বিশেষ সংবাদ
খুলনায় তরমুজের বাম্পার ফলন, কৃষকের চোখে সোনালী স্বপ্ন
খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার দেবীতলায় তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। ভাগ্য ফিরছে কৃষকদের। কৃষকরা সোনালী স্বপ্ন দেখছেন।
বাইডেনের জলবায়ু সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে থাকছে বাংলাদেশের দাবিদাওয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আয়োজনে জলবায়ু বিষয়ক ভার্চুয়াল সম্মেলন 'লিডারস সামিট অন ক্লাইমেট' হতে চলেছে আগামী ২২ থেকে ২৩ এপ্রিল। এই সম্মেলনে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাংলাদেশকে। জলবায়ু সংকট নিরসনে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সমর্থনের দিকটি বিবেচনায় রেখেই আসন্ন সম্মেলনে বাংলাদেশের জলবায়ু সংকট ও দাবিদাওয়াগুলো তুলে ধরা হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বাস ভবনে ইউএনবি প্রতিনিধিকে বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বাংলদেশের প্রতি বেশ আগ্রহী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জলবায়ু সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে থাকা উচিৎ এমন বিষয়গুলে তারা আমাদের কাছ থেকে জেনে নিয়েছে।’
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের নেতৃত্ব প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রশংসা করে আমেরিক। জলবায়ু সংকটের ঝুঁকির মধ্যে থাকা বাংলাদেশের সফল নেতৃত্ব প্রদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আসন্ন সম্মেলনে তাকে সম্মাননা জানানো হবে।
জলবায়ু সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেরত আসার পদক্ষেপ গ্রহণ করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সারা বিশ্বের ৪০ জন রাষ্ট্রপ্রধানকে জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন ''লিডারস সামিট অন ক্লাইমেট'-এ অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় উন্নয়শীল অর্থনীতির দেশগুলোকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক সহায়তার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ। তহবিল ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সংকট প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য ৫০ শতাংশ হারে বরাদ্দ থাকা উচিত বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতে জন কেরি ঢাকায়
জলবায়ু সংকট প্রশমনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের পক্ষ থেকে আব্দুল মোমেন বলেন, সকল দেশকেই প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু সংকট নিরসনে নিজ দেশের পদক্ষেপসমূহ কঠোরভাবে পালন করতে হবে। তিনি ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশ (এনডিসি) বা জলবায়ু সংকট প্রশমনে দেশগুলোর নীতিগত ভূমিকা রাখার ব্যাপারে জোর দেন।
ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা এবং এনিডিসির বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিষয়গুলো সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে উঠে আসবে বলে আশা করা যায়।’
এর আগে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীল একটি এনডিসি প্ল্যান জমা দেয়।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের নেতৃত্ব প্রদানকারী বাংলাদেশের জন্য এনডিসিকে একটি বড় ইস্যু হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রতিটি দেশ নিজেদের এনডিসি প্ল্যান বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুক এমনটাই চায় বাংলাদেশ। ড. মোমেন মনে করেন, প্যারিস চুক্তিই হতে পারে জলবায়ু সংকট নিরসনে মুক্তির পথ।
যদিও বাংলাদেশ জলবায়ু জনিত ক্ষয়ক্ষতি যেমন, নদীভাঙনের ফলে মানুষের বসতবাড়ি হারানো, সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূল এলাকাগুলোতে লবণাক্ত বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো তুলে ধরলেও, এবারের সম্মেলনে এ বিষয়গুলো আলোচনার সম্ভাবনা কম।
বাংলাদেশ মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে, উন্নত দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরির ঢাকা সফরের সময় এসকল বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।
সফরে জন কেরি বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. আব্দুল মোমেন জানান, বাংলাদেশ বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের ব্যাপারে আগ্রহী। এসময় জন কেরির কাছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপারে মার্কিন বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলে তুলে ধরেন তিনি।
এছাড়াও দু’পক্ষের আলোচনায় নদী তীরবর্তী বাঁধ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা, দক্ষিণাঞ্চলে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়।
আলোচনায় বিশেষ দূত জন কেরি জলবায়ু ও দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সফলতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, এই সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জলবায়ু সম্মেলনে যোগদানের জন্য অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি মুন জে-ইন এবং তুরেস্কের রাষ্ট্রপতি রেসেপ তায়েপ এরদোগানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
দেশে লকডাউনের মেয়াদ আরও ৭ দিন বাড়তে পারে
চলমান লকডাউন চলাকালীন সময়ে করোনা সংক্রমণ কমছে না, বরং আরও বাড়ছে। অবস্থা বিবেচনায় লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসনে ইউএনবিকে বলেন, ‘আগামীকালের সভার আগে কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে লকডাউন বাড়ানোর পরার্মশ আগে থেকেই রয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, লকডাউন বাড়ার সিদ্ধান্ত হলে তা কয়েকদিনের মধ্যইে জানিয়ে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯: দেশে টানা তৃতীয় দিন শতাধিক মৃত্যু
কোভিড-১৯ সংক্রমণ না কমার কথা মনে করিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষকে আরও কঠোরভাবে সচেতন হতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস করতে হবে। সচতেনতা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষিদ বিভাগের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, এখনো করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় আরও একসপ্তাহ লকডাউন বাড়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে এ বিষয়ে আগামীকাল মন্ত্রিপিরষিদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় লকডাউন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে মন্ত্রিপরিষিদ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
কোভিড-১৯ জাতীয় পরামর্শক কমিটি দুই সপ্তাহ লকডাউনের সুপারিশ করেছিল। জাতীয় পরার্মশক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ীই লকডাউনের মেয়াদ বাড়তে পারে।
লকডাউন বাড়বে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষিদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ অনুবিভাগ) রফিকুল ইসলাম ইউএনবিকে বলনে, এ বিষয়ে এখনো কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল (সোমবার) মন্ত্রিপরিষিদ সচিবের সভাপতিত্বে অনলাইনে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সদ্ধিান্ত হবে।
চলমান লকডাউনে কোভিড-১৯ জাতীয় পরার্মশক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত চিঠি থেকে জানা যায়, পরার্মশক কমিটি সুপারিশ অনুযায়ী করোনা আক্রান্ত বাড়ছে।
চিঠিতে বলা হয় মন্ত্রিপরিষদ থেকে দেয়া নির্দেশনা মানুষ সঠিক ভাবে মানছে না। কমিটির মতে অন্তত দুই সপ্তাহরে জন্য পূর্ণ লকডাউন ছাড়া করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভা এলাকায় পূর্ণ লকডাউন দেয়ার সুপারিশ করা হয়।
জাতীয় পরার্মশক কমিটির সুপারিশেই গত ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
এর আগে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ কমাতে গত ৫ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করলেও, সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক, ইত্যাদি খোলার রাখার অনুমতি দিয়েছিল। এরই একদিন পরে রাস্তায় গণপরিবহনের সংকট দেখা দিলে বুধবার (৭ এপ্রিল) থেকে সিটি করপোরেশন এলাকা গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয় সরকার।
সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল সকাল থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে টানা তৃতীয় দিনের মতো শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশের সবচেয়ে বড় কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল চালু
রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নিয়মিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মহামারি এই ভাইরাসে আরও ১০২ জন মারা গেছেন।
এর আগে শুক্রবার ও শনিবার ১০১ জন করে মৃত্যুর কথা জানায় অধিদপ্তর। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৮৫ জনে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুনভাবে ৩ হাজার ৬৯৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭ লাখ ১৮ হাজার ৯৫০ জনে। নতুন সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ১২১ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৬ জন।
চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ভারতের টিকা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারতে উচ্চ চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) কর্তৃক তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকার ডোজ চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী ঢাকা।
পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অন্যান্য দেশ থেকেও টিকা আনার বিষয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘ভারত আমাদের জানিয়েছে যে এটি (মার্চের চালান) আসবে তবে এখনও আসেনি। আমরা তাদের আশ্বাসে বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, ভারতের উপহার হিসেবে বাংলাদেশ ৩২ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে তবে ভারত থেকে মার্চে পৌঁছানোর জন্য নির্ধারিত ৫০ লাখ ডোজের চালান এখনও আসেনি।
সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ কিনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান গত জানুয়ারিতে দেশে এসেছে এবং ২০ লাখ ডোজের দ্বিতীয় চালানটি ফেব্রুয়ারিতে আসে।
রপ্তানি বন্ধে ভারতের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার দাবিসহ বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনের উচ্চ চাহিদার কথা স্বীকার করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. মোমেন বলেন, ‘আমি মনে করি যে আমাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং অগ্রিম অর্থ প্রদান করার কারণে এটি আমাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। ভারত আশ্বাস দিয়েছে যে সময় মতো ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে এবং আমরা এটি বিশ্বাস করি।’
আরও পড়ুন: ভারতে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড আড়াই লাখের বেশি করোনা শনাক্ত
গত মাসে ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময়, দু'দেশ চলমান কোভিড-১৯ এর পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেছেন এবং চলমান সংকট চলাকালীন দু'দেশের মধ্যে টিকার সরবরাহ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ পক্ষে ভারতের তৈরি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ৩২ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দেয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হয় এবং ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালান সরবরাহের প্রশংসা করা হয়।
সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের ভ্যাকসিনের অবশিষ্ট চালান নিয়মিত সরবরাহের সুবিধার্থে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়।
ভারত তাদের দেশীয় কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাংলাদেশকে সর্বোত্তম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল।
ড. মোমেন বলেন, ‘তারা (ভারত) বেশি উত্পাদন করছে তবে তারা তাদের নিজস্ব চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। আমরা অন্যান্য উত্সের সাথে যোগাযোগ করছি।
তিনি বলেন, এর আগে চীন বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন সরবরাহে আগ্রহ দেখিয়েছিল কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) কর্তৃক তাদের ভ্যাকসিন অনুমোদিত না হওয়ায় বাংলাদেশ সে সময় আগ্রহ দেখায়নি।
ড. মোমেন বলেন, চীন তাদের বিশাল জনসংখ্যার জন্য ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছে, তারা ৫০টিরও বেশি দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে যেখানে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়নি বলে তারা বলছে। আমরা তাদের সাথে (চীন) আবার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে তারা আমাদের সহায়তা করতে পারে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশকে একটি সহ-উত্পাদনে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এটা খারাপ না, আমরা আমাদের বিকল্পগুলো খোলা রাখছি।’
তিনি বলেন, রাশিয়া প্রযুক্তি দেবে এবং বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর পরিস্থিতি ঠিকঠাক থাকলে এখানে রাশিয়ান ভ্যাকসিন তৈরি করবে। এটি কম মূল্যের হবে এবং আশা করি এটি আরও ভালো হবে।’
রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেসমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ) জানিয়েছে, রাশিয়ান স্পুটনিক ভি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবহারেরও অনুমোদন দিয়েছে ভারত।
বিশ্বব্যাপী টিকার উচ্চ চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেশী ভারত প্রথমে বাংলাদেশে করোনার টিকা রপ্তানি করতে সম্মত হয়।
ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুদ্ধিমান নেতৃত্ব এবং দূরদর্শিতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি প্রথম থেকেই এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে টানা তৃতীয় দিনের মতো শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নিয়মিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মহামারি এই ভাইরাসে আরও ১০২ জন মারা গেছেন।
এর আগে শুক্রবার ও শনিবার ১০১ জন করে মৃত্যুর কথা জানায় অধিদপ্তর। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৮৫ জনে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুনভাবে ৩ হাজার ৬৯৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭ লাখ ১৮ হাজার ৯৫০ জনে। নতুন সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ১২১ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৬ জন।
সুনামগঞ্জে নদীর পাড়ে জব্দকৃত বালু-পাথর চুরি: রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর পাড়ে অবৈধভাবে উত্তোলন করা জব্দকৃত বালু-পাথর রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব, দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
জানা যায়, গত ২৪ মার্চ বাদাঘাট ইউনিয়নের বিন্নাকুলি ব্রীজের উত্তর পশ্চিমপাশে ঘাগটিয়া বালুর টেক উত্তর পাশে শিমুলগাছ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের বালু ও পাথর জব্দ করে প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি ও র্যা বের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স। জব্দকৃত ৯০ হাজার ফুট বালু-পাথর পৃথকভাবে দুজনের কাছে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ টাকায়।
আরও পড়ুন: জমি নিয়ে বিরোধে দক্ষিণ সুনামগঞ্জে চাচা ভাতিজার মৃত্যু
স্থানীয়রা জানায়, প্রশাসনের গাফিলতির কারণে কোটি টাকার বালু-পাথর নিলাম হচ্ছে না। রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা।
এদিকে, শিমুল গাছ থেকে শুরু করে পাকা রাস্তা পর্যন্ত আরও প্রায় ২৫ জন ব্যবসায়ীর ১ লাখ ৩০ হাজার ফুট বালু-পাথর মৌখিকভাবে জব্দ করলেও টাস্কফোর্স নিলাম না দেয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘একই অপরাধে দুই আইন তা হতে পারে না। নদীর তীরে থাকা অবৈধ বালু-পাথর কিছু নিলামে দিবেন আর কিছু নিলাম দেবেন না তা মেনে নিতে কষ্ট হয়। আমাদের দাবি অবশিষ্ট বালু-পাথরও যেন নিলাম দেয়া হয়। ফলে সরকারি কোষাগারে জমা হবে প্রায় কোটি টাকা।'
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, যাদুকাটা নদীর পাড়ে থাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু-পাথর সবাই রেখেছে। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ীর জন্য এক আইন আর অন্যদের জন্য আরেক আইন তা হতে পারে না। প্রশাসন ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ হাজার ফুট বালু ও পাথর বিক্রি করেছে এবং সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। কিন্তু ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে আরো ২০-২৫ জন ব্যাবসায়ীর লক্ষাধিক ফুট বালু-পাথর। এসব বালু-পাথরও নিলামে বিক্রির দাবি জানাই।'
আরও পড়ুন: কলমা নদীতে গ্যাস উদ্গীরণ, সুনামগঞ্জে আতঙ্কে গ্রামবাসী
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, 'আমরা জব্দকৃত বালু-পাথর নিলামে বিক্রি করেছি। অন্যদিকে এখনো যারা আইনের বাহিরে রয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।'
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা আছে। লকডাউনের কারণে দেরি হয়ে গেছে। শিগগরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
ফরিদপুরে 'ফাতেমা’ ধান চাষে যুবকের স্বপ্ন পূরণ
ইরি ধানের জাত 'ফাতেমা' ধানের চাষ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলাতেও শুরু হয়েছে। উপজেলার হেলেঞ্চা পশ্চিমপাড়া গ্রামের তরুণ যুবক রিয়াজুল ইসলাম তার ৭৫ শতাংশ জমিতে ব্যতিক্রম এই ধান চাষ করেছেন। জমিতে বাম্পার ফলন ফলবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
শনিবার সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের হেলেঞ্চা পশ্চিমপাড়া গ্রামের যুবক রিয়াজুল ইসলাম তার ৭৫ শতাংশ জমিতে 'ফাতেমা' জাতের ধান চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে ধান পাকতে শুরু করেছে। ১০-১২ দিন পর থেকেই ধান কাটা শুরু হবে।
আরও পড়ুন: খুলনায় মাঠে মাঠে সোনালি ধান কাটার উৎসব
উল্লেখ্য, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামের সেকেন্দার আলীর স্ত্রী ফাতেমা বেগমের কথা মতো ছেলে লেবুয়াত শেখ নিজেদের জমিতে ধান চাষ করে তিনটি শীষ খুঁজে পান। পরে সেই শীষের ধান বুনে পান দুই কেজি বীজ। সেই বীজ এক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে লেবুয়াত ৩৫ মণ ধান ঘরে তোলেন যেখানে অন্যান্য ধানের ফলন বিঘা প্রতি ১৮ মণের বেশি পাওয়া সম্ভব ছিল না। পরবর্তীতে কৃষক লেবুয়াতের মা এই ধানের উদ্ভাবক হওয়ায় তার মায়ের নামানুসারে এই ধান 'ফাতেমা’ ধান হিসেবেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পরিচিতি পায়।
এ ধানের গাছ, ফলন, পাতা, শীষ সবকিছু অন্য যে কোনো জাতের ধানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি গোছে একটি চারা রোপণ করা হয়, যা বেড়ে ৮-১০টিতে রূপান্তরিত হয়। প্রতিটি ধান গাছ ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার লম্বা। একেকটি ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬-৪০ সেন্টিমিটার। প্রতি ছড়ায় দানার সংখ্যা ১ হাজার থেকে ১২০০টি। যার ওজন ৩০-৩৫ গ্রাম।
ধানগাছের পাতা লম্বা ৮৮ সেন্টিমিটার, ফ্লাগলিফ (ছড়ার সঙ্গের পাতা) ৪৪ সেন্টিমিটার। ধানগাছের পাতা চওড়া দেড় ইঞ্চি। এই জাতের গাছের কাণ্ড ও পাতা দেখতে অনেকটা আখ গাছের মতো এবং অনেক বেশি শক্ত। তাই এই ধান ঝড়-বৃষ্টিতে হেলে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। ফাতেমা ধান একর প্রতি ফলন হয় প্রায় ১৩০ মণ। তাই অন্য যে কোনো জাতের তুলনায় এই জাতের ধান অনেক ব্যতিক্রম।
কৃষক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ইউটিউবের মাধ্যমে ফাতেমা ধানের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রায় ৬ মাস অপেক্ষা করার পর বাগেরহাটের কৃষক লেবুয়াতের মায়ের নিকট থেকে বীজ সংগ্রহ করি। এরপর প্রাথমিকভাবে আমার ৭৫ শতাংশ জমিতে এ ধানের চাষ করি। এতে সবকিছু মিলে মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি আশাবাদী এ জমিতে প্রায় ৯৫-১০০ মণ ধান হবে। এই ধান উপজেলাব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, 'এই ধান চাষ করে লাভবান হতে পারবো বলে আশা করছি। নিজেও স্বাবলম্বি হতে পারবো। এবছর আরও জমিতে আবাদ করবো এই ধান।’
আরও পড়ুন: কৃষিপণ্যের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে: কৃষিমন্ত্রী
আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপন প্রসাদ সাহা জানান, বাগেরহাটের কৃষক কর্তৃক উদ্ভাবিত ফাতেমা জাতের ধানের রয়েছে নানা বৈশিষ্ট্য। এ ধানের ফলন শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারে। যা দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা যেতে পারে।
তিনি আরও জানান, উপজেলাতে এধানের আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জে দুধ নিয়ে বিপাকে খামারিরা
করোনার কারণে দুগ্ধ ভাণ্ডার খ্যাত দেশের অন্যতম সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় প্রতিদিন উৎপাদিত সাড়ে ২০ লাখ লিটার দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।
বিক্রি ও সংরক্ষণের অভাবে হাজার হাজার লিটার দুধ নষ্ট হচ্ছে। মিষ্টির দোকান, চা স্টল বন্ধ এবং হাট-বাজারে লোক সমাগম কমে যাওয়ায় খোলা বাজারেও দুধের চাহিদা কমছে ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এক সময় এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের একমাত্র উৎস ছিল তাঁত। এখন গরু লালন-পালন আয়ের পথ দেখলেও করোনার কারণে সেই ব্যবসায় ভাটা পড়ে যাচ্ছে। এ উপজেলার খামারগুলোতে প্রতিদিন ২০ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের এক সপ্তাহের লকডাউনে উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে না পেরে লোকসান গুনছেন খামারিরা। বিক্রি করতে না পেরে অনেক খামারিই রাস্তায় দুধ ঢেলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ছোট খামারিদের অনেকেই গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন : গরুর খুরা রোগে খুলনায় কমেছে দুধ উৎপাদন
সিরাজগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, ১৯৭৩ সালে সিরাজগঞ্জে সমবায়ভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে ওঠে। এরপরই অঞ্চলটিতে হাজার হাজার গরুর খামার গড়ে ওঠে। সেখান থেকে মিল্কভিটা এখন প্রতিদিন দুই লাখ ২৫ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করে। বর্তমানে জেলায় ১৫ হাজার ৩৮০টি সমবায় ভিত্তিক গো-খামারের প্রায় সাড়ে ১০ লাখ গবাদিপশু থেকে প্রতিদিন ২০ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়।
খামারিরা জানান, গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ক্রমাগত গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। সেই তুলনায় দুধের দাম বাড়েনি। এছাড়া ভেজাল খাদ্যে বাজার সয়লাব হওয়ায় গবাদি পশুর রোগও বেড়েছে। অনেকের গরু নানা রোগে মারা গেছে, আবার কেউ কম মূল্যে বিক্রি করেছেন।
শাহজাদপুর রেশমবাড়ির খামারি ও মিল্কভিটার পরিচালক আব্দুস সামাদ ফকির জানান, এ অঞ্চলের উৎপাদিত দুধের প্রায় সাড়ে তিন লাখ লিটার প্রাণ, আড়ং, অ্যাংকার ও ঈগলু কেনে। অবশিষ্ট ৯ লাখ লিটার দুধ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার হোটেল ও মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করা হয়।
জামিরতার খামার মালিক সানোয়ার হোসেন বলেন, শাহজাদপুরে দুধকে কেন্দ্র করে নানান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কেউ দুধ পরিবহন করে। কেউ গোবর কিনে সার তৈরি করে। আবার কেউ ঘাস চাষ করে বিক্রি করেন।
আরও পড়ুন: ভেজাল দুধ তৈরি, মানিকগঞ্জে ব্যবসায়ীর কারাদণ্ড
শাহজাদপুরের সৌরভ ডেইরি ফার্ম লিমিটেডের পরিচালক সৌরভ হোসেন বলেন, খামারের ৭০ গরুর মধ্যে ২০টি প্রতিদিন ৩০০ লিটার দুধ দেয়। এখন করোনার জন্য ন্যায্য মূল্যে দুধ বিক্রি করতে পারছি না। গত বছরে যে লোকসান হয়েছে এ বছরে তার চেয়েও বেশি লোকসান হচ্ছে। হয়তো আর খামারই চালাতে পরব না। ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, করোনাকালীন সময়ে খামারিদের কথা ভেবে মিল্কভিটা, প্রাণ, আড়ং, অ্যাংকার, ঈগলু কোম্পানিদের বলেছি, লকডাউনকালীন সময়ে কোনোভাবেই দুধ কম নেয়া যাবে না। খামারিদের উৎপাদিত অবশিষ্ট দুধ বাজারে সঠিকভাবে বিক্রির জন্য ভ্রাম্যমাণ গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে সব খামারি দুধ বিক্রি করতে পারবে না তারা এসব ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে দুধ দেবে। এ গাড়ি প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা মনিটরিং করবে। এভাবে দশ দিন তারা ভ্রাম্যমাণ সেবা দেবেন খামারিদের।
ক্ষতিগ্রস্থ খামারিদের প্রণোদনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হবে বলেও জানান এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
খুলনায় মাঠে মাঠে সোনালি ধান কাটার উৎসব
দিগন্ত জোড়া সোনালি ধান। পাকা ধানের শীষ দুলছে বাতাসে। ধানের ঘ্রানে মৌ মৌ চারদিক। খুলনার মাঠে মাঠে ধুম পড়েছে বোরো ধান কাটার। ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। ধান কাটা চলবে এপ্রিলের শেষ সময় পর্যন্ত।
খুলনায় টানা ৮ মাস অনাবৃষ্টি, কালবৈশাখীর ঝাপটা, লবণাক্ততা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ চাষির অনুকূল ছিল না। তবু বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বোরো ধানের সোনালি শীষ স্বপ্ন দেখাচ্ছে হাজারো কৃষক পরিবারকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উঠবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন: হাওরে ৯৯ ও সারা দেশে ৩৯ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে বোরো মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এবার বীজতলা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। পুরো মওসুমই সেচের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়েছে। তারপরও ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
এবার খুলনা জেলায় ধানের আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় শত্রুতা করে বোরো ধানের ৬ বিঘা বীজতলা নষ্টের অভিযোগ
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া এলাকার কৃষক মতিয়ার রহমান শেখ বলেন, ধান কাটা শুরু হয়েছে। এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এবার সুরভী-১ নামে একটি নতুন জাতের ধান লাগিয়েছি। এর আগে ২৮ ধান লাগাতাম। তবে রোগবালাই, পোকার আক্রমণের কারণে এবার সুরভী ধান লাগিয়েছি। ধানটি খুব পুষ্ট (পুরু) হয়েছে। দেড় বিঘা জমিতে ধান লাগাতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
বর্তমানে ধানের মণ ১ হাজার টাকা বলে তিনি জানান। তিনি এবার ৪০ মণ ধান পাবেন বলে আশাবাদী।
একই মাঠে ধান কাটছিলেন মো. রাকিবুল হাসান শেখ।
তিনি বলেন, আমি কৃষি, ঘের ও রাজমিস্ত্রির কাজ করি। এখন ধান কাটার মৌসুমে ধান কাটছি। আশপাশের অনেক মাঠের ধান বৈশাখের ১৫ তারিখ পর্যন্ত কাটা হবে। সুরভী ধানটি খুবই সুন্দর। ভালো ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে আগাম জাতের বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করলেন কৃষিমন্ত্রী
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে ডুমুরিয়া উপজেলায় বোরো আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৫৫৫ হেক্টর ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। ধানের বর্তমান অবস্থা খুব ভালো।
তিনি বলেন, গত বছর ডুমুরিয়া উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছিল ২১ হাজার ২০৫ হেক্টর। এ বছর আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৬৬০ হেক্টর। যা গতবারের তুলনায় ৫৫৫ হেক্টর বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৪ হাজার ২৯২ টন। আর চালের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ হাজার ৬৩২ টন। উপজেলায় চালের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে ৫৫ হাজার টন। এর মধ্যে আউশ আবাদ হয় ৩২০ হেক্টর এবং আমন ১৫ হাজার ৬২৫ হেক্টর।
তিনি বলেন, এ বছর ৮ হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় ২ কেজি করে হাইব্রিড এসএলএইটএইচ বীজ, ৫৪০ জন কৃষককে ২ কেজি হাইব্রিড ধান বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া মাঠে গিয়ে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। আর ১০-১৫ দিন বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষক অন্যবারের তুলনায় বাম্পার ফলন পাবেন।
তার উপজেলাটি খাদ্য উদ্বৃত্ত একটি উপজেলা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত রবি শস্যের মৌসুম। আর এই সময় যে ধান রোপণ করা হয় সেটি বোরো ধান। খুলনা জেলা একটি লবণাক্ত এলাকা। এখানে লবণসহনশীল ধান রোপণ করা হয়।
তিনি বলেন, এবার ৫৭ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে হাইব্রিড ধানের ফলন ভালো হয়। মধ্য অক্টোবর থেকে ধান রোপণ শুরু হলেও কেউ কেউ দেরি করে বীজতলা প্রস্তুত করেছেন। যে কারণে মধ্য মার্চের পরিবর্তে এবার মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত ধান কাটা চলবে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তিন শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এবার এক হাজার ৪০ টাকা মণ ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
হাফিজুর রহমান বলেন, প্রথম দিকে আবহাওয়া ভালো ছিল। কিন্তু প্রায় সাত মাস বৃষ্টি নেই এখানে। কৃষকরা খাল থেকে পানি নিয়ে থাকেন। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় খালের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। খালগুলোতে পানির গভীরতাও কমেছে। কোথাও কোথাও তাপদাহে ফুল ঝরে গেছে, দেখা দিয়েছে চিটা। লবণাক্ততা ও পানি সংকটে কৃষকরা দুর্ভোগে পড়েন। তারপরও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে বলে আশাবাদী এই কৃষি কর্মকর্তা।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিলের ১০ শতাংশ দাবি করবে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মানবিক সংস্থাগুলো ধীরে ধীরে ভাসানচরে স্থানান্তরিত এক লাখ রোহিঙ্গাদের পরিষেবা না দিলে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের নামে তারা যে পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করেছে তার ১০ শতাংশ দাবি করবে বাংলাদেশ। এক সাক্ষাত্কারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন এ কথা জানিয়েছেন।
শুক্রবার তার বাসভবনে ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, 'হ্যাঁ, তাদের অর্থ প্রদান করতে হবে। কেননা তহবিল আসছে রোহিঙ্গাদের জন্য। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পরিষেবা দিতে না চাইলে আমরা ১০ শতাংশ তহবিল দাবি করব।'
কক্সবাজার জেলায় ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ধীরে ধীরে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে যার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ড: আইওএমকে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিচ্ছে কোরিয়া
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা কোথায় বাস করছেন তা নিয়ে মানবিক সংস্থাগুলোর মাথাব্যথা হওয়া উচিত নয়।
ড. মোমেন বলেন, 'রোহিঙ্গারা কুতুপালং, কক্সবাজার, বরিশাল কিংবা ভাসানচরে বাস করছে কিনা তা বিষয় নয়। এটা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা হওয়া উচিত নয়। তাদের মাথাব্যথা হওয়া উচিত রোহিঙ্গাদের পরিষেবা প্রদান করা নিয়ে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন পরিষেবা প্রদানে তারা বাধ্য।'
তিনি বলেন, যদি মানবিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের পরিষেবা না দেয় তবে সদস্য রাষ্ট্রগুলো তহবিল সরবরাহ করবে না। ফলে তারা তীব্র কষ্টের মুখে পড়বে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউএনএইচসিআর এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ও হোস্ট সম্প্রদায়ের নামে অর্থ সংগ্রহ করার পরেও তারা জানে না কীভাবে অর্থ ব্যয় করে।
ভাসানচরের প্রযুক্তিগত দলের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'তাদের পর্যবেক্ষণ খুব ভালো ও ইতিবাচক। সংক্ষেপে, তারা একটি ইতিবাচক পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন।'
তিনি বলেন, তারা তাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে একটি ১০-পৃষ্ঠার প্রতিবেদন হস্তান্তর করবে এবং ইতোমধ্যে তারা দুই পৃষ্ঠার একটি সারসংক্ষেপ জমা দিয়েছে।
১ লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন সুবিধা সম্পর্কে সরাসরি ধারণা লাভ করতে জাতিসংঘের ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত মার্চে ভাসানচর পরিদর্শন করে।
তাদের দুই পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপে দলটি তিনটি বিষয় নির্দেশ করেছে- রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষা, বেড়িবাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা।
আরও পড়ুন: ৬ষ্ঠ দফায় ভাসানচরের পথে ২৪৯৫ রোহিঙ্গা
ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের শিক্ষা প্রদানে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নেই। তবে, সেটি মিয়ানমারের ভাষাতেই হওয়া উচিত।
'রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং, রোহিঙ্গারা দেশে ফিরলে সহজেই তাদের সমাজে মিশে যেতে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমের শিক্ষা সহায়তা করবে,' তিনি বলেন।
বেড়িবাঁধের উচ্চতা আরও বাড়ানোর বিষয়ে ড. মোমেন বলেন, তারা অবশ্যই তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে এটি করবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা সন্দ্বীপ হয়ে ভাসানচরে যেতে পারবেন। কেননা এই পথে সময় লাগবে ৩০ মিনিট। 'ভাসানচরের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।'
তিনি বলেন, ভাসানচর বাংলাদেশের ৭৫টি দ্বীপের একটি এবং এটি সেন্টমার্টিন দ্বীপের চেয়েও ১০ গুণ বড়।
কূটনীতিকদের সফরের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, তারা সেখানে দৃঢ় কাঠামো ব্যবস্থা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। 'তারা এই ব্যবস্থার খুব প্রশংসা করেছে। তারা এটা পছন্দ করেছে।'
'দু'জন কূটনীতিকের সাথে আমার আলোচনা হয়েছিল। তারা ভাসানচর পছন্দ করেছে,' পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন।
বর্তমানে ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ৩ এপ্রিল বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে আলাপকালে তাদের স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে।
তারা ভাসানচরে বিদ্যমান সুবিধাগুলো সম্পর্কে তাদের 'উচ্চ সন্তুষ্টি' জানিয়েছিলেন, যাকে তারা কক্সবাজারের জঞ্জাল শিবিরের তুলনায় নিরাপদ, সুরক্ষিত অপরাধ মুক্ত বলে বিবেচনা করেছিলেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আঞ্চলিক, বহুপাক্ষিক উদ্যোগ চায় ঢাকা
মিয়ানমার থেকে গণ প্রস্থানের পর থেকে রোহিঙ্গাদের অনুকরণীয় মানবিক সহায়তার জন্য রোহিঙ্গারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানায়।
ভাসানচরে আসা কূটনীতিকদের উদ্দেশে এক রোহিঙ্গা প্রতিনিধি বলেন, 'আমি চাই আমার সন্তানরা তাদের নিজস্ব জাতীয় পরিচয় নিয়ে তাদের দেশে বেড়ে উঠুক।'
কিছু রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষার সুবিধা সম্প্রসারণ এবং তাদের কৃষিকাজ ও মাছ ধরার সুযোগ প্রদানের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন যা তাদের কর্মঠ হতে সহায়তা করবে।
তুরস্ক, ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস- দশটি দূতাবাস-প্রতিনিধি দলের মিশনের প্রধানদের জন্য ভাসানচরে দিনব্যাপী এই পরিদর্শনের আয়োজন করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভাসানচরে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা স্থানান্তর তাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সামগ্রিক প্রচেষ্টারই অংশ।
মাল্টা চাষ করে স্বপ্ন বুনছেন নুরুল হক
বাগানের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে সবুজ রঙের কাঁচা মাল্টা। ছোট-বড় মিলে পুরো বাগানেই মাল্টার ছড়াছড়ি। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের কাজীরহাট বানিনগর এলাকার চাষি নুরুল হকের বাগানের মাল্টার রঙ এখন সবুজ।
এরই মধ্যে বাগানের সবগুলো গাছেই মাল্টার ভালো ফলন হয়েছে। নুরুল হক তার চেষ্টায় প্রতিনিয়ত সফলতার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: খামারিদের দেয়া সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে: কৃষিমন্ত্রী
চাষি নুরুল হক বলেন, ‘১৯৯৪ সালে বাড়ির সামনে সামান্য জমিতে নার্সারি দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করি। নার্সারিতে ফল ও ফুলসহ বিভিন্ন জাতের গাছের চারা উৎপাদন করতে থাকি। আস্তে আস্তে গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে যায় আমার নার্সারির পরিচিতি। আমার নার্সারি থেকে চারা নিয়ে গিয়ে অনেকেই বাগান গড়ে তুলেন। কিন্তু আমার ভাগ্যের পরির্বতন ঘটে না।’
তিনি বলেন, ২০১২ সালে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে দেখতে পাই মানুষ থাই পেয়ারা ২০০ টাকা কেজি দরে কিনছে। এ দৃশ্য দেখে আমার থাই পেয়ারার বাগান করার ইচ্ছা জাগে। সেই ইচ্ছা বাস্তবে রূপ দিতে চলে যাই কানসাটের থাই পেয়ারা বাগানে। সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিজের নার্সারিতে চারা তৈরি করি।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনা কৃষিকে দিয়েছেন নতুন দিগন্ত: কৃষিমন্ত্রী
নুরল হক বলেন, ‘নিজের নার্সারির চারা দিয়ে পরীক্ষামূলক থাই পেয়ারার চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় স্থানীয় ধান চাষিদের জমি বছরে বিঘা প্রতি ১২ মণ ধানের বিনিময়ে লিজ নিয়ে থাই পেয়ারার বাগান তৈরি করি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০১৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে থাই ৩ পেয়ারার চাষ শুরু করলেও প্রকৃতিক দুর্যোগে সম্পূর্ণ বাগান নষ্ট হয়ে যায়। সে সময় প্রায় ৪০ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হয়।’
কিন্তু এতে তিনি থেমে থাকেন নি। ২০১৭ সালে আবারও লিজকৃত ১১ একর জমিতে মাল্টা ও কমলার ৩ হাজার ৫ শত চারা লাগান। এক বছরে গাছে ভালো ফলনের দেখা মেলে। প্রতি গাছে ৫০-৬০টি করে মাল্টা ধরেছে। আগামী আশ্বিন মাসের শুরুতেই মাল্টাগুলো পাকতে শুরু করবে।
আরও পড়ুন: ফুল চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে: কৃষিমন্ত্রী
নুরুল হকের বাগানে দৈনিক ২৫০-৩২০ টাকা মজুরিতে ১৫ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন।
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে নুরল হক বলেন, তুলনামূলক একটু উচু জমিতে সারিবদ্ধভাবে গর্ত খুড়ে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে প্রতিটি গর্তে একটি করে কলম চারা লাগাতে হয়। এরপর শুধুই পরিচর্যা।
নুরুল হকের বাগানের শ্রমিক রাধা রানী, ননিবালা, জোহরা বেগম, জোবেদা বেগম জানান, সারা বছর কাজের নিশ্চয়তা থাকায় কয়েক বছর ধরে নুরল হকের এসব বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল হাসান বলেন, ‘নুরুল হক এতো সুন্দর মাল্টা বাগান করে উপজেলাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আমি শুনেছি তার বাগানে কোন প্রকার ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না।’
এমন সুন্দর বাগান এ অঞ্চলে মাল্টা উৎপাদনে অনেককেই উৎসাহিত করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, ‘অল্প পুঁজিতে অধিক লাভজনক হওয়ায় মাল্টা চাষে ঝুঁকছে কৃষকেরা। মাল্টা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতাও করা হচ্ছে। সেই সাথে আধুনিক কৌশল প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’