড়ি গ্রামের কৃষক মাহমুদুল হাসান মুকুল। কৃষক মাহমুদুল হাসান মুকুল জানান, তিনি সর্বপ্রথম বাগানে ২টি কমলা গাছ লাগান। এতে তেমন কোন ফলাফল না পাওয়ায় তিনি ২০১৫ সালে রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ শুরু করেন। আগ্রহ দেখে কৃষি বিভাগ তাকে মাল্টা-কমলা চাষের প্রশিক্ষণ শেষে বারি মাল্টা-১ জাতের ৮০টি, ছয়টি কমলা লেবু, ১২টি কলম্ব লেবু, ১০টি বাতাবি লেবুর চারা দেন। পরে তিনি চারাগুলো বাড়ির পেছনের চল্লিশ শতক জমিতে রোপণ করেন। গাছ লাগানোর তিন বছরের মধ্যে তার বাগানের তিন চতুর্থাংশ গাছে থোকায় থোকায় মাল্টা, কমলা এবং লেবু ধরতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: আবাদ মৌসুমে সারের দাম বৃদ্ধি, ফরিদপুরে আমন উৎপাদনে শঙ্কিত চাষিরা
২০১৯ সালে তার বাগান থেকে প্রথম ১২ হাজার টাকা আয় করেন। পরের বছরে ২০২০ সালে তাকে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। এবছর সব খরচ বাদ দিয়ে ৯০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
সরেজমিনে কথা হয় একই ইউনিয়নের কুমরগঞ্জ গ্রামের আরেক মাল্টা চাষী শিক্ষক সাদেকুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান শিক্ষকতার পাশাপাশি ছয় বিঘা জমিতে তিনি মাল্টা আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে একশত করে মাল্টা গাছ রোপন করেছেন। তার দুই একর জমিতে এবার ৫০ মনের অধিক মাল্টা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। এবারই প্রথম পর্যায়ে দেড় লক্ষ টাকার মত বাগানের মাল্টা বিক্রি করবেন বলে আশা করেছেন। উৎপাদিত ফল জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য স্থানেও পাঠানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সৌদি খেজুর চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের রুবেল
অপরদিকে তার মাল্টার পাশাপাশি প্রায় এক একর জমিতে ২০০ টি কমলালেবু ও ১০০ টি ড্রাগন গাছও রয়েছে। যা থেকে পরবর্তীতে বাগান পরিচর্যার মাধ্যমে আরও বেশি সাফল্যের আশা করছেন।
লাভজনক হওয়ার কারণে দিন দিন মাল্টার চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, রাণীশংকৈল উপজেলায় নতুন পুরাতন বাগান মিলে ১৬ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে। অনেকে আগ্রহী হয়ে নতুন মাল্টা বাগানের কাজ শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন: বারোমাসি থাই আম চাষে সাফল্য
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জয় দেবনাথ জানান, আবহাওয়া ও মাটি চাষের উপযোগী হওয়ার কারণে ভালো ফলন পাচ্ছেন বাগান মালিকরা। স্থানীয় বাজারে গত কয়েক বছর থেকে এখানকার উৎপাদিত কমলা ও মাল্টা পাওয়া যাচ্ছে। মান ভালো হওয়ায় চাহিদাও রয়েছে স্থানীয় বাজারে।
কুড়িগ্রামে এক বিদ্যালয়ে ৮৫ শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে!
করোনায় দেশে প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাল্যবিয়ে বেড়েছে। দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ৮৫ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ে হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
সচেতন মহল মনে করছেন, দারিদ্রতা, যোগাযোগ বিচ্ছন্নতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য এই উপজেলায় বাল্যবিয়ের হার বেড়েই চলেছে। কোনভাবেই বাল্যবিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না।
তবে, জরিপ করে প্রকৃত বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রমে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নির্ণয় করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ মতিউর রহমান খন্দকার জানান, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৩৪৫ জনের মধ্যে ৮৫ জনের বাল্যবিয়ে হওয়ার বিষয়টি জানা গেছে। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাল্যবিয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণির দু’জন, সপ্তম শ্রেণির ১১, অষ্টম শ্রেণির ১৭, নবম শ্রেণির ২৮, দশম শ্রেণির ১৪ ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৩ জন রয়েছে। করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগে এই বিদ্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ হলেও এখন উপস্থিতির হার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ।
ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুপুর, আশামনিসহ অনেকেই জানায়, ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনেই তাদের ১৭ জন বান্ধবীর বিয়ে হওয়ার খবর শুনে তাদের সবার মন খারাপ হয়ে গেছে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমী আক্তার বলেন, ‘অনেকদিন পর স্কুল খুললো সব বান্ধবী এক সাথে মজা করবো, আনন্দ করবো। কিন্তু সেটা আর হলো না। স্কুল এসে দেখলাম আমার ২৮ জন বান্ধবী স্কুলেই আসে নাই। পরে জানতে পারি আমার ২৮ জন বান্ধবীসহ স্কুলের ৮৫ থেকে ৯০ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। জানি না আমার ভাগ্যে কি হবে।’
বাল্যবিয়ের শিকার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিথী খাতুনের বাবা ভ্যানচালক বাদশা মিয়া বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা চালাই। জানেন তো গরীব মানুষের দোষ বেশি। ভালো একনা (একটা) আলাপ আসছে তাই মোর মেয়েটা বিয়ে দিছং (দিয়েছি) ।’
বাল্যবিয়ের শিকার নিলুফা ইয়াসমিনের বাবা সাইকেল মেকার বাবলু মিয়া বলেন, ‘দেখতেছেন তো কোন রকম মানুষের সাইকেল ঠিক করেই যা পাই তাই দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে। দেশে করোনা আসিয়া আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। কোন সহযোগিতা পাইনি। দেখতে দেখতে মেয়েটাও বড় হয়ে গেল দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। তা একনা (একটা) ভালো সমন্ধ (ভালো ছেলে) পাওয়ায় আর দেরি করি নাই। সাথে সাথে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছি। বাল্যবিয়ে দেয়াটা আমরা ভুল ছিল।’
আরও পড়ুন: করোনা: কুড়িগ্রামে ঝরে পড়েছে ৫০ হাজার শিশু, বাল্যবিয়ের শিকার বালিকারা
বন্যায় কুড়িগ্রামে ২৭ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি