বিশেষ সংবাদ
এবার ‘স্মার্ট প্রিপেইড’ মিটার বসাতে যাচ্ছে ডেসকো
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পাানির (ডেসকো) প্রধান বলেছেন, ডেসকো সেবা প্রদানকারী এলাকা ও এর গ্রাহকদের জন্য ‘স্মার্ট প্রিপেইড মিটার’ বসাতে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। পূর্বের প্রিপেইড মিটারের বদলে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করে নিজেদের কার্যক্রমে আধুনিকায়ন আনতে চায় ডেসকো।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমির আলী জানান, স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী দুই বছরের মধ্যে ডেসকো সম্পূর্ণভাবে স্মার্ট প্রিপেইড সিস্টেমে যেতে সক্ষম হবে।
তিনি আরও জানান, ডেসকো ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সফ্টওয়্যার স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষে বাছাইকৃত প্রতিষ্ঠানের সাথে এই কাজ সম্পাদনের জন্য চুক্তি সম্পন্ন করেই কাজ শুরু করা হবে।
কাউসার আমির বলেন, ‘আমরা আগামী বছর থেকেই গ্রাহকদের মাঝে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার দেয়া শুরু করবো। ২০২৩ সাল নাগাদ সম্পর্ণভাবে এই কার্যক্রম সম্পন্ন করা যাবে।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপন বন্ধের দাবি গ্রাহকদের
ডেসকো ১৯৯৮ সাল থেকে বিদ্যৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা শহরের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এলাকাগুলো যেমন, মিরপুর, উত্তরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা এবং বাড্ডা ও গাজীপুরের কিছু অংশে সেবা প্রদান করছে। বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ ৫৩ হাজার গ্রাহককে সেবা প্রদান করছে প্রতিষ্ঠানটি। ভবিষ্যতে পূর্বাচল মডেল টাউনেও বিদ্যৎ সরবরাহের কাজ করবে ডেসকো।
ডেসকোর বছরে গ্রাহকদের ১ হাজার ৭০ মেগাওয়াটা বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকার কেন্দ্রস্থল, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বের এলাকাগুলোতে বছরে ১ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের যোগান দিচ্ছে অপর বিদ্যুৎ সেবা প্রদানকারী সংস্থা ডিপিডিসি।
স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের বৈশিষ্ট্য
ডেসকো প্রধান জানান, পূর্বের প্রিপেইড মিটারের তুলনায় ‘স্মার্ট প্রিপেইড মিটার’ অনেকাংশেই আধুনিক ও বহুল সুবিধাযুক্ত।
পূর্বের প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করার জন্য গ্রাহক বিভিন্ন দোকানে বা ভেন্ডিং পয়েন্টে যেতে হতো। কিন্তু বর্তমান স্মার্ট প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করার জন্য গ্রাহক নিজের স্মার্টফোন সহ অন্যান ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন। এমনকি বিদেশে থেকেও এই মিটারে রিচার্জ করা যাবে।
আরও পড়ুন: দেশের প্রথম প্রিপেইড মিটার উৎপাদন শুরু আগামী মাসে
এছাড়াও বিভিন্ন নতুন ফাংশন যোগ করায়, গ্রাহক নিজের সুবিধামত বিদ্যৎ ব্যবহারের মোড বাছাই করতে পারবে। এতে বিদ্যুৎ ও খরচ সাশ্রয় সম্ভব হবে।
এমনকি দূরবর্তী অবস্থানে থেকেও গ্রাহকরা এই মিটার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
সালথায় পাউবোর খাল পুনঃখনন কাজে অনিয়মের অভিযোগ
ফরিদপুরের সালথায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় দুটি খাল পুনঃখননের কাজ শুরু হলেও কাজের মান নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
খনন যন্ত্র নিয়ে (এসকেবেটর) খাল খনন করে মাটি ফেলানো হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের ফসলি জমিতে। এতে সোনলি আশ নামে খ্যাত জমিতে থাকা পাটের ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পাট চাষিরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, খরা মৌসুমে খালে পানি সংরক্ষণ ও কৃষি জমিতে পানি সেচের জন্য ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি ব্যবস্থা প্রকল্প’র অধীনে গত ২৯ এপ্রিল থেকে পাউবোর উদ্যোগে এ দুটি খালের পুনঃখনন কাজ শুরু হয়।
উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহপ্রতাপ এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িদিয়া নদী থেকে বাইনাখালি পর্যন্ত ১ হাজার ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রাজাবাড়ি খাল এবং মোড়হাট এলাকা দিয়ে বয়ে যওয়া কুমার নদী থেকে দীঘের বিল পর্যন্ত ১ হাজার ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য কেষ্টখালি খালের খননকাজ চলছে। এ খনন কাজ বাস্তবায়ন করছেন কুমিল্লার ঝাউতলা এলাকায় অবস্থিত মেসার্স সারা এন্টারপ্রাইজ।
খাল দুটি পুনঃখনন কাজের জন্য ৬৩ লাখ ৬২ হাজার ৪০২ টাকায় বাস্তবায়ন করার কথা তাকরেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ৪১ ভাগ ছাড়ে কাজটি নিয়েছেন ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৮ টাকায়। এ খনন কাজ আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা। তবে গতকাল ৩০ মে পর্যন্ত ওই কাজের ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন এ কাজের তদারকিতে নিয়োজিত পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী।
গট্টি ইউপির চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলু এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য দ্বয় মোশাররফ হোসেন ও শাহজাহান মাতুব্বর অভিযোগ করে বলেন, রাজাখালি ও কেষ্টখালি খাল খনন কাজ করা হচ্ছে দুটি খনন যন্ত্র দিয়ে। কাজের সাইডে প্রকল্পের ঠিকাদার বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো তদারকি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেখা যায় না। কেষ্টখালি ও রাজাবাড়ি খাল খননে উপরে প্রস্থ ৪৪ থেকে ৪৫ ফিট করে কাটার কথা থাকলেও বাস্তবে কোথাও কোথাও ২৫ থেকে ৩৫ ফিট করে কাটা হচ্ছে। খালের তলায় প্রস্থ ১৩ থেকে ১৬ ফিট করে কাটার কথা থাকলেও এটিও ১০ থেকে ১২ ফিট করে কাটা হচ্ছে। খাল দুটির গভীরতা সাড়ে ৩ ফিট থেকে ৮ফিট করে খনন কথা থাকলেও বাস্তবে গভীর করা হচ্ছে ২ থেকে ৪ ফিট।
উভয় খালের দুই পাড়ে বসবাসরত বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সারা গোছের কাজ করে খালের মাটি ফসলি জমিতে ফেলানোয় পাট, বেগুন-মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। খালের পাড় অত্যন্ত খাড়া করে কাটা হয়েছে। খননের শুরুতেই খালের পাড়ে এলোমেলো করে মাটি রাখা হয়েছে। তাতে সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি ধসে আবার খাল ভরে যাবে।
অভিযোগ রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) লোকজন সঠিক সময়ে তা পরিদর্শন করছেন না।
গট্টি ইউনিয়নের কাউলিকান্দা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক এসকেন মাতুব্বর (৩৯) কেষ্টখালী খালের পাড়ে কৃষকদের ২০ বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১০ বিঘা জমির পাট খালের কাটা মাটির কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।
মেম্বার গট্টি গ্রামের বাসিন্দা মো. ওহেদুজ্জামান (৩১) জানান, তার দুই বিঘা জমির ফসল কেষ্টখালী খাল কাটার মাটির নিচে চাপা পড়েছে।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেষ্টখালী খালের মাটি রাখার জন্য ওই এলাকার অন্তত ১০ বঘিা জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে।
একই অভিযোগ এসেছে রাজাবাড়ী খাল খনন এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে।
সিংহ প্রতাপ গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম (৪৩) বলেন, রাজাবাড়ী খালের মাটির কারণে তার ১৪ কাটা জমির বেগুন গাছ চাপা পড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ওই খালের মাটি রাখার জন্য ওই এলাকার অন্তত আট বিঘা জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে।
খাল দুটির খনন কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার জাকির হোসেন বলেন, খালের গভীরতা শিডিউল অনুযায়ী শতভাগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে খালের পাশের কিছু জায়গায় ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় শিডিউল অনুযায়ী চওড়া করা যায়নি। কোন কোন জায়গায় কিছু কম করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ কাজ তদারকি করে ওয়াটার বোর্ড টাক্স ফোর্স। আমি একশ ভাগ কাজ করলেও তারা ৯৫ ভাগের বেশি বিল দেয় না।’
কম টাকায় কাজ নেয়ার বিষয়ে ঠিকাদার জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যবসার দিকে তাকিয়ে কাজ নেইনি, জেদ করে এবং অন্যকে নিতে দেব না এই মনোভাব নিয়ে কাজ নিয়েছি। খালের মাটি রাখায় ফসলের ক্ষতি হওয়ার ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। কেননা এ খাতে কোন টাকা বরাদ্দ নেই।’
এই প্রসঙ্গে ফরিদপুর পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অতনু প্রামাণিক বলেন, ‘পাউবো কাজের তদারকি করছে না এ অভিযোগ সঠিক নয়।
তিনি নিজে, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ পাউবোর কর্মকর্তারা কাজের তদারকি করছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, আপাত দৃষ্টিতে খালের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা সঠিকভাবে করা হচ্ছে বলে তাদের মনে হয়েছে। তবে বিল দেয়ার আগে শিডিউল অনুযায়ী কাজ বুঝে নেয়া হবে। কাজ সিডিউল অনুযায়ী না হলে বিল দেয়া হবে না।
অতনু প্রামাণিক বলেন, খালের মাটি পাশের জমিতেই রাখাতে হবে। তবে মাটির পরিমাণ কম বলে আমরা ইউএনকে দিয়ে জমি ইজারা নেয়ার উদ্যোগ নেইনি।’
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: খুলনা উপকূলে ৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
খুলনার উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে ১০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ৭ হাজার মৎস্য ঘের ও অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের ঘরবাড়ি এবং ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ৬০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
তরুণ প্রকৌশলী জামাল এখন আদর্শ কৃষক
জামাল মুন্সির বয়স ৩২। বাবা আয়নাল মুন্সি ছিলেন আদর্শ কৃষক। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে মাঝে মধ্যে কৃষি কাজ দেখতে যেতেন তিনি। সেই থেকে এ কাজের প্রতি বিশেষ টান তার।
কথা হচ্ছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়নের নিখুরহাটি গ্রামের তরুণ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কথা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়েও তিনি এখন জেলার আদর্শ কৃষকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন।
বছর দুয়েক আগে জামাল মুন্সি ৫৪ শতাংশ জমিতে চাষ শুরু করেন বিদেশি ফল ড্রাগনের। বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছায় তিনি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে হন প্রকৌশলী । তবে কর্মক্ষেত্রে তিনি কৃষিকেই বেছে নিয়েছেন। তার ছোট বেলার স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করেন ড্রাগন বাগানে।
জামাল মুন্সি জানান, পড়ালেখার সময় ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এলেই নেমে পড়তেন কৃষি কাজ নিয়ে।
আরও পড়ুন: খুলনায় প্রথম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে সফল তড়িৎ বিশ্বাস
তিনি তার কৃষি কাজের পাশাপাশি নিজেই খুলেছেন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম এশিয়ান পাওয়ার টেক কোম্পানি লিমিটেড। ব্যবসার পাশাপাশি কৃষিকাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে গড়ে তুলি ড্রাগন ফলের বাগান।
তিনি বলেন, ‘আমার বাগানে এখন ৮-৯ জন শ্রমিক সারা বছর কাজ করেন। এই বাগান থেকে প্রথম বছরের ভালো লাভের মুখ দেখেছি। এবার আরও ভালো ফল হয়েছে। আশা করছি গত বছরের চেয়ে বেশি আয় হবে।’
এখন ফরিদপুর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ড্রাগন ফলের বাগানটি জামাল মুন্সির। জেলা ও আশেপাশের জেলা থেকে লোকজন আসছেন তার বাগানের ড্রাগনে বাগান দেখতে।
কেউ আসছেন ড্রাগন ফলের চারা কিনতে, আবার কেউ আসছেন কীভাবে বাগান করবেন তার পরামর্শ নিতে।
আরও পড়ুন: বাজেট: কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার
সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন থাকায় দেশে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদার কারণেই তিনি এই ফলের চাষে নেমে পড়েন বলে জানান জামাল।
জামাল মুন্সি বলেন, আমার বাগান দেখে প্রায় শতাধিক বেকার যুবক ড্রাগন চাষের পদ্ধতি শিখে নিজেরা এই ফলের চাষ শুরু করেছে। মাঝে মধ্যে কেউ কোন সমস্যায় পড়লে আমি গিয়ে তাদের বাগানে জন্য পরামর্শ দেই।
ড্রাগনের পাশাপাশি বিদেশি খেজুর, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করেছেন বলে জামাল জানান।
তার বাবা আয়নাল মুন্সি বলেন, ‘ভালো লাগে যখন দেখি আমার ছেলে ড্রাগন বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ছুটে আসে। স্বপ্ন ছিল জামালকে বড় কোনে সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে দেখব। তার পরে সে যা করছে তাতে মনে কষ্ট নেই।’
আরও পড়ুন: টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গবেষকদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান কৃষিমন্ত্রীর
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হযরত আলী জানান, ড্রাগন ফলের বাগান করতে প্রথমদিকে খরচ হলেও পরে আর তেমন খরচ থাকে না। শুধু প্রয়োজন ঠিকঠাক পরিচর্যা করা।
তিনি বলেন, ‘জেলায় অনেকেই এখন এই ফলের চাষ করছে। তবে জামাল তাদের মধ্যে অন্যতম। তার মধ্যে কৃষি কাজের আগ্রহ অনেক। একজন প্রকৌশল হয়েও তিনি কৃষি কাজকে ছোট ভাবেনি, এটাই যুব সমাজের কাছে একটা উত্তম ম্যাসেজ।’
দুর্যোগে অরক্ষিত সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবন থেকে জোয়ারের পানিতে ভেসে লোকালয়ে এসেও প্রাণে রক্ষা পাচ্ছে না হরিণ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী। ইতোমধ্যে শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় চারটি মৃত ও দু’টি জীবিত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। পটুয়াখালী ও পিরোজপুরেও ভেসে যাওয়া জীবিত হরিণ উদ্ধার হয়েছে। ভোলায় ভেসে যাওয়া হরিণ উদ্ধার করার পর জবাই করা হয়েছে।
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘প্রাকৃতিক, মনুষ্য সৃষ্ট কারণ বা দুর্যোগ যেটাই হোক, বন্যপ্রাণী সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে কেন হরিণ বা বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে, কেন লোকালয়ে চলে আসছে এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। আর পনিতে ভেসে আসার বাইরেও বনের অভ্যন্তরেও মৃত বন্যপ্রাণী থাকতে পারে। সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার। বনের অভ্যন্তরে প্রাণীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’
আরও পড়ুন: জলোচ্ছ্বাসে ডুবেছে সুন্দরবন, ভেসে আসছে বন্য প্রাণী
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বন্যপ্রাণী রক্ষায় বনের মধ্যে বেশি করে উঁচু স্থান তৈরি, মিষ্টি পানির স্থান সুরক্ষা ও সংখ্যা বৃদ্ধি করা উচিত। এছাড়া মানব সমস্যা সমাধানের মতো প্রাণিকুলের জন্যও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন ও তাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা দরকার। যাতে করে তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে ও পরে প্রতিটি নদী নালায় ঘুরে ঘুরে বন্যপ্রাণীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সুরক্ষায় কাজ করতে পারে। সর্বোপরি গবেষণা ও যাচাই-বাছাই করে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। যার মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা স্থায়ীভাবে ভিত্তি পাবে।’
খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মঈন উদ্দিন খান বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে হরিণ লোকালয়ে ভেসে যাওয়ার বিষয়টিতে বন কর্মকর্তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। কমিউনিটি গ্রুপগুলোকেও নজরদারি জোরদার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বন ও বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে রেঞ্জভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে এবং বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাজ করছে।’
আরও পড়ুন: বন্যপ্রাণী হত্যা ও পাচার রোধে সুন্দরবনে রেড এ্যালার্ট
শরণখোলার বাসিন্দা সোলাইমান ফরাজি বলেন, ‘২৬ মে বিকালে রাজেশ্বর গ্রামের মোড় এলাকায় একটি মৃত হরিণ ভেসে আসে। এলাকাবাসী সেটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগকে খবর দেন। হরিণটির শরীরে কোনও ক্ষতচিহ্ন ছিল না। জোয়ারের পানিতে ডুবেই হরিণটির মৃত্যু হয়েছে।’
তাফালবাড়ী গ্রামের দুলাল খান বলেন, ‘জোয়ারে এত পানি আগে দেখিনি। জোয়ারের কারণে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণী ভেসে গেছে। হরিণ মরে ভেসে আসছে।’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের পানি ৫ থেকে ৬ ফুট উঁচু হয়। এ জোয়ারের পানিতে করমজল বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র তলিয়ে গেছে। বনের অভ্যন্তরে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে। এজন্য বনের বিভিন্ন উঁচু স্থানে বন্য শুকর ও হরিণ আশ্রয় নেয়। জোয়ারের পানিতে প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরের শেডগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুন্দরবনে এত পানি আগে কখনও দেখা যায়নি। এমন অবস্থায় সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে প্রায় ৫-৬ ফুট পানি উঠে যায় সুন্দরবনে। এর ফলে পানিতে ডুবে বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে। এরই মধ্যে চারটি মৃত ও দু’টি জীবিত হরিণ উদ্ধার হয়েছে। পানির তোড় ও ঝড়ো হাওয়ায় পূর্ব সুন্দরবনের ১৯টি জেটি, ৬টি জলযান (ট্রলার) দু’টি গোলঘর, একটি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি স্টাফ ব্যারাক ও একটি রেস্ট হাউজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে অন্তত ছয়টি অফিসের টিনের চালা উড়ে গেছে। ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণের জন্য রেঞ্জে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: জোয়ারে ডুবছে সুন্দরবন: ভেসে আসা ৬টি হরিণ উদ্ধার
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর একমাত্র সুপেয় পানির উৎস ছিল মিঠা পানির পুকুর। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পশ্চিম সুন্দরবনের ৫৪টি সুপেয় পানির পুকুরের মধ্যে ৫৩টি ডুবে গেছে। সাতক্ষীরার মাত্র একটি পুকুরে পানি ঢোকেনি। পুকুরে নোনা পানি ঢুকে যাওয়ায় বন্যপ্রাণীরা সুপেয় পানির অভাবে পড়বে।
তিনি বলেন, ‘প্রবল বাতাসে প্রায় ১১টি জেটি ও দু’টি কাঠের অফিস ভেঙে গেছে। জেটি থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার প্রায় ৩০টি মাটির রাস্তা জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ধুয়ে গেছে। রাস্তাগুলো আবার করতে হবে। কোনও বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার খবর এখনও পাওয়া যায়নি। গাছ-গাছালির ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কোথাও ৭ ফুট কোথাও ৮ ফুট বেশি জোয়ারের পানি উঠেছে।’
মাংস সমিতি: সীমিত আয়ের মানুষের ঈদ আনন্দ
১২ বছর আগে ছোট ছোট দুয়েকটি সমিতি গঠনের মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলায় মাংস সমিতি উদ্যোগটির উদ্ভাবনা। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সারা বছর ধরে নিজেদের জমানো টাকায় পশু কিনে মাংস ভাগাভাগি করে নেন এই সমিতির সদস্যরা। গ্রামের কতক সীমিত আয়ের মানুষ একত্রিত হয়ে গঠন করেন এই সমিতি। উদ্দেশ্য- নিজেদের ঈদ উদযাপনে কিছুটা বাড়তি আনন্দ যোগ করা।
বিগত বছরগুলোতে উদ্দেশ্যটি যথাযথ ভাবেই সুনিশ্চিত করে আসছে এই সমিতি।
মাংস সমিতি থেকে সদস্যরা যে সুবিধা পাচ্ছেন
গ্রাম পর্যায়ে এ ধরণের ছোট ছোট সমিতির কারণে গ্রামবাসীদেরকে ঈদের সময় বাজার থেকে মাংস ক্রয় করতে হয় না। কোন কোন সমিতিতে সপ্তাহে আবার কোথাও প্রতি মাসে তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সমিতির ভারপ্রাপ্ত একজনের নিকট জমা করেন। অতঃপর বছর শেষে সবার জমানো টাকা থেকে একটি পশু কেনা হয়। তারপর সেই পশু জবাই দিয়ে সমিতির সদস্যদের মাঝে বন্টনের মাধ্যমে শেষ হয় এর কার্যক্রম। এ থেকে একটি পরিবারের জন্য যথেষ্ঠ মাংসের যোগান হয়, যা ঈদের বাজার থেকে কিনতে গেলে অনেক বেশী খরচ হোতো।
আরও পড়ুন: খুলনা বিভাগে ঈদের পরে বেড়েছে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত
সাধারণত ঈদের মৌসুমে নতুন জামা-কাপড়, সেমাই সহ নিত্য খাবার কেনার পর খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মাংস কেনার অবস্থা থাকে না। মাংস সমিতি করার ফলে তারা প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে ঈদের সময় ৬ থেকে ৮ কেজি মাংস পাচ্ছেন। এই পরিমাণের মধ্যে নিজেরা আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে খাওয়ার পরেও অতিথিদেরকে আপ্যায়ন করাতে পারছেন।
প্রতি মাসের রোজগার থেকে কিছু টাকা আলাদা করে সমিতিতে জমা করতে তাদের কষ্ট কম হয়। উপরন্তু ঈদের আগের দিন সবাই মিলে নিজেদের পছন্দ মত পশু কিনতে পারেন।
পুরুষদের পাশাপাশি এ ধরণের সমিতিগুলোতে মহিলারাও অংশ নিচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে ঈদের সময় পরিবারগুলো মুক্তি পাচ্ছে আর্থিক চাপ থেকে। সংসারের খরচে বজায় থাকছে সমতা। আর মাংসের চাহিদা পূরণের সাথে সাথে আত্মীয়স্বজন নিয়ে ঈদ পালনে যুক্ত হচ্ছে বাড়তি আনন্দ।
দেশ জুড়ে মাংস সমিতির জনপ্রিয়তা
প্রথম দিকে দুয়েকটি করে শুরু হলেও এখন এ ধরণের সমিতির সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কসাই ও পেশাদার মাংস বিক্রেতাদের মাধ্যমে সূত্রপাত ঘটলেও এখন সব ধরণের পেশাজীবী মানুষেরা মাংস সমিতি গঠন করছেন। শুধু তাই নয়, স্বল্প আয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে এ ধরণের সমিতি এখন ছড়িয়ে পড়েছে শহরাঞ্চলের স্বচ্ছল মহলগুলোতেও।
আরও পড়ুন: করোনার চেয়ে শক্তিশালী ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরলো ৩২৩ প্রাণ
রাজশাহীর বাঘা, টাঙ্গাইলের সখীপুর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভাগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে মাংস সমিতির কার্যক্রম। প্রথম দিকে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য নিয়ে গড়ে উঠতো এ ধরণের সমিতি। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০ জন। এমনকি এখনো প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে সদস্য সংখ্যা।
রাজশাহীর কুশাবাড়িয়া, হামিদকুড়া, জতরঘু, গোচর; শুধু এই চার গ্রামেই মাংস সমিতির সংখ্যা ৫০ এর বেশী। ঈদের আগের দিন এখানে জবাই হয় ৩৮ টি গরু ও দুই শতাধিক ছাগল। টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভায় চলতি বছর মাংস সমিতির সংখ্যা হাজার খানেক ছাড়িয়েছে। নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে ৩১৬ টি গ্রামে সমিতি সংখ্যা দাড়িয়েছে সর্বমোট এক হাজারেরও বেশী।
আরও পড়ুন: ঈদে করোনামুক্তি ও ফিলিস্তিনে শান্তির জন্য তথ্যমন্ত্রীর প্রার্থনা
এলাকাগুলোতে ধনী গরিব নির্বিশেষে সবাই এখন এ সমিতির সদস্য। একসাথে অনেক লোকের অংশগ্রহণের দরুণ পশু কেনা থেকে শুরু করে ভাগ বাটোয়ারা সব কিছু সহজতর হয়। তাছাড়া এ ঐক্য ঈদের আনন্দ আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।
পশু ভাগাভাগির পর পশুর চামড়া বিক্রির টাকা জমা হয় সমিতির ফান্ডে, যা পরবর্তীতে ব্যয় হয় সমিতির কার্যক্রম পরিচালনায়।
পরিশেষ
একের চেয়ে সমষ্টিগত প্রচেষ্টার সুফলের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই মাংস সমিতি। উদ্দেশ্য শুধু ঈদ আনন্দ হলেও এ কাজের মাধ্যমে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের একসাথে কাজ করার প্রবণতা, পুরণ হচ্ছে নিম্নবিত্তদের মাংসের চাহিদা এবং সংসারে বজায় থাকছে ভারসাম্য।
মাগুরায় কালের বিবর্তনে 'ঢেঁকি' বিলীন হতে চলেছে
মাগুরা জেলার ৪ উপজেলায় কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোয়ার দাপটের কাছে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার এক সময়ের কৃষান-কৃষানীদের ভাল মানের চাল তৈরি করার প্রধান মাধ্যম ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকি।
চাল তৈরির কদর কালের বিবর্তনে আস্তে আস্তে কমে গেলেও পৌষ মাসে জামাই, মেয়ে, আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়নের জন্য এই এলাকায় শীতের আমেজ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে পিঠা পুলি তৈরির মূল উপাদান চাল থেকে আটা তৈরির জন্য কাঠের ঢেঁকির কদর বেড়ে যেতো। এমন কি যার বাড়িতে ঢেঁকি থাকতো সেই বাড়িতে প্রতি কেজি ভেজানো চাল টাকার বিনিময়ে বা হতদরিদ্র পরিবার চাউলের বিনিময়ে আটা ভাঙ্গানোর জন্য দুই দিন আগেই সিরিয়াল দিয়ে রাখতেন।
এই আটা দিয়ে পিঠা তৈরিতে মা-বোনদের কোন বেগ পেতে হয় না।
“ও বউ ধান বানেরে” গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী গানটি আর তেমন শোনা যায় না। চোখে পড়ে না আর ঢেঁকিতে পাড় দিতে দিতে গ্রামীণ বউদের এই গান গাওয়ার দৃশ্য।
আরও পড়ুন: মাগুরায় হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি, চোখে পড়ে না বাসা
কালের পরিবর্তনে মাগুরা জেলা সদর সহ ৪ উপজেলায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন ঢেঁকির কদর গ্রাম-বাংলার কৃষকদের বাড়ী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। হাতে গোনা দুই এক জন কৃষকের বাড়ীতে কাঠের তৈরি প্রাচীনতম ঢেঁকি এখনও চোখে পড়ে।
ধান, চাল, আটা ও চিড়া ভাঙ্গনোর জন্য বৈদ্যুতিক মিল হওয়ার কারণে গ্রামীণ কৃষকরা সহজেই ধান, আঁটা ও চিড়া কম সময়ে অল্প খরচে ভাঙ্গাতে পারছে। তাই বাড়ীতে ঢেঁকি রাখার প্রয়োজন মনে করছেন না অনেকেই।
আগের দিনে কৃষকদের বাড়ীর বউদের অনেক কষ্ট করে ধান ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ভাঙ্গানোর পর চাউল ও চিড়া তৈরী হত। ধান ভাঙ্গানোর বৈদ্যুতিক মিল হওয়ায় কৃষকদের বাড়ীর বউদের আর কষ্ট করে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান ভেঙ্গে চাউল, আঁটা ও চিড়া তৈরী করাতে হয় না।
তবে বিশেষ সময়ে আটার চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে ঢেঁকির কদরও বৃদ্ধি পায়। কবি, সাহিত্যিকরা যুগে যুগে অনেক কবিতাও লিখেছেন এই ঢেঁকি নিয়ে। তাই ঢেঁকির গুণ সম্পর্কে প্রবাদ বাক্য রয়েছে যে, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও নাকি ধান বানে।
গ্রামীণ জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বাপ-দাদার মাটির বাড়ি ঘড়ের বদলে ডিজাইন করে ইটের বাড়ি ঘড় তৈরি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনেক বাড়িতেই ঢেঁকি রাখার মত জায়গা থাকছে না। তাই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকি বিলুপ্তীর পথে। ঢেঁকি হয়ত আর কারও চোখে পরবেনা বলে আশংকা করছে এলাকাবাসী।
ধোয়াইল গ্রামের শামেলা বেগম (৭০) জানান, আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ির আমল থেকেই এই বাড়িতে ঢেঁকি ছিলো। পারিবারিক প্রয়োজনে খুব বেশি ব্যবহার না করলেও শীতের সময় আমার প্রয়োজন মত আটা তৈরি সহ প্রতিবেশিরা প্রায় প্রতিদিনই পিঠা তৈরির আটা ভাঙ্গানোর জন্য ভিড় করতো। সত্যিই এর কদর একেবারে শেষ হচ্ছে না।
বড়রিয়া গ্রামের ছকিনা বেগম (৫০) জানান, এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি অনেকটা স্মৃতিবসতই ধরে রেখেছি। প্রায় ১৬-১৭ বছর ধরে এই ঢেঁকিতে ধান, আঁটা ও চিড়া ভেঙ্গে আসছি।
এলাকার লোকেরা আঁটা ভেঙ্গে নেওয়ার জন্য তার কাছে আসতেন। এর বিনিময়ে তিনি প্রতি কেজি চালের আঁটার জন্য ৪-৫ টাকা নিতেন। এখন হাট বাজারে মিল হওয়ায় সবাই মিল থেকে চাল গুড়া করে আনে। যে কারনে তাদের কাছে এখন আর কেউ আসে না চাল গুড়া করতে।
ভোলার চর পাতিলায় চারদিকে থৈ থৈ পানি, ৫ হাজার মানুষ ভাসছে
চারদিকে থৈ থৈ পানি। তার মধ্যে ভাসছে হাসেম হাওলাদারের পরিবার। মেঘনার জোয়ারের পানির আঘাতে হাসেমের ঘরসহ মালামাল ভাসিয়ে নেয়। এর পর তার স্ত্রী রোসনা বিবিকে নিয়ে আশ্রয় নেয় ছেলে নিজাম হাওলাদারের ঘরে।
এ চিত্র দেখা যায় বৃহস্পতিবার ভোলার সর্বদক্ষিনে চরফ্যাসন উপজেলার বঙ্গপোসাগর মোহনায় দুর্গম চর কুকরী মুকরি ইউনিয়নের দক্ষিণ চর পাতিলা গ্রামে।
ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বুধবার নিজামের ঘরের ভিটিসহ একাংশ জোয়ারে ভেসে গেছে। কোন রকমে ঘরে মাঁচা করে থাকছেন তারা সবাই। প্রতিদিনি দুইবারে ১২ ঘন্টা বানের পানিতে তলিয়ে থাকে পুরো গ্রাম। নিজাম ছাড়াও রোসনা বিবির আরও ৫ ছেলে বারেক হাওলাদার, বাদশা, বশির, কাদের ও কাজল একই এলাকায় বসবসাস করেন। সবার ঘরের মাটি জোয়ারে ভেসে গেছে। পানিতে তলিয়ে আছে তিন দিন।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
খাল, বিল সব নোনা পানিতে তলিয়ে থাকায় খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নলকূপ থেকে বিশুদ্ধ পানি আনতে যান রোকসনাসহ তার ২ নাতনি। ফেরার সময় মেঘনার জোয়ারে সব তলিয়ে যায়। দুই নাতনিকে নিয়ে সাঁতার কেটে এক কলসি পানি নিয়ে আসেন বাড়িতে। পানিতে তলিয়ে থাকায় চুলো জ্বলে নি। চেয়ারম্যানের দেয়া বিস্কুট ও চিড়া খেয়ে সকাল কাটিয়েছেন।
হাসেম ও রোসনা দম্পতির চোখে মুখে শুধু অজানা আতংক। কিভাবে তারা মাথার ছাউনি দিবে। তাদের ভবিষ্যৎ কি।
আরও পড়ুন: 'ইয়াস' মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
হাসেম হাওলাদার ও রোসনার মতো অসংখ্য পরিবারের এমন দুর্ভোগ চর পাতিলা গ্রামে। বেঁছে থাকার জন্য এক প্রকার চলছে যুদ্ধ। চর পাতিলার প্রায় ৫ হাজার মানুষ ২ বেলা জোয়ার ভাটায় ভাসছে। ওই এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির এখন তীব্র শঙ্কট। কুকরীর চেয়ে পাশ্ববর্তী ঢালচরের অবস্থা আরও খারাপ। ঝড়ের পরে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বেড়েছে সবর্স্বহারা মানুষগুলোর দুর্ভোগ।
চরফ্যাসনের কুকরী মুকরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেন মহাজান সাংবাদিকদের জানান, কুকরী মুকরীতে তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বেশি দুর্গতদের কিছু সহায়তা করেছেন। আর উপজেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার বিকালে দেড়শ পরিবারকে শুকনো খাবার দিয়েছে। দুর্গত মানুষদের পূর্ণবাসনে বড় সহায়তা দরকার। তা না হলে এসব মানুষের পক্ষে ঘুরে দাড়ানো সম্ভব না।
চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিন সাংবাদিকদের জানান, চর পাতিলায় বৃহস্পতিবার বিকালে দেড়শ পরিবারকে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। তালিকা প্রণয়ন শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণের পাশাপাশি গৃহনির্মাণ সামগ্রী দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ভোলায় ইয়াসের প্রভাবে চরাঞ্চল প্লাবিত, ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
এদিকে ভোলা জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ বাড়ি ঘরেরই আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া অতি জোয়ারের পানির স্রোতে প্রায় ২ হাজার গরু মহিষ নিখোঁজ রয়েছে। মনপুরায় ৬৫৪টি পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে জোয়ারে।
এখনো নিম্নাঞ্চলের ২৩ টি চরে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হচ্ছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের দ্বায়িত্বে থাকা জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ভোলা জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ বাড়ি ঘরেরই আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তাদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ঝড়ে নিহত ১ জনের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
জলোচ্ছ্বাসে ডুবেছে সুন্দরবন, ভেসে আসছে বন্য প্রাণী
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ডুবে যায়। কয়েক ঘণ্টা ধরে নোনা পানি (লবণ পানি) সুন্দরবনে আটকে ছিল। বনের মধ্যে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। সুন্দরবনের মধ্যে জোয়ারের সময় পানি বাড়তে থাকায় বন্য প্রাণী দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে।
জলোচ্ছ্বাসের কারণে দুদিন জোয়ারের সময় গোটা সুন্দরবন জলোমগ্ন হয়ে পরে। বনের কোন কোন অংশে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট গাছ-পালা সম্পূর্ণ পানিতে ডুবে ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বণ্য প্রাণীর খাদ্য ও আবাসস্থল। জলোচ্ছাসে বন থেকে ভেসে যাওয়া মৃত এবং জীবিত ৬টি হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। লবণ পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবনে মিষ্টি পানির উৎস পুকুর।
আরও পড়ুন: ভারত উপকূলে আঘাত আনলো ঘূর্ণিঝড় ইয়াস
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবন বন্য প্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল। জলোচ্ছাসের কারণে বনের সব ধরণের বন্য প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লবণ পানি বনে আটকে থাকার কারণে বনভূমিও অতিমাত্রায় লবণাক্ত হবে। সুন্দরবনে বন্য প্রাণীর প্রজননের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়বে। সব মিলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের উপর প্রভাব পড়বে ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসের কারণে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য সুন্দরবন এক প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সুন্দরবন নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে বিভিন্ন সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবাসীকে রক্ষা করে চলেছে। প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, বুলবুল এবং আম্ফান প্রথম তাণ্ডব চালায় সুন্দরবনে। পরে দুর্বল হয়ে এসব ঝড় উপকূলে আছড়ে পড়ে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব প্রথমে সুন্দরবনে পড়ে। নদ-নদী ও খালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়। বুধবার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সুন্দরনবনের বিভিন্ন অংশ ডুবে যায়। জোয়ারের সময় সুন্দরবনের মধ্যে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবারও জোয়ারের সময় সুন্দরবনে দুই ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয় বলে বন বিভাগ জানান।
আরও পড়ুন: ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের সম্ভব্য ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রামে প্রস্তুতি সম্পন্ন
বৃহস্পতিবার বিকালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের কাছে একটি ছোট এবং একটি বড় হরিণকে গলা সমান পানির মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে স্থানীয় সাংবাদিকরা।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন চালতেবুনিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর জমাদ্দার জানান, জোয়ারের সময় সুন্দরবনের দিক দিকে একটি বন্যশুকর ভেসে যেতে দেখেছে।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
বন সংলগ্ন খুড়িয়াখালী গ্রামের জেলে তুহিন ও ইউসুফ জানান, মাছ ধরে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে তাদের আসা যাওয়া। কিন্তু বনের মধ্যে এত পানি তারা আগে কখনো দেখেনি। সুন্দরবনের মধ্যে মাথা সমান উচু পানিতে বিভিন্ন ধরণের বন্য প্রাণী ভেসে যাওয়ার কথা। এখনো বনের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে আছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) গবেষক অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে ক্রমাগত এই ধরণের ঝড় জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে। এই ধরণের দুর্যোগ মোকাবিলা করে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসতে সাধারণত ২৫ বছর সময় লাগে। কিন্তু প্রায়ই সুন্দরবনের উপর দিয়ে ঝড়-জলোচ্ছাস বয়ে যাচ্ছে।
প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারে গোটা সুন্দরবনে লবণ পানি প্রবেশ করেছে। বনের মধ্যে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। পানিতে সুন্দরবনের ৫৫টি মিষ্টি পানির পুকুরে লবণ পানি প্রবেশ করেছে। মিষ্টি পানির সংরক্ষণের জন্য ওই সব পুকুর খনন করা হয়। বনের স্টাফ এবং বন্য প্রাণীরা তাদের পানির চাহিদা মিটাতো ওই সব পুকুর থেকে। পানির কারণে কিছু বন্য প্রাণী বনের মধ্যে পুকুর পাড়ে উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ছোট এবং দুর্বল প্রকৃতির কিছু হরিণ ভেসে যেতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে বন্য প্রাণীর কিছু ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী আরও জানান, ভবিষ্যতে এই ধরণের জলোচ্ছ্বাসের কথা বিবেচনায় নিয়ে সুন্দরবনে বন্য প্রাণীদের আশ্রয়ের কথা চিন্তা করে বনের মধ্যে উচু কেল্লা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
কাঁকড়া শিকার যাদের জীবন-জীবিকা
খুলনা জেলার ভৈরব ও রূপসা এলাকার নদীগুলোতে কাঁকড়া ধরে বিক্রি করেই চলে অনেক কাঁকড়া শিকারির জীবন-জীবিকা।
ভৈরব নদীর গিলাতলা বারাকপুর খেয়াঘাটে কথা হলো সজল (২৫) নামে এক কাঁকড়া শিকারির সাথে। পানির ওপর এই জীবন সংগ্রামে ঠিক কখন জড়িয়েছেন সজলের তা মনে নেই। মামার হাত ধরে এসেছিলেন কাঁকড়া ধরার পেশায়। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে সে এখন সংসারি। আজও এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছে সে।
সজল জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার হাজী গ্রামে। কাঁকড়া ধরে বিক্রি করে চলে সংসার।
তিনি বলেন, কুঁচিয়া দিয়ে বড়শি পেতে কাঁকড়া মারেন। তবে কাঁকড়ার দাম নির্ধারণ হয় আকার-আকৃতি ভেদে।
আরও পড়ুন: ‘ফ্রি ফায়ার গেম’ খেলতে এমবি কেনার টাকা না দেয়ায় কিশোরের আত্মহত্যা!
কথা হয় আর এক শিকারী দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের নন্দনপ্রতাপ গ্রামের মৃত কালাম মন্ডলের ছেলে সালাম মন্ডলের সাথে।
তিনি জানান, অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের হাল ধরতে হয়। এক পর্যায়ে নদীতে নৌকা নিয়ে কাঁকড়া শিকারে নামে। কাঁকড়া শিকার করে যা আয় হয় তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মোটামুটি খেয়ে পড়ে ভালোই আছে।
সজল ও সালামের মতো অনেক জেলেদের জীবন সংসার চলছে কাঁকড়া ধরে। এক ধরনের লম্বা রশির মাথায় ইট ও বড়শি বেঁধে নদীতে ফেলে ধরা হয় কাঁকড়া। এছাড়াও এক প্রকার বিশেষ জালও ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন থেকে ১৫ বস্তা চিনিসহ ৭ মৌয়াল আটক
জেলেরা জানান, ২৫০ থেকে ৫০০ হাজার টাকা বিক্রি হয় কাঁকড়ার কেজি। পুরুষ-নারীসহ কাঁকড়ারও রয়েছে তিনটি ধরণ। এই তিন ধরণের কাঁকড়ার বিক্রির ক্ষেত্রেও দাম আলাদা নির্ধারণ করা হয়। তবে ছোট সাইজের এক কেজি পুরষ কাঁকড়া ১ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে নারী কাঁকড়ার দাম একটু চড়া। ডিম ওয়ালা নারী কাঁকড়া ৫০০, ডিম ছাড়া ৩৫০, ২০০ গ্রাম ওজনের নারী কাঁকড়া ৮-১ হাজার ৫০০ টাকা এবং হিজড়া কাঁকড়া ২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, গিলাতলা বারাকপুর খেয়াঘাট এলাকায় নদীতে ট্রলার ও ছোট নৌকা দিয়ে কাঁকড়া ধরা চলছে। জেলেরা কুচিয়া কেটে বড়শিতে লাগানোর প্রক্রিয়া করছিলেন।
নন্দনপ্রতাপ গ্রামের জেলে কাওসার বলেন, কাঁকড়া ধরার জন্য কুঁচিয়া মাছ কেটে টুকরো করে আহার হিসেবে বড়শিতে লাগানো হয়। বৃষ্টি শুরু হলে নদিতে বৃষ্টির পানি বেড়ে গেলে মিঠা পানিতে কাকড়া পাওয়া যায় না। দাড় বেয়ে চলা মাঝারি ধরণের নৌকায় শত খানেক বাঁশের শলা দিয়ে বাশের খাঁচা বা ঘুনি দিয়ে ধরা হয় কাঁকড়া। এক ঘুনির সাথে আরেক ঘুনি দড়ি দিয়ে বেধে তা মালার মতোন সাজিয়ে রাখা হয় নৌকায়। খাচার মধ্যে কুচিয়া মাছের টুকরো দিয়ে পেতে রাখা হয়। লম্বা রশির মাথায় ভারি (ওজন) বেধে দিয়ে খাঁচাগুলোকে লম্বা দড়িতে মালার মতো বেধে নদিতে ফেলে দেয়া হয়। জোয়ার বা ভাটায় মাঝা-মাঝি পানি যখন স্থির হয় তখন তা টেনে তোলা হয় নৌকায়। খাঁচার ভিতরে কুচে মাছের টুকরো খেতে আসা কাকাড়া খাঁচায় ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এক এক খাঁচায় একের অধিক হারে কাকড়া আটকা পড়ে থাকে।
আরও পড়ুন: ইয়াসের তাণ্ডব: সাতক্ষীরায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত
একাধিক কাঁকড়া শিকারিরা বলেন, বড় সাইজের কাকড়া মহাজনদের কাছে বিক্রয় করেন তারা। মহাজনরা তা বিদেশে পাঠায়। কিন্তু বর্তমানে করোনার কারণে রপ্তানি বন্ধ থাকায় দাম অনেক কম। আগে তারা অনেক ভালো দাম পেতো, কিন্তু এখন বাজার দাম কমে গেছে। তবুও জীবিকার প্রয়োজনে কাঁকড়া শিকার করে তা বিক্রি করে চলছে।
কিছুটা আক্ষেপের সাথে সজল বলেন, 'কাঁকড়া শিকার করতে গিয়ে আমাদের যে পুঁজি খাটাতে হয় ও পরিশ্রম হয়, সেই হারে দাম পাচ্ছি না।’
দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহাবুব উল ইসলাম বলেন, ‘সরকারিভাবে জেলেদের জন্য কোনো বরাদ্দ আসলে কাঁকড়া শিকার করে যারা জীবিকা নির্বাহ করে তাদের প্রকৃত তালিকা করে সহায়তা প্রদান করা হবে।’