বিশেষ সংবাদ
জীবিত থেকেও সরকারের কাছে মৃত হওয়ায় ভাতা বন্ধ
মাগুরায় জীবিত শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার এক ব্যক্তিকে মৃত উল্লেখ করায় ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন মাগুরার শালিখা উপজেলার ৮৯ বছরের বৃদ্ধ মোবারক আলী বিশ্বাস।
তার অভিযোগ, ‘জীবিত থাক সত্ত্বেও নাকি আমি মারা গেছি। তাই আমার প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।’
মোবারক আলী উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
আরও পড়ুন: প্রতিবন্ধী ও চাকরিদাতাদের সেতুবন্ধনে কাজ করবে ‘ইমপোরিয়া’: প্রতিমন্ত্রী পলক
তার একটি পা না থাকায় গত ১৫ বছর ধরে দুটি ক্রাচের উপর ভর করে চলতে হয় তাকে। চার সদস্যের পরিবার নিয়ে অন্যের কাছ থেকে ভিক্ষা করে কোনরকম তার সংসার চলছে। নিয়মিত উপজেলা সমাজ সেবা অফিস থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পেতেন তিনি। কিন্তু গত ছয় মাস ভাতা না পাওয়ায় বারবার উপজেলা সমাজসেবা অফিস ও নির্বাচন অফিসে গিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
এদিকে, একই ঘটনা ঘটেছে একই উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের শ্রীহট্ট গ্রামের মাজু বিবির সাথে। মাজু বিবি শ্রীহট্ট গ্রামের আত্তাপ মোল্লার স্ত্রী। তাকেও মৃত হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে, যার ফলে তিনিও মাসের পর মাস ভাতা পাচ্ছেন না।
ভুক্তভোগী মাজু বিবির ছেলে ফুল মিয়া জানান, আমার মাকে উপজেলা নির্বাচন অফিস মৃত দেখিয়েছে। যার ফলে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে আমার মায়ের নাম কেটে দিয়েছে। যার বই নম্বর ৪০।
এব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাসিমা খাতুন বলেন, ‘আমি এরকম একটি অভিযোগ পেয়েছি কিন্তু তার নাম জানি না। তবে এ ধরনের ভুলের জন্য আমরা দায়ী নই।’
৩নং আড়পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আরজ আলী বিশ্বাস বলেন, ‘এ ধরনের ভুল সত্যিই দুঃখজনক তবে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য আমি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে অনুরোধ করবো।’
আরও পড়ুন: ট্রেনে নারী-শিশু-প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন বরাদ্দে হাইকোর্টের রুল
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, এ ব্যাপারে আমি অভিযোগ পেয়েছি, তাদের কাগজ নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া কারো জরুরি প্রয়োজন হলে তাকে ঢাকা নির্বাচন কমিশন অফিসে যেতে হবে।
তবে এই নির্বাচন কর্মকর্তা এই সার্বিক ভুলে ভুলের দায় চাপালেন মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহকারী কর্মীদের ওপর।
আরও পড়ুন: ভিক্ষা নয়, কাজ করেই জীবন বদলাতে চান প্রতিবন্ধী রহিম
তিস্তা নদীর ভাঙন, ক্ষুব্ধ নদী পাড়ের মানুষ
কুড়িগ্রামে মেগা প্রকল্পের নামে তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে জরুরি বরাদ্দ না থাকায় ক্ষুব্ধ তিস্তা পাড়ের মানুষ।
বর্ষার আগেই পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তিস্তা নদী তার ভয়ালরূপ দেখাতে শুরু করেছে। তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি,ফসলি জমিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। আসন্ন বন্যার আগে ভাঙ্গন রোধে পদক্ষেপ না নিলে দুই জেলার কয়েক হাজার মানুষ ক্ষতি মুখে পড়বে।
আরও পড়ুন: যাদুকাটা নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে সুনামগঞ্জের ২ গ্রাম
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ এলাকার ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধা বখত জামালের অশ্রুসিক্ত আর্তনাদ দেখলে তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের রুদ্ররূপ সম্পর্কে ধারনা হবে। মাত্র এক যুগে তিস্তা নদীর কড়াল গ্রাসে ৪ বার ভাঙ্গনে বসতভিটে সহ প্রায় আড়াই বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। বর্তমানে নদীর তীরেই মাথা গোঁজার শেষ সম্বল জমি টুকুও পড়েছে হুমকির মুখে। এটি বিলীন হয়ে গেলে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বখত জামালের আশ্রয় হবে খোলা আকাশের নিচে। সন্তানরাও থাকে তাদের পরিবার নিয়ে আলাদা। খোঁজ রাখে না।
বখত জামালের মতো শত শত পরিবার এখন তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে।
আরও পড়ুন: বালু উত্তোলন: মাগুরায় মধুমতির ভাঙনে দিশেহারা এলাকাবাসী
ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানে পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা নদী রুদ্ররুপ ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহে তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে শত শত বিঘা আবাদি জমি, গাছপালাসহ শতাধিক বাড়ী ঘর। ভেঙে গেছে মূল সড়কের ৪০ মিটার।
প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভাঙন মোকাবিলায় নানান প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও চোখের সামনে বাড়িঘর ভেঙ্গে যেতে দেখে ক্ষুব্ধ তিস্তা পাড়ের মানুষ।
কুড়িগ্রামে উজানে ভারতীয় অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলার নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। বিশেষ করে তিস্তা নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে পানিবৃদ্ধি এবং তীব্র স্রোতে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা, রাজারহাটের বিদ্যানন্দ এবং পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কাসিম বাজার এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিলীন হয়েছে পুকুর, ফসলি জমিসহ বাগান।
আরও পড়ুন: মাগুরায় মধুমতির ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি বিলীন
হুমকির মুখে রয়েছে ঐতিহাসিক কাসিম বাজার হাটসহ সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তীব্র ভাঙনে বসতবাড়ী বিলিন হয়ে গেলেও জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহন না করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি হতাশ ও ক্ষুব্ধ এলাকার ভাঙন কবলিতরা।
ক্ষতিগ্রস্থ বখত জামাল অশ্রু চোখে বলেন,তিস্তা নদীর আমার সোগ খাইছে। এলা দু’শতক জমিও নাই থাকপার। যেটুকু আছে সেটা বিলীন হলে আমার থাকপার কিচ্ছু নাই। আমি পথের ফকির হয়া গেছি। আল্লাহ আমাকে ফকির বানাইছে। বাবা তোমার গুলার হাত-পাও ধরি কই চাচা হই আমার বাড়িঘর অক্ষা করি দ্যাও আল্লাহ তোমার একালেও ভালো পরকালেও ভালো করবে।
কাশিম বাজার এলাকার জব্বার আলী বলেন, সংসদে বেশ সুন্দর বড় বড় বক্তব্য দেয়, আরে মিয়া সংসদে বক্তব্য দেয়া বাদ দিয়া তোর এলাকায় দেখি যা। তোর এলাকার কি অবস্থা হইছে তুমি চোখে দেখ না। এসব কথা বলে জনপ্রতিনিধিদের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন ভাঙ্গন কবলিতরা।
বজরার বাসিন্দা সহিদুর রহমান বরেন, অব্যাহত নদী ভাঙ্গনে ভিটে-মাটি, গাছপালা ও ফসলি জমি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে এখান মানুষ। নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ধরনা দিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না।
তৈয়ব খাঁ এলাকার মোশাররফ বলেন, তিস্তা নদীর মেগা প্রকল্পের নামে জরুরি বরাদ্দ না থাকায় ভাঙ্গন রোধে কোন পদক্ষেপ নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানাই তিনি যেন তিস্তার ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেন।
বজরা ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন বাবলু বলেন, গত কয়েকদিনে ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এলজিইডি’র পাকা সড়কসহ পুরান বজরা জামে মসজিদ এবং বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের মুখে পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ভেঙ্গে নেয়া হচ্ছে। ৫০-৬০টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে পুরান বজরাহাট, পশ্চিম বজরা দাখিল মাদ্রাসা,চর বজরা পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও চর বজরা পূর্ব বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বজরা ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধ এবং সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির নামে প্রায় ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়ন হলেও তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধান হবে। বর্তমানে তিস্তার ভাঙন রোধে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব দিয়ে রোধ করার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এছাড়াও স্থায়ীভাবে কাজ করার জন্য প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
খুলনা মহানগরীর ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি ব্যবস্থা অকার্যকর
খুলনা মহানগরীর সকল ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। এসব ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির সংকেত সম্পর্কে অধিকাংশ নাগরিক অবগত রয়েছেন।
খুলনায় পুরাতন এ সব ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি নব্বই দশকেরও আগে মহানগরীতে স্থপনা করা হয়। বর্তমানে সববাতি অকার্যকর ও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
তাছাড়া দেখা যায়, মহানগরীর শিববাড়ী মোড় ও পাওয়ার হাউস মোড়ে দু’টি ট্রাফিক সংকেত বাতি দায়সারাভাবে চালু আছে। কিছুদিন পরপর তা অকার্যকর অবস্থায় পড়ে থাকছে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনা রোধের পাশাপাশি যানজট নিরসনে ১৯৮৭ সালের দিকে মহানগরের ১৬টি মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি স্থাপনা করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে দৌলতপুর, নতুন রাস্তা, জোড়াগেট, শিববাড়ী মোড়, ডাকবাংলো, পাওয়ার হাউস মোড়, রয়্যাল মোড়, পিকচার প্যালেস, সদর থানা, পিটিআই, ধর্মসভা, ময়লাপোতা ও ফেরিঘাট মোড়, সদর হাসপাতালের সামনে, সার্কিট হাউসের পাশে, হাজী মুহসীন সড়ক।
আরও পড়ুন: ট্রাফিক সিগন্যাল অব্যবস্থাপনার প্রতিবেদন চেয়েছে হাইকোর্ট
তবে এর মধ্যে ২০০৫ সালের মধ্যে সবকটি বাতি অকার্যকর হয়ে যায়। বাতিগুলো মেরামতের উপযোগী না থাকায় কেসিসি নতুন করে আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। মূলত এ সব ট্রাফিক সিগন্যাল হলুদ, সবুজ, রঙের বাতি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। এতে করে দ্বায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ বেগ পেতে হয়। মাঝে মধ্যে রাতের বেলায় ইলেকট্রনিক সিগন্যাল লাঠি ব্যাবহার করতে দেখলেও বেশির ভাগ সময়ে হাতে লাঠি আর বাশি নিয়ে যানজট নিরসনের দায়িত্বে দেখা যায় এসব ট্রাফিক সদস্যদের। এতে করে নগরীতে বাড়ছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে পথচারি ও যানবহনের ঝুকিঁ।
খুলনা শিববাড়ী মোড় এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি সব বিকল অবস্থায় রয়েছে, আমরা বাশি, লাঠি ও মাঝের মধ্যে ইলেকট্রনিক সিগন্যাল লাঠি ব্যবহার ও হাতের ইশারায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছি। অনেক সময়ে আমাদের নিজেদের ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে, তারপরও দ্বায়িত্ব পালন করতে হয়। তবে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি সচল হলে যানজট নিরসনের জন্য দায়িত্ব পালন অনেকটা সহজ ও অনেক দুর্ঘটনার থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: রূপগঞ্জে সড়কের বেহাল দশায় চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী
মহানগরীর মাহেন্দ্র চালক আজমির মোল্লা বলেন, দেশ এখন আধুনিক হচ্ছে। তবে খুলনায় ট্রাফিক সংকেত বাতি এখনও পুরাতন, নষ্ট জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া অনেক সময়ে গাড়ি নিয়ে সড়কে চলাচলের সময়ে ট্রাফিক পুলিশের হাতের সিগন্যাল চোখে পড়েনা। যে কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে রাতের বেলায় তো চোখেই পড়ে না। দ্রুত এ সব বাতি মেরামত করা বা নতুন করে ট্রাফিক বাতি স্থাপন করার জন্য জোর দাবি জানান তিনি।
খুলনা সিটি কর্পেরেশনের প্যানেল মেয়র-১ আমিনুল ইসলাম (মুন্না) বলেন, ‘ট্রাফিক সংকেত বাতি বিকল আছে, আমি নিজেও বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। তাছাড়া এতে করে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে সমস্যা হচ্ছে। মেয়রের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে দ্রুত একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ডিসি মোহাম্মাদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘খুলনা একটি সুন্দর ও আধুনিক শহর। অথচ ট্রাফিক সংকেত বাতি এখনও জড়াজীর্ণ। অনেক সময়ে আমাদের পুলিশ সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত গাড়ির সামনে দাড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। তাছাড়া আমরা বেশ কয়েকবার খুলনা সিটি কর্পেরেশনকে চিঠি দিয়েছি। তবে এখনও কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। দ্রুত এসব ট্রাফিক সংকেত বাতি সংস্কার বা নতুন বাতি স্থাপন করার জন্য অনুরোধ করছি।’
শ্রীপুর পৌরসভায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। দুই অর্থ বছরে কর আদায় করে সরকারি তহবিলে জমা না দিয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।
এ ঘটনায় পৌরসভার গঠিত তদন্ত কমিটি তিনজন কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে জড়িতদের থেকে অর্থ আদায় ও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। এর আগেও এই পৌরসভায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে দুদুকে।
আরও পড়ুন: কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রামে রেল কর্মকর্তা আটক
তদন্ত কমিটির প্রধান ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী আজগর জানান, কমিটি গঠনের প্রায় সাড়ে তিন মাস পর সোমবার প্রতিবেদন জমা দেন তারা। ১ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতে জড়িতরা হলেন- কর আদায়কারী মো. শফিউল আলম রায়হান, সহকারী কর আদায়কারী ফাহিমা সানজিদা ও জান্নাতুল ফেরদৌস।
সোমবার পৌর মেয়রের কাছে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আত্মসাৎ করা টাকার মধ্যে ফাহিমা সানজিদ ৫২ লাখ ও জান্নাতুল ফেরদৌস নিয়েছেন দুই লাখ ৩৬ হাজার। বাকি সব টাকা গেছে রায়হানের পকেটে। পৌরসভার এই অর্থ আদায় ও জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় চাল আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যান কারাগারে
কাউন্সিল আজগর আলীকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- পৌর সচিব সরকার দলীল উদ্দিন আহম্মেদ, হিসাব কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী ও রফিকুল ইসলাম।
পৌর হিসাবরক্ষক ইদ্রিস আলী জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরের আদায়কৃত রশিদ জমা দেয়ার জন্য কর আদায়কারী শফিউলকে লিখিতভাবে আদেশ দিলেও জমা দেননি। এছাড়া তিনি হিসাব শাখার প্রত্যয়ন ব্যতীত রশিদ বই ইস্যু না করার জন্যও স্টোরকিপার তৌফিককে লিখিত নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তা মানেননি।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় ২.১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে ব্যাংক কর্মকর্তা আটক
পরে পৌর সচিব দলিল উদ্দিনের নেতৃত্বে কার্যালয়ে আলমারি খুলে কর আদায় রশিদের কয়েকটি পাতায় গরমিল দেখা যায়। শফিউল রশিদগুলোর মাধ্যমে আদায়কৃত রাজস্ব পৌর তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়।
নবীনগরে পাড়ের মাটি কেটেই খাল খনন!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়াইল বাজারে খাল পুনঃখননে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খালের তলদেশ খনন না করে শুধু পাড়ের মাটি কেটে প্রস্থ বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খালপাড়ের বাসিন্দারা।
সেই মাটি আবার খালের পাড়েই ফেলার কারণে আসন্ন বর্ষায় মাটি ধ্বসে ফের খাল ভরাট হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে কোন লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
আরও পড়ুন: সালথায় পাউবোর খাল পুনঃখনন কাজে অনিয়মের অভিযোগ
বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, 'দেশের ৬৪ জেলায় ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় আমাদের এখানে খাল খনন করতে প্রায় ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। বড়াইল, খারঘর ও জালশুকা এই তিনটি গ্রামের প্রায় ৩০ একর কৃষি জমিতে পানি সেচ এবং খরা মৌসুমে খালে পানি সংরক্ষণের জন্য এই খালটি পুনঃখনন অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু খাল খননের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহের এম/এস এম রহমান এন্টারপ্রাইজ নিজেরা কাজ না করে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আল-আমিন নামের এক ঠিকাদারের সঙ্গে এটি খননের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হন।
তিনি বলেন, ভৈরবের ঠিকাদারও নিজেরা কাজ না করে স্থানীয় খারঘর গ্রামের ব্যবসায়ি মুজিবুর রহমানকে খাল খননের দায়িত্ব দেন। এভাবে হাত বদলের পর দায়সারাভ খনন কাজ করে নদীর পানি খালে ছেড়ে দেয়ায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টদের নির্লিপ্ততা ও খামখেয়ালির কারণে খননকাজ ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে অভিযোগ করে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, 'সরকারের এই টাকা যে জলে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে অসময়ে যমুনার ভাঙনে বহু বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন
এলাকাবাসীর অভিযোগ, খালটি খননের ক্ষেত্রে নিয়মের ধার-ধারেনি ঠিকাদার। পাউবোর লোকজন সঠিক সময়ে খনন কাজও তদারকি করেনি। বড় আকারের ভেকু মেশিনের সাহায্যে খনন করার কথা থাকলেও ছোট মেশিনে খনন করে মাটি উত্তোলন করে দূরে না ফেলে পাড়েই রেখে দেয়ায় সামান্য বৃষ্টি হতে না হতেই কিছু কিছু অংশের মাটি ধ্বসে গেছে।
গত ২৭ মে খাল পুনঃখনন কাজ পরিদর্শন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রঞ্জন কুমার দাসসহ অন্য দুজন প্রকৌশলী।
রঞ্জন কুমার দাস বলেন, 'স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সার্ভে করা হয়। খাল খনন প্রকল্পের শিডিউলে ২০০০ ঘনমিটার মাটি কাটার কথা উল্লেখ আছে, কিন্তু সার্ভেতে ১৬০০ ঘনমিটার পাওয়া গেছে। মাটি কম কাটার বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।'
আরও পড়ুন: দাকোপে কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে নদী-খাল খননের দাবি
বড়াইল গ্রামের কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, 'যারা কাম করছে তারা কইছিল পরে পাড়ের মাডি দূরে সরাইয়া খাল আরও গভীর কইরা দিবে। কিন্তু তারা এইডা না কইরা নদীরপানি হালে (খাল) ছাইড়া দিছে।'
অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে খনন কাজে নিয়োজিত মুজিবুর রহমান বলেন, ‘খাল খননের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।’
এলাকার একটি কুচক্রী মহল তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে তিনি জানান।
উপকূলজুড়ে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ, সংকট সুপেয় পানির
খুলনার উপকূলজুড়ে সুপেয় পানির সংকটের পাশাপাশি পানিবাহিত রোগও ছড়াতে শুরু করেছে। কয়রার ৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ উপকূলীয় এলাকায় বেশ কিছু কমিউনিটি ক্লিনিক পানিতে ডুবে আছে। ফলে ওই সব এলাকায় চিকিৎসাসেবা প্রায় গতিহীন হয়ে পড়েছে। মেডিকেল টিম থাকলেও বাঁধ ভাঙা থাকার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দুর্গম এলাকার মানুষ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না।
প্লাবিত এলাকায় এখন খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। লোকজনকে অনেক দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এছাড়া প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ নলকূপের পানি পানযোগ্য নয়। খাবার পানির প্রধান উৎস পুকুর ডুবে যাওয়ায় পিএসএফ থেকে পানি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কয়রার দশালিয়ার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গত চারদিন ধরে আমরা ১০টি পরিবার মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছি। কিন্তু গত রবিবার দুপুর পর্যন্ত কোনও ধরনের চিকিৎসাসেবা বা খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায়নি। এখানে শিশুসহ ৬-৮ জন ডায়রিয়াসহ নানা সমস্যায় রয়েছেন।’
দশালিয়ার সফুরা বেগম বলেন, ‘দুই দিন ধরে পায়খানা ও বমি হচ্ছে। কিন্তু কোনও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছি না। স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিক পানিতে ডুবে থাকায় তা বন্ধ রয়েছে। আর কয়রা সদর ২৫ কিলোমিটার দূরে। যোগাযোগ সমস্যার কারণে সেখানে যাওয়াও যাচ্ছে না।’
কয়রার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সদীপ বালা বলেন, ‘সাতটি কমিউনিটি ক্লিনিক পানিতে ডুবে আছে। তারপরও সেখান থেকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার চেষ্টা চলছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম দেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ওরস্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রয়েছে। যা সরবরাহ করা হচ্ছে।’
কয়রা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আরএমও ডা. তমাল কুমার দাশ বলেন, ‘এখানে এমনিতেই ডায়রিয়ার রোগী নিয়মিত আসে চিকিৎসাসেবা নিতে। তবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর ২-৩ দিনে এ ধরনের রোগী বেড়েছে।’
কয়রার আটরা গ্রামের সাজেদা খাতুন বলেন, ‘গ্রামের সব মানুষ পাশের একটি পুকুরের পানি পান করতাম। সেটি ডুবে যাওয়ার পর তিন মাইল দূরের কালনা সরকারি পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।’ এভাবে ভেলায় চড়ে পানি সংগ্রহ করতে তাদের একদিনের অর্ধেক সময় ব্যয় হচ্ছে।
কলেজ শিক্ষক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্লাবিত এলাকাজুড়ে এখন খাবার পানির কষ্ট দেখা দিয়েছে। দূর থেকে খাবার পানি আনার কষ্টে অনেকেই এলাকার নলকূপের আয়রনযুক্ত পানি পান করছেন। এতে অনেক পরিবারের সদস্যদের ইতোমধ্যেই পেটের পিড়া দেখা দিয়েছে।’
গৃহিনী সালমা বেগম বলেন, ‘দুর্যোগের দিন অনেক বৃষ্টি হয়েছিল। তখন অনেকেই পানি ধরতি পারলিও আমরা পারিনি। সে সময় গাঙের পানির তোড়ে সব ভাসায়ে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। তখন ঘরের মালামাল ও বাচ্চা-কাচ্চা সামলাতি আমাগের হিমশিম অবস্থা। খাবার পানি ধরার সময় পাইনি।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: খুলনা উপকূলে ৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. বায়জিদ হোসেন বলেন, ‘দশহালিয়া বেঁড়িবাধ ভেঙে মহারাজপুরে প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত শুক্রবার ও শনিবার দুপুরের জোয়ারের পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ দুই দিনে রাস্তায়ও পানি উঠেছে। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এখানকাবাসীকে।’
বাঘ শিকারি ‘বাঘ হাবিব’ আটক
সুন্দরবনে দুর্ধর্ষ বাঘ শিকারি বাঘ হাবিবকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার ভোর রাতে পুলিশের হাতে আটক হন দুর্ধর্ষ এই বাঘ শিকারী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বনবিভাগ ও স্থানীয়দের কাছে বাঘ হাবিব নামেই পরিচিত তিনি। বাঘ শিকার করাই তার নেশা।
বিভিন্ন সূত্রমতে, গত ২০ বছরে কমপক্ষে ৭০টি বাঘ মারা পড়েছে তার হাতে। তার নামে রয়েছে ৯টি বন অপরাধের মামলা। এর মধ্যে তিনটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এতোগুলো মামলাও শিকারের নেশা থেকে ফেরাতে পারেনি তাকে। সুন্দরবনে বাঘ হাবিবের প্রবেশ নিষিদ্ধ, তবুও গোপনে ঢুকে একের পর এক শিকার করেন বাঘ-হরিণ-কুমির।
আরও পড়ুন: বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের শিকারি চক্র
আটক বাঘ হাবিব ওরফে হাবিব তালুকদারের (৫০) বাড়ি বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন মধ্যে সোনাতলা গ্রামে। তারা বাবার নাম কদম আলী তালুকদার। বাঘ হাবিব বর্তমানে বাগেরহাট জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাঘ হাবিব দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। মাঝেমধ্যে গোপনে বাড়িতে এসে অন্যের ঘরে ঘুমাতেন। শনিবার ভোর রাতে প্রতিবেশী রফিকুলের বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন হাবিব। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ঐদিন রাত আড়াইটার দিকে শরণখোলার মধ্য সোনাতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে রফিকুলের বারান্দা থেকে তাকে আটক করা হয়।
কে এই বাঘ হাবিব
তার বাবা কদম আলী তালুকদার সুন্দরবনের এক সময়ের দুর্ধর্ষ বনদস্যু ছিলেন। ৫ থেকে ৬ বছর আগে মারা যান সাবেক বনদস্যু বাবা। বনের পাশে বাড়ি হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করতেন তারা। সেই থেকে বনের সব এলাকা তার নখদর্পণে। তাছাড়া, বাবা বনদস্যু হওয়ায় জন্মসূত্রেই অপরাধী এই বাঘ শিকারী হাবিব। তার গোটা পরিবারই বন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। বন্যপ্রাণি শিকারের সহযোগী হিসেবে এখন কাজ করেন তার ছেলে হাসান (২০) ও জামাই মিজান (২৫)। তাদের নামেও একাধিক মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন থেকে উদ্ধার হওয়া মৃত বাঘের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন
হাবিবের নামে যতো মামলা
তার নামে মামলা রয়েছে মোট ৮টি। গত ২০ বছর ধরে ৭০ টির মতো বাঘ হত্যা করলেও তার নামে বাঘ শিকারের ৩টি এবং হরিণ শিকারের ৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩টিতে রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এর পরও তিনি বাঘ-হরিণ শিকার থেকে ফিরতে পারেননি।
বাঘ শিকার করেই চালান বাঘের মামলা
হাবিব এসব মামলা ও গ্রেপ্তারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকতেন না। বেশিরভাগ সময় বনেই কাটে তার জীবন। মাঝেমধ্যে রাতে এলাকায় এসে অন্যের বাড়িতে ঘুমাতেন। কোনো মামলাকেই পাত্তা দেন না। এ বছরের ১৯ জানুয়ারি শরণখোলার রাজৈর বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি বাঘের চামড়াসহ গাউস ফকির নামে এক পাচারকারী আটক হয়। ওই চামড়াটিও হবিবের হাতে শিকার হওয়া বাঘের। ওই মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছে। এর চার দিনের মাথায় ২৩ জানুয়ারি একই এলাকা থেকে ১৯টি হরিণের চামড়াসহ দুই পাচারকারীকে আটক করে র্যাব। সেখানেও এই শিকারী হাবিব জড়িত। বনের বাঘ, হরিণ, কুমির শিকার করেই এসব মামলা পরিচালনা করেন এই দুর্ধর্ষ হাবিব।
উইপোকা খাচ্ছে মাধ্যমিকের ১০ টন পাঠ্যপুস্তক
খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের দুটি হল রুমে পড়ে রয়েছে মাধ্যমিকের ১০ টন বই। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হলেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।
নিচ তলার পূর্ব পাশের রুমের জানালার পাল্লা না থাকায় বই ভিজছে বৃষ্টির পানিতে। বছর বছর অবহেলায় মেঝেতে পড়ে থাকায় তা খাচ্ছে উইপোকায়।
ভবনটির দুই রুমে ২০২০ শিক্ষাবর্ষের ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ বিশ্ব পরিচিতি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। ৭ম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি, ইংলিশ ফর টুডে, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা। ৮ম শ্রেণির ইংরেজী গ্রামার অ্যান্ড কম্পোজিশন, বিজ্ঞান। ৯ম-১০ম এর জীববিজ্ঞান, ক্যারিয়ার শিক্ষা, ইংরেজি, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতাসহ মাদরাসা ও কারিগরী শিক্ষার বিভিন্ন বই ছড়িয়ে রয়েছে।
খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে পড়ে থাকা বই সম্পর্কে অধ্যক্ষ এম, আবুল বাসার মোল্লা জানান, রুম দু’টি মাধ্যমিকের বই-পুস্তক রাখার জন্য ব্যবহার হতো। তবে স্থান পরিবর্তন করে বয়রায় স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু এই জায়গা থেকে বইগুলো সরানো হয়নি। দায়িত্বশীলদের এ বিষয়ে জানানো হয়েছে, কিন্তু তারা পদক্ষেপ নেয়নি।
আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে কুবির প্রশাসনিক ভবনে তালা
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মোমিন জানান, ২০১০ সাল থেকে ওখানে বই রাখা হচ্ছে। ১৬ থেকে ২০ শিক্ষা বর্ষের বই পড়ে রয়েছে সেখানে।
নষ্ট হতে থাকা বইয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, পুরাতন বই তারা বিক্রি করে দেয়, তবে এখন পর্যন্ত বই বিক্রির বিষয়ে নির্দেশনা আসেনি।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার রুহুল আমিন জানান, আগে ওখানেই মাধ্যমিকসহ মাদরাসা ও কারিগরী শিক্ষার বই-পুস্তক রাখা হতো। এখন বয়রা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখা হচ্ছে। কিছু পুরাতন বই আগের জায়গায় রয়েছে। তবে সেগুলো পলিথিন বিছিয়ে মেডিসিন দিয়ে রাখতে বলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: স্কুল, কলেজ খুলছে ১৩ জুন: শিক্ষামন্ত্রী
বইগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানালে তিনি বলেন, ‘থানা পর্যায়ের দায়িত্বশীলের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
খুলনায় ইয়াসের প্রভাবে সুপেয় পানির অভাব, মরছে মাছ
গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে খুলনার উপকূল কয়রার বিভিন্ন গ্রামের ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের, ফসলি জমি। এখনো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। প্রতিদিন জোয়ারে পানি উঠে যাওয়ায় বানভাসিদের সীমাহীন দুর্ভোগে পরতে হচ্ছে।
চারিদিকে এতো পানি, কিন্তু সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। খাবার পানির উৎস বন্ধ। নেই পর্যাপ্ত ওষুধ, খাবার স্যালাইন। রান্না তো দূরের কথা, ঘরের চৌকির ওপর থাকাও দুরূহ ব্যাপার হয়ে পরেছে। ফলে রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়াসহ বিভিন্ন মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন কয়রা উপকূলীয় এলাকার মানুষজন।
মহারাজপুর ইউনিয়নের শিমলারাইট পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মুজিবুর রহমান বলেন, পানি রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি ও মসজিদে পর্যন্ত প্রবেশ করেছে। পুকুর ও ঘেরগুলো নোনা পানিতে ভেসে গিয়েছে। বিশেষ করে রুই, কাতলাসহ মিষ্টি পানির মাছ মরে ভেসে উঠেছে। মরা এসব মাছ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না কি অবস্থা।
দশহালিয়া গ্রামের বিকাশ চন্দ্র মৃধা বলেন, ঘর-বাড়ি ও মাছের ঘের ভেসে গেছে। মাছ মরে যাচ্ছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
গোবিন্দপুর গ্রামের আবুল হাসান বলেন, 'এই সময় মৎস্য চাষের একটা উপযুক্ত সময়। কিন্তু নদী ভাঙনে সবকিছু শেষ। একবছরেও টেকসই বাঁধ পেলাম না। যে কারণে সামান্য জোয়ারেও পানি প্রবেশ করছে। আমার ঘর-বাড়ি, ঘেরসহ সবকিছু শেষ।'
বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নেয়া মানুষজন মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা কোমড় সমান পানি সাঁতরিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রান্না করা খাবার দিয়ে আসলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অনেকেই একবেলা খেয়ে অন্যবেলা না খেয়ে দিন পার করছেন। এছাড়া গরু-ছাগল, হাস-মুরগি এক ঘরে নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে।
টিউবওয়েলগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেক কষ্টে পানি জোগাড় করতে হচ্ছে তাদের।
মহারাজপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, দুর্ভোগের শেষ নেই। উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে পানিতে তলিয়ে যায়। জোয়ারের সময় ঘর তলিয়ে যাচ্ছে। ভাটার সময় কিছুটা কমছে। তবে মাঝামাঝি লোকালয়ে যারা থাকে ভাটার টানে ওই এলাকার পানি কমে যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। আমার এলাকায় কিছু উঁচু টিউবওয়েল রয়েছে সেটা থেকে পানি খাচ্ছে এই এলাকার মানুষ। তবে অন্য এলাকাগুলোতে সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। হাটু পানি পেরিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাদের। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এখানকার মানুষের।
তিনি বলেন, ‘মাছের ঘের-পুকুর তলিয়েছে। নোনা পানি প্রবেশ করায় অনেক স্থানে মাছ মরেছে। সেখান থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: খুলনা উপকূলে ৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আলাউদ্দিন জানান, উপজেলার সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর এলাকা তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ১০০টি ঘের এবং ৭৫০টি পুকুর তলিয়ে গেছে। সবমিলিয়ে ২১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, মিষ্টি পানির পুকুরগুলোর মাছ মরে ভেসে উঠেছে। যেসব এলাকায় মাছ মরেছে সেখানে কিছুটা দুর্গন্ধও ছড়িয়েছে। সার্বিক বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুদীপ বালা বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলয়েট, খাবার স্যালাইন, ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। কর্মী স্বল্পতা রয়েছে ১১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। ফিল্ডে কর্মী রয়েছে ৫২ জন। এই জনবল দিয়ে উপজেলায় কাজ করতে হচ্ছে। তাদের নিজেদের বাড়িতেও পানি প্রবেশ করেছে। তবুও চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়রা উপকূলীয় এলাকার মানুষ লবণ পানিতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। পুকুর এবং নলকূপের পানি খেয়ে অভ্যস্ত তারা।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল পানি সরবরাহ করছে। ফলে বড় ধরনের কোন সমস্যা হচ্ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু এলাকায় ডায়রিয়া হতে পারে। তবে প্রকোপ আকার ধারণ করেনি।’
বেনাপোল কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায়ে ১৭৩৪.৭৫ কোটি টাকা ঘাটতি
বেনাপোল কাস্টম হাউসে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৮৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৪৪৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লক্ষ্যের চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, গত দেড় বছর করোনার কারণে উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কম হয়েছে। যে কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না।
কয়েক বছর ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে বেঁধে দেয়া লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছে না বেনাপোল কাস্টম হাউজ। প্রতি অর্থবছরই রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থাকছে।
আরও পড়ুন: ঈদে ৩ দিন বেনাপোলে আমাদনি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে
বেনাপোল কাস্টমস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৫৬৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছিল ২ হাজার ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯২৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন: বেনাপোল বন্দরকে ঘিরে সক্রিয় শক্তিশালী চোরাচালান সিন্ডিকেট
দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল। সরকারের বেশি রাজস্ব আদায় হয় এখান থেকে। তবে বন্দরটি দিয়ে পণ্য আমদানি হয় বেশি। রপ্তানি হয় তার চার ভাগের এক ভাগ।
কাস্টম হাউজের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন পণ্য। বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২১০ মেট্রিক টন পণ্য।
যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতি বছর বন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়। এর বিপরীতে রপ্তানি হয় ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য।
বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবের পাশাপাশি অবকাঠামোগত ও নীতিগত কারণেই আমদানির তুলনায় রপ্তানিতে অনেক পিছিয়ে আছে দেশের বৃহত্তম এ স্থলবন্দর।
এ বিষয়ে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, করোনার ছোবল এবং পণ্য ছাড়করণের ক্ষেত্রে বৈধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় আমদানি কমে যাওয়ার একটি কারণ। এতে রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুপাতে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া এবং উচ্চ শুল্কহারের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের শুরুতে মহামারি করোনায় নাকাল দেশের ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় উচ্চশুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কমে আসছে। ফলে রাজস্ব কম আসবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বেনাপোল বন্দরে বারবার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। বন্দর কোনও ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় অনেক আমদানিকারক বন্দর ছেড়েছেন।’
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, দেশের স্থলপথে আমদানি-রপ্তানির ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল দিয়ে। তবে কাঙ্ক্ষিত অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় অনেকে এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে সরকারের রাজস্ব দ্বিগুণ আদায় হতো।
তবে এরই মধ্যে বেনাপোল বন্দর সম্প্রসারণে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল।
তিনি বলেন, জায়গা অধিগ্রহণের পাশাপাশি কয়েকটি আধুনিক পণ্যাগার নির্মাণ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার জন্য বাজেট হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা বাড়াতে উঁচু প্রাচীরও নির্মাণ করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে করোনার প্রভাব চলছে। ফলে গত বছর তেমন আমদানি হয়নি। চলতি বছরের এপ্রিলে আমদানি বাড়লেও উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্য কম এসেছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।
বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে কমিশনার বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে। এরই মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছি। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আহরণ। আশা করছি, করোনার পরিস্থিতি উন্নতি হলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।